বই আলোচনা

শিল্প সাহিত্যের কাগজ ঘুংঘুর; অক্ষরে অক্ষরে শিল্প নির্মাণ করে।। ইসরাত জাহান

ঘুংঘুর নিয়ে আমার একটি মজা অভিজ্ঞতা আছে, সেটাই শুরুতে বলে নিচ্ছি। আমার লেখা গল্প ’’রূষ্ট উপহাস’’ যখন ঘুংঘর লন্ডন বইমেলা সংখ্যার জন্য নিবাচিত হয়, তখন আমি সেটা আমার টাইমলাইনে পোস্ট করি। সেসময় আমার পরিচিত একজন আমায় জানায় ঘুংঘুর বানানটাতো ভুল। আমি তার কথা শুনে বুঝতে পারি তিনি ঘুঙুর সাথে ঘুংঘুরকে মিলিয়ে ফেলেছেন। আমি তখন তাকে জানাই, ঘুংঘুর বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩১ মিটার প্রায় আর নদীটির সর্পিলাকার এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। বর্তমানে সময় এমনই অসংখ্য নদীর নাম হারিয়ে গেছে আমাদের শহরকেন্দ্রিকতা ও ব্যস্ততায়। তবে ঘুংঘুর নদীর নামটি আমরা ঘুংঘুর শিল্প সাহিত্যের কাগজের মাধ্যমে আবার স্মরণ করছি। সেকারনে ঘুংঘুর সাহিত্য পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঘংঘুর লিটলম্যাগাজিন অঙ্গনে দীর্ঘ আট বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। কবি ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন কবিরের সম্পাদনায় ঘুংঘুর পত্রিকাটি প্রতি তিন মাস অন্তর প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকাটির সবচেয়ে উৎকর্ষ দিক হলো, সাহিত্য মানসম্মত লেখা প্রকাশ। এই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, আধুনিক শর্টকাট জীবনযাপনের কারনে আমরা বই বিমুখ হয়ে পড়ছি। আমাদের এই বিমুখতা থেকে জাগ্রত করতে লিটলম্যাগাজিন অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। সেখানে ঘুংঘুর অন্যতম।
লিটল ম্যাগাজিনের কাজ হচ্ছে তারুণ্যের জয়গান করা। মানসম্পন্ন একটা লিটল ম্যাগাজিন আমাদের সাহিত্যে সৃষ্টিশীলতার ছাপ রাখে। তরুনদের সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ দিয়ে চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আর সেই কাজটি ঘুৃংঘুর সাহিত্য পত্রিকাটি ইতিমধ্যে করে দেখিয়েছে। তাইতো ঘুংঘুর এখন সবর্জন সমাদৃত লিটল ম্যাগাজিন।
ঘুংঘুর এর এবারের সংখ্যাটি ২৪তম সংখ্যা। যা লন্ডন বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।।এবার সংখ্যায় অতিথি সম্পাদক লন্ডন প্রবাসী প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। প্রচ্ছদ করেছেন স্বনামধন্য অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াত।বিপাশা হায়াতের ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ প্রচ্ছদে কারনে সংখ্যাটি আরো আকর্ষনীয় হয়েছে। ‘ঘুংঘুর’-এর সম্পাদনা পরিষদের সকলে এই প্রচ্ছদ নিবার্চনের কারনে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
সংখ্যাটিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অনেক কবি-লেখকের সমাগম ঘটেছে। প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু প্রবন্ধ, গল্প, একক কবিতা, দুটি করে কবিতা, তিনটি করে কবিতা, এবং গুচ্ছ কবিতা। রয়েছে অনুবাদ, বই আলোচনা ও ছোট কাগজ আলোচনা।
এ সংখ্যায় কবিতা প্রকাশিত হয়েছে অরুন কুমার ঘাড়াই, মঈনউদ্দিন মুনশী, আতাউর রহমান মিলাদ, ওবায়েদ আকাশ, মাসুদ পথিক, মৃত্তিকা গুণ, এ কে এম আব্দুল্লাহ, নিলয় রফিক,শীলা মোস্তফা, সুমন বনিক,শৈবাল তালুকদার, আবু জুবায়ের, সাফিয়া জাহির, সহ প্রমুখ কবিগনের।
প্রবন্ধ লিখেছেন- বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়, হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়, সেলিম জাহান, মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী ও ঋতো আহমেদ।
কবিতা, জীবনানন্দ দাশ, গ্রামীণ বাংলার সামাজিক রূপান্তর এবারের সংখ্যাটির প্রবন্ধের বিষয়।
ওলগা তোকারজুক, কেইট শোপ্যাঁন ও এনডি উইয়ারের গল্পের অনুবাদ করেছেন অনুবাদকগণ দক্ষ হাতে।
গল্প লিখেছেন- মোহিত কামাল, মনিজা রহমান, কাজী মোহাম্মদ আলমগীর, সানাউল্লাহ নূর, মোশতাক আহমেদ, মঈনুল হাসান, হামিম কামাল, অলাত এহসান, আব্দুল আজিজ , আনিফ রুবেদ, ইসরাত জাহান।
‘ঘুঘুর’ প্রতি তিন মাস অন্তর প্রকাশিত হয় কিছু মানুষের নিরলস শ্রমের কারনে । ‘ঘুংঘুর’-এর সম্পাদনা পরিষদে আছেন কবি ফকির ইলিয়াস, শাহাব আহমেদ, কথাসাতিহ্যিক মিলন আশরাফ ও কবি খালেদ চৌধুরীর মতো সাহিত্যকেরা। তাদের আন্তরিকতায় এমন একটি মানসম্পন্ন লিটল ম্যাগাজিন আমরা হাতে পাচ্ছি। ঘুংঘুরের প্রকাশনা ও লিটলম্যাগ আন্দোলনে তার অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকুক এই প্রত্যাশা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *