উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব সাত
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস ─পর্ব দুই
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস ─পর্ব তিন
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস ─পর্ব তিন
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব চার
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব ছয়
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব সাত
- উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর আট
৭
কালিনী ডুবিয়ে ডুবিয়ে পান ধোয় আর কাবান্নি গোণে এক দুই তিন…। আর চন্দ্রভানু ঘরের আড়ে দাঁড়িয়ে কাবান্নির ব্যাপারটা তদারকি করে। কিন্তু চন্দ্রভানু কাবান্নিকে দ্যাখে না এখন, দ্যাখে অদূরে ঘন সবুজ বিছুটি লতায় ঘেরা পায়খানা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণধারের নামার বড়ো বড়ো তামাক গাছের গোড়ায় বসে আছে মনু ওরফে মনু মিয়া। দেখে গায়ের ভিতর কেমন গুলিয়ে উঠলে দেখেও না দ্যাখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে চন্দ্রভানু। পরক্ষণেই আবার চোখ গেলে দ্যাখে মনু উঠে দাঁড়িয়েছে। পরনে একটা শাড়ি বটে দশহাতি কিন্তু পরে আছে লুঙ্গির মত, একটা প্রান্ত শুধু উঠে গেছে দড়ির মত বুকের উপর দিয়ে কাঁধে। তারপর স্থানত্যাগ করে বহু কষ্টে। হাঁটে যখন খোঁড়া পাটার জন্য বিভৎস রকম ভাবে পাছাটা দুলে সামনে আগায়। লম্বায় গড়ের চেয়ে বেশ খাটো তবে চেহারায় কোন মলিনতা নাই। ওর শারীরিক অক্ষমতার দৃশ্যমানতাই ওকে বাঁচিয়েছে বিশাল কলঙ্কের হাত থেকে। না হলে আজ ও মানুষের ডাকা হিজড়া নামেই অভিযুক্ত হত। আর সকলের মতো যখন তখন যারতার সাথে দাঁড়িয়ে একচোট গল্প করে নেয়া স্বভাবে না থাকায় চলাচল যত ধীরই হোক শেষ পর্যন্ত তা শ্লথ নয় কোনভাবেই। ধোয়াধায়ির কাজে রাতবিরাতে খালে যেতে হলে, গরে যেতে হলে মনুই হোল একমাত্র পাত্র, ভয় নাই ডর নাই, ভূতে নেয়ার আশংকা নাই। যত ভূত থাকা ছাড়াবাড়িতেও ওকে ছেড়ে দেয়া যায় নির্ভয়ে, ওকে ধরার ভয় নাই বিলকুল — এমন বেডক মানুষে তেনাদের কোন রুচি নাই গো, তেনারা রুপসী ছাড়া ঘেঁষেন না। এমনকি কচুরিপানা বা কলমির বেগুনি জলজ গন্ধ, পাখি বা পাখির ডাক, বিল মাঠ ফসল এমনকি বদলে বদলে যাওয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে একা একা কথা বললেও কেউ ওকে ভূতে পাওয়া মনু মিয়া বলে আঁৎকে উঠবে না, ঝাড়ফুঁক তাবিজতুমার নিয়ে ব্যস্ত হবে না। বদলে বদলে যাওয়া দুনিয়ায় কত কিছু বদলায় মনু মিয়ার সামনে, বর্ষা আসে ঘোর, বর্ষা গিয়ে শীত, মমতাজের প্রেম হয়, বাপের অমত বলে পালায় আবার বাপ ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিলেও নির্বিকার সংসার করে যায় বাড়ির কামলার সাথে আর যে জনের সাথে পালিয়েছিল সেও আর খোঁজ নিতে এসে দেখে যায়নি মমতাজ কেমন আছে, বেঁচে আছে না মরে গেছে। আকাশ বদলায়, নদী বদলায় অথচ মনু এখন জানে সব বদলালেও তার জীবন কিংবা শরীর, না বদলায়, না বদলানোর কোন ইশারা দেয়।
খবর পেয়ে হিজড়া দল এসেছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে। বড়োকাজির তখন অবস্থা ভালো, স্বাস্থ্যও ভালো তাই হুংকারও কাঁপন ধরায়।। কিন্তু টলাতে পারেনি তাদের আগ্রাসী মনোভাব। — আমাগো জিনিস আমরা নিমু, আপনে কেডা বড়োমিয়া?
বড়োকাজির হুংকারে কাজ না হলেও মমতাজের মায়ের কথায় কাজ হয়। মনু মিয়াকে হাঁটায়, মোলায়েম স্বরে বলে — দেহো, তারে তোমরা কেমনে রাখবা? ওতো তোমগো বোঝা হইয়া যাইবো। অল্পক্ষণেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সত্যি সত্যি লেংড়া একটা মানুষ দিয়ে ওরা কি করবে; যে না পারবে নাচতে, না পারবে নাচাতে এমনকি রূপও এমন কিছু না যা দিয়ে একটা পুরুষ মানুষকে ঘায়েল করতে পারে। তো পুনঃপুনঃ তারা মনুকে হাঁটিয়ে পরখ করে পান চিবাতে চিবাতে বলে— না গো আবাগীর বেডি, তোরে নিতাম পারতাম না। কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা যে এতক্ষণ বলছিল বুঝতে না পেরে এক ধরনের ভীতি অকস্মাৎ আক্রমণ করলেও পরক্ষণেই এক ধরনের হতাশাও বুঝি ছোট্ট বুকে একটুখানি জায়গা করে নেয়। আর বুঝতে পারে তার একটা না দুই দুইটা ত্রুটি থাকায় এমনকি এই অদ্ভুত নির্লজ্জ মানুষগুলোও নিতে পারে না। কিন্তু কি আশ্চর্য, ওরা চলে যাবার পর কিছু লোক তাকে হিজড়া উপাধি দিলেও অল্প দিনে তা লেংড়া নামের তলে পড়ে গিয়ে পুরো পরিবারকে ভবিষ্যত বিব্রতকর একটা অবস্থা থেকে রেহাই দেয়। মমতাজের মা মনে মনে সেই হাউ হাউয়ে গলার নির্লজ্জ বেহায়া মেয়েমানুষগুলোর কাছে এক রকম কৃতজ্ঞই বলা চলে। মনুকে না নিতে পারলেও ওরা কিন্তু বড়োকাজির ধমক খেয়ে ছাড়াবাড়ির ভিটায় কিছুক্ষণের জন্য আশ্রয় নেয়, উদ্দেশ্য এত দূর থেকে এসেছে কিছু খেয়ে যাবে না, তা কি হয়! এক ধামা মুড়ি আর ঝালের নাড়ু আসতে আসতে ভিড় জমে যায় ভালই। কি অভিজ্ঞতা ছিল আগের কে জানে অথবা হয়ত ছিলই না, বউঝিরা বলে, একটু গান গাও না গো, তোমরা বলে নাচতে জানো, গাইতে জানো!
গানের নাচের চেয়ে আসলে আর কিসে যে উৎসুক্য তা বলতে বড় লজ্জা লজ্জা দেখায় আর বড়ো আশ্চর্য চোখ দিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সব দেখে নিতে চায় গোপনে। তারপর দেরিতে খবর পাওয়া মাস্টারবাড়ির কাজের লোক হতি এসে শুধু হামলেই পড়ে না একই সঙ্গে তার উদার উৎসুক্য আরো দু এক জনের তৃষ্ণা মেটায়— ওগো কি সোনা নাই?
— কি জানি, মনে অয় নাই!
— বুক তো দেহি উঁচাই!
— মনে কয় কাপড় গুইজ্যা রাখছে!
— তয় মনুরে নিলে কি মনুও তাগো মত হইয়া চলবো?
— না নিলেই বালা, বটবিরিক্ষি রাইখ্যা কি কেউ ডুম্বুরের তলে খাড়ায়!
— নেয়া না নেয়া কি মাইনষের হাত! এই যে মনু মিয়ার এই অবস্থা এইডা কি তার হাত, না মনুর মায়ের হাত!
ওরা তখন মুড়ি খেয়ে পানি খায়, পান খায়, গান গায়, একটু কোমর দুলিয়ে খেমটা নাচ দেয় –
আমার আদলা শরীল আদলা মন
উদাস করলো কে রে
উদাস করলো কে!
গানটা মধুর কি মধুর না সে প্রশ্ন কেউ না করলেও তাদের সংক্ষিপ্ত আন্তরিক পরিবেশনায় মুগ্ধতা আর অতৃপ্তি নিয়ে অনেকেই বাড়ি গিয়ে ফিরে আসে বেতের পুরা ভরা চাল কি চিড়ামুড়ি নিয়ে। কেউ আনে দুটো নারকেল কিংবা দুটো ঝালের নাড়ু কি গাছের দুটো পাকা পেঁপেঁ। তারপর চৈত্রের ঝাঁ ঝাঁ রোদ কমার আগেই ওরা উঠে যায় আসর ভেঙে আগতদের গাঙে ভাসিয়ে।
গ্রামের লোকের তৃষ্ণা কী মেটে? কত কি জানার ছিল! সব রাগ গিয়ে পড়ে বড়োকাজির উপর, কী অইতো উডানে একটু বইতে দিলে, একটু বাতপানি দিলে! অরা কী মানু না!
নৌকায় ওঠা পর্যন্ত তাদের পিছন পিছন যায় পোলাপানের কাফেলা। দুর্জ্ঞেয় রহস্যে ভরা দেহ, রঙিন শাড়ি, আলতা ফিতা আর উঁচু উঁচু বুকের মানুষগুলো যখন লাফ মেরে মেরে নৌকায় ওঠে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।
−মনু কিন্তু ভিটা থেকে নামে না। তারা হয়তো ভেবে থাকবে, লেংড়া মেয়েটা আসবে কি করে! কিন্তু দিনে সে অন্তত ৩/৪ বার খালপাড় যায়, নানা কাজ করে, কাজ করতে করতেই তার দিনটা কেটে যায় খালপাড়েই। কোন দিকে তাকাবার বিন্দুমাত্র ফুরসত নাই যেন তার। তারপরও বলতে হবে মনুর কপালটা ভালই, লেঙড়া হয়ে জন্ম না নিয়েও লেংড়া হয়ে যাবার এই ভালোটা, হিজড়া জন্ম নেয়ার অভিশাপ থেকে বাঁচার ভালোটা। হিজড়া মনু মিয়া থেকে লেংড়া মনু, অভিধা তার যাই হোক এখন প্রশ্ন এই এত কাল পর যখন মনুর বয়স প্রায় বিশ তখন হিজড়া দলকে খবর দিয়ে আনার শয়তানিটা করল কে! নৌকাটা চলে যেতে যেতে পোলাপানের দলটাও বিলের ভিতর দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে। আর বউঝিরা, যাদের কিঞ্চিত চিকণ বুদ্ধি, তারা ছোটকাজির দুষ্টুবুদ্ধির যৎকিঞ্চিত নিন্দা করে মনু মিয়াকে খোঁজে। আর মনু মিয়া তখন অভিশাপের প্রতিভূ খোঁড়া পা-টা বড়ইগাছে হেলান দিয়ে তুলে ধরে কী যেন দেখতে চায়, পা-টা ভালো থাকলে কি ওরা আমাকে সঙ্গে নিত, আর ওদের থাকার সেই জায়গাটাই বা কেমন, তা কি এই খাল বিল নদী মানুষের চেয়ে আলাদা কিছু! কত কত দিন মা জাপটে ধরে বিছানায় শুইয়ে হাতরে হাতরে কি যেন খুঁজেছে, এই কয় মাসে কি পরিবর্তন হলো! ফুলের মত ফুটে থাকার কথা ছিল যে পদ্মর তা তো দেখি এক নিস্ফলা বিরান ভূমি। কিন্তু তাতে কি, তারও ভালো লাগে রজব মাস্টারকে, যেমনি স্বাস্থ্য তেমনি ফর্শা গায়ের রং, ফরসা ঘাড়ের নিচে লতানো চুলের দিকে তাকিয়ে কত দিন অবাক হয়ে গিয়েছে, মানুষ এত সুন্দর হয়! মিয়াবাড়ির বাংলাঘরে যখন দুলে দুলে সূরা মুখস্ত করে, কপালে ঘাম, মাথায় টুপি, টুপির নিচে চুল, চুলের নিচে ঢেউ খেলানো কাঁধ। নিশ্চয়ই তার নিচে পুষ্ট সিনা। মনু বরাবর দাঁড়িয়ে থেকে খানেক রজবকে দ্যাখে, খানেক দ্যাখে অসময়ে পেকে থাকা তাল কিংবা দ্যাখে তালগাছের পাতার ঢেউ খেলা শিরা উপশিরা। কিংবা তখন রজবকে কাছ থেকে দেখতে খুব ভয় লাগে, গলা শুকিয়ে আসে, মনে হয় কাছে গেলে হয়ত রজব খুব জোরে ধমক দিবে। কিন্তু সাবিহার তো ভয় লাগে না, দিব্যি কথা বলে, রজব তার জিন ছাড়ায় বলেই কি সাবিহা কথা বলতে ভয় পায় না! নাকি পরীতে ধরলে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে সবার অলক্ষে সেবা করেছে বলে সমীহ করে! নাকি আমাকেও ভূতে ধরলে রজব ছাড়াতে আসবে আর আমিও হেসে হেসে কথা বলতে পারবো! কিন্তু জিন কেন, উনি তো ইচ্ছা করলে দোয়া পরে আমার পা-টা ভালো করে দিতে পারেন কিংবা আমার শরীরটা, আমি নারী হলাম, মা হলাম, সত্যিকার একজন মানুষ। কেউ হেসে বলবে, তুমি তো ভালই ডহের, বাক্কা, সুন্দর! কিংবা জ্যোৎস্নারাতে নৌকা চড়ে শাপলা তুলতে তুলতে কিংবা ঘুরতে ঘুরতে কেউ জড়িয়ে ধরে বলবে, দেইখ, দিক-নিশানা ঠিক রাইখ, ডেউয়ায় কইলাম ধরব, শেষে সারা রাইত ঘুইরা মরবা, বাড়ি আর খুঁইজ্যা পাইবা না!
মনুকে যারা নিতে এসেছিল দলে মহুয়া বলে কাঁচা বয়সের একজন ছিল, শেষ মুহূর্তে সে দলের বিপরীতে গিয়ে মনুকে নিতে চেয়ে ঝগড়া করেছে— ওরে আমি নিতাম চাই।
— নাচবো না গাইবো না, হাইট্যা হাইট্যা টেহা চাইবো, তাও পারতো না, সং দিয়া কী করবা!
মহুয়া নাছোড়, ওরে আমি খাওয়ামু, অয় আমার শিষ্য হইবো, ওর দায়িত্ব আমার।
— ওরে নিলে জগতের কানা খোঁড়া বেকটি আইয়া জুটবো, খাওয়ামু কইত্যে? খাওন কি গাঙে ভাইস্যা আইয়ে?
তারপর নৌকা খাল বেয়ে নদীতে গিয়ে পড়তে পড়তে বিন্দু হয়ে যায় নৌকা। আর তখন থেকে মনু ঠিক করে রেখেছে এর পর যদি আসে সে সঙ্গে যাবে, বলবে আমি তো আপনাদের মত, আমারে সঙ্গে নেন, আমি আপনেগো রাইন্ধ্যা খাওয়ামু, আমি অনেক
মজা রানতে জানি, মরিচ বাইট্যা বাইল্যা মাছের ডিম ভুনতে পারি, ছইয়ের দানার খাসি রানতে জানি, কানজি পাততে জানি, আমার রান্দা কানজির জাউ আর মরিচের ভর্তা, শুটকির ভর্তা খাইয়া খালি ঘুমাইবেন, দেখবেন কত স্বপ্ন ঘুমে আসে। ঘুমে রজবের মত সুন্দর পুরুষ আসে, তারা হাইস্যা হাইস্যা কতা কয়, কত যে মধুর সে স্বপ্ন!
তো বিকাল বেলায় তামাকগাছের গোড়ায় পাছা আলগা করে পেসাবরত মনুকে দেখে গা বমি বমি হলেও অন্য কোন ভাব উদয় হয় না চন্দ্রভানুর। তবে সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে একবার মনু মিয়াকে দেখে যে লংকা কান্ড করেছিল, কিনা, এইডা কে? এক্ষণি ওকে ঠেঙ্গিয়ে বাড়ির বার না করলে সে এই বাড়িতেই থাকবে না। মনুকে টেনে হিঁচড়ে উঠান থেকে বের করতে গেলে ও নাকি বার বার অবাক চোখে চন্দ্রভানুকেই দেখছিল আর চন্দ্রভানু ততই চিৎকার করে বলে, ওরে দেখলে আমার বমি আইয়ে, ওরে সরাইয়া নাও। চন্দ্রর শাশুড়ি এমনকি কাবান্নি পর্যন্ত গালি দেতে থাকলে মনু বুঝে ফেলে জীবন। আর চন্দ্রর মনে পড়বে প্রথববার নৌবিহার যাবার সময়, বস্তুত সন্তান ধারণ ব্যাপারটা সেবার ঘটে নাই, ঘাটে এসে দ্যাখে মনু মিয়া ঐ সকালে ঘাট দখল করে দাঁড়িয়ে আছে, আবার
এমন করে চন্দ্রভানুকে দ্যাখে, মানে চন্দ্রভানুর মনে হয় সে অদ্ভুত চোখে তাকে দ্যাখে। বয়স তার তখন খুব হলে দশ কি বার, চোখে দুনিয়ার উৎসুক্য, কিছু দিন আগে দেখতে গিয়ে উঠান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, দেখে স্বাদ মেটেনি। চন্দ্রভানুর কাছে সে যাত্রাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ আনন্দবিহার ছিল যে মনু তার কাছে একটা অলক্ষ্মীর স্মারক হিসাবেই মনে হয়েছে। যদিও ঘাটটা ওমর সরকারের নিজের না, যদিও ঐ সকালে ঘাটে বাঁধা পিনিসে নৌবিহারে যাবে চন্দ্রভানু সে ঘোষণা তারা গ্রামবাসীকে দিয়ে রাখেনি, যদিও সেবার নৌবিহারে গিয়ে চন্দ্রভানু লুণ্ঠিত হয় নাই, তবুও মনুর জন্য বরাদ্দ থাকে তাবৎ ভর্ৎসনা।
চন্দ্রভানু লুণ্ঠিত হয়েছিল যাবতীয় সতর্কতা সত্ত্বেও পরের বর্ষায়, ফিরেছিল বীজ নিয়ে।
