ছোটগল্প

মুক্তিযুদ্ধের ছোটগল্প।। দখল।। ইভান অনিরুদ্ধ

শহর এখন পুরোপুরি পাক বাহিনীর দখলে। সরকারি কলেজের ফাঁকা হোস্টেলে তারা ক্যাম্প করেছে। সন্ধ্যা হলেই ছোট্ট এই মহকুমা শহর মিলিটারির আতংকে গোরস্হানের মত নীরব হয়ে যায়। সব বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সন্ধ্যায় একটা ভূতুরে চেহারা পায় শহরটা। সবাই একটা দমবন্ধ পরিবেশে সময় পার করছে। নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজও নিজের ভেতর অস্বস্তি ধরিয়ে দেয়!

তিনদিন হল ময়মনসিংহ থেকে পাঁচ ট্রাক ভর্তি মিলিটারি মোক্তারপাড়া ব্রিজ পেরিয়ে সদর্পে শহরে ঢুকেছে। যোগেনবাবু সন্ধ্যায় টিউশনি থেকে ফিরছিলেন। এতো তাড়াতাড়ি এই গ্রামের মত মহকুমা শহরে পাকবাহিনী চলে আসবে সেটা তার ধারণায় আসেনি। তিনি রাস্তার ধারে বদরুলের টং দোকানের পেছনে নিজেকে আড়াল করে এক অজানা শংকায় জলপাই রঙের পাঁচটি ট্রাকের চলে যাওয়া দেখলেন।

বাড়ি ফেরার পথে যোগেনবাবু একটা সিগারেট ধরালেন। দ্রুত পায়ে হাঁটছেন তিনি আর ঘন ঘন সিগারেটে টান দিচ্ছেন। ঘরে তার বৃদ্ধা মা আরতি দেবী, স্ত্রী রমা আর তার বড় ভাইয়ের মেয়ে রেণু। রেণু সরকারি কলেজে আই,এ ভর্তি হয়েছে এবার। রমার বাচ্চা হবে, সাত মাস চলছে। যোগেনবাবু ভাবছিলেন, যুদ্ধ তো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কতদিন চলবে তা কে জানে? তবে ঢাকায় রমনা ময়দানে শেখ মুজিব বাঙ্গালিদের মনে স্বাধীনতার যে মন্ত্র ঢুকিয়েছেন তাতে আজ হোক, কাল হোক- এই দেশ স্বাধীন হবেই! তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা, ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিটা শেখ মুজিবের নামের আগে না দিয়ে যদি অন্য কোন নেতাকে দেয়া হত, তাহলে কি তা এতোটা জুতসই হত? মোটেই না, এক্কেবারেই না। যোগেনবাবু মনে মনে বঙ্গবন্ধুর মঙ্গল কামনায় উপরওয়ালার কাছে প্রার্থণা করলেন।

দুই

রমা যোগেণবাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী টাইফয়েডে মারা যাবার পর তিনি ঠিক করেছিলেন আর বিয়ে করবেন না। স্কুলের চাকরি আর টিউশনি করেই জীবনের নিঃসঙ্গতা দূর করে দিবেন। কিন্তু মায়ের চাপে, বংশ রক্ষার তাগিদে বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিয়েটা করতে হল। বড় ভাই তিনবছর আগে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেছেন। ভাইয়ের শোকে বৌদিও বছর দেড়েক হল গত হয়েছেন। তাই বাপ-মা মরা রেণুর দায়িত্বও তিনি নিজের মেয়ের মত পালন করছেন এখন।

