কাব্যশীলন- শরৎসংখ্যা- ছড়া-কবিতা- ২০২৪
শরতে কবির কামনা
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর
শরৎ নাকি এসেছে সে তবে কোথায়
কোথাও কি কাশফুল ফোটে নাই!
কোন দিক দিয়ে কোথায় তবে এল?
দেখতে পেলুম না কখন এল আর গেল!
কেন দেখতে পেলুম না ভাবছি দেখব কত ভেবেছি
তাহলে আমি কি তবে অন্ধ হয়ে গেছি!
সাদা কিছু দেখছি না সবখানে দেখি
লাল আর লাল কী থেকে কী হয়ে গেল একি
শরৎ এলে ভেবেছিলাম আসবে শুভ্রতা
আমি যে দেখি কেবল বর্বরতা
দেখে হারিয়ে ফেলি খেই
শরতে শুভ্রতা নেই সাদা মেঘ নেই
আছে কেবল উগ্রতা আছে বানের পানি
আর এখনো মেঘে ঢাকা আকাশখানি
আর শুনি কারা যেন করছে হাহুতাশ কানাকানি
কবি বলে শরতের আকাশ থেকে কালো মেঘ সরে যাক
শরতের নদীর কোলজুড়ে সাদা কাশফুল ফুটে থাক।
শরৎ আবেগ
ইলিয়াস ফারুকী
এক সাথে হেঁটে এলে এক ক্রোশ পথ
ক্লান্তিহীন নৈশ প্রহরীর মতো
‘ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজা’ সুকান্তের কবিতায় চড়ে,
এখন কেন যে দ্বিধা করো, অস্বস্তিতে ভোগো
যখন শরৎ স্নিগ্ধতা ছড়ায়,
রবির কিরণে জাফরান সৌরভের মিহি ছায়া,
শাপলার বিলে হেসে উঠে জল তিতির, ডাহুক
আর, শাপলাতোলা বালককাল।
আর একটু পথের আলে হাঁটলেই পাবে
কাঁশবন, শিশিরভেজা শিউলি,
শুভ্র মেঘ আর বৃষ্টি ছোঁয়া দুল
না শীত, না উষ্ণ নীর্মল বকুল।
আরেকটু ধৈর্য ধরো, একাগ্রতা নিয়ে
না হয়ে আরো আধা ক্রোশ পথে কোমলতা ঢালো,
তোমার আলতা রাঙ্গা পায় না হয়ে লাগলো
একটুখানিক ছাতিমের রেনু, শিশির বিন্দু।
একসাথে হেঁটে এসেছি ক্রোশ ক্রোশ পথ
নক্ষত্রের আলোয়ে ছোঁয়াবো বলে চাঁদের পরশ।
ক্লান্ত হয়োনা, চোখ মুদে অনুভব করো ছাতিম সুভাষ,
কঠিন কষ্টের পর অনিন্দ্য স্বপ্নের প্রসব, রক্তিম আভাস।
কামফুল
বঙ্গ রাখাল
স্বপ্নগুলো উড়তে থাকে
সুন্দরের চোখে কামফুল হয়ে
তুমি মোহনীয় ভঙ্গিতে─বিষাদের কাছে
চুলের খোপা দিলে খুলে
নদী; ছুঁটে চলে নীরবতায়─ ঝড় রাত
─রক্তাক্ত রাতে
উৎসমূল হতে শরীর
দুজনের গেছে বেঁকে─ চাঁদ ও হাওয়া
প্রেমিক কংক্রিটের শহর
কাশফুল কাশফুল বাতাস নিয়ে
কোথা থেকে এলো─দূরে হিজলের বনে
রক্তের দাগ মুচতে না মুচতেই─
আগুনে পোড়ে মন─ সাথে কাশফুল…
তুমি যেন কাশফুল
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
হৃদয়ের মাঝে শুধু তোমার বিচরণ?
আচানক শরীরজুড়ে সুখের শিহরণ।
তোমার পরশে আজ ভরে যায় মন?
ক্ষণিকের আলিঙ্গনে স্মৃতির কাঁপন।
এ সুখের ছোঁয়া যেন উত্তরের হাওয়া,
এক জীবনে যেন তোমাকেই চাওয়া।
তুমি যেন কাশফুল শান্ত নদীর পাশে,
প্রেম-মেঘ জমা থাক শরৎ আকাশে।
করোনাকাব্য ১০
রায়হান উল্লাহ
কবিতা-জীবন পাশে থুয়ে শুয়ে থাকি;
ঘুমাইনি। তোমাকে দেখার ছল বাকি-
কতটা অসহায় তুমি? জান কবিতাই
আমার ঘর, আর জীবন পুরোটাই
বুঝতে গিয়ে ব্রাহ্মাণ্ডে করি কলরব,
কাঁপা কাঁপা দানে নিগূঢ় মননে ভব।
একদিন সব সাঙ্গ হবে- হুতাসন
তখনো কবিতা কিংবা রবে জীবন।
শুয়ে থাকা বা ঘুমানো – কী আর এমন
করতে পারি? কতটুকু সামর্থবান
মানুষ-প্রাণ, শুরু – শেষের খেলা; ভাঙে
বেলা। যাত্রা হয় অচিনপুরেই, গাঙে
ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি, মাটির ওলট-পালট,
মনে-রণনে স্মৃতির মলাট।
একটু চাওয়া পাওয়া
সাঈদা নাঈম
চেয়েছিলাম যা পাইনি কখনো
পেয়েছি যা ভাবিনি পাব
হাত ধ’রে নদীর তীরে
হাঁটা হবে না কখনো,
অবলীলায় পার হয়ে গেলাম মহাসমুদ্র।
ছায়াচ্ছন্ন দৃষ্টি মেলে সবকিছু দেখলাম
সমুদ্রের গর্জনে তীক্ষ্ণ সুর শুনতে পেলাম
ধ্বনিত হচ্ছে শূন্যে তা অবিরাম।
ভালোবাসি ভালোবাসি, ভালোবাসার আহ্বান।
নির্জন চন্দ্রিমার হাতছানিত
ডাকে ইশারায় কাছে যেতে,
কতিপয় মানুষের কন্ঠে ঘোর ভাঙ্গে
মগ্নতা কেটে যায় সাথে সাথে।
চাঁদের আলো দূর থেকেই তো ভালো
সান্ত্বনা দিয়ে চলে নিজ পথে আবারো।
পালতোলা নৌকার মাঝখানে বসে
ফিরে যেতে হবে একদিন ঠিক গন্তব্যে,
উৎক্ষিপ্ত হাওয়ার বিপরীতে হাল টেনে
কল্লোলমুখর পরিবেশে নোঙর করতে হবে।
একাকিত্বের আর ইচ্ছের একসাথে হয় না বসবাস,
যা চাইনি তা ই পেতে চলেছি আবার।
সময়ের স্তম্ভিত বিন্দুর হয় না কোন নাশ
দৃষ্টির মাঝে হারিয়ে চাইনা তো সর্বনাশ।
দুর্গতিনাশিনী
নুসরাত সুলতানা
এক শরতে মাতাল জোছনার রাতে
সৌমিত পায়ে নুপুর পরিয়ে বলেছিল-
নূরজাহান এই চান্দের কসম।
তুইই আমার দুর্গতিনাশিনী দুর্গা।
তোকে ছাড়া এ জীবন বড্ড পানসে, অর্থহীন, ক্লিশে।
আমি বলেছিলাম – বড্ড গোল বাঁধাচ্ছিস সোম্য দা!
এসব কোনোদিন হবার নয়।
সে বলল- প্রেমের চাইতে ধর্ম বড় তোর?
আমি ডাগর চোখে বললাম- মশাই বিবাহ সমাজিক বিষয়।
প্রেম সেখানে বড্ড অচল মুদ্রা।
আমি বাবার রাজকন্যা, সৌম্য ওর মায়ের সবেধন নীলমনি।
দুই মায়ের নীরব চোখের জলে ভেসে গেছে প্রেম।
আমার যেদিন বিয়ে জেঠীমা নিজের কানের দুল খুলে
আশীর্বাদ করে বললেন – ওরে মায়ের ধম্ম কী আলাদা
অইতে পারে?
তুই সংসারে দুর্গতিনাশিনী হইস মা।
আমি মাসীমার বুকে তখন খুঁজছিলাম সৌম্যর গন্ধ
আর নিজমনে বলছিলাম – আমি রক্তমাংসের
মানুষের জীবন চেয়েছিলাম জেঠী মা…
ক্লান্ত চোখের খেলা
ইমরুল ইউসুফ
শরতের পাতার ফাঁকে আকাশ নীলের চিঠি
নীল বর্ণের চিঠিগুলো বসে পিঠাপিঠি
তোমার সঙ্গে গল্প করে সাঁঝের বেলা
একলা দুপুর
পরে নূপুর
জলের তলে হেলেদুলে মিষ্টি হাসির খেলা।
দূর আকাশে সান্ধ্য তারা
পূর্ণিমাতে পাগলপারা
তোমার হাতে হাত রেখে তাই
মেঘ থেকে নীল করে সদাই
হাসি ফোটাই তোমার মুখে
দুঃখ ঢেকে থাকছি সুখে
এইতো আছি আর কটাদিন
খুলতে হবে সব জটাদিন
ভাঙতে আকাশ নীলের চাবি
তোমার কাছে দাবি
চলো হারাই বুকের নদীর কাছে
যে নদীতে বাসতে ভালো ভাসিয়ে দিতে ভেলা
এমন করে শেষ যে হলো ক্লান্ত চোখের খেলা।
সহানুভূতির মেয়াদ
খান মুহাম্মদ রুমেল
শরতের শহরে শোক ঝরে
আমার পতনের!
তুমি তাকে বৃষ্টি বলে ডাকো?
আশায় থাকো নতুন জন্মের আমার?
সকল বাউণ্ডুলেপনা থামিয়ে বসে থাকি
তুমি একটা সুগন্ধি ফুল হবে!
আদতে তুমি একটা পলাতক পাখি।
মানুষের ব্যথার মেয়াদ আজীবন
মানুষের সহানুভূতির মেয়াদ কয়দিন?
সব ছাপিয়ে তুমি একটা গ্রাফিতি হয়ে যাও,
শিউলির! এই শরতে এটাই হবে সান্ত্বনা!
কাশবন মন
জহুরুল ইসলাম
শরত সন্ধ্যায় গা ঢাকা দিয়েছে বুনোহাস,
অথচ
আশার প্রদীপ জ্বলে অহর্নিশ।
আকাশের শুভ্রতায় বৃষ্টির ফেনা,
নবজাত পাখির চোখের মতো ছিলো প্রেম।
সাাঁতার কাটে বুনোহাস-
জাগ্রত জল অগ্নি ফোটা-
পুড়ছে শরত বৃক্ষের ছাল-
কাজল বিলের সাদা ফুল এনে ঝুলিয়ে দেব।
শরত নিবাসী-
রাত্রির কালো আকাশ নীল জঙ্গল।
হৃদয় হাড় ভাঙ্গা বাতাসের কারখানা।
নক্ষত্র বনে চাঁদ আর হাসে না কোনোদিন।
হেমন্তের পানে চেয়ে থাকে শরত নিবাসী কাশবন মন।
শরতের শুভ্রতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মঈন মুরসালিন
রোদগুলো পায়ে পায়ে ধীরে ধীরে হেঁটে আসে
সরল বাতাসেরা ডুবে যায় রোদের প্লাবনে-
কান্না ভেসে আসে, কান্না
সরল প্রকৃতি হারিয়ে ফেলে কোমলতা।
সতেজ বাতাসেরা মুগ্ধতায় ছুঁয়ে যেতে
পারে না মোহনীয় মুখ
রোদগুলো হয়ে যায় হিংসুটে নারী
রোদগুলো হয়ে যায় শকুনের চোখ।
রোদগুলো কেনো যেনো আগুন হয়ে যেতে থাকে
বারবার সবুজকে জ্বালিয়ে দেয় মহা উল্লাসে
আগুন রোদেরা শুনো-
শরতের শুভ্রতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখো
তোমারও কোমল শীতল হয়ে যেতে ইচ্ছে করবে।
স্মৃতিপোড়া গন্ধ
এরশাদ সোহেল
তুমি প্রকৃতির বুকে কান পেতে শোনো,
মুসাফির প্রেমিকেরা,
আর্তিতে হেঁটে চলে নিসর্গ অরণ্যে।
মনের উঠোনজুড়ে দুধসাদা কাশবন
এখনো জ্বলছে স্মৃতিপোড়া গন্ধে।
সেদিনের বিকেল ছিলো মখমল রোদের মতোন
হাসিময় চাহনিতে বেহায়া জোছনা ঝড়ে,
চুলাকাশ উড়ে চলে মেঘের পালকিতে।
তুমি শান্ত-সুবোধ কাশফুলের মতো আলতো ছুয়ে দিলে
জোড়াবক লুটোপুটি খায় পুরুষ সাম্রাজ্যে।
অথচ,আমি বলিনি বলে তুমিও বলোনি
এভাবে কেটে যায় কতো সোনালি প্রহর
কিছু সুখস্মৃতিরা শিশিরের মতো ঝড়ে যায়।
ভালোবাসা বলতে গেলে, আঁধারকালিতে লেখা
কোনো এক চিঠি! যার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে
আকুতিগাথাঁ ইলিশভাজা গন্ধের মতো মোহনীয়।
আমি দেখিনি বলে তুমিও দ্যাখোনি চেয়ে
আবার যদি দেখা হয় আমাদের,পাখি আর ফুলেদের
থেকে নিও একটু-আধটু প্রেম
হৃদয়ের কোণ থেকে ত্রিভুজ-চতুর্ভুজ-শতোশতোভুজ
ভালোবাসা দিয়ে উড়োচিঠি দিও নক্ষত্রের কোলে।
ঝুমুর দাস
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
জানিস ঝুমুর দাস!
একদিন মুখোমুখি হয়েছি নিজের সাথে,
অবাক আমি!
শুধু অশরীরী হাত পা দাঁড়িয়ে আছে
ওখানে পরিপুষ্ট দীর্ঘশ্বাস,অপূর্ণ আয়ু
পোড়াচ্ছে আমাকে,
আশঙ্কার হলুদ হিম উস্কে দেয়
বিষন্ন ক্ষতটাকে।
দুঃখের বোতাম ছিঁড়ে
অলস সুখেরা করে আত্মসমর্পণ
মড়কের ডাকে।
অথচ এতদিন নিজেকে জেনেছি
প্রকৃতির প্রতিবেশীরূপে
যাত্রা ছিল আমার বসন্ত প্রবাসে
কবিতার হুলস্থুলে,
নামাতাম কবিতা কতো বৃষ্টির মতো
ভুলে ও বেভুলে।
আজও সবদিন ঠিক আছে
আজও মাটি ভিজে হয় থকথকে কাদা
শুধু আমারই শূন্য কলম পড়ে থাকে
অক্ষরহীন কাগজ যার সব শাদা সব শাদা।
প্রজাপতি রঙ
ফিরোজ শাহীন আলাল
মাঝে মাঝে মেঘ ছুঁতে ইচ্ছে করে
কিন্তু পারিনি কখনও
কী অদ্ভুত জানো─
মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে শ্রাবণ বরিষণে
আমাকেই ছুঁয়ে দেয় বৃষ্টি স্নাত ক্ষনে
আমি উদাস কিশোরী মেঘ বরীষণে!
প্রজাপতির ডানায় উড়তে ইচ্ছে করে
ওরা এতো সুন্দর রঙিন কেন?
এতো সুন্দর রঙিন রূপ লহরী
গোধূলি আবীরে রং তুলিতে আঁকা
রামধনু রঙে সাজানো আকাশ নীলে!
কল্পনার বনলতা সেন প্রেমের অপ্সরী
অজান্তা ইলোরা আকাশ ছুঁয়ে আসে
স্মৃতির মন্দিরে ইচ্ছে গুলো তুষচাপা অনলে
বোবা কান্নায় ফুঁসে উঠে স্মৃতির অমরাবতী
শুধু তুমিই নিরুত্তর আজ অবধি─!
অন্তীম আভাস
হোসাইন আক্তার
শরত এসেছে ধরণীতলে
তবু কেনো আকাশে কালো মেঘ জমে?
শেফালী শিউলি ফুটেছে
গন্ধে ভরেছে মন
যদিও নদীর দু’ধারে ছড়িয়ে রয়েছে ঘন কাশবন।
তবুও নেই তুমি, নেই, ধবধবে সাদা আকাশ,
পরনে নীল শাড়ি, কপালে লাল টিপ,
হাতে রেশমি চুড়ি কত দিন দেখিনি শরতের
আকাশে লাল নীল সাদা আর বাহারি রঙের লুকোচুরি!
বকফুল পাখিফুল ছাতিম কিংবা গগণশিরীষ
এখনো প্রহর গুনছে
শরতের হিমেল বাতাস
জাগাবে অন্তীম আভাস।
ঘুমচোখ
অলোক আচার্য
ঘুমচোখ ডুবে আছে
স্মৃতিগুলো ভেসে যায়
টুকরো টুকরো মেঘ
আঙুলের ইশারায় নামে চোখের কোণায়
ঘুমচোখ ডুবে আছে শরৎ মেলায়।
স্মৃতিগুলো উড়ে যায়
সুখফুল বোঁটা ছিঁড়ে বুকে আঁকে মুখচ্ছবি
শিউলির ঘ্রাণ সন্ধ্যায় বিকিয়ে যায়, তখন
ঘুমচোখ ডুবে থাকে শরৎ মেলায়।
অভিসা
আইনাল হক
তোমার উৎসবমুখর বসন্তের
খানিক আগেই আমার কাঁটা তারের সীমান্ত প্রাচীর,
দেখা অথবা ছোঁয়া আজন্মের প্রচেষ্টায় অসম্ভব।
কিন্তু গল্পটা অন্য রকমও হতে পারতো
মহাকালের বেরসিক সীমাবদ্ধতা
বঞ্চিত করছে নৈকট্য লাভের অধিকার থেকে
বৈচিত্রময় পৃথিবীর রূপ, রস ও গন্ধ থেকে।
চারদিক অপ্রাপ্তির সুনসান নীরবতা,
কলমের ডগায় হৃদয়ের অব্যক্ত অত্যুক্তি,
হাওয়ায় ভেসে চলে অপূর্ণ প্রেম অভিসার,
সবুজ পাতায় অথবা পাখির ঠোঁটে
শিরোনামহীন অভিযোগ পত্র।
শরত অভিসার
আহমাদ কাউসার
বৃষ্টি হয়ে মেঘ নেমে আসে সুলীল আকাশ হতে
শাপলার কোমল শরীর ছুঁযে যায়!
যুবতী কলমি জলের পিঠে নাচে উদাস সমীরণের ছোঁয়ায়।
শরতমেয়ের অভিসার খোঁজে বলাকার দল।
কাশফুলের সাদা বসনে কে যেন সাজায়
ফুলশয্যার মোহনীয় রাত
আহা! কেশবতীর হাসি!মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি।
শামুকের খোলসে ঘুমিয়ে থাকা শরত মেয়ের
ঘুম ভাঙে সারসের ঝাঁক,
বাদুরের ডানায় চড়ে রাত্রি নামে নারঙ্গিবনের ফাঁকে
উদাস উদাস মন শরতের প্রেমে অবগাহন করে
জোছনার কোনো এক রাতে।
কামোদ্দীপক ছোঁয়া
জাকির আলম
অগণিত প্রত্যাশার জায়গা থেকে
তোমাকে ভালোবাসি শরীরী ক্ষুধার ছাঁচে।
আত্মিক সাধনে বেনেবউ পাখির মতো
আমাকে জড়িয়ে থাকো যেওনা আঁচে।
মুখশ্রীর শোভা বর্ধনে সমন্বিত প্রয়াসে
তোমাকে চেয়েছি সুপ্তপ্রাণের মনিকোঠায়।
চরম সুখের মেলবন্ধনে অযাচিত বাক্যবাণে
মিশে যাবো সুষুপ্তে নিমগ্ন ফুলের বোঁটায়।
ফুলশয্যা ফাগুনে তোমাকে কাছে পেতে
বিভোর নেশায় মাতাল উজ্জীবিত আমি।
ঝাঁকানো সমীরণে কাছে এসো ষোড়শী,
নিভিয়ে দাও আড়ষ্টে অঙ্গীভূত কামী।
তৃষ্ণার্ত জলের ক্ষুধায় ম্রিয়মাণ কায়া
ছুটে চলে অহর্নিশ তোমার কাছে সামগ্রিক।
এক পৃথিবীর মায়াজালে আমাকে জড়িয়ে
হৃদয়পটে এঁকে দাও তোমার প্রারম্ভিক।
মানসপট
-রাদিফুল হক
দিন অবসান কালো আসমান সন্ধ্যা ঘনায় তটে
আমার ভাগ্যে কোন অলক্ষ্যে কখন কি যেন ঘটে ।
দিন গলে খেয়ে মরণ সুধা
মিটবে কি আর মনের ক্ষুধা
অতৃপ্ত মনে বসে এই ক্ষণে আছি মহা সংকটে
আমার ভাগ্যে কোন অলক্ষ্যে কখন কি যেন ঘটে ।
উথলা নদী বহে নিরবধি ক্ষুরধার খরতর
কান পেতে শুনি বসে দিন গুনি এই এলো সেই ঝড়
কি আছে লেখা ভাগ্য লিখন
যার লাগি মন বড় উচাটন
ফেলে আসা দিন ছিল যে রঙিন জাগে এ মাসনপটে
আমার ভাগ্যে কোন অলক্ষ্যে কখন কি যেন ঘটে ।
দীর্ঘশ্বাসের ভ্রন
আব্দুর রহমান রুদ্র
নৈঃশব্দ্যের খরস্রোতা জলধিতে অবগাহন
দুঃখের রুমাল ধুয়ে মুছে শুকোই পরিতাপে
বিনিদ্র রাতের বিরহী চাঁদের জোছনা
পানপাত্রে ঢেলে মদিরার মতো গিলছি
ঘুমহীন রাতগুলো চোখের সামনে তুলে ধরে
পরম তৃপ্তির প্রমিত মৃত্যু
যেন চোখের সামনে প্রেয়সীর বিবস্ত্র দেহ
কামনার ফুল হয়ে ফুটছে—
দুঃখগুলো এক একটি নক্ষত্র হয়ে দুলছে
যেন সদ্য ফোটা গোলাপের রেনুর
সাথে অস্ত্রের সন্ধি, অন্তরঙ্গতা বাড়ছে
আর জন্ম দিচ্ছে দীর্ঘশ্বাসের ভ্রুন!
বাঁচবার সাধ
সাজ্জাদুর রহমান
যতবার বেরিয়ে পড়ি জলেস্থলে
সর্বাধিক লতিয়ে থাকে বাঁচবার সাধ
ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে আসে
ভুল পদক্ষেপে পশলা পশলা বৃষ্টির ছাঁট ।
আকাশের নাভিমূল থেকে কোনো এক
ফেরত খাম প্রেম নিবেদন করে নীল রঙ
বিস্তর জলীয়বাষ্প ছড়ায় শরতের মেঘফুল
আমি তার সৌন্দর্যের বাক্স খুলে
হাতড়ে নেই বাঁচবার ঘ্রাণ।
এই কুসুমফোটা শরীরে এই মায়ার ডালপালায়
সুরের ভায়োলিন বেঁধে রাখি
কোনো এক শরতে তাকে শোনাবো
ঝুমসন্ধ্যার ব্যালকোনির গল্প
কোনো শরতে তাকে দেখাবো
আকাশের ওপারে হাততালি দেয়া কাশবন
আমার বাঁচাবার সাধ গলাগলি ধরে থাকে
ছয় ঋতুর দ্বিধাহীন অর্গানে।
শরৎ শোভা
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
ঝিলের জলে শালুক শাপলার
পাগল করা হাসি,
আকাশ, বাতাস, জলে, স্থলে
শরৎরানির স্তুতি।
শিশির ভেজা শিউলি ফুল
দোলনচাঁপা ঝিঙে,
সবুজ ধানে ফড়িং নাচে
গরুর পিঠে ফিঙে।
ফসলের মাঠ সবুজ প্রাচীর
মাঝে কৃষাণ পাড়া,
কাশফুল ঘেরা নদীর আঁচল
পদ্ম ফুলে ভরা।
সোনা রোদে বৃষ্টি হাসে
খেঁকশিয়ালের বিয়ে,
স্বচ্ছ জলে নীল সাদা মেঘ
ঝিল মিলিয়ে ভাসে।
নবান্নের গান কিচ্ছা পালা
পায়েস পিঠাপুলি,
ধর্ম,বর্ণ,গোত্র ভুলে
খুনসুটিতে মাতি।
শরৎ এসেছে
হোস্নেয়ারা বকুল
তোমাকে খুব মনে পড়ছে হিমেশ
স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে
শরতের সেই পড়ন্ত বিকেল
উদাসী হাওয়া-
দোলা দিয়ে ছুঁয়ে ছিলো যৌবনা কাশফুল
শিউলির মিষ্টি ঘ্রাণে
মাতোয়ারা হয়ে ছিলে তুমি
আজও নদীর তীরে সারি সারি বকের মেলা বসে
ঘনকাশবনে উড়ে বাবুই পাখির ঝাঁক
সব আগের মতোই
কিন্তু তুমি…
শরৎ রানি
তামান্না জাবরিন
সকাল বেলা ঘাসের উপর শিশির, সেই শিশিরে
পা ভিজিয়ে কিশোরী তনয়ার মন যেন হয় ব্যাকুল।
তারপর কুড়িয়ে আনে সে ডালি ভরি শিউলি ফুল।
আকাশটা রং তুলিতে আঁকা,
মেঘগুলি তুলোর মতো ভাসছে আঁকাবাঁকা ।
কাশফুলেরা ঢেউ এর মতো খেলে যাচ্ছে দোল,
মন আমার কবিতার খাতায় লিখছে আবোল-তাবোল।
শরৎ রাণীর রূপ দেখে হায় পাগল মাতোয়ারা,
জোৎস্না রাতে চাঁদটি যেন ডাকছে ইশারা।
প্রকৃতির মাঝে মিশে আজ দিবো না আর সাড়া,
শরৎ রাণী রূপ ছড়িয়ে পূর্ণ করো ধরা।
রহস্যময়ী ষোড়শী
ফজিলা ফয়েজ
দুর্লভ সৌন্দর্যের দেহে অব্যস্ত সঙ্গীতের সুর।
গাঙচিলের মত দুটি চোখ ফসফরাসের মত
ঝলসে ওঠে।
উচ্ছাসের উদ্ভিন্নতায় আশ্চর্য সূচিত স্নাত
কামনীয় দেহ রক্তিম শুভ্রতায় ঝলমলে রূপ।
কাঁচা হলুদ রঙা সুঠাম বাহু অদ্ভুদ রং গড়ন
অনিন্দ্য সুন্দর মনের পর্দায় মুদ্রিত।
শরীরে গোলাপী সুরভী বিস্ময়কর চোখের
যাদুভরা চাহনি যেন নীল পরীদের চোখ।
ঠোঁটের কল কল হাসির শব্দে মনেহয়
পাথরের উপর দিয়ে ঝর্নার পানি ঝর ঝর
করে পড়ে।
মধুর মোলায়েম পরশে অগাধ মমতা গলে
পড়ে সর্বাঙ্গে।
মনে আকাশমুখী আকাঙ্ক্ষায় বিভোর
জীবন উদারতার রঙে রাঙানো, বিশালতার রঙে।
হাওয়ায় ওড়ানো স্ফুলিঙ্গ শিউরে ওঠা তরল
অন্ধকারে নৃত্য-পরা জোনাকিপুঞ্জের মাঝখানে
ষোড়শী যেন অপার্থিব আরো দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ী।
আত্ম বিস্মৃত তন্ময়তা চোখ মুখে উজ্জ্বল স্নিগ্ধ
ঝিলিক ফ্যাকাশে হয় ক্রমেই।
শূন্যতার আবরণে ঢেকে যায় উচ্চকিত উচ্ছলতা
সীমাহীন নৈরাশ্যের পুঞ্জীভূত সুর
দুরন্তপনায় তিক্ততার আমেজ।
বিবর্ণ শরীর নিরবধি ঝলসে পড়ছে
ক্লান্ত গোধূলির আলিঙ্গনে রহস্য অভেদ্য।
আসমান আর পৃথিবী যেন আচ্ছন্ন হয়ে
বর্ষা সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে।
সেই অন্ধকারের মধ্য দিয়ে কেঁদে চলছে
ষোড়শী যৌবনা রমণী।
আকাশ পানি মগ্ন বেদনা বিধুর স্বাপ্নিকতায়।
ষোড়শীকে ঘিরে বেদনার কল্লোল জেগেছে
মুহূর্তেই বিচ্ছেদের অশ্রু সমুদ্রের ওপরে নির্বাসিত।
স্থল ছেড়ে পানির উপরে জীবন তরী ভাসিয়ে দিয়েছে।
ভাসিয়ে দিয়েছে অথৈ সমুদ্রের বুকে।
ফুল বাহারে শরৎরানী
শাহানাজ শিউলী
ফুটলো কেয়া ফুটলো রাধা হাসলো টগর মন খুলে
নদীর কূলে হাওয়ায় দুলে নাচ দেখালো কাশফুলে।
ছাতিম, কেয়া, দোলন এসে বকুল দিয়ে গাঁথলো মালা,
মুচকি হেসে নয়নতারা কলমিফুলে সাজলো বালা
খালে -বিলে পুকুর জলে তারার মতো শাপলা ফোটে
জুই,কামিনী, ঝিঙে ফুলের খুশির নাচন বাঁকা ঠোঁটে।
শাপলা- শালুক, লাল পদ্ম জোছনামাখা জলে ভাসে,
শিউলি ফুলের গহনবেদন ঝরে পড়ে দূর্বাঘাসে
গোলাপ, বেলি সুবাস ছড়ায় উদাস হাওয়ায় রাশিরাশি
বকুলবীজে শিস দিয়ে তাই বাজায় সুরে প্রেমের বাঁশি।
মাধবী তার লতায়-পাতায় জড়িয়ে রাখে বুকের মাঝে,
থোকা থোকা জোছনা মেখে জেসমিনটা রাতে সাজে।
শরৎভোরে শিউলি পড়ে বিছায় ঘাসে সাদা চাদর
শ্বেতকাঞ্চন পাপড়ি মিলে ঠোঁটে ছোঁয়ায় উষ্ণ আদর।
গগণসিরিজ,ধুতরা, জবা, রাঙিয়ে তোলে ফুলের বন,
ফুল বাহারে শরৎরানী মাতাল করে সবার মন।
শারদ
আল-হাসান রাকিব
আজি শারদ প্রভাতে গুলবাগিচায় ফুটিয়াছে ফুল
শারদ সাঁজে জোৎস্না স্নাত জোনাকিরা ব্যাকুল
ঊষার তৃণ-শিরে কুহেলিকার বিন্দু বিন্দু জল,
শারদের পবন মেখে শারদীয় উৎসব কোলা
দিঘির জলে আবির শালুক পদ্ম ফোঁটে রাতে,
গগন আজি অস্তকালে সিঁদুর রাঙা প্রাতে।
তটিনীর তটে কাশফুলের মেলা যেন সাদা
মেঘের ভেলা,
গগনে সাদা মেঘের ভেলা বকের সারি নয়নে
দেয় দোলা।
বাতায়নে পবন ছড়ায় হিমেল মৃদু সমীরণে,
শশী প্রভা আলয় গলে ছাউনির আলিঙ্গনে।
শরৎ এলো শারদ এলো ঝিঙে ফুলে ফুলে,
পল্লি বালা পুষ্পমাল্য বিঁধেছে তার চুলে।
নিরীহ শরৎ
মান্নান নূর
বিকলাঙ্গ শরৎ ডুকরে ডুকরে কাঁদে
যথাযোগ্য শিশির নেই ধুয়ে দিতে প্রাতে
শিউলির পা।
বিরহরাতে নিরীহ শরৎ চিঠি লিখে
কাঁপা হাতে জোৎস্না-তারায়,
উড়ো চিঠি উড়ে উড়ে ঢেউ ভেঙে
আঁচড়ে পড়ে কাশের ঢেড়ায়,
যেখানে থাকে না প্রেম, থাকে না
দোলে ওঠা নদীর দুকূল
লুটেরা লুটে নেয় কাশবন মাটি,
পাখির পালক ছিঁড়ে, ছিঁড়ে শুভ্র ভালোবাসা
ছিঁড়ে সাদা মেঘ আকাশ সমান।
মেঘদূত উবু হয়ে থুথু দেয়, ঘৃণা ছুঁড়ে
স্তরে স্তরে গজিয়ে ওঠা অসভ্য সমাজ।
সাদা মেঘ
ফেরদৌস জামান খোকন
আকাশের সাদামেঘ দেখি আজ ভেসে যায়,
লাগে বেশ অপরূপ সে দিকেই আঁখি চায়,
সাদাবক আকাশেই উড়ে যায় বেঁধে দল,
পাখি সব করে রব কভু নয় কোনো ছল।
শরতের কাশে ওই চারিদিক নিল সাজ,
সাদাফুল দোলা দেয় কী খোদার কারুকাজ!
কবিমন দেখে রূপ সারাদিন ভেবে যায়
পুলকের তাড়নায় ভাষা দেয় কবিতায়
আমি আজ ভাবি তাই সাধারণ কিছু নয়,
অপরূপ ধরা এই গড়েছেন প্রেমময়।
বিধাতার আদেশেই প্রভুদূত করে সব,
নদীবিল ভরা মাছ দিয়েছেন জানি রব।
শিশুদের মাঝে নেই ভেদাভেদ খেলে তাই,
দেখে খেল নানারূপ আমি খুব মজা পাই।
এদেশের মায়া-রূপ মোহময় আজীবন,
শরতের মাসে তাই সুরে গাই খুলে মন।
নদীকূল সাদা ফুল শরতেই বুকে পায়,
বালুময় দু’টি চর নবরূপ সাজে গায়।
নদী তার স্বীয় রূপ দিয়ে যায় অবিরাম
জগতের ধনী কোন এ রূপের দিবে দাম!
শরতের আকাশ
আনজানা ডালিয়া
এই শরতে আমি কাশফুল হবো
আলতো ছোঁয়ায় পরশ দিবো,
ঠোট ছুঁয়ে দিবো ওই তুলো পাপড়িতে
তনুমনে শিহরন জাগবে তোমার
বারান্দায় চায়ের কাপ আর শরতের
আকাশ দুয়ে মিলে হবে এক
তখন আমি হবো রাগিনী
সুরে সুরে নিয়ে যাবো তোমায় নীল সাদার সীমান্তে
হৃদয়ে ঝড় তুলে হারিয়ে যাবো কাশের বনে
স্বপ্নের ভীড়ে হবে তোমার চলাচল।
অতঃপর পাতা নড়
এম এম এইচ মুকুল
বিবেকের জানালায় ভাবনাগুলো নিশ্চুপ
দৈহিক সৌন্দর্য মনের কলসিতে জমানো
কাদাজল আটকাতে পারে না
কথার মারপ্যাঁচ লোভের পরিসীমাকে সসীম করে না।
হেমলক যেমন মুছে ফেলতে পারেনি সক্রেটিসের চেতনা
তেমনি মিথ্যা ঠেকাতে পারেনি সত্যের উত্তরণ।
চাহিদা যখন মনের গোপন ঘরে তৈরি হয়
শরীরের সমস্ত অলি-গলি সাড়া দেয়।
কেউ কেউ তাকিয়ে দেখে-
জল পড়ে, অতঃপর পাতা নড়ে।
নিষ্প্রাণ অস্তিত্ব
আলেয়া আরমিন আলো
গোধূলিবেলার মন পোড়ানো ক্ষণে
শরতের কাশফুলে ঢেউ তুলে বয়ে চলা
মিহি সান্ধ্য বাতাসের তোড়
মর্মর সিম্ফনিতে হা-হুতাশে কেঁদে উঠি,
এই আমি যেন ঝরাপাতারই একজন!
নিয়নবাতির হলদে ঝাপসা আলোয়
কংক্রিটের শহরের নির্দয় বুকে
ইটের পাঁজরে বৃথাই হৃদয় খুঁজি,
সেই পাথুরে হৃদয়ের কাছেই প্রেম যাচি;
যাচি সবুজাভ দূর্বা মোলায়েম মায়া।
শরতের মধ্যরাতকে সুবাসিত করে
জাফরান রঙের বোটায় সফেদ শরীরে
অহেতুকই ফুটে থাকি…
একটুখানি আদুরে স্পর্শের প্রত্যাশায়।
অথচ, সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে
শিউলিতলার মৃত্তিকার আশ্রয়েই
নিজের অবহেলিত মৃত অস্তিত্ব টের পাই।
শরৎ রাতের জলছবি
উম্মুল খায়ের
ঘুম চলে গেলে সুবীর নয়নে খুঁজে ফিরি চাঁ
মাঝরাতে শুনি জীবনের সব জলছবি মন
সাথী হারা পাখি মিহি সুরে গায় বেদনার গান
আঁধারের বুক চিরে বেজে ওঠে করুণর ঢেউ!
আমার হৃদয়ে তখন পুরনো আঘাতের রঙ
চোখের জলের কি দাম আছে হে
যদি সুখপাখি উড়ে চলে যায়?
শূণ্যতা নিয়ে পড়ে থাকি ফের, রাতের গভীরে।
যদি কোনোদিন তোমার আকাশে শূণ্যতা আসে
মনের দুয়ারে যদি চিরতরে খিল এঁটে যায়
বুকের ভেতরে তবে রেখে দিও দহনের সুখ
তবে তুমি চেয়ে দেখো নীলাকাশ, তারাভরা রাত
রাত শেষে ভোর এসে দাঁড়াবেই শরৎ দুয়ারে।
আগ্রহ নিয়ে কোনো একদিন দেখেছি
শরতে রোদমাখা মুখ খুঁজেছি নিজেকে;
পাইনি কিচ্ছু সেদিন বুঝেছি, সব চোখে মায়া
মমতা থাকে না পাথর হৃদয় ভালোবাসা দিতে
জানে না; বোঝে না।
ফুল বাহারে শরৎরানী
শাহানাজ শিউলী
ফুটলো কেয়া ফুটলো রাধা হাসলো টগর মন খুল
নদীর কূলে হাওয়ায় দুলে নাচ দেখালো কাশফুলে।
ছাতিম, কেয়া, দোলন এসে বকুল দিয়ে গাঁথলো মালা,
মুচকি হেসে নয়নতারা কলমিফুলে সাজলো বালা।
খালে-বিলে পুকুর জলে তারার মতো শাপলা ফোটে
জুই, কামিনী, ঝিঙে ফুলের খুশির নাচন বাঁকা ঠোঁটে।
শাপলা- শালুক, লাল পদ্ম জোছনামাখা জলে ভাসে,
শিউলি ফুলের গহনবেদন ঝরে পড়ে দূর্বাঘাসে।
গোলাপ, বেলি সুবাস ছড়ায় উদাস হাওয়ায় রাশিরাশি
বকুলবীজে শিস দিয়ে তাই বাজায় সুরে প্রেমের বাঁশি।
মাধবী তার লতায়-পাতায় জড়িয়ে রাখে বুকের মাঝে,
থোকা থোকা জোছনা মেখে জেসমিনটা রাতে সাজে।
শরৎ ভোরে শিউলি পড়ে বিছায় ঘাসে সাদা চাদর
শ্বেতকাঞ্চন পাপড়ি মিলে ঠোঁটে ছোঁয়ায় উষ্ণ আদর।
গগণসিরিজ, ধুতরা, জবা, রাঙিয়ে তোলে ফুলের বন ,
ফুল বাহারে শরৎ রানী মাতাল করে সবার মন।
শরৎ ফুলে মন মেতেছে
কলি চক্রবর্তী
ভাদ্র মাসে লাজে হাসে
গুল্ম লতার ফুল,
শাপলা শালুক ভাসছে জলে
মেঘনা নদীর কূল।
দোলনচাঁপা নয়ন তারা
কামিনী কাননে,
মল্লিকা, মালতি, কেয়া
হাসছে মনের বনে।
জলের পদ্ম, স্থলের পদ্ম
শিউলি, ধুতুরা?
এই মাসেতে হাসছে রে ওই
হলুদ রাধাচূড়া।
ঝিঙ্গে, জারুল, ছাতিম ফুলের
কতশত বাহার
কাশ বনেতে মন মজেছে
মন আনন্দ পাহাড়।
ঝরা ফুলেদের গান
তাসনিয়া খান
সে ঝড়ে গিয়েছিল আরো অজস্র ফুলের মত,
যে কুড়ি হতে ফুটেছিল একরাশ আশা নিয়ে।
যে হারিয়ে গিয়েছিল আরো অনেক ফুলের মাঝে।
যাদের কেউ ভালোবাসেনি, বুকে তুলে নেয়নি।
সে ঠায় পায়নি পূজোর থালায়,
সে ছুতে পারেনি শহীদ মিনারের বেদি,
সে হতে পারেনি প্রেয়সীর খোপার মালা।
সে পদদলিত হয়েছিল পিচঢালা রাস্তায়।
সে ভেসে গিয়েছিল নর্দমার কালো জলে।
তাকে কেউ ফুলদানিতে সাজায়নি,
কেউ তার গন্ধে আকুল হয়নি,
সে সাথী হতে পারেনি কারো অন্তিম যাত্রার।
সে নাম না জানা ফুল, বড় অবহেলিত ফুল
সে মুছে গিয়েছিল আরো অনেক ফুলের মত।
বড্ড অনাদরে, বড্ড অবহেলায়, অসীম অভিমানে।
ক্ষতবিক্ষ
মহসিন আলম মুহিন
না যাবো না কোথাও হবো উধাও হৃদয় ক্ষতবিক্ষত,
সইতে পারি না বিরহের ‘জ্বালা রক্তক্ষরণ অবিরত।
শুধু দাম নাই, শপথের আজ, আলো নাই তাই প্রাতে,
সাধের যৌবন, সোনার জীবন, ঢেউ ঠেলে মরে রাতে।
নাই কূল কিনারা, জ্যোৎস্না তারা, গভীর কালো আঁধার,
আঘাতে আঘাতে আশার তরীখানি ভেঙ্গে হলো চুরমার।
সবুজ ঘাসে-পোড়া রঙ ধরে, হেথা প্রজাপতি নাহি বসে,
ভালবাসা হারা, হতাশার ভাণ্ড, ভরে না তাই আর রসে।
কত কথা দিলে, তবু কিছু নাহি মেলে, মিথ্যে কথন ভুয়া,
বিশ্বাস মাঝে অবিশ্বাস ঢেলে প্রেম নিয়ে খেলো জুয়া।
পদ্ম পাতার জলের মত কখন যেন পড়ে যাই, পড়ে যাই,
আহা! ক্ষতবিক্ষত কাটাছেঁড়া মনের, ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই।
সকালের আশা, সাঁঝের বেলায় ডুবে গেছে অনাদরে,
ভুলে ডাইনির কোলে, মাথা দিয়ে তুলে, পড়েছি গহ্বরে।
হে অন্তর্যামী, মাফ করে দাও, ক্ষমা করে দাও মোরে,
তব কৃপা ছাড়া, আমি দিশেহারা-বাঁচাও এ বান্দারে।।
নিরন্তরের কাঙাল
– আল মামুন রিটন
এক বুক তৃষ্ণা ছিল তো ঠিকই গোপনে
কিন্তু বিশুদ্ধ ছিল না কোনো ঝরনার জল
নির্মল টলমল পানিতেও লুকানো ছিল বিষাক্ত কীট।
পাহাড়ের আড়ালে ছায়া শীতল সমতলে
আমি খুঁজে কুঁড়ে ঘর ঠিকানা করেছিলাম
চূড়া থেকে পাথরের আঘাতে বিতাড়িত হলাম সেখানেও।
নদীর ধার ঘেঁষে সবুজের ফাঁকে দেখেছি বিষ
জীবনের ফাঁকেও ওত পেতে বসে আছে মৃত্যু
সেখানেও নিরন্তরের নিশ্চয়তা পাইনি এক আনা।
বহুদিন বহুপথ অতিক্রম করে ক্লান্ত শরীরে যখন
হিন্দোলার পিঠে হেলান দিয়ে ঘুমাব ভাবছিলাম
সরে গেলো সেও, আপন থাকে না আজকাল কেউ।
অবশেষে সারি সারি বৃক্ষের দিকে এগোলাম
যদি সজীব নিঃশ্বাস সাথে একটু ছায়া পেয়ে যাই
সেখানেও দেখি ঝুলে আছে অসংখ্য মৃত কঙ্কাল।
গোপন কষ্ট গোপন থেকে বলেছে- এখানে কিছু নেই
যা আছে তা শুধুই অবান্তর, উচ্ছিষ্ট, মেকি কোলাহল
এখানে জীবনের নামে তৃষিত সবাই নিরন্তরের কাঙাল।
লাল অভাগীর অন্তরালে
গোলাম রববানী
এখনো আমি শৈশব খুঁজে ফিরি আকাশে বাতাসে
নীলাকাশের বিখণ্ডে, মেঘমেদুরের খণ্ডবিখণ্ড রক্তস্রোতে
যেখানে শরৎকাল আর খুঁজতে ইচ্ছে করে না ভুলেও
ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘের পালক সেখানে বিরলে
কাশিপুরে কাশবন নেই, কাশফুল নেই যক্ষ্মাপুরে
তিন পায়ে ঠকঠক, স্বাধীনতার সাধ পাওয়া যক্ষ্মারোগী
কেমিক্যালমিশ্রিত দুগ্ধ ও স্তন্য টানে! নিপলের ব্যথা
অজানা গন্তব্যে ছেড়ে, টেনে হিঁচড়ে চলে সিবেসিয়াস
সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে ডালিমের মধ্যে লালে লালে
অথবা নদীমাতৃক বাঙলাদেশের নদ-নদীর বাঁকা চোখে
দুধ, মেঘ, কাশফুলে আজকে হলো কী, শুভ্র চ্যুতি
প্রকৃতিসমেত বিদীর্ণ করে নিভৃত অভাগীর অন্তরালে
নীল আকাশ নীল সাগর ভরে গেছে বিষাক্ত নীলে
নীলাক্ত ভূমিতে চাষাবাদ আমার কেবল জন্মজন্মান্তর
তবে কেন লাল আবাদি ভূমিতে রে বাঁচতে ইচ্ছে করে
জানে না পদ্মবিলের সবুজবীথি খাল বিল সে কথা!
এসেছে শরৎ কাল
রত্না বনিক
মন খুলে প্রাণ খুলে
দেখি আমি চোখ তুলে
আকাশেতে সাদা মেঘ ভাসছে,
উত্তরী সমীরনে
দোল লাগে কাশবনে
কুমারী নদীর কূল হাসছে ।
দ্বার খুলে দেখি ভোরে
শিউলির সমাহারে
সেজে আছে উঠোনের কোণটা,
সেই ফুল কোচড়েতে
রাখছে কোমল হাতে
আমার ই ডানপিটে বোনটা।
শিশিরেতে জ্বলজ্বল
মুক্তো যে অবিকল
ঘাস গুলো লাগছে কী মিষ্টি,
এসেছে শরৎ কাল
বিছালো রুপের জাল
অপরুপ বিধাতার সৃষ্টি।
ছড়া
নানাদের গ্রাম
আহাদ আলী মোল্লা
শরতের দিন পরতে পরতে সাজানো গোছানো গাঁয়
ভাদরে তালের গন্ধ মাখানো নানা বাড়ি ছুটি তাই
সেখানে হিজল তমালের বন ঘেঁষে কাজলার ধারা
দুই পাড়ে মেলা গজিয়ে উঠেছে তিত বেগুনের চারা।
শাল-পিয়ালের বন ধরে ধরে মেঠো পথ দিয়ে হাঁটি
সবুজ মাঠের অবুঝ ফসল আহা কী যে পরিপাটি
শ্বেত বাতাসের রথে চড়ে চড়ে শিউলি সুরভি ঢালে
কাশফুল দোলে পলকা হাওয়ার মোলায়েম তালে তালে।
বিকেলে রোদের নিকেল ছড়ানো আদুরে আদুরে ভাব
পাকা ধান ক্ষেত একাকার হয়ে গড়ে তোলে সদ্ভাব
আকাশের মিহি আঁচলে বেড়ায় পেঁজা পেঁজা মেঘ খেলে
সূর্যের সাথে খ্যালে লুকোচুরি আবছায়া ফেলে ফেলে।
বাঁওড়ে ফুটেছে শাপলা শালুরা বুনো ফুল ঝোঁপে ঝাড়ে
সুখের আবেশে কামিনীর ডাল ফুলভারে মাথা নাড়ে
ঝিঁঝিরা ঘুমিয়ে, সাঁঝের আবহে জেগে উঠে দেয় সাড়া
পুলকিত হয় মুখরিত হয় নানাদের গ্রাম পাড়া।
তারার বাগানে হেসে ওঠে চাঁদ সরিয়ে রাতের কালো
অজানা হরষে মিটি মিটি করে জোনাকিরা জ্বালে আলো
নানাদের গ্রাম আজও অবিরাম ভালো লাগে খুবই তাই
শরৎ এলেই তার টানে টানে নানা বাড়ি ছুটে যাই।
আমার মত
হিমাদ্রি হাবীব
ঘরের চালে মাইক দিয়ে যতই ছাড়ো হাঁক
সংঘবদ্ধ কাক-
আমার দেহের সংস্কৃতি আমার মতোই থাক!
আমার বুকে পাখি থাকুক, পাখির ডাকাডাকি থাকুক
বোধের পাকাপাকি থাকুক, চোখের তাকাতাকি থাকুক
মনের ভিতর অট্ট-হাসুক নদী এবং নদ
খেলাচ্ছালে স্বপ্ন আঁকুক মিঠেল প্রচ্ছদ।
আমার ঠোঁটে বাঁশি থাকুক; বাঁশির ঠোঁটে গান-
চোখের ভাষায় রচিত হোক সুখের উপাখ্যান।
আমার চুলে বসন্ত থাক সমস্ত মৌসুম;
চোখের পাড়ায় দৌড়ে আসুক নিরপেক্ষ ঘুম।
আমার কিছু আশা থাকুক, আশাগুলোর ভাষা থাকুক
ভাষাগুলোর বাসা থাকুক গঙ্গানদীর চর-
আমার ভিতর গড়ে উঠুক শিশুর ঠাকুরঘর।
অচেনা শরত
সোহেল আহসান
শরতের আকাশে মেঘের মাস্তুল
মেঘগুলো ছাইকালো, নীতিহীন
পাখিরাও এলোমেলো, ঘরছাড়া
শকুনের তাড়া খেয়ে স্থিতিহীন –
কাশফুলও ফুটেনি! কীসের ভয়
বন্য শৃগালের উৎপাত –
সভ্যরা ভয়ে কাঁপে দিনরাত
শুয়োরেরা ঘ্রাণ শুকে ভীতিহীন।
এ শরত অচেনা, মুখোশ সেলাই
দর্জিরা সুঁতো দিয়ে নিয়ম গাঁথে
এ শরত শকুনের আকাশ দখল
দুঃস্বপ্ন বোনে দেয় মসলিন তাঁতে।
শরতের আকাশে শকুন উড়ে
খড়কুটো ঢেকে রাখো,দেবে থাবা
এ শরত অচেনা, অপরিচিত
চিরচেনা শরত কখনো কী পাবা?
দলছুট পাখিদের দল
সুবর্ণা দাশ মুনমুন
বৃষ্টিটা যেতে যেতে হঠাৎ খেয়ালে
শঙ্খচিলের পিঠে রোদ গেছে ফেলে।
কাঁচাসোনা রোদ নাকি হলুদের কনে
ঘোমটার আঁড়ে হাসে এখানে ওখানে?
রোদ নিয়ে এলো চিঠি কলাপাতা রং
ছাতিমের ছোট ফুলে
লাল নীল শিশি খুলে
আসমানি খুসবুর ঢেলেছে আড়ং।
চিঠি পড়ে বুনো মেঘ, কই তুমি ছিলে
তোমাকে খুঁজেছি কত কাশের মিছিলে?
হাওয়া গেছে সাথে নিয়ে ফড়িঙের গান,
শিউলির বুক থেকে মিঠে জাফরান।
গোধূলিতে বুনো মেঘ ফের ছুটে চলে
পিছু নেয় ঝরাপাতা
কুয়াশার শোকগাঁথা
মিশে যায় দলছুট পাখিদের দলে।
শরতের মেঘ ভাসে
সোমা মুৎসুদ্দী
শরতের মেঘ ভাসে সারি সারি আকাশে
যেনো সাদা রং দিয়ে তুলতুলে মাখা সে।
দুলছে দোদুল দোল কাশফুল কন্যা
খুশি মাখা শরতের যেনো ঢল বন্যা।
আমাদের ছেলেবেলা, শরতের রাঙা ছবি
তাই নিয়ে লিখে যায় কত ছড়া,কত কবি।
হাটে, মাঠে, ঘাটে আজ শরতের উৎসব
বিকেল বেলার মাঠে শিশুদের কলরব।
তার সাথে শিউলির প্রাণ খুলে হাসা আজ
আকাশের বুকে জুড়ে মেঘেদের ফোটে লাজ।
শুভ্রতার ঋতু
এস এম শাহনূর
কাশফুলের দোলা যেন এক ঝাঁক উড়ন্ত সাদা পায়রা।
বর্ষার পরেই বাংলার প্রকৃতিতে বহে শুভ্রতার ফোয়ারা।
প্রকৃতিতে এলো শরৎ! মেঘমুক্ত ফর্সা আকাশ।
স্নিগ্ধ রাত, আলোকোজ্জ্বল প্রাত, শুষ্ক বাতাস।
অভিমানী রিমঝিম বৃষ্টিতে ঝরে অজস্র শিউলি ফুল।
দুর্বাভেজা গায়ের মেঠো পথ মনে তোলে ─উতরোল।
পাতা কুড়ানির মেয়ে হর্ষে ফুল কুড়ায়
বৃষ্টির পরশ মাখে কিশোরীর নগ্ন পায়।
শিশিরস্নাত পাতায় সূর্যের কিরণ সত্যি অপরূপ।
রাত পোহালেই পাল্টে যায় প্রকৃতির চেনা রূপ।
নদী,খাল, বিলের ধারে শুভ্রতার হাতছানি
শাপলা পদ্ম বকের ডানায় আসে শরৎ বানী
রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি, ঝিরঝিরে বাতাসে জাগে ঢেউ
বিমুগ্ধ শুভ্রতার এমন শরৎ দেখেছ কি কোথা কেউ?
শরতের মেঘ
অরুণ বর্মন
মেঘেদের খেলা চলে শরতের আকাশে
সাদা সাদা মেঘগুলো ফিরে পায় পাখা যে।
দল বেঁধে উড়ে চলে হাতে হাত বাড়িয়ে
সুদূরেতে ধেয়ে যায় কালোদের তাড়িয়ে
ছোট ছোট সাদা মেঘ জোট বেঁধে সকল
জোছনার রাতটাকে নেয় তারা দখলে।
আলো দিয়ে ধুয়ে দেয় সব কালো অন্যায়
কালো মেঘ পিছু হটে সাদাদের বন্যায়।
মাঝে মাঝে কালো মেঘ তেড়ে আসে গুমরে
হুঙ্কার দিয়ে কাড়ে সাদাদের ঘুমরে।
কালো মেঘ ঝরঝর বৃষ্টিকে ঝরিয়ে
সাদাদের দিতে চায় চিরতরে সরিয়ে।
সাদাদের একতায় হেরে যায় কালোরা
শরতকে ছেড়ে যায় ঠাঁই নেয় ভালোরা।
সাদা মেঘ ভালো মেঘ ভালো থাকো স্বগণে
হেসে হেসে ভেসে চলো শরতের গগনে।
নীল শরৎ
এস.এম বিল্লাল
নীলিমার নীল ছুঁয়ে উড়ে যায় পাখি
শরৎ এর রূপের ছবি তুলে দু আঁখি,
ঝলমলে রোদ ভিজে হাওরের জলে
নীল সাদা মেঘ দ্যাখো ঘুরে দলে দলে।
নীল শাড়ি নীল চুড়ি নীল টিপে মন
ভালোবাসা গাঢ়ো হয় নীল অবগাহন,
সানসিল্ক রোদে শুকায় প্রেয়সীর চুল
নীল ফিতার বেণী ছুঁতে প্রেমিক ব্যাকুল।
নীল জলে ডুবে থাকে ছাতিমের বুক
সাদা সাদা কাশফুলে প্রণয়ের সুখ,
ধানের পাতায় জমে রাতের শিশির
হিমেল হাওয়ায় শরৎ জুড়ায় শরীর।
শাদা প্রেম
এস ডি সুব্রত
প্রিয় তোমার অপ্সরী ছোঁয়া
আচমকা মাতাল হাওয়া যেন
ঘোরলাগা অনন্য কথোপকথন,
ঘর মন বিষয় ভাবনা যত
এলোমেলো সমস্ত কিছু
অনিমেষ বুকের ঘরে অনুরণন,
শুভ্র শরতের মৃদু সমীরণ
কাশফুলের মতো শাদা প্রেম
অনুভবে এক তুমুল আলোড়ন।
শরৎ ফিরে আসে
ফারজানা ইয়াসমিন
শরতের আকাশ যেন পরেছে নীল শাড়ি,
এলোকেশী যেন এক পূর্ণযৌবনা প্রেমময়ী নারী।
নদীর স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটে পানকৌড়ি আনমনে,
কাশবনে লিলুয়া বাতাস ঢেউ খেলে যায় ক্ষণেক্ষণে।
মাঝির কন্ঠে ভেসে ওঠে ভাটিয়ালি গান,
গাঁয়ের বধুর বিষন্ন প্রহরে মন করে আনচান।
টুপটাপ বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ে জানালায়,
শীতল ছায়ায় শালিক জুটি তৃষ্ণার্থ ঠোঁটে চুম্বন এঁকে যায়।
রাতের আঁধারে নিমগ্ন হৃদয় গহীনে তোলপাড় করে স্মৃতি,
জোনাকির আলোর লুকোচুরি খেলে নির্ঘুম রাত্রি।
কাঁচা মিঠে রোদ্দুরে শিউলি ঝরা সকাল হয়ে,
স্মৃতির নৌকায় পাল তুলে শরৎ ঘুরে ফিরে আসে।
শরৎ এলো দেশে
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
অপরূপ এক শোভা নিয়ে
শরৎ এলো দেশে,
শুভ্র সাজে মেঘ উড়ে তাই
হাওয়ার ভেলায় ভেসে।
শরৎ শোভায় মেঘ বালিকার
কান্না গেছে থেমে,
রোদ্দুরে তাই হলদে সাজ
ধরায় আসে নেমে।
রজনী ভর চাঁদ-তারাদের
বসে রঙের মেলা,
প্রভাত বেলা তৃণের বুকে
শিশির করে খেলা।
শিউলি-বকুল ঘ্রাণ ছড়িয়ে
লাগায় প্রাণে দোলা,
সরোবর আর কাশের হাসি
করে আত্ম-ভোলা!
ঋতুর ভাঁজে শরৎ আসছে
সুখের বার্তা নিয়ে,
হিমেল বায়ের স্নিগ্ধ পরশ
যায় নাচিয়ে হিয়ে!
