কবিতা

মিশকাত উজ্জ্বল এর গুচ্ছ কবিতা

ঘুমের প্রকার

কারও চোখে ঘুম মানে স্লিপিং পিলে বিগত প্রেমিকার বিদায়ী সম্ভাষণ
কারও চোখে ঘুম কোনো ফৌজদারি দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির দীর্ঘ কারাবাস
কারও চোখে ঘুম অর্থে বহুতল ভবনের সুনিয়ন্ত্রিত লিফটের কপাট
কারও চোখে ঘুম বলতে রতিক্লান্ত দম্পতির নৈশকালীন সতেজ নিরাময়।

কারও চোখে ঘুম যেন নেত্রপলিটনজুড়ে অসহনীয় যানজটের নিষ্কৃতি
কারও চোখে ঘুম প্রায় চৈত্রের ব্যাপক দহনে বটবৃক্ষের ছায়া আবৃত্তি।

উত্তরাধিকার

যদি একদিন ঘুম ভেঙে জেগে দেখি পৃথিবীটা বদলে গেছে
আকাশটা ছেয়ে গেছে গাছের পাতার মতো ঘন সবুজ রঙে
আর গাছের পাতাগুলো হয়ে গেছে নীল!

অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীকে আলোকিত করতে
চন্দ্র-সূর্য আলো দিচ্ছে একযোগে
বাঘে-হরিণে এক ঘাটেই খাচ্ছে জল—
বুনো শ্বাপদেরা লজ্জা নিবারণের জন্য লুট করছে বস্ত্রকল!
স্থির পথগুলি এস্কেলেটর সিঁড়ির মতো ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক—
আর মানুষগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে…

পাথুরে মূর্তিগুলো মুয়াজ্জিনের আযান শোনামাত্রই
সারিবদ্ধভাবে হেঁটে যাচ্ছে মসজিদের দিকে!

যদি একদিন ঘুম ভেঙে জেগে দেখি
পৃথিবীটা এমন আমূল বদলে গেছে—
তবু কি বদলাবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পুরাতন বদভ্যাসগুলি?
তীক্ষ্ণ ধারালো ব্লেড দিয়ে যেভাবে ক্লিন শেভড্ হয় পুরুষ
সেভাবে অন্তরের ক্লেদ-ময়লাগুলি ঝেড়ে চেঁছে শুদ্ধ হবে তুমিও?

ডিসকাউন্ট

তাপানুকুল প্রসাধন বিপনীগুলোয় ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষী—
বহুতল পাটাতনে থরে থরে সাজানো বাহারি নেইল পলিশ,
লিপগ্লস, বডি স্প্রে, ব্রা…
প্রতিটি পণ্যের মোড়কে উচ্চমূল্য ধার্যকৃত ।

ডেস্কের সামনে ক্রেতা বেশে দাঁড়ানো লাস্যময়ী এক ঝাঁক৷ তরুণীর
আঁধবোজা চোখের মতো অর্ধনগ্ন বুক, ফর্সা নাভিসমেত
ভরা পূর্ণিমার জোছনার মতো যৌবনের স্বাদ চেখে নিচ্ছে বিনামূল্যে
কর্তব্যরত সেলসম্যানদের কয়েক জোড়া চোখ ।

তার জন্য থাকছে কী ডিসকাউন্ট ?

ঊনমানুষ

হোক-না যতই পত্রপল্লবহীন, শুকনো কাণ্ড-মূল; বৃক্ষ তো বৃক্ষই
নদীর নাব্যতা নেমে এলে দিকচিহ্নহীন বালিয়াড়ি, চরাঞ্চল ।
মানচিত্রে ভূখন্ডযোগ, নকশা বদল—
ফিতা নল কড়া ক্রান্তি গন্ডায় আমিনের মাপজোখ।

মানুষ মরে গেলে কেবলই লাশ—অস্পৃশ্য, অশুচি; কেউ কেউ মৃত্যর পূর্বে…

কেউ বা পেয়ে যায় অমরত্বের স্বাদ জীবদ্দশাতেই;
কোন কোন মানুষ ঊনমানুষ !

তুঘলক

মনে করি, শিকার একটি পাখির নাম—
জাল মানে নদীতটে মাছের অভয়াশ্রম
নদী তবে আকাশের পাটাতনে মেঘের তালুক
আনন্দ হতে পারে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর অনুভূতি।

কী শোভন পুলিশের সেবাধর্মী হাতকড়া!
রাষ্ট্র অর্থ সরকারদলীয় নর্তনকুর্দকদের রক্ষাকবচ
গ্যাস, কয়লা সকাল-সন্ধ্যা নাস্তার টেবিলে
সহজপাচ্য খাবারের মেন্যু।

ঘুষের মন্ত্রে দীক্ষিত কী বিচিত্র স্বদেশ!
উন্নয়নশীলতার তকমা সুচতুর এক প্রোপাগান্ডা;
যার কুশীলবগণ প্রায়ান্ধ—হাভাতে সুশীল।

ষোল ডিসেম্বরঃ তোমার জন্মদিন

ষোল ডিসেম্বর—আজ তোমার জন্মদিন
ষোলটি মোমবাতি জ্বালানো থাকবে স্পঞ্জের কেকজুড়ে
ষোলটি মোমবাতি ষোলটি ফুঁ-তে নিভিয়ে দেবে তুমি।

ষোল তারিখ তোমার জন্মদিন বলে—
ষোল সংখ্যাটি বিশেষ বিবেচ্য আমার কাছে
ষোলটি সাদা শান্তির পায়রা উড়িয়ে দেবো আকাশে।

ষোল ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস—গোটা জাতির স্মরণীয় দিন।

ষোল বছর বয়সে মেয়েরা যৌবনবতী হয়
ষোল বছর বয়স হলে পূর্ণতা পায় দেহ মন ও যোনীর
ষোলতেই শরীরে ধারণ করে মানব-ভ্রূণ কেউ কেউ
ষোল বছর বয়সেই বালকের মগজ, অস্থিমজ্জা উর্বরতা পায় ইদানীং
ষোলতে লালন করে প্রেমের পদাবলী, গোপন চিঠি,
সাইবার ক্যাফের ঠিকানা…

ষোলসংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় দাবাড়ুগণ
ষোলকলা পূর্ণ হলো আজ বাংলার মাটিতে দুর্নীতি,
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির।
ষোল সংখ্যাটি তাই গোটা জাতির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

ষোল ডিসেম্বর—আজ তোমার জন্মদিন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *