নাফিসা রিসপা’র কবিতা
ভালোবাসা বহমান
মাঝেমাঝে পুরনো ভালবাসা ভর করে…
তখন চুপচাপ বসে থাকি পাশাপাশি…
বসে থাকি ভালোবাসার কাছে নতজানু হয়ে…
মনেহয় থমকে থাক এসময় অনন্তকাল…
কিংবা এভাবেই কেটে যাক মহাকাল…
মাঝে মাঝে সব বুঝে শুনেই অতীত ভালোবাসা ভর করে…
তখন একে অপরের দিকে চেয়ে থাকি…
আলতো করে হাতটা ধরি…
কখনওবা চুমু খাই কপালে…
হয়তো আরো কিছু ইচ্ছে করে…
ইচ্ছে করে জড়িয়ে রাখি…
সত্যি কি ভালোবাসার কোন অতীত থাকে!
কই যা দেখি সবইতো বহমান…
আমরা শুধু সম্পর্কের ইতি টানি।
তারপর দু’জনেই শূন্যে তাঁকাই;
অতঃপর দু’জনেই জানি ফিরতে হবে নিজ নিজ বাড়ি।
শ্বাসত দূরত্ব তবুও নৈকট্য
তুমিই বোধহয় আমার প্রথম প্রেম ছিলে,
কি তুমুল প্রেমই-না ছিল আমাদের!
ব্যস্ত তুমি আর অলস আমি-
তাও প্রতিক্ষণ কতো যত্ন করে খোঁজ নেয়া;
ক’দিন পরপর দেখা করা;
যেন কোন কমতি ছিলনা কিছুতে।
সে দিনগুলিতে,
“প্রেম অতোটা টানেনা” বলে থাকা আমিও-
কি অপলক তাঁকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে,
তারপর কোন ঘোষণা ছাড়াই জড়িয়ে ধরতাম-
এযেন কোন নিষ্পাপ শিশুকে আলিঙ্গন করা।
তুমিও তখন কম যেতেনা,
আলতো করে জড়িয়ে রাখতে আমাকে;
যতোক্ষণ আমার চাই।
কিছুক্ষণ পরপর ঠোঁটে,কপালে ছুঁড়ে দিতে নরম চুম্বন;
আপন মনে বিলি কাটতে চুলে।
মাঝেমাঝে আমিও অবাক হতাম এই ভেবে যে-
আমার সামান্য ঠোঁট উল্টানোও তোমার দৃষ্টি এড়ায় না,
এমন কি আমার চোখ,ঠোঁটের নিচে কালো তিল;
ঘাড়ের নিচে এলোমেলো চুল-
সবই ছিল তোমার নখদর্পে।
অথচ, আজও তুমি আছো;
আজও অক্ষুন্ন আমাদের প্রেম;
ব্যস্ত তুমি আজও হয়তো যত্ন করেই আমার খোঁজ নাও;
কিন্তু এখন আর দেখা হয়না আমাদের।
আমার নিজেস্ব একটি পদ্মা আছে
আমারও নিজস্ব একটি পদ্মা আছে…
খুব যতনে বুকের ভেতর…
যখন-তখন ভরা মৌসুমে পদ্মার মতোই উচ্ছলে পড়ে তার জল…
আমাকে আবেগী করে তোলে…
চারপাশে থৈ-থৈ করে অজস্র স্বপ্ন…
সীমাবদ্ধ আমিও তখন সীমাহীন আনন্দে ভাসি…
কল্পনায় নতুন দিনের ছবি আঁকি…
অকারণে লাল শাড়িটা পরতে বসি..
কাজল দেই চোখে…
আপাদমস্তক নিজেকে সুখী ভাবি।
কিছুটা সময় না যেতেই.
দিবাস্বপ্ননের মতোই ভঙ্গ হয় মোহ…
অকথিত ঝড় এসে লন্ডভন্ড করে দেয় আমার সবুজ বিস্তৃত ভূমি..
থৈ-থৈ পদ্মা তখন পরিণত হয় ধূ-ধূ মরুদ্যানে…
আমি আহত হই…
শুশ্রূষাহহীন পড়ে থাকি একা নির্জনতায়।
তারপর সব হারিয়ে আবার স্বপ্নে দেখি…
কোন এক প্লাবন এসে সবুজে ভরিয়ে দেবে ধূ-ধূ মরুদ্যান।
যোদ্ধা
সংরক্ষিত এলাকায় রাহাজানি হোক;
সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ুক-
পৌরাণিক এক উন্মাদ শ্বেত ভাল্লুক;
পৃথিবীর সমস্ত পাষাণ পুরুষ জেনে যাক-
তাদের বর্মাচ্ছাদিত বক্ষ বিন্দুমাত্র সুরক্ষিত নয়।
আমি শ্বেত ভাল্লুক হতে রাজি;
আমার আবেগের নিয়মিত অনাচার,দুরাচারী অভ্যাস
অথবা অর্বাচীন তাড়না উষ্কে
আবার তপ্ত হতে দাও,
তারপর আমি নিজেই জ্বালিয়ে দেবো-
পৃথিবীর সমস্ত পাষাণ পুরুষের বর্ম।
মানুষ বোঝ না
কার জন্য সাঁজাও রণতরী?
সেতো স্বপ্ন দেখে কোন এক আকাশ বাড়ি।
কার জন্য সাঁজাও সাঁজোয়া পর বর্ম?
তারতো পুতুলের বিয়ে দেয়াই ধর্ম।
কার সাথে খেল যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা?
সেতো চায় নতুন কোন খেলনা কিনবে বলে বসুক
জমকালো কোন মেলা।
নাকি যুদ্ধ তোমার পেশা?
জয়ী হওয়াই তোমার নেশা?
নাকি যাকে দেখো তাকে ভাবো তোমার প্রতিপক্ষ?
তুমি আসলে যুদ্ধ বোঝ,প্রেমিকা বোঝনা;
এজন্যই হেলাল হাফিজ বলেছেন,
“নিউটন বোমা বোঝ প্রেম বোঝ না।”
নরক
ধুর,আমি কি আর অতোটা জ্বলতে পারি!
যতোটা তুমি জ্বালাতে পারো?
আমি কি আর তেমন দক্ষ ডুবরী!
যে, যখন-তখন তুমি সমুদ্র সাঁজো?
আমিতো জ্বলা বলতে আগুন বুঝি,
সেও জ্বলতে-জ্বলতে শূন্য করে নিভে যায়;
যদি তুমি সূর্য দেখাও-
সেওতো রাতে লুকায়।
আবার এইযে তুমি সমুদ্র সাঁজো,
যখন-তখন আমায় ডুবরী ভাবো!
এবার তুমিই বলো-
সমুদ্রের সব রহস্যগুলো কেউ কি খুঁজে পেয়েছে আজো?
এখন তোমায় বলছি শোন,
ভালো যে তোমায় বাসি আমি সেটা তুমি ভালোই জানো।
তবে তুমি জ্বালিয়ে কেন-
আবার আমায় ডুবানোর ছলে জলের ছোঁয়ায় বাঁচিয়ে তোল!?
সময়
যখন কারো পোড়ে হৃদয়…
পোড়ে প্রণয়…
যখন পোড়ে মন একটু বারির আশায়…
তখন কালো মেঘ আকাশে ঘুরে বেড়ায়…
পাঁহাড়ে ঝর্ণাধারা বয়…
বয়ে যাও নদী সামনে ঠায় দাড়িয়ে রয়…
তখন পোড়া চোখে হাহাকার বয়ে যায়…
অতীতেও জ্বলেছে একই ভাবে শ্যামল অরণ্য কতোবার…
সবুজ প্রান্তর পুড়ে হয়েছে ধূসর বারবার…
অনলে পুড়ে ছাই হয়েছে স্বপ্ন হাজার…
কই আজ ফিরে তাকালে
এতোটুকু পোড়া চিহ্নতো দেখিনা সেখানে আর…
বরং শুনি সেখানেই নতুন পাখির চিৎকার…
নতুন ঘাসফুলে ভরা প্রান্তর আবার…
সব যেন আগের মতো শোভাময়।