শরৎ আকাশে মেঘের চিঠি
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
ফুল ফুটেছে ফুল ফুটেছে
ওই যে নদীর ধারে,
হাওয়া দুলে সাদা কাশফুল
মেঘ বালিকা উড়ে।
শরৎ আকাশে মেঘের চিঠি
আষাঢ় শ্রাবণ ঘিরে,
মেঘ এসেছে শ্যামল গায়ে
রাখাল এসো ফিরে।
নদীর জলে শাপলা ফুটে
পদ্ম পাতায় ব্যাঙ,
কাঁদার জলে পড়লো দাদু
বাংলো নিজের ঠ্যাং।
শরৎ কাঁড়ে মন
সৈয়দ ময়নুল কবরী
বর্ষা শেষে শরৎ এসে,
আকাশ ঢাকে নীলে
পদ্ম ফোটে নদীর জলে,
কাশফুল হাসে ঝিলে।
তালের রসের গন্ধ শুকে,
ভোলায় ব্যথা দুঃখ
কূলও বধূর মনের সুখে
হাসিতে ফোটায় মূখ।
নদীর তীরে বাগান জোরে,
ফসলের চলে দুম
মাঝির ডিঙি নদীর ধারে,
বাঁধিয়ে পারে ঘুম।
শরৎ হাসে মনোল্লাসে,
শরৎ কাঁড়ে এই মন
শরৎ চোখে ছবি আঁকা
শরতের আয়োজন।
শরত রানি
ফেরদৌস জামান খোকন
শরত রানি শরত রানি
নিয়ে এলে শোভা জানি
রূপের বাহার বেশ,
শরত রানি এলে দেশে
খুশির নেই যে শেষ।
ঋতুর রানি শরত মানি
নির্মল বায়ু আকাশখানি
কাশফুল সাদা হয়,
চারিদিকে কাশের মেলা
ঝড়ের নেই তো ভয়।
এই ঋতুতে আকাশ জুড়ে
মেঘের ভেলা শুধু উড়ে
কবি লিখে যায়,
হংস মিথুন জলের মাঝে
খুব আনন্দ পায়।
শরত রানি ফিরে এলে
কিশোরী যায় হেলেদুলে
হাসিখুশি মুখ,
দেশের মানুষ থাকবে ভালো
পাবে সবাই সুখ।
শরতের রাণ
জিশান মাহমুদ
শরতের চিঠি নিয়ে কাশফুল হাত
প্রিয়তমা এলো এই জোসনার রাতে।
টোল পড়া গালে তার শরতের হাসি
সুবাসিত কেয়া ফুল বড়ো ভালবাসি।
মায়া ভরা রূপ তার কাশ তুল তুল
হাসি যেন মনে হয় শিউলির ফুল।
সাদা কালো মেঘ রঙ প্রেয়সীর শাড়ি
হাতে পরে নীল চুড়ি এল মোর বাড়ি।
হাত ধরে বলি তাকে কবিতার বাণী
প্রিয়া হয়ে এসো মোর শরতের রাণী।
শারদ ছোঁয়
কবির সুমন
কাশ বনে উড়ছে শারদ
মন নিয়েছে কেড়ে,
নদীর বুকে চর জেগেছে
বইছে হাওয়া ধীরে।
উদার মনা রোদ আঙিনা
দেখছে শুধু চেয়ে,
শিউলি একা শিউরে উঠে
শুভ্র ছোঁয়া পেয়ে।
গগণ জুড়ে চলেছে ধেয়ে
মেঘের নৌকা খানি,
শারদ প্রেমে ভাসছে ভুবন
হাসছে ঋতু রাণী।
শরৎ এলে
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
শরৎ এলে শিউলি বকুল
ফুলগুলো সব ফোটে,
মৌমাছিরা ঝাকে ঝাকে
গন্ধে সেদিক ছোটে।
শরৎ এলে শিশির ঝরে
সবুজ দূর্বা ঘাসে,
সূর্যমামা তাই না দেখে
আপন মনে হাসে।
শরৎ এলে শারদীয়ার
বাজনা শুধু বাজে,
গাছগুলো সব হিমেল ছোয়ায়
নতুন করে সাজে।
শরৎ এলে কাশফুলেরা
নাচে নদীর ধারে,
এই শরতের দৃশ্যগুলো
সবারই মন কারে।
শরৎ বিকে
এ আর রিফাত
বিকেল বেলা কাশবনেত
ধরতে গিয়ে পাখি,
শরৎ দিনের আকাশ দেখ
রামধনু রং মাখি।
মেঘগুলো সব ছুটোছুটি
করছে সবাই খেলা,
বলছে যেন বাড়ি চল
ফুরিয়ে গেল বেলা।
ও মেঘ তুমি কোথায় থাকো
আসবে নাকো ফিরে?
আমার সাথে দেখা করো
যমুনার ঐ তীরে।
শরতের রূপ
শারমিন নাহার ঝর্ণা
আকাশ সাজে সাদা মেঘে
ভেসে যায় ঐ দূরে,
কাশের বনে বাজলো বাঁশি
আহা মিষ্টি সুরে।
বিলে ঝিলে শাপলা ফোটে
নদী ভরা জলে,
খুশি মনে ছেলে মেয়ে
নদীর জলে খেলে।
শীতল বাতাস মাঠে মাঠে
লাগে পাকা ধানে,
শরতের রূপ জেগে উঠে
প্রকৃতির সব খানে।
শরৎ রাণী
মুহাম্মদ নূর ইসলাম
সাদা মেঘের পালকি চড়ে
শরৎ রাণী আসে,
সেই খুশিতে নদীর পাড়ে
কাশফুলেরা হাসে।
আকাশ তখন ফর্সা থাকে
চোখ জুড়ানো নীলে,
দল বেঁধে সব পুঁটি মাছ
ঘুরে বেড়ায় বিলে।
প্রজাপতির দুধের শিশু
মেলে রঙিন ডানা,
উড়ে বেড়ায় ঘুরে বেড়ায়
পথ ভুলে অজানা।
কাশফুলে যেই বসে ফড়িং
ধরতে ছোটে খুকি,
শরৎকালে জগত জুড়ে
রঙিন আঁকিবুঁকি।
শরৎকাল
শামসুন্নাহার সুমনা
সাদা সাদা মেঘ হাসে ঐ,
নীল আকাশের বুকে।
সূর্য মামাও ঝলমলিয়ে,
হাসে মনের সুখে।
রাত আকাশে চাঁদটা হাসে,
হাসে কোটি তারা।
মেঘের সাথে খেলে সবাই,
লুকোচুরি খেলা।
বিলে-ঝিলে শাপলা হাসে,
জ্বলের মাঝে খেলে।
ফুল বাগানে জুঁই চামেলি,
মৃদু হাওয়ায় দোলে।
নদীর ধারে কাশফুলেরা,
খিলখিলিয়ে হাসে।
শিউলি হেসে সুবাস ছড়ায়,
শরৎ যখন আসে।
ঋতু রাণি শরৎ আস
আবদুল লতিফ
শিউলি তলায় দুর্বাঘাসে
জমে শিশির কণা
ঘাসের উপর শিউলি ঝরে
আঁকে যে আলপনা।
নীল আকাশে ভেসে বেড়ায়
সাদা মেঘের ভেলা
আমন ধানের সবুজ মাঠে
উদাস হাওয়ার খেলা।
জ্যোৎস্না রাতের স্নিগ্ধ আলো
মুগ্ধ করে প্রাণ
হাওয়ায় হাওয়ায় যায় ছড়িয়ে
হরেক ফুলের ঘ্রাণ।
বিলে-ঝিলে শাপলা শালুক
তারার মতো ফোটে
শুভ্র সাদা কাশ ফুলেরা
হাওয়ায় দুলে উঠে।
ঋতু রানি শরৎ আসে
নববধূর বেশে
স্নিগ্ধ কোমল শরৎ আসে
ষড় ঋতুর দেশে।
চাঁদের হাসি
আলমগীর কবির
নীল আকাশের দোলনাত
চাঁদ খেয়ে যায় দোল,
চাঁদ হাসলেই কী অপরূপ
গালে পড়ে টোল!
চাঁদকে দেখে বলল খুকি
ও মায়াবী চাঁদ,
তোমার দেশে চাই বেড়াতে
অনেক দিনের সাধ!
চাঁদ জবাবে হেসে দিলো
খুশি উপহার,
খুকির মুখের হাসি বুঝি
চাঁদ করেছে ধার!
জোনাকিদের আজকে খুশির
বাঁধ ভেঙেছে বাঁধ
চাঁদ হাসলেই খুকি হাসে
খুকি হাসলে চাঁদ!
আসুক শরৎ ফিরে
নাজমুন নাহার
শরৎ প্রাতে শিশির মাতে
সবুজ ঘাসের বুকে,
শিউলি ফুলে নুয়ে গাছে
বিলায় যে ফুল সুখে।
আসে পবন দোলে কাশে
ভরা নদীর কূলে,
শাপলা শালুক হাসনাহেনা
কানন ভরা ফুলে।
ফুলে হাসে অলি ফাঁসে
গুঞ্জরণে ভরা,
আগমনির বার্তা শুনে
খুশিতে যে ধরা।
নীল আকাশে সাদা মেঘের
চলে আনা-গোনা,
কাশের বনে সাদা বকের
বাসাটি হয় বোনা।
উষ্ণতা নয় হালকা শীতের
আমেজ রয় যে ঘিরে
শরৎ প্রেমে মন হারাতে
আসুক আবার ফিরে।
শরৎ শোভা
হানিফ রাজা
ঋতুর চক্রের আবর্তনে
শরৎ ঋতু আসে,
ভোরের প্রাতে শিশির ঝরে
সবুজ শ্যামল ঘাসে।
গাছে বসে পাখির মেলা
মাতাল করে গানে,
শিউলি তলায় ফুলের ঘ্রাণে
মনটা আমার টানে!
নদীর তীরে কাশের বনে
হৃদে পুলক জাগে,
শরৎ বায়ের স্নিগ্ধ পরশ
গায়ে এসে লাগে।
কলমি শাপলা পদ্ম ফোটে
খালে বিলের জলে,
নীল আকাশে বকের সারি
ছন্দে উড়ে চলে।
শরৎ শোভা দৃষ্টি কাড়ে
হাওয়ায় ভাসে গন্ধ,
ভাটিয়ালীর গানের সুরে
পায় যে জীবন ছন্দ।
তালের পিঠা
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
ভাদ্রমাসের খুব গরমেও
নানুর বাড়ি যেতাম,
পাকা তালের রসের পিঠা
সবাই মিলে খেতাম।
ঘরের পিছে পড়তো যে তাল
ধাপুসধুপুস করে।
রাত দুপুরে আনতে যেতাম
মামতোর হাতটি ধরে।
রাতে নানু কম ঘুমাতো
থাকতো পাশের ঘরে,
শব্দ পেয়েই বলতো খোকা
যাসনে ভূতে ধরে।
পুকুর ছিল বাড়ির পাশেই
যেতাম দুপুর বেলা,
সবাই মিলে সাঁতার কেটে
খেলতাম মজার খেলা।
শরৎরানী
সারমিন চৌধুরী
শরৎ রাণী হাসছে যে
মেঘের কূলে আজ,
আনন্দ মনে সেজেগুজে
দেখাচ্ছে নব সাজ।
বর্ষার বুকে ঘুরে বেড়াতে
শরৎরানী নামে,
ঘাসের আগায় মুক্তার মত
শিশির বিন্দু জমে।
শিউলি ফুল ঘ্রাণ বিলিয়ে
কাশের বনে খেলে,
দিঘির জলে শরৎরানী
সাঁতরাই চুল মেলে।
কচিকচি গাছের পাতা
মনের সুখে দুলে,
শরৎরানীর স্পর্শ পেয়ে
দুঃখকে যায় ভুলে।
শরৎরানী বসুন্ধরাতে
আনন্দ নিয়ে এল,
রংধনুর সাতটি রঙের
খবর দিয়ে গেল।
শরৎ এলে
সুপদ বিশ্বাস
বর্ষা শেষে শরৎ এলেই প্রকৃতিটা জাগে,
কাঁচা ঘাসে শিশির জমে হিমের পরশ লাগে।
প্রভাতবেলা মিষ্টি আলো
পুব আকাশে হাসে,
নীল আকাশে শুভ্র মেঘে
এলোমেলো ভাসে।
মাঠেঘাটে আমন ধানের সবুজ পাতা দোলে,
কৃষক মনের কষ্ট ব্যথা তারা সবাই ভোলে।
ফুলবাগিচায় মুগ্ধ থেকে
মধু খোঁজে অলি,
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে
জাগে নতুন কলি।
নদীর পাড়ে কাশের বনে খোকা-খুকু ছোটে,
বিলে-ঝিলে নানা রঙের শাপলা পদ্ম ফোটে!
শরৎরানি এলো
সাইফুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম
বর্ষা শেষে শরৎরানি চলে এলো দেশ
নীল আকাশে মেঘের না’য়ে ভেসে হেসে হেসে।
নদীর তীরে কাশ ফুটেছে, কাশ ফুটেছে বনে
খুশির জোয়ার বইছে ধরায়, বইছে মানব-মনে।
শরৎ এলে আকাশ নীলে উড়ে বেড়ায় পাখি
আমরা কেবল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে সেদিক থাকি।
নদীর তীরে, বনে বনে কাশফুলেরা হাসে
জলের মাঝে সারি সারি পাল তোলা নাও ভাসে।
শরৎ সাজ
মাহফুজা আক্তার
বছর ঘুরে চলে আসলো
শরৎ এর রাণী আবেশে,
কাশের বনে মাদল বাজে
অর্ক যায় মুচকি হেসে ।
নীল আকাশে সাদার ভেলা
উড়ে চলছে ওপর নিচে,
শিশির মাখা প্রভাত কালে
অলি ঘুরছে পরাগ শীষে ।
ঘুমের ঘোরে পাখির ডাক
ভেসে আসছে সুদূর থেকে,
শুভ্রতার আলিঙ্গনে
শরৎ সাজে চারুতা মেখে ।
শরৎ কালে
নার্গিস নাহার রুনু
বর্ষা গিয়ে শরৎ এলো
শীতের আমেজ বাতাসে,
আকাশ জুড়ে শুভ্র মেঘের
ভেলা দেখি তাই ভাসে।
কাশফুলেরা চামর দোলায়
নদীর পাড়ে মাঠ ঘাটে,
রোদ ও মেঘের লুকোচুরি
দেখে দেখে ক্ষণ কাটে।
শিশির ভেজা শিউলি লুটায়
রোজ প্রভাতে গাছের তল,
শাপলা কমল কলমি ফোটে
কী মনোহর ঝিলের জল!
জোনাক জ্বলে রাতের বেলা
ঝিঁঝি ডাকে ঝোপ ঝাড়ে,
শারদ শশীর ঝলমলে রূপ
দেখে সবার প্রাণ কাড়ে।
শেষ বিকেলের স্নিগ্ধ বায়ে
মনটা যে যায় জুড়িয়ে,
আসা যাওয়ার চক্রে যাব
এই অনুভব ফুরিয়ে।
এলো শরৎকা
মোঃ নিক্সন
বর্ষার বিদায়ে এলো শরৎকাল,
ভাদ্র মাসে পেকেছে তাল।
চোখ জুড়ানো সেজেছে মাঠ,
কৃষকেরা কাটছে ক্ষেতের পাট।
নদীর তীরে ফুটেছে সাদা কাশ,
শিশির কণা জমেছে দুর্ভা ঘাস।
মেঘের ভেলা ছুটেছে বিরামহীন,
রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি সারাদিন।
শাপলা ফুলে ভরে গেছে বিল,
আকাশ সেজে অপরূপ নীল।
শিউলি দেখে দোলা লাগে মনে,
দলে দলে ভ্রমর ছুটছে কুঞ্জ বনে।
শরতের সা
কাজী নাজরিন
শরৎ সাজে রঙিন বেশে
আকাশ সাজে নীল
সারি বেঁধে পাখিরা উড়ে
উড়ে শঙ্খচিল।
পথের ধারে কাশবনে
ফোটে সহস্র ফুল
ফুলের রাজ্যে রাণী হয়ে
ফোটে শিউলি ফুল।
শিউলি ফুলের মালা গেঁথে
কন্যা দেয় চুলে
সারি বেঁধে হেটে চলে
সবাই নদীর কূলে।
শরতের সাজ
আরজাত হোসেন
আকাশে ঘনমেঘ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
ঝরে পড়ে সতত ভিজে যায় সৃষ্টি।
ভাদ্র আশ্বিন মিলে শরতের সাজ
নদী ধারে কাশফুল ফুটেছে যে আজ।
মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা
বিলে-ঝিলে লাল-সাদা, শাপলার মেলা।
ছোট ছোট নৌকায় তুলে দেয় পাল
তারপরে তুলে মাঝি মনোহর তাল।
শরতে সকাল বেলা শিউলির ঘ্রাণ
সবুজ ধানের মোহে জুড়ে মনপ্রাণ।
ধীর পায়ে সাদাবক বিলে হেঁটে যায়
পুঁটিমাছ ধরে আর চুপচাপ খায়।
মাঝেমাঝে শুনা যায় মেঘেদের ডাক
নিথর গরুর পিঠে, বসে ভেজা কাক।
মাঠজুড়ে তড়িঘড়ি কৃষকের কাজ
এই বুঝি মেঘ হলো এই বুঝি সাঁঝ।
শরতের প্রকৃতি
সাঈদুর রহমান লিটন
আকাশ জুড়ে শুভ্র মেঘ
করছে নানা খেলা,
রবির আলো যাচ্ছে ঢেকে
আঁধার সারা বেলা।
হঠাৎ মেঘে,বৃষ্টি এলে
ভরছে খাল বিল,
আকাশ হতে আসছে উড়ে
মাছ ধরতে চিল।
অল্প জলে পাট ধুচ্ছে
ভুখা নাঙ্গা চাষী,
দু’মুঠো ভাত খাবার খেতে
খাটছে দিবা-নিশি।
মুক্ত দানা ঘাসের পড়ে
রশ্মি দিলো ঢেলে,
শিউলি মেয়ে ফুলের সাথে
যাচ্ছে খেলা খেলে।
কাশফুলের ধবল সাদ
হৃদয় উঠে গেয়ে,
কলস কাখে রূপ কুমারী
যাচ্ছে দেখো নেয়ে।
শরত রানী
আল আমিন মুহাম্মাদ
মেঘের ভেলায় চড়ে শরতের রানী
গলে পরে শিশিরের সিক্ত কামিনী,
ঘুরে ঘুরে দেখে এই শ্যামলিমা দেশ
শিল্পী কবির মনে রাঙায় আবেশ।
কাঁচা-মিঠে রবি উঠে নদীতীর রাঙে
দুবলো মানিক সাজে, ফড়িংরা চাঙে।
মাঝি ভাই নাও বায় থই থই জলে
পাখিরা আধার খোঁজে দূরদেশে চলে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজে যায় রোদ
বঁধু তোলে পুঁইশাক মনে কি প্রমোদ।
মেঘের বাসর জমে থেকে থেকে ওই
আমনের ক্ষেত ভরে, মাছে হইচই।
আকাশের নীল ছোঁয়া সপ্নে ও-চিল
শিউলি মাখা বাতাসে উড়ু উড়ু দিল।
কাশফুল দুল দুল তুলতুলে হাসি
বিকেলের ভিজে রোদে কাজ করে চাষি।
শাপলা শালুক বিলে পশ্চিমাকাশে
রঙধনু মন রাঙে পাটে রবি হাসে ।
তার নিচে ছোট গাঁও আঁধারে হারায়
বকসারি দিগন্তে থমকে দাঁড়ায়।
বৃক্ষের শাখে শাখে জোসনার খেলা
ছায়া পাতা আলপনা আঁকে নিশিবেলা।
মেঘে ধোয়া চাঁদ ওঠে শান্ত ও শিষ্ট
খোকা দ্যাখে প্রাণ ভরে লাগে কী মিষ্ট।
মায়ে ভাজে তালপিঠা খোকা এলো বাড়ি
বাবা যায় পাট নিয়ে হাটে তাড়াতাড়ি।
ইলিশের সুগন্ধে ম ম করে পাড়া;
আউশের পাকা ধানে দিকে দিকে সাড়া।
শরৎ এলে
এম আর মাহফুজ
শরৎ এলে মনে পড়ে সেই,
পুরোনো দিনের সৃঁতি।
শৈশব কি আর আসবে ফিরে?
নাকি,সব হয়েছে ইতি।
শরৎ এলে বিকেল বেলায়
মাততাম খেলার মাঠে।
হইচই আর হুল্লোড়ে সব
নদী, পুকুর, ঘাটে।
শরৎ এলে পুকুরে পাড়ে
কুড়িয়ে পেতাম ডিম।
ঘন ঘন ডুব সাঁতারে
গা হত যে হিম।
শরৎ এলে ঘরে ঘরে
তাল পিঠারই ধুম।
রসের ