উপন্যাস

উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব পাঁচ

কিন্তু খবর কি চাপা থাকে! ঘন ঘন ভূতে ধরা, ভরা দুপুরে নারিকেলগাছের ডেগো ধুরুম করে ভেঙে পড়া, এসব খবর কি যায় না খেপুপাড়া! জায়গির রজবের ঝাড়ফুঁকে ভাল হওয়ার সংবাদ যায় কি না সেটা অবশ্য বোঝা যায় না। বাড়ির লোকই যদি এ যাত্রা খবর দিয়ে নিয়ে এসে থাকে তাহলে জানার কথা না কিন্তু লিখতে পড়তে জানা মতি মিয়া যদি বোনের উপকার করার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে তাহলে জানার পরিধি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তো এখন সাবিহার স্বামীর আগমনের খবর পেয়ে পোলাপান গুড়াগাড়ারা সাবিহাকে দেখে ছড়া কাটে-
নার্গিস কিসমিস
আলু কাইট্যা ভাতে দিস
জামাই আইলে বাইড়া দিস
কারে উইট্যা মুইত্যা দিস।
কিংবা
আসেন গো দুলাভাই
বসেন গো চেখারে
বলেন তো কি লাগে
সরবত বানাইতে?
সাবিহার এখন অন্য সময়। সে বাংলাঘরের ধার ঘেঁষে দক্ষিণধারে দাঁড়িয়ে সুদূরের পানে তাকিয়ে স্বামীর আগমনের অপেক্ষা করে না নারিকেলগাছের ডেগো ভাঙার অপেক্ষা করে বোঝা যায় না। বাচ্চাদের ছড়া কাটার পর কলকল হাসির শব্দে চমকে উঠে শুধু একবার বলে — এমন কা গো করছ, হেয় না বাড়ির জামাই!
আর ভাগ্য এমনই, ছাড়াবাড়ির অশীতিপর বেন্নাবুড়ি, যাকে একযুগ আগের মহাদুর্ভিক্ষ একবারে নিঃসঙ্গ করার প্রকল্প নিয়েও ফেল করেছিল, কারণ পরিবারের কেউ বেঁচে না থাকলেও সারা গ্রামই তার এখন স্বজন, সে সাবিহার সঙ্গ ছাড়ে না। কেন বেন্নাবুড়ি তার পিছ ছাড়ে না সে প্রশ্ন সাবিহা করে না। শুধু দক্ষিণধারের কলকল হাসির সঙ্গে বুড়িও হেসে উঠলে সাবিহা তাকে ধমক দেয় আর তার বুকের একপাশে সরে থাকা ত্যানার মত কাপড়টা দিয়ে কুচকানো দুধটা ঢেকে দিলে সে দাঁতহীন মুখ গহবর দেখিয়ে আরেকবার খিকখিক অশ্লীল হেসে বলে, কী আর ঢাহুম লো, তোগো মত দোনলা বন্দুক হইলে না ঢাকতাম! আর বেন্নাবুড়ি আর কি বলবার জন্য মুখ খুলতে চায় তা কি জানে না! বুড়ি বলবে সেই কোন কালে কোন চৈত্রমাসে লাল মরিচ উঠানে শুকাতে শুকাতে কিংবা সযত্নে বীজধান শুকাতে শুকাতে প্রতি হাটবার, সোম ও বিষুদবারে কাজিদের দক্ষিণধারে আরেকটা মিষ্টি নারিকেলগাছের ডেগো ভেঙে পড়ার কথা! হোক তা এক যুগ আগের কাহিনী তবু সাবিহার দিকে ছাতা ধরা বিকৃত জিহবা বের করে হাসতে হাসতে এসবই বলতে চায়। আর অশ্লীলে ভরা সে হাসিতে পোলাপান কি মজা পায় কি জানি, তারা আবার বলে … নার্গিস কিসমিস, ভাতে দু’টো আলু দিছ্ … বুড়ি শয়তানির চোখ নিয়ে সাবিহার প্রস্থানের পথ ভস্মিভূত করে বলে — মাগি, যেন্ কিছুই জানে না! বুড়ি সদ্য কেটে ফেলা নারিকেল গাছটার জন্য শোক দেখায় — আহারে এমন গাছ কেউ কাডে, নাইকল না, যেন্ ভূতে ইডায় রাখছে এমন পদে নাইকল! মমতাজের বেলায় তবু বার মানামানি আছিল্, সাবির বেলায় হেইডাও নাই! খালি ভাঙে, খালি ভাঙে!

পরশু, ভর দুপুরে কিংবা দুপুরের একটু আগে কিংবা একটু পরে, যা হোক, ছায়া একটুও হেলে নাই সেই সময়, সারা বাড়ি কাঁপায়ে ডাউগ্যা পড়ে উঠানে আর সাবিহা ছুটে আসে দক্ষিণধারে। খাল থেকে নৌকা নিয়ে সটান কে চলে যায় নদীর দিকে নৌকা বাইতে বাইতে, কেউ ধরতে পারে না। লগি পড়ে তার তুমুল আত্মবিশ্বাসে, ক্রমশ: নৌকা আবছা হয়ে আসে নদীতে পড়তে পড়তে। দাঁড়িয়েছিল বুড়ি, কী আর বলবে, বলে, মতি গো কাম বইন, ভানুমতি, ফুলমতি, সোনামতি, আলোমতি, চাঁদমতি, জানমতি …। বলতে বলতে বুড়ি নেমে যায় খালপাড়ের দিকে আর খালপাড় নেমে নিষ্ফলা চিৎকার, ও লাউইরা, হুমদির পুত, সাহস থাকলে বাইতে উঠ!!

আর আজ বুড়ি বসেছিল খালপাড়, চৈত্রমাসের দুপুরেও তার স্নান নিয়ে দারুণ সংশয়। আর তখনি ছইওয়ালা নাওটা এসে ভিড়ে গোসলের ঘাট ছেড়ে একটু সামনে। আর এ দৃশ্যের প্রতি বুঝি বুড়ির দারুণ আকাঙ্ক্ষা। একহাতে ইলিশমাছ অন্যহাতে মিষ্টির হাড়ি, মুখে সামান্য চাপ দাড়ি। ক্যাগড়াবগড়া মাংশহীন দেহটা আরো পাংশুটে দেখায়। আহারে বেচারা, বিয়ের সপ্তা না গড়াতেই সমন জারি শ্বশুরের, দুই বছরের মিদ্যে এই গ্রামে দেখলে তোমারে উস্টা দিমু! কি জানি, মামলা মোকাদ্দমায় সাবিহাদের অবস্থা পড়ে যাওয়ায় এই বিয়েতে পণ হিসাবে সাবিহার বাপ মাত্র দুইটা গরু পেয়েই এত রেগে গিয়ে তা জারি করেছে কিনা! সাবিহার যা রুপ তাতে একটা বত্রিশ বন্দের ঘর পণ হতে পারত! তবে যতদূর জানা যায় মেয়ে নাকি জামাইকে সামলাবার মত যথেষ্ট বড়ো হয়নি আর সে কারণেই তাকে ভাগানো হয়েছে। তো বেচারা মনের দুঃখে যায় খেপুপাড়া ভাইয়ের সঙ্গে চালের ব্যবসা করতে। তবে সাবিহার বড়ো না হওয়ার গল্প যারা বলেছে তারাই এখন বলে, ক্যানরে বাবা দুই বছর ক্যান, এক বছরই তো যথেষ্ট, এদিকে যে ছাড়াবাড়ির ভূতগুলি আইসা কাজিবাড়ির নাইকেলগাছের ডাউগ্যা ভাঙ্গে, সে খবর আছে! আর কাজকাম না পেয়ে বেলতলী থেকে মুকসুদ হাকিমকে ধরে আনতে হয় চিকিৎসা দিতে। জোয়ান হাকিম বেশ রসিক চালে বলা চলে, মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে সাবিহাকে নিয়ে যায় গরের টলটলে পানিতে জলচিকিৎসা দিতে। কোমর পানিতে নামিয়ে বলে এবার নাভিতে হাত দিয়া মাঞ্জন করো তো মা, উপর থেইক্যা নিচে, পেটের সব বায়ু শিতল হইয়া ঠান্ডা হইয়া পরিপাকের কাজকে সহজ করবে, মাথা ঠান্ডা করবে … সব শেষে গুণে গুণে বিশটা ডুব, প্রত্যহ তিনবার। কিন্তু দুই দিনে গ্রামবাসীর অভূতপূর্ব উৎসাহ আর আজব সব মন্তব্য, ফলে চিকিৎসা থামিয়ে কবিরাজকে বিদায় দিতে হয়।

যা হোক, এক হাতে ইলিশমাছ অন্যহাতে মিষ্টি, মাথার উপর সূর্য, কাজিবাড়ির প্রবেশ পথে পা রাখে সে দুরুদুরু বুক আর প্রবল কামউত্তেজনায়। কিন্তু প্রবেশ পথে এমন উদাম নারকেলগাছ চিৎ হয়ে পড়ে থাকা দেখে এক মুহূর্ত চমকায় তারপর বীরদর্পে লম্ফ দিয়ে টপকাতে গিয়ে, কে যেন বা কী যেন তাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে আছাড় মারে। ভরা দুপুরে বা দুপুরের একটু পরের কাহিনী, খালপাড়ের নারীরা শুধু জামাইকে বাড়িতে উঠতে দেখেছে আর সাবিহাকে নিয়ে এক আধটু কথা বলার সুযোগই পেয়েছে তারা। এর মধ্যেই সংবাদ আসে ভূত কবলিত হয়ে জামাইর প্রপাতনের।

— কে জানে যে গাছ কাটলেও গাছে হেলান দেওয়া লগি বাইয়া তারা কাছেই বাস করব আর আহারে(!) দের বছর বাদে নি জামাইডা আইলো তারেই নিরিখ কইরা ধরন লাগলো! 
— গাছ কাইট্যা লাভডা কী অইলো!
— হাত হতিনের কোনডায় জানি ধরছে লো!

কিন্তু বিপদ বেন্না বুড়ির, সেই যখন প্রথম দেখেছে, তো তার মারফত কি ভূতেরা আগে থাকতে খবরটা পেয়ে যায়নি? অস্বীকার করতে চাইলেই কি দায়িত্বটা সে এড়াতে পারে! জামাইর জ্ঞান ফিরলে চোখ খুলে প্রথমে বুড়িকেই দ্যাখে, কাজিবাড়ির প্রবেশ পথেও দেখেছে, এখন দেখে বুড়ি মুখের উপর উপুর হয়ে কি যেন খুঁজছে আর জামাই হয়তো আরেকবার তাকেই দেখে জ্ঞান হারায়, হারাতে হারাতে বলে ওঠে আমার ইলিশ আমার মিষ্টি! আবার জ্ঞান হারানোর আগেই তাকে ইলিশমাছটা উঁচু করে দেখায় বুড়িই! — এই যে! আর বুড়িটা কি ভোদাই, নাকি মূখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার খায়েশ, জমে যাওয়া ভিড়টাকে শান্ত করতে না আরো অশান্ত করতে হাসিখুশি মুখ করে বলে, আগো খালপার দিয়া জামাইর পিছ পিছ আইতে আইতে দেখলাম লাল অইলদা রঙের শাড়ি পিন্দা হ্যারা আঁচল দিয়া ডাইক্যা আনতাছে। মনে কয় বাড়ির ভিতরে ডুকনের আগে হিংসার চোডে ঠুঁয়া দিছে।

কালকের কথাই যদি বলা যায়, তো সন্ধ্যা বেলা হাট থেকে ডিমওয়ালা বাইল্যামাছ এনেছিল কাজি, কীভাবে রান্না হবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা অতি প্রাচীন, কিছু বাইল্যা কড়া ভেজে বিরন হবে, কিছু বাইল্যা তেঁতুল দিয়ে পোড়াচুয়া হবে আর মাথা আর ডিমগুলো টাটকা শুকনা মরিচবাটায় ভুনা হবে। মাছ কুটেছিল মমতাজ আর ‘হাইন্জা বেলায় তাইনেরা আসে’, তো ধুয়ে আনলো মনু। সন্ধ্যা বেলায় বাইরে ধোয়ার কাজ মনুই করে, প্রতিবন্ধীদের তাইনেরা ধরেন না। তারপর রান্নার দায়িত্বটা মমতাজের মা নিতে নিতে তার বাতের ব্যথা উঠলে সাবিহা যায় রান্না করতে। বস্তুত মামলা চালানোর জন্য জমি বিক্রি যে দিন হয় সেদিনই মমতাজের মায়ের এই ব্যথাটা ওঠে আর কাজির নানা পদের মাছ দিয়ে তরিবত করে খাওয়া দৃশ্য এড়ানোর এই পন্থাটাই তার জানা। তো মনু মাছ ধুয়ে চুলা ধরিয়ে সরে এসে ঢেঁকির উপর বসে এক ছড়া কবরী কলা নিয়ে। খেয়ে খেয়ে খোসা দিয়ে একটা স্তূপ বানায় আর চেয়ে দ্যাখে সাবিহার চুলায় লোহার কড়াই চাপানো, তিলের তেল আর সরিষার তেলের মিশ্রনের ধোঁয়া ওঠা, হলুদ নুন মাখানো মাছগুলোর কিয়দাংশ কড়াইয়ে ছেড়ে দিয়ে আগুন বাড়ানো, যত্ন করে উল্টে  দেয়া, উল্টোনো মাটির সরাতে ভাজা মাছগুলো যত্ন করে তোলা। দেখতে দেখতে সে হাই তোলে, হাইয়ের উচ্চতা এতটাই যে অর্ধেক এগিয়েই চোয়ালে খট করে শব্দ হয়। আর তখনি সাবিহা বলে ওঠে, ও আল্লা মাছ এই কয়ডা? ও মনু মিয়া তুমি কি মাছ খাইছ?

— না তো আমি তো কলা খাইলাম এক ছড়া, এই দেহ ছোকলা!

তারপর চিক্কুর — ও মা গো, আমার সব মাছ কে খাই লো গো!
মাছ যে খুশি খাক মনুর কি যায় আসে, সাবিহা কি আর জানে না অশরীরিরা এইভাবে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় কিভাবে তাকে চুলায় পোড়া খুন্তি দিয়ে শায়েস্তা করতে হয়! আগো, চুলার ভিতরে খুন্তি দিয়া রাখবি আগই, যেই না হাত ডুকাইবো মাছ নিতে, তহন এমন কইরা চাইপ্যা ধরবি পোড়া লাল খুন্তি দিয়া, দেখবি ডানা ছাড়া খাইল্যা পাঞ্জা কেমনে আস্তে আস্তে ধোড়া কাউয়া হইয়া যায়।

কিন্তু সাবিহা তো এইটা করবে না, করলে তো তার চলবে না, মনু মিয়া সব জানে, সাবিহা তারে যতটা বোকা আর বেখেয়াল ভাবে আসলে তো ততটা না। সাবিহা নিজেই বেড়ার তল দিয়ে হাত বাড়ানো কাউকে দুইটা মাছ দিয়ে দিবে না একথা অন্তত সে বিশ্বাস করে না। সেই ভাদ্রমাসে, দক্ষিণধারে হেলে থাকা তালগাছে পাকা তাল, বিল টুইটুম্বুর পানিতে সকালে পাকা তাল ভাসে। গ্রামের মানুষের তখন রজবের উপর চোখই পড়ে নাই, বিশেষত চন্দ্রভানুর। এমন কি কয়েকদিন নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও কেউ তার খোঁজ নেয়ার কথা ভাবেও না, সেই সময় রজব অন্তত দুই দিন দুই রাত সাবিহার জিম্মায় ছিল যার অব্যক্ত সাক্ষী কেবলমাত্র মনু। সাবিহা আর মনু যে ঘরের তক্তপোষে রাত্রি যাপন করে সে ঘরটা বস্তুতঃ তাদের গোলাঘর। ধানের বড়ো বড়ো দুইটা গোলা, নানা আকৃতির গোটা তিনেক মটকা, কোন কালে হয়ত এসব ভরা থাকতো। এখন অগ্রহায়ণে দু’একটা ভরলেও সারা বছর এক রকম ফাঁকাই থাকে। সেই ঘরের পিছনটা এমনই হতচ্ছাড়া অবস্থা যে সেখানে অনায়াসে দু’একটা মানুষ লুকিয়ে থাকতে পারে। তো সেখানে বিচালির স্তূপে রজব, কি অজ্ঞান রজব পড়ে থাকে। কখনো জ্ঞান ফিরেছে মনে হলে খেতে দেয় সাবিহা। দুইদিন দুইরাত রজবকে কিভাবে সেবা দিয়েছে তা দেখেও না দ্যাখার ভান করে মনু সয়ে গেছে পুরোটা সময়, না তাতে সে অংশ নিয়েছে, না এ ব্যাপারে সে কাউকে কিছু বলেছে। বরং সেই সময়ই সে রজবের জন্য প্রথম একটা আশ্চর্য বেদনা অনুভব করে, দুনিয়ায় একটা মানুষ নাই যে তারে খোঁজে! মানে মরে গেলেও কেউ জানতে চাইবে না ছেমড়াটা মরলো না বাঁচলো। সব কিছু বুঝেও মনু ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলে সাবিহা পান্তাভাত আর মরিচ এনে খাইয়ে দেয় নিজ হাতে। আর মনুর এমনও মনে হয় মালসা ভরা নারিকেল দুধ দিয়ে রান্না করা তাল খেয়ে রজব অমৃত আস্বাদন করেছে, এবং যেন বলে উঠেছে, মিতা আমি সাঙ্গে জীবনেও এমন মজা খাই নাই, আমারে তো খাওয়ানোর মতো লোক নাই দুনিয়ায়, তুমিই শুধু আমার কথা ভাবছ! আর সাবিহা রজবকে তাড়াতাড়ি হারুনকাকার ভিটায় ফিরিয়ে দিয়ে আসতে প্রস্তুতি নিলে মনুর ভিতরটা হাহাকার করে ওঠে। অজ্ঞান রজবকে সাবিহা দক্ষিণধার থেকে উদ্ধার করে কীভাবে এনে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে তা না জানলেও কোন প্রশ্ন তার মনে আসে নাই। সাবিহার বিয়ের কথা তখন পাকা হওয়া পথে, হবু জামাই ঘনঘন দক্ষিণধারে এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও সাবিহার সে বিষয়ে ভাববার কোন অবকাশ যেন নাই। এমন ক্যাগড়াবগড়া জামাই অবশ্য মনুর খুবই অপছন্দ, সাবিহাকে বলেছেও দুএকবার, বগার মত দেখতে এইডার লগে তুই বিয়া বইবি!

 আর সাবিহার সেবা যত্নে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে রজব বহুদিন বোঝার চেষ্টা করেছে পরীরা তাকে আগে ধরেছে নাকি সাবিহা! যেই ধরুক প্রথম, সময়টা তার একটা ঘোরের মধ্যে কাটছে আর সে নিজের মধ্যে ছিল না বিলকুল। কিন্তু তারপরও সে বহুদিন চিন্তা করে দেখেছে সেখানে কোন পাপের বসতি হয়েছে কিনা। শেষ পর্যন্ত ঠিক করেছে, আজ হোক কাল হোক সে এ গ্রাম ছেড়ে বহুদূর চলে যাবে। সে বহুদূর জায়গাটা যে কোথায়, কী যে সেখানে অপেক্ষা করছে তার জন্য, তা কল্পনায় ধরতে না পারলেও একদিন সে তা নিশ্চয় জেনে যাবে আল্লাহ পাকের ইচ্ছায়, এই টুকুই যা ভরসা। মাঝরাতে জামাই প্রলাপ বকে, গায়ে জ্বর। খাবার দেখলে বমি করতে চায়। সব চেয়ে সমস্যা সে কাউকে চেনে না, এমন কি সাবিহাকেও না। কিন্তু চিনে নেয়ার ব্যাকুল দৃষ্টি চোখেমুখে। মমতাজ বার বার বলতে চেষ্টা করে, জামাই এই না সাবিহা, চোখ খুইল্যা দেহেন! জামাই চোখ খুলে আরো অসহায় ভঙ্গিতে সবাইকে দেখতে থাকলে হারিকেনে তেল থাকা সত্ত্বেও শব্দ করে দপ্দপ্।

Series Navigation<< উপন্যাস─ চন্দ্রভানুর পিনিস। নাসিমা আনিস─ পর্ব চার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *