করোনা ও কনডমের কথোপকথন : রণজিৎ সরকার
মানুষ এখন লজ্জায় মুখ ঢাকে না মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকে। করোনা আর কনডমের
প্রথম সংস্পর্শে ভাব-বন্ধনে জড়িয়ে গেছে। তাদের নিয়ে মানুষ কত কথা বলে
তাতে তাদের কোন লজ্জা নেই। দুইজন জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছে। করোনা
ভাইরাস অভিযোগের সাথে কনডমকে বলল, ‘পৃথিবীতে জনসংখ্যা বেশি হয়েছে। তুমি
১৯২০ সালে, মানে একশ বছর আগে আবিস্কার হয়েও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কি
ভূমিকা পালন করলে? আমাকে কেন একশ বছরের মাথায় ২০১৯ সালে আসতে হলো?’
করোনার এমন প্রশ্ন শুনে কনডম রেগে ফুলে গিয়ে বলল, ‘অবশ্যই বেড়েছে। দেখ না
পরিবেশের কি অবস্থা হয়েছিল। আর লকডাউনে শহরের পরিবেশের দিকে যে কেউ
তাকালে চোখ জুড়িয়ে মন ভরে যায় তার। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলছ, তাতে
কী? আমি তো নিজের ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অন্যের ইচ্ছায় ব্যবহৃত
হতে হয়। আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’
করোনা বলল, ‘তা ঠিক, তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। যা করেছ ভালোই করেছ। বাকি কাজ
আমি করব। আর সেজন্যই তো পৃথিবীতে এসেছি করোনা ভাইরাস রূপে।’
কনডম বলল, ‘তাই নাকি! কিন্তু ‘এভাবে মানুষকে আক্রান্ত করে কষ্ট দিয়ে মেরে
ফেলছ। এটা ঠিক হচ্ছে না। তোমার কারণে কিন্তু পুরো পৃথিবীটা বদলে গেছে।
অর্থনীতির বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে পৃথিবী।’
কনডমের কথাগুলোর গুরুত্ব কম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্পের মতো রসিকতা করে বলল, ‘ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটা পরে বলব।
আগে বলো, আমার আবির্ভাবে নাকি তোমার চাহিদা বেড়ে গেছে?’ করোনার এমন
রসিকতার কথা শুনে ফুলা কনডম ফুস করে ভেতরের হওয়া বের করে দিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। তোমার কারণে ঘরবন্দি অনেক দম্পতি একটু বেশি বেশি
ব্যবহার করছে। তাই চাহিদা বেড়েছে মনে হয়!’
‘ও আচ্ছা তা বুঝলাম। তোমাকে যারা ব্যবহার করছে তাদের ধন্যবাদ। আর যারা
মহামারির মধ্যে জনসংখ্যা একাধিক হারে বাড়াচ্ছে তাদের সাথে আমার আরও
বোঝাপড়া আছে। তাদের পরিবারের কোন একজনকে আক্রান্ত করব।’
এবার কনডম ভয়ে বলল, ‘ক্ষমতা তো তোমার। যেটা ভালো মনে করো সেটাই কর?’
‘হু, সেটাই করব। তুমি কোন চিন্তা করো না। অসচেতন মানুষের অনেক বিপদ,
তারাই আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে।’
‘তা ঠিক বলেছ। কিন্তু তুমি পৃথিবীতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছ। কর্ম নেই,
শিক্ষা চলমান নেই, অনেকে খেতে পারছে না। কম খেয়ে মানুষ দিন পার করছে। শহর
ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। কত রকমের সমস্যার সৃষ্টি করেছ তুমি। প্রতিদিন
অনেক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছ। আর সংক্রমণ বাড়িও না। এখন মনে হয় তোমার
বিদায় নেওয়ার সময়ে হয়েছে। কারণ ভ্যাকসিন আবিস্কারের পথে। এবার তোমাকে
যেতেই হবে।’
‘না না আমি পৃথিবী থেকে কোনো দিন যাব না। আমার হাত থেকে বাঁচতে হলে
সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরাই একমাত্র বাঁচার প্রথম উপায়। প্রতিষেধক
ভ্যাকসিন মিললে সুবিধা হবে। কিন্তু এই আমাকে নির্মূল করা যাবে না। এইডসের
মতোই আমাকে নিয়েই থাকতে হবে। একশ বছর পর আমাদের আরও একজন সঙ্গী আসবে।
প্রস্তত থাক।’
কনডম হতাশায় বলল, ‘বলো কী! এইডস থেকে বাঁচার জন্য আমাকে তো ব্যবহার করা
হয়। তোমার কাছ থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন আসছে। সে ভ্যাকসিন কি আমার বন্ধু
হবে?’
করোনা ভাইরাস এবার ফুস ফুস করে বলল, ‘হ্যাঁ, হবে। আমাদের সবার মিলে মিশে
থাকতে হবে। তবে মানুুষকে সচেতন হতে হবে নিজেকে নিজেই বাঁচতে হবে। প্রতিটি
মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাহলে নিজেকে বাঁচাবে। অন্যকেও
রক্ষার চেষ্টা করবে।’
‘সতর্ক ও নিয়মাবলি সঠিকভাবে পালন না করলেই তো বিপদ বেশি। আজ আর বেশি কথা
নয়। আমি আমার কোভিড এখন পরিবর্তন করে অন্য দিকে যাব। এখন যাই। ভালো থাক।
সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হও। অন্য সময় আবার দেখা হবে। আমার আবিস্কারের রহস্যের
কথাও তোমাকে কোন এক সময় বলব।’
কনডম মনে মনে ভাবল,‘ আবিস্কারে রহস্যের কথা শোনার চেয়ে তুমি আমার কাছ
থেকে না, পৃথিবীতে থেকে চিরতরে চলে গেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব।’
করোনা ভাইরাস মনে মনে ভাবছে, ‘কনডম যেহেতু কোন সাড়া শব্দ করছে না। আমাকে
বিদায়ও জানাচ্ছে না। তাহলে নিশ্চয় মনে মনে পৃথিবীর সব মানুষের মতো কনডমও
আমাকে বকা দিচ্ছে।’
করোনা ভাইরাস বলল, ‘কি বিদায়টা ভালো করে দাও। একটু বাই বাই বলো।’
কনডম বলল, ‘না না তোমাকে তো বিদায় দিয়ে লাভ নেই। তুমি তো পৃথিবীর সর্বময়
বিরাজ করছ। তোমাকে কিভাবে বিদায় দেই। তুমি পৃথিবী থেকে যেদিন চিরতরে চলে
যাবে সেদিন তোমাকে মৃত মানুষের মতো বিদায় জানাব। এ রকম দিন কবে আসবে?’
করোনা ভাইরাস বলল, ‘ আমি তো তোমাকে আগেই বললাম। চিরতরে বিদায় নেব না। তবে
যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, আমি তার কাছ থেকে দূরে থাকব।’
‘এ প্রচারণা কি আমি চালাব?’
‘অনেকেই তো প্রচারণা চালিয়ে সচেতন করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে
বলছে। কিন্তু মানুষ তো সতর্ক হচ্ছে না। যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে না। সে
আক্রান্ত হবে। ভোগান্তিতে পরবে আর ভোগান্তিতে পড়লেই বুঝবে মজা। যাদের
পরিবারে আমি আঘাত এনেছিলাম। সে পরিবার বুঝতে পেরেছে আমার দেওয়া যন্ত্রনার
ব্যথাটা কত গভীর।’
‘তাহলে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ? স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই বিপদ মুক্ত।’
‘জি, আমি সে কথাই বলার চেষ্টা করছি।’
‘তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যু ভয় মনে নিয়ে প্রতিটি মানুষ রোগ
প্রতিরোধে চেষ্টা করে যাচ্ছছে। আর তুমি বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছ। তুমি
অনেক দাপট দেখাচ্ছ কিন্তু। এবার একটু থাম।’
‘আমার থামার সময় আছে। তোমাকে পরে সব বলব।’
‘ঠিক আছে। তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। আমি মনে হয় তোমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ পেলাম।’
‘হ্যাঁ। একমাত্র তুমি আমাকে উপদেশ দিলে। আর কেউ আমার সাথে কথা বলার সাহস
পাইনি। বিজ্ঞানীরা রাতদিন চেষ্টা করছে। তারা একদিন সফল হবে। আর তখনই আমি
তোমার মতো গোপনে গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াব। সুযোগ পেলেই কাউকে না
কাউকে আক্রান্ত করব।’
‘তবুও তুমি যাবে না।’
‘পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেমন যাবে না। আমি যাব না। আজ আর নয়।
এখনো আমাদের কোভিড কোভিড মিটিং আছে। কে কোন এলাকায় অবস্থান করবে সে বিষয়
নিয়ে আলোচনা হবে। এখন যাই। পরে তোমার সাথে কথা হবে কনডম।’
কনডম বলল, ‘আচ্ছা, যাও। তবে মনে রাখবে আমার মতো সব সময় মানুষকে উপকার
করবে। ক্ষতির চিন্তা বাদ দিয়ে উপকারের চিন্তা করো।’
‘ঠিক আছে। তোমার কথা ভবিষ্যতে ভেবে দেখব। এখন সত্যি সতি যাই, বাই বাই।’
‘বাই বাই ভাইরাস।’
করোনাকে যাওয়ার কথা বলার পর কনডম তার সাদা শরীরের সাদা মন নিয়ে ভাইরাস
মুক্ত পৃথিবী দেখার অপেক্ষায় রইল।