রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এগারো
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এগারো
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। শেষ পর্ব
এগারো
জামাল সাহেব অফিস নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। নানা ব্যস্ততার কারণে ছেলেমেয়ের কোনো খরব নিতে পারনি। অফিস যেনো কর্মের জীবন শক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যায় জামাল সাহেব। কাজের চাপে ঝন্টু ও লাইলির কোনো খবর নিতে পারেনি। সারাদিনে একটি ফোনও করেনি। কর্মমুখর সময় চলে যেতে লাগলো। কাজ যেনো সময়ের গতিকে বাড়িয়ে দেয় আজ। কাজের তালে অতি তাড়াতাড়ি সময় চলে যায়। ভুলিয়ে দেয় জরুরী কর্মের কথাও। সারাদিনের কর্মের ভেতর সে ভুলেই গেছে লাইলি বাড়ি নাই।
তবুও, প্রতিদিনের মতো আজও বাড়ি এসে লাইলি বলে ডাক দিল।
লাইলির মা এসে দরজা খুলে দিল। খ্যাক করে উঠলো, তোমার কি মনে নেই ঝন্টু আর লাইলি গ্রামে গেছে। সারাদিনে তুমি কি ওদের খবরও নেওনি?
লাইলি লাইলি বলে চিল্লাছো!
জামাল সাহেব কোনো কথা না বলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো। জামা কাপড় খুলে হাত মুখ ধুয়ে ড্রইং রুমে বসলো। প্রতিদিন লাইলি বলে ডাক দেই।
তাই আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে, এতই যখন মেয়ের জন্য দরদ, তা হলে ওদের খবর নিয়েছো?
অফিসের ঝামেলায় খবর নিতে পারিনি, তবে এখন খবর নিচ্ছি।
হ্যা, তাই নাও!
মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিল ঝন্টুকে।
মোবাইল বাজতে থাকে ঝন্টু ফোন ধরছে না। কয়েক বার ফোন দিল, না কোনো সাড়াশব্দ পেলনা জামাল সাহেব। একটু চিন্তিত হলেন। তা হলে ওরা কী করছে? ওরা তো আমাকে একটি ফোনও দিল না। আমি না হয় কাজের চাপে ছিলাম। ওরা কি কাজের চাপে আমাকে ফোন দিতে পারেনি।
নেটওয়ারকের ঝামেলাও তো নেই, নেট আছে বলে মনে হলো। কি করছে ওরা!
এমন সময় এক কাপ চা নিয়ে হাজির হলো ঝন্টুর মা। চায়ের কাপ সামনে রেখে পাশে বসলো। চায়ে চুমক দিতেই বলল, ঝন্টুর কাছে একটি ফোন দাও না।
দিয়েছি তো।
কোনো কথা হলো?
না, ঝন্টুতো ফোন ধরে না।
কি বলো?
হ্যা, আমি ঠিকই বলেছি।
সেই সকালে গেছে এখন সারেপাঁচটা বাজে। সারাদিন আমার ছেলেটা
কীকরছে? কী খাইছে? কিছুই জানলাম না।
তাই তো!
দুজনের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ লক্ষ করা গেল।
এদিকে হাশেমের রান্না ঘরে রান্না করছে লাইলি। লাকড়ির চুলায় রান্না করছে। চোখ যেনো ধুয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। লাইলির কাছে মনে হতে লাগলো এ যেনো তার জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা। জীবন সংগ্রামে এই অভিজ্ঞতা তার কাজে দিবে। জীবনের সঙ্গে লড়াই। জীবন সংগ্রামে হারতে চায় না লাইলি।
মা বলেছে, মেয়েরা বান্দিরজাত। যেখানে যাবে সেখানেই তার কাজ। কাজের ভেতর ডুবে থাকলেই সুখ অনুভব হবে। তাই এই রান্নার কাজ লাইলির কাছে মোটেও কষ্টের মনে হচ্ছে না। এর ভেতরেই সুখ অনুভব করছে লাইলি। রান্নার ভেতরে মন থাকলে সেই রান্না ভালো হয়। মজাদার হয়। মনের মাধুরি মিশিয়ে রান্না করছে লাইলি। গ্রামের টাটকা সবজি, তড়তাজা মাছ। লাকড়ির চুলায় রান্না। লাইলি রান্না করেছে। ধুয়া উড়ছে। রান্না প্রায় শেষ। গরম গরম খাবার পরিবেশন হবে। সেই খাবার খাওয়া আয়জোনে চারজন ব্যস্ত। ক্ষুধার জ্বালায় পেট চো চো করছে। পেটে আগুন যেনো দাউদাউ করে জ্বলছে। রান্না ঘর থেকে গরম খাবার নিয়ে এলো লাইলি। টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে লাইলি। তিনজন লাইলির হাতের রান্না করা খাবার খাবে বলে হাত মুখ ধূয়ে টেবিলে খাবার খেতে বসলো। খাবার পরিবেশেনের সকল কিছু যেনো লাইলি করছে। আজ এত ভালো লাগছে কেনো হাশেমের কাছে? লাইলির হাতের খারার খাবে তাও কখনো ভাবেনি। লাইলির দিকে চোখ রাখতেই যেনো মন এলোমেলো হয়ে যায় হাশেমের। আজ হাশেমের মন বেশ ফুরফুরে। খুব মজা অনুভব করেছে। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি মুহুর্তেই সুখ ছড়িয়ে দিল।
অনুভব করতে লাগল লাইলি হাতের ছোঁয়া। ঝন্টু, গোলাম আলী, হাশেম খেতে বসে লাইলি খাবার বেরে দেয়। ঝন্টু বলে তুইও আমাদের সঙ্গে খেতে বসে যা।
খাওয়াদাওয়া শেষে আমারা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করবো। খা, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। লাইলিও খেতে বসলো। সবাই এক সঙ্গে খেতে লাগলো। হাশেমের কাছে মজার মজার খবর দেয় যে ময়না পাখি সেই ময়না পাখি ডালে এসে বসেছে।
ময়না পাখি দেখতে লাগলো ওদের খাবার খাওয়া। ময়না পাখি ভাবে, লাইলির কাছেই বলতে হবে খুনের যতো ঘটনা। আজ রাতেই বলবো। যখন ওরা ওদের বাড়ি যাবে, রাতে ঘুমাতে যাবে ঠিক তখনি বলবো। বাড়ির উঠন পরিস্কার করেছে। কিছু সময় পরেই যাবে। ময়না পাখির এমন ভাবনা বাস্তবের দিকে যাচ্ছে।
খাবার শেষে একটু গা এলিয়ে দিতে মন চাইলো ঝন্টুর। যা ইচ্ছে তাই কাজ, আমি বাড়ির দিকে যাই এ কথা বলেই হাঁটতে থাকে ঝন্টু। ময়না পাখি তাকিয়ে দেখলো, ঝন্টুর চলে যাওয়া। ঘরে যাওয়া মাত্রই বেজে ওঠে জামাল সাহেবের ফোন।
হ্যালো বাবা কেমন আছো?
ভালো, তোরা কেমন আছিস?
আর বলো না সারাদিন অনেক খাটাখাঠনি গেলে।
কি হয়েছে?
বাড়ির সামনের বড় গাছটি ঝড়ে ভেঙে পড়ে গেছে। পড়ে গেছে গেটের সামনে। বাড়ির ভেতর ঢুকার কোনো পরিবেশ ছিল না।
বলিস কি?
হ্যা,তাই হাশেমের সহযোগিতা নিলাম।
লাইলি কই?
লাইলি হাশেমদের বাড়ি।
ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
এই তো আসবে।
মা, কেমন আছে?
নে তোর মায়ের সঙ্গে কথা বল।
কিরে বাজান কেমন আছিস? কি খাইছিস? সারাদিনে এক বারও খবর নিলি না।
না, একটু ঘুমাবো। সকালে আসবো রাখি।
রাখবি কিরে, লাইলির সঙ্গে কথা কমুনা।
এদিকে ফোনের লাইন কেটে দিয়ে ঝন্টু ঘুমিয়ে গেলে। এখনো রাত হয়নি।
বিকেলের আলো সবুজ মাঠের ওপর ঝিলমিল করছে। লাইলি দাঁড়িয়ে দেখছে।
পাশে হাশেম দাঁড়িয়ে। গোলাম আলী চলে গেলো ঝন্টুর কাছে। হাশেম একটি ডালিম ফুল লাইলির হাতে দিল। লাইলি ফুলটি হাতে নিল। একটু মিষ্টি হাসি দিল। তারপর ফুলের দিকে তাকালো। দেখলো ডালিমফুল। মন ভার হয়ে গেল।
যেনো আকাশে মেঘে করেছে। হাসিমুখ কালো হলো কেনো? কিছু ভেবে পায় না। ফুল হাতে নিয়ে হাসি দিল। ফুলের দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করলো কেনো? কী এর রহস্য! হাশেমেরও মন খারাপ হয়ে গেলে। লাইলি হাশেমের দিকে তাকালো। বলল, এই ফুলটি বড্ড ভালো। ডালিম। ডালিমফুল। বেহেশতি ফল নাকি বেদানা, মানে ডালিম। সেই ডালিমফুল আমার হাতে বেশ ভালো লাগছে।
কিন্তু এই ভেবে খারাপ লাগছে যে ডালিম গাছ কবরের পাশে লাগায়।
মৃত্যুপুড়ির আঙ্গিনায় ডালিম ফুলের হাসি বেশ আনন্দের। আমি আনন্দময় এক নারী। এত কঠিন করে কথা বলছো কেনো লাইলি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তা আমি জানি। তাই ঝন্টু ভাইয়ের সঙ্গে চলে এলাম। তোমার মুখ দেখার জন্য এই মন বেকুল ছিল। তোমাকে দেখেছি আর আমার মন ভালো হয়ে গেছে।
চলেন, ঝন্টু ভাই কি করছে দেখি। লাইলির কথায় সায় দিয়ে হাঁটতে থাকে দুজন।