নেত্রকোণা শহরের এই বাড়িটা যোগেণবাবুর পৈত্রিক। এক কাঠা জমির উপর এল-প্যাটার্নের বড়সড় একটা টিনের ঘর। সামনের অর্ধেকটা জুড়ে উঠান। উঠানের একপাশে বারোমাসি এলাচি লেবুর গাছ। পাড়া-প্রতিবেশী অনেকেই আসে এই গাছের এলাচিগন্ধী লেবু নেয়ার জন্য। কোন কারণে যোগেণবাবুর মন খারাপ হলে এই লেবু গাছের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। লেবু ফুলের ঘ্রাণ তার এতো ভাল লাগে যে বোঝাতে পারবেন না! অনেকের অনেক রকম ফুল প্রিয় হয়। কিন্তু তার লেবু ফুল খুব প্রিয়। জুলাই মাসের এই ভ্যাপসা গরমেও তিনি বাইরে থেকে বাড়িতে ঢোকার সময় কিছুক্ষণের জন্য লেবু গাছটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। একটা ছোট ডাল টেনে লেবু ফুলের ঘ্রাণ শুঁকার চেষ্টা করলেন। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। তিনি বিড়বিড় করে লেবু গাছটার দিকে তাকিয়ে বললেন, আহা, আজকে রাতে একটা ঝুম বৃষ্টি নামলে খুব ভাল হত! রমাকে নিয়ে অনেকক্ষণ সেই বৃ্ষ্টিতে ভিজতেন। রমা হয়ত রাজি হত না তার এই পাগলামিতে। কিন্তু তিনি জোর করেই তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসতেন। তারপর জোরে আওয়াজ করে গাইতেন রবীন্দ্রনাথের সেই গানটা- শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে … ।

ঘরে ঢুকতেই রমা খুব উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, শহরে নাকি মিলিটারি এসেছে? যোগেণবাবু কিছুটা বিরক্তি নিয়ে রমার দিকে তাকালেন- হুম, তাই তো দেখলাম। পাঁচটা ট্রাক ভরে মিলিটারি শহরে ঢুকেছে। সরকারি কলেজের হোস্টেল দখল করে ক্যাম্প করেছে। পাশ থেকে রেণু জিজ্ঞেস করল, কাকা, তাহলে কলেজ কি বন্ধ থাকবে? যোগেনবাবু তার ভাতিজির দিকে মুচকি হেসে উত্তর দিলেন- মা রে, জান যদি না বাঁচে তাহলে কলেজ আর পড়াশোনা দিয়ে কী হবে? আগে আমাদের জান বাঁচাতে হবে।

তিন

রাতে খাওয়ার সময় দরোজায় মৃদু কড়া নাড়লো কেউ! রেণু গিয়ে দরোজা খুলে দিল। যোগেণবাবুর প্রতিবেশী আব্দুস সালাম সাহেব ঘরে ঢুকলেন। তিনি মহকুমা মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। যোগেনবাবুর বাড়ির দেয়াল লাগোয়া তার বাড়ি। ভালো-মন্দ যেমনই হোক, যোগেণবাবুর মা বলেন, প্রতিবেশী আর ঘরের বউ বদল করা যায় না। মিলমিশ করেই থাকতে হয়। সালাম সাহেব সরাসরি ভেতরের ঘরে চলে এলেন। আরতী দেবী তার নাতনিকে বললেন, রেণু, তোর কাকাকে একটা থাল ধুয়ে ভাত বেড়ে দে। সালাম সাহেব ব্যস্ত হয়ে বললেন, মাসিমা, আমি এখন খাবো না। ঘণ্টাখানেক আগে যে খাবার খেয়েছি তা এখনো গলা পর্যন্ত আটকে আছে। পাকিস্তানি মেজর আমাকে ডেকেছিল। এলাকার পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে। কোন এলাকায় কতজন হিন্দু আর মুক্তিবাহিনীর লোক আছে তার একটা লিস্ট দিতে বলল। তার সাথেই এক টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করে এলাম। এই কথায় ঘরের সবাই বজ্রাহতের মত সালাম সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তিনি হাসিমুখে বললেন, আপনারা হলেন আমার আপনজন। ঘরের সাথে ঘর, অনেক দিনের সম্পর্ক। আমাকে ভুল বুঝবেন না। পরিস্থিতি খুব খারাপ, কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে বলা যায় না। আমি বলি কী, আপনারা আপাতত শহর ছেড়ে অন্য কোথাও নিরাপদ জায়গায় চলে যান। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার বাড়িঘরে ফেরত আসবেন।

যোগেণবাবু ভাত রেখে উঠে পড়েছেন। তিনি অসহায়ের মত সালাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই অবস্হায় কোথায় যাবো? গ্রামে গিয়ে থাকাও কি নিরাপদ? সালাম সাহেব উত্তরে বললেন, তা ঠিক, সব জায়গাতেই সমান বিপদ। তারচেয়ে বরং আরেকটা কাজ করেন। শুনেছি আপনাদের কলকাতায় আত্মীয় আছে। কলমাকান্দা বর্ডার পার হয়ে ওপারে চলে যান। আমি ব্যবস্হা করে দিচ্ছি। যুদ্ধ শেষ হলে আবার দেশে ফিরে আসবেন।
সালাম সাহেবের এই কথায় আরতি দেবী ধরা গলায় বললেন, নিজের ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি রেখে আরেক দেশে যাবো বাবা? এই বাড়ি, এই সংসারের জিনিসপত্র কার কাছে রেখে যাবো? রমা আর রেণু কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। যোগেণবাবুর চোখের ইশারায় তারা থেমে গেল। তিনি সালাম সাহেবকে বললেন, যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে ভাই। আপনি যেহেতু মুসলিম লীগের নেতা, তাই এখন বিপদ মুক্ত আছেন। এই কারণে আপনাকে বিশ্বাস করে সবকিছু আপনার জিম্মায় রেখে যেতে চাই। প্রতিবেশী হিসাবে আমরা কেউ কারো অমঙ্গল চাই না। আপনি কথা দিলে আমরা আগামীকালই ওপারে চলে যেতে চাই।

ঘরের পরিবেশ পাথরের মত ভারি হয়ে গেছে। আর সেই বিশাল ভারি পাথরের নিচে যেন চাপা পড়েছে যোগেনবাবুর পরিবার। রেণু কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে কেঁদে এখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আরতি দেবী বিলাপ করে কাঁদছেন। কেবল রমা সালাম সাহেবকে বললো, ভাই, আপনি কেবল আমাদের প্রতিবেশী নন, আমার আপন ভাইয়ের মত। তাই সবকিছু আমানত হিসাবে আপনার কাছে দিয়ে গেলাম। সালাম সাহেব যোগেণবাবুর হাত চেপে ধরে বললেন, আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমার উপর আপনাদের যে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা এবং আমানতের খেয়ানত আমি জান থাকতে করবো না। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন ।

সারা রাত যোগেণবাবুর পরিবারের কেউ ঘুমায়নি। কী যে এক মরণ যন্ত্রণায় মানুষগুলো ছটফট করেছে তা কেবল উপরওয়ালাই জানে। ভোরবেলা থেকেই কেবল যতটুকু সহায়-সম্বল সাথে নেয়া যায় তাই গোছগাছ করল সবাই। এই পাড়ায় এখন কেবল তিন ঘর হিন্দু পরিবার আছে। আগে আরো বেশী ছিল। পরিস্থিতির কারণে সবাই দেশ ছেড়ে ওপারে চলে গেছে। কিন্তু যোগেণবাবু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন- নিজের জন্মভিটা, নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কিন্তু আজ তার সেই প্রতিজ্ঞা মিথ্যা হয়ে গেল। যেন নিজের কাছেই হেরে গেলেন। তবে যুদ্ধের এরকম ভয়াবহ অবস্হার মধ্যে হেরে যাওয়া ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ যে খোলা নেই। বৃদ্ধা মা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, কলেজ পড়ুয়া ভাইয়ের মেয়ে- এদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টা এই মুহূর্তে তার কাছে সবার আগে। শেষমেশ এতোগুলো জান বাঁচানোর তাগিদেই যোগেণবাবুর পরিবার যুদ্ধের এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে বর্ডার পার হয়ে কলকাতা চলে গেলেন।

চার
যোগেণবাবুর পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর থেকেই সালাম সাহেব খুব ফুরফুরা মেজাজে আছেন। চোখের সামনে তার হিন্দু প্রতিবেশী ভয়ে দেশ ছেড়েছে। ঘরবাড়ি তার জিম্মায় দিয়ে গেছে। তার ভেতরের গোপন ইচ্ছের কথা তো আর এই অসহায় হিন্দু প্রতিবেশী আঁচ করতে পারেনি। এইসব ভেবেই তার মনের ভেতর এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ খেলা করছে এখন! সারাদেশের মানুষ যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, লড়াই করছে, প্রাণ দিচ্ছে তখন এই সালামের মত হাতেগোনা কিছু মানুষরুপী শয়তানই কেবল আনন্দে মেতে আছে। মিলিটারির কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। খুব উৎসাহ নিয়ে তিনি এবং তার লোকজন শহরের হিন্দুদের তালিকা আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের তালিকা মিলিটারি ক্যাম্পে দিচ্ছেন। সেই তালিকা ধরে ধরে পাকবাহিনী শহরে অভিযান চালাচ্ছে। মুক্তিবাহিনী এখনো এই দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেনি। তবে সহসাই তারা শহরে ঢুকে হয়তো এদের ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণ চালাবে।

সারাদেশে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। মাস খানেকের ভেতর এক রাতে মুক্তিবাহিনীর তিনটি সশস্ত্র গেরিলা দল পাকিস্তানি মিলিটারি ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। তুমুল যুদ্ধের ভেতর দিয়ে একদিন নেত্রকোণা শহর পুরোপুরি দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী। সালাম সাহেব সুযোগ বুঝে শহর ছেড়ে পালিয়ে কোন এক গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। মুক্তিবাহিনীর লোকেরা তার বাড়িতে এসে হামলা করে। তাকে না পেয়ে তার ঘরবাড়ি ইচ্ছে মত ভাংচুর করে চলে যায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পর যোগেণবাবু কলকাতা থেকে নিজের ভিটায়, নিজের প্রিয়তম এই শহরে ফিরে এলেন। তিনি এখন একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভ করা স্বাধীন দেশের নাগরিক! তার ভেতরে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। তিনি আপাতত একাই এসেছেন। তার ফুটফুটে একটি ছেলে হয়েছে। কয়েকদিন পর তিনি পরিবারের অন্য সবাইকে নিয়ে আসবেন। যোগেণবাবু স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে উদ্ধত ভঙ্গিতে নিজের উঠানে পা রাখলেন। তিনি দেখলেন, উঠানের মাঝখানে যে তিনহাত উঁচু সীমানা প্রাচীর ছিল তা নেই। এলাচিগন্ধী লেবু গাছটা নেই, তুলসি গাছটা নেই। তার মনে হল, এ কোন ভিটায় তিনি ফিরে এলেন! কার উঠানে তিনি পা রাখলেন!

যোগেণবাবু সালাম সাহেবের অপেক্ষায় অনেকক্ষণ ঘরের বারন্দায় বসে রইলেন। তার ঘরের দরোজায় অন্য দুইটা তালা ঝুলছে, যার চাবি সালাম সাহেবের কাছে। তবে সালাম সাহেবের বাড়ি থেকে কেউ উঁকি দিয়েও দেখলো না যোগেণবাবুকে। নয় মাসের যুদ্ধ কেমন করে বদলে দিয়েছে সব- তাই ভাবছেন তিনি বসে বসে। যুদ্ধের কত অসীম ক্ষমতা! বেশ কিছুক্ষণ পর সালাম সাহেব ফিরলেন। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, মুখে মেহেদি দেয়া চাপ দাড়ি, চোখে সুরমা আর মাথায় কিস্তি টুপি। এ এক অন্যরকম সালাম সাহেব। যোগেণবাবু তার দিকে এগিয়ে গেলেন কিন্তু সালাম সাহেব তার চিরচেনা প্রতিবেশীকে যেন চিনতে চাইলেন না ইচ্ছা করেই! যোগেণবাবু যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছেন। যে সালাম সাহেব একাত্তরে যুদ্ধের সময় নেত্রকোণা মহুকুমা মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন, সেই সালাম এখন ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে গেছেন! আল্লাহর কসম খেয়ে যে লোক তার ভিটেমাটির জিম্মাদার হয়েছিলেন, সেই লোক এখন তার ভিটেমাটি দখল করে নিজের মত করে বাড়ি সাজিয়েছেন!

পাঁচ
কারো কাছে বিচার না দিয়ে যোগেণবাবু কেবল দু’হাত তুলে উপরওয়ালার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। তিনি বাড়ির ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। চোখে মুখে অক্ষমতার নির্মম ছাপ এঁকে অসহায়ের মতো বাড়িটির দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার প্রিয় জন্মভূমি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হল অথচ নিজের ভিটা দখল হয়ে গেল আমার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর দ্বারা! হে ভগবান, তুমি একদিন এর বিচার কর!
শেষবারের মত যোগেণবাবু শহরের বুক চিরে বয়ে চলা মগরা নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালেন। কী স্বচ্ছ সেই নদীর জল! মাথার উপর তারাজ্বলা আকাশ। রাতের অন্ধকার চারপাশে যেন একটা কালো চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। এরকম অন্ধকারেও যোগেণবাবু যেন তার ছেলের হাসি মুখটা দেখতে পেলেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *