ছোটগল্প।। সিকস্তি।। শেখ ফিরোজ
এক.
এই হুনছেন নাকি? রাতের খাবার খেয়ে শোয়ার পর রহম মাঝির বৌ রহম মাঝিকে ডাকে। রহম মাঝি কোন
জবাব দেয়না।আবার ডাকে-
হুনছেন?
-উ…কও।
হালকা ঘুমে ছিল রহম মাঝি।
– গাং তো ভাংতে ভাংতে এক্কেবারে কাছেই আইয়া পড়লো। অহন কী করবেন? জমি জিরাত যা আছিল, সবই তো একলগে পদ্মায় খাইলো। বাড়ির ভিডিডা আছিল,তাও মনে অইতাছে এইবার থাকব না। পেত্যেক ফিরা গাংগে সুজাসুজি ভাংগে।এই পাড়ে ভাংলে আমগো ঐ পাড়ের জমিগুলা যাইগা যায়।এইবার তো তেছরা কইরা ভাংতাছে আগের কোনো জমি তো জাগে নাই। রাক্ষসী পদ্মা এইবার আমাগো সবই নিলো!
আক্ষেপ করে বলতে থাকে রহম মাঝির বউ জরিনা খাতুন। বলে আর কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।সে কখনই হাওমাও করে কান্না করতে পারেনা। ছোট বেলা থেকেই একটু কান্না করলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস নিতে পারেনা। কর্মঠ মানুষ সে।অল্পতে কখনও ভেঙ্গে পড়েনা।রহম মাঝির সংসারে
এসে নদী ভাঙ্গনের কারনে চার বার বাড়ি ভাঙ্গা গড়া করেছে। কিন্তু এতটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েনি কোনদিন বরং স্বামীকে সে সাহস যুগিয়েছে।
রহম মাঝি বউয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,কাইন্দনা জরিনা। একটা ব্যবস্হা অইবই। যাগো আগেত্তাই কিছু আছিলোনা। তারাওতো বাইচা আছে। জীবনে তো মইরা যায় নাই। এই যে দ্যাহো-মোতাহার খালাসীগো তো কিছুই আছিলনা গাং যখন এর আগের বার ভাংছিল তহন মোতাহার আমারে কইতো, দুলা মিয়া, আমি অহন কই যামু? তোমাগো লগে মনে অয় আর থাকন অইবনা। আমারতো আর কোন জমি জিরাত নাই।
সরকারি রাস্তার লগে সরকারি যায়গায় বাড়ি করনের পরামর্শ দিছিলাম। এত্তগুলো বছরতো ঐহানেই কাডাইয়া দিল। অরা বাঁইচা আছেনা? অরা কি মইরা গেছে?
-না,মরে নাই। তয় আমরা কই যাইমু?
-আমরাও কোন একটা সরকারী যায়গা খুঁইজ্যা লমুনে।
– খুঁজলে তো অহনই খুঁইজ্যা লওন লাগবো। জায়গার দহল লওন লাগবো। পরেতো ভাঙ্গন শুরু অইলে আর
পাওন যাইবোনা। হগ্গলতে দহল কইরা লইব।
-হ। ব্যবস্হা একটা অইবনে বউ। তুমি চিন্তা কইরোনা।
উত্তর দিয়ে নিজেই চিন্তায় ডুবে যায়। কী করবে ! কোথায় যাবে ! মনের মধ্যে ভেসে ওঠে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি। তারাই ছিল এলাকার মাদবর। তার দাদা,তার বাপ এভাবে বংশানুক্রমে তারাই এলাকার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ছোট বেলায় দেখেছে-তারা বছরে একবার মহল্লার সব লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়াতো। গরু
দৌড় ও ঘোড় দৌড়ের জন্য বাড়িতে আলাদা গরু ও ঘোড়া পালন করতো। মহল্লার কেউ তাঁদের কথার বাইরে টু শব্দটা করার সাহস পেতনা। এখন আর কেউ ওভাবে তাকে পাত্তাই দেয়না। জুয়ার নেশায় পড়ে প্রায় সবই খুইয়ে ফেলেছে। যৌবনে বউয়ের সাথে প্রায়ই এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হতো। বউ কতবার রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে ! এখন আর সে জুয়া খেলেন না। কিন্তু,যৌবনে সময় থাকতে বুঝতে পারেননি। এসব ভাবতে ভাবতে
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। অতিতের ভুলগুলো দারুণভাবে আঘাত করতে থাকে তাকে। এক সময় সেও হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।শ্বাস কষ্টটা বেড়ে যায়…
– কাইন্দেন না। ঠিকই কইছেন, এক ব্যবস্হা অইবোই। তয় ডাক্তারে না আপনেরে কইছে বিড়ি খাওনডা বাদ
দিতে। বিড়ি খাইলে তো শ্বাসের ব্যারাম কমবোনা।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রহম মাঝি ছোট ছোট শ্বাস নিতে নিতে বলে-
আমার পোলাডাতো বিদ্যাশ থিকা কিছু ট্যাকা পঁয়সা পাডাইতাছে। সেই ট্যাকা দিয়া বাড়িতে একটা ঘর দিলাম। সুন্দর কইরা পাকা পায়খানা দিলাম ঘরের লগে। আমার তিথি মায়রে তো বিয়া দিওন লাগব।মাইয়াডা দ্যাখতে দ্যাখতেই ডাঙ্গর অইয়া গেল। অহন ক্লাস সেভেনে পড়ে। আইজ কাইল বাড়ি ঘর সুন্দর না থাকলে ভালো
ঘরেত্যা কোন সম্বন্ধ আসেনা।
দুই.
হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। বাজারের চালের দোকানে বন্ধু ছমেদের সাথে দেখা হয় রহম মাঝির। ছমেদ তার ছোট বেলার বন্ধু। তার ভালো মন্দে,সুখে-দুঃখে সব সময়ই সে ছমেদকে পায়। বাজারে আজকাল সেই রমরমা আমোদ ফুর্তি নেই।এই অঞ্চলের মানুষের চোখে মুখে এক কষ্টের ছাপ।প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গে। কিন্তু এবছর ভাঙ্গনের তীব্রতা একটু বেশিই।পুরো পাঁচ মাইল এলাকা ভেঙ্গেছে তবুও ভাঙ্গন থামছে না। তাই থেমে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ চাঞ্চল্য। বৃষ্টিতে আবুলের চায়ের দোকানে সবাই জড়ো হয়েছে।কেউ চায়ে চুমুক দিচ্ছে । কেউ আকিজ বিড়ি ধরিয়ে টানছে।আবুলের চায়ের নাম আছে আশপাশের কয়েক গ্রামে। আবুল খুব হাসিখুশি মানুষ।কিন্তু,আজ আবুলের চোখে মুখে সেই ফূর্তির ছাপ নেই।মনা মরা হয়ে চা বানাচ্ছে।ছমেদ গাজী মনযোগ দিয়ে আবুলের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে।সে একটু ভাবুক মানুষ। এই এলাকার একজন নাম করা পালাগানের শিল্পী।
-আবুল,তোমার আইজকা মন খারাপ ক্যান? জিজ্ঞেস করে ছমেদ গাজী।
-চাচা,আমাগো গ্যারামের অর্ধেকটা ভাঙছে। নদী বাড়ির বগলে আইয়া পড়ছে।অহন কী করমু।বাড়ি করারও জায়গা নাই আর! কই যাইমু,কী করমু ঠাহর করবার পারতাছি না।ঘরে বউডা পোয়াতি।এই সমায় ক্যামনে বাড়ি ঘর নাড়া দিমু।ক্যামনে কী করমু….
– এক ব্যবস্হা অইবো।তুমি এক কাপ চা বানাও।নদীর পাড়ের জীবন আমাগো! দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে ছমেদ গাজী। বলতে বলতে দোকানের পশ্চিম পাশে দাঁড়ানো তার বাল্য বন্ধু রহম মাঝিকে কাছে ডাকে। ছোট বেলায় তাদের পাশাপাশি বাড়ি ছিল।রহমের মা তাকে অনেক আদর করে ভাত খাওয়াতো। দুধ ভাত মেখে তাকে এবং রহমকে একসাথে খাওয়াতো। একসাথে দু’জন খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। নদীতে ভাঙতে
ভাঙতে তাদের বাড়ি এখন অনেক দূরে। অনেক দিন পর পর দু’জন দু’জনের বাড়িতে যায়।
-ছমেদ রে,এ বছর তো আমাগো বাড়ি ঘরও থাকব না।জমি জিরাত কিছুই জাগে নাই।কই গিয়া বাড়ি ঘর করমু। মাইয়াডা লইয়া,পোলার পোয়াতি বউডা লইয়া কই যামু ! দু’চোখের পানি টলমল করতে থাকে রহম মাঝির।
-তুই চিন্তা করছ ক্যান,রহম ? তোমার পোলা বিদ্যাশে থাহে। মাস গেলে ট্যাকা পাডায়।একটা জমি কিনন্যা
লইবি।
-পোলাডারে বহুত কষ্ট কইরা মালয়েশিয়া পাডায়ছিলাম।মাস গেলে ট্যাকা পাডাইতো। অহন ধর পাকড় চলতাছে। একদিন কাম করে তো দুই দিন পলায় থাকন লাগে। তাও পোলাডায় অল্প অল্প ট্যাকা পাডায়। ঐ দিয়াই তো সংসার চালাই।মাইয়াডার পেরাইভেডের ট্যাকা দিওন লাগে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে থাকে রহম মাঝি
-হ,অবৈধভাবে বিদ্যাশ গেলে নানান অসুবিধা অয়। রহম, চল্ দোহানের ঐ কোণায় খাড়াই। জরুরী একটা কথা
আছে তোর লগে। নিজেগো মান সম্মানের কথা !
চায়ে চুমুক দিতে দিতে ছমেদ বলে। তবে কথাটা এবার রহম মাঝির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,যাতে অন্য কেউ না শুনতে না পায়। কথাটা শুনে রহম মাঝি কিছুটা উৎকন্ঠিত হয়ে সাথেই সাথেই উঠে দাঁড়িয়ে ছমেদের হাত ধরে দোকানের কোণায় চলে যায়। কথা শেষ না হতেই গোখরা সাপের মত ফোঁস ফোঁস
করতে করতে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে রহম মাঝি।
তিন.
বাড়িতে গিয়ে রহম মাঝি বারান্দায় রাখা খেজুর পাতার পাটিটা বিছিয়ে বসে পড়ে।তাকে আজ খুব বিমর্ষ
দেখাচ্ছে। তার এমন চেহারা জরিনা অনেক বছর হল দেখেনি।
-কি অইছে,আপনের?
-কী আর অইবো। পড়া কপাল। মাইয়াডা এক পোলার লগে কলুকাঠি পার্কে যাইয়া টাংকি মারে। মান ইজ্জত
আর কিছুই থাকলো না। পোলার বাপে বাজারে বাজারে ঘুইরা ইন্দুরের ওষুধ বেচে। আমাগো চৌদ্দ পুরুষের
মধ্যে এমন নিচ কাম কেউ করছে। হকারের পোলার লগে ফষ্টিনষ্টি। ছি ছি ছি..
-কী কন আপনে ? রাইত অয়া গেল,মাইয়ারে তো খুঁইজ্যা পাইতাছি না।
– বুঝছি আমি। ঐ মাইয়ার নাম আর মুহে আনবানা। মাইয়া তাইলে ঐ পোলার লগে ভাগছে। পোলায় একটা
বদমাইশ। মাইয়ার নাম যদি আর একবারও মুহে লইছো, তো তোমারে আমি….
ছেলের বউ আঁখি ঘর থেকে হাত পাখা এনে শ্বশুরকে বাতাস করতে থাকে। মুখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা।
– বউ মা,তুমি মুরগির গোস্ত খাইতে চাইছো। পোয়াতি মানুষ।তোমারে আমি আইন্যা দিবার পারি নাই।অর
পেরাইভেডের ট্যাকা বাকী। তাই আগে দিছি। বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে রহম মাঝি।
চার.
এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। ছেলের বউয়ের পিড়াপীড়িতে।রহম মাঝির মনটা নরম হয়েছে। তিথি এসে বাবার
পায়ে ধরে মাফ চেয়েছে।জামাই মেয়ে বাড়িতে এসেছিল। তিথির শ্বশুর এসেছিল। বলে গেছে, বেয়াই আপনে চিন্তা কইরেন না।তিথিকে আমার মাইয়ার মত কইরা রাহুম।তিথি তার শ্বশুরকে বলেছে-এবার নদীতে ভাংলে তাদের আর বাড়ি করার জায়গা নেই। তাই,তিথির শ্বশুর করম আলী রহম মাঝিকে আশ্বস্ত করে গেছে লুনসিংয়ে
একটা সরকারী জায়গা আছে ওখানে তাদের বাড়ি করার ব্যবস্হা করে দেবে। ইতিমধ্য, নদীও ভাংতে ভাংতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে। দুই পরিবারের বেশ যোগাযোগ বেড়েছে।
– বাড়িতো ভাংতে অইবো। ট্যাকা পয়সার কোন জোগার করবার পারলেন? উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে
জরিনা খাতুন।
– না,ছমেদের কাছে ট্যাকা নাই। গেছিলাম কিস্তি ওলাগো কাছে।তারা এই এলাকায় কোন নতুন লোন ছাড়বোনা।
সাফ সাফ কইয়া দিছে। ঘরে কয়ডা ধান আছিল দ্যাও বেইচা আসি। আর গাছ গাছালি যা আছে,তারও অহন পানির দর। নদী ভাঙ্গন লাগছে।ধান্দাবাজরা সব হস্তায় কিনবো। সবগুলা গাছ সাত হাজার ট্যাকায় বেচছি।
কিস্তি ওয়ালাগো কাছে তোমার পাঁচ হাজার ট্যাকা সঞ্চয় আছে। ভাইঙ্গা আনো। আর হুনো,আমার বাজানে কি ফোন করছিল? কিছু কইছে, ট্যাকা পঁয়সা কি কিছু পাডাইবো?
– হ,ফোন করছিল। পোলাডা আমার জঙ্গলে জঙ্গলে পলাইয়া বেড়াইতাছে। জঙ্গলে নাকি সাপের ভয়। আল্লা, তুমি আমার পোলাডারে বাঁচাও। ভালো রাহো। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জরিনা।কাঁদে রহম মাঝি।কাঁদে
ছেলে বউ আঁখি।
চারদিকে সবাই ব্যস্ত বাড়ি ঘর সড়ানো নিয়ে। পাশের বাড়ির রাতুলের ছয় মাসের ছেলেটার কলেরা। যায় যায় অবস্হা। হাসপাতালটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আরও পনের দিন আগে। বাড়িঘর সড়াবে, নাকি ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে।সেই চিন্তায় এখন কিংকর্তব্য বিমুঢ় শেফালী। বাড়ির অর্ধেকটা ভেঙ্গে গেছে। শ্বাশুড়ির কোলে নিস্তেজ ছেলেকে দিয়ে জিনিস পত্র গোছাচ্ছে। স্বামী ঠেলা গাড়িতে ঘরের চাল নিয়ে
হবু বসত ভিটায় গেছে। শ্বাশুড়ি তার হাঁটাতে পারেনা।প্যারালাইসিস হয়ে এক পা ও এক হাত অবশ হয়ে আছে এক বছর যাবৎ।পাশের বাড়ির লোকজনের এমন নিদান তাকিয়ে দেখবার সময়টুকু নেই। সবাই যার যার মত ঘড়ির কাটার চেয়ে ব্যস্ত। জীবনের তাগিদ মাকেও করে তুলেছে নিষ্ঠুর। এ তল্লাটে নিয়তিই যেন বড় মমত্বহীন!
থাকার ঘরটার অর্ধেকটা ভেঙ্গে গেছে। সব কিছু বের করে আনতে পেরেছে নিরাপদে। এবার ফিরে
আসে শ্বাশুড়ির কাছে। এসেই নিস্তেজ ছেলেটা কোলে নিয়ে চুমু খায় শেফালী। সে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে নিঃশ্বাস নিচ্ছেনা তার কলিজার টুকটা ছেলেটা। অমনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কে শুনে এখানে কার চিৎকার! সবারই অন্তরে হাহাকার এখানে। দুনিয়ার সমস্ত দুঃখই যেন এ জনপদে! ছেলেটাকে
দাফন করা হয় মসজিদের পাশে। হয়তো কিছুদিন পর তাও চলে যাবে নদী গর্ভে। থাকবেনা কবরের
ঠিকানাটাও।
পাঁচ.
ঘর বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে রহম মাঝিরা চলে যায় নির্ধারিত ঠিকানায়। পেছনের বাড়ির পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে।
বাড়ির মালিকেরা চলে গেছে পাঁচ কিলো দূরে। রহম পরের দিন দুপুরে মাটির টানে শূণ্য ভিটেটা দেখতে আসে।এ
মাটির সাথে তার গভীর প্রেম হয়ে গেছে। শূণ্য ভিটেটার কিয়দাংশ বাকী আছে। এখনও বাকী আছে ছোট্ট একটি কাঁঠাল গাছ।তাকে দেখে গাছটির বসতি দু’টি শালিক মাথার উপর দিয়ে উড়তে উড়তে কান্নার মত আওয়াজ করতে থাকে।সে আওয়াজটা রহম মাঝির বুকে বেদনার তীর হয়ে বিঁধতে থাকে। প্রতিদিন সকালে তার পান্তা ভাতের সাথী ছিল পাখি দু’টি। গাছটিতে এখনও চিঁ চিঁ আওয়াজ করছে দু’টি ছানা। রহম মাঝির
সাধ্যি নেই ছানা দু’টো পেড়ে আনবার। একদম নদীর পাড়েই এখন গাছটা। দেখতে দেখতেই গাছটা খাড়া অবস্হায় ডুবে যায় নদীতে। ছানা দু’টো ভেসে উঠলো। তারপর আবার ডুবে গেল। সাধারণত যেখানে নদী ভাঙ্গে,
সেখানে পানির নিম্ন স্রোত বেশি থাকে।তা কোন কিছুকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়।সহজে ভাসতে দেয়না।শালিক দু’টি উড়তে থাকলো পানির উপরে ঠিক যেখানে ছানা দু’টোকে একবার দেখেছিল।দৃশ্যটা দেখে রহম মাঝি হতবিহ্বল হয়ে খুব কাছাকাছিই বসে পড়লো। বুক মধ্যে কী যেন এক ব্যথা ধাক্কা মারল।
এ যেন নিজের সন্তান হারানোর ব্যথা! এবার পাখি দু’টি ফিরে এসে রহম মাঝির মাথার উপর দিয়ে উড়তে উড়তে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকলো। কী যেন সংকেত দিচ্ছে তারা।আর অমনি ঝঁপ করে এক আওয়াজ হল। এবার পাখি দু’টি চিৎকার করতে করতে উড়তে থাকলো রহম মাঝির অদৃশ্য হওয়া পানির উপর দিয়ে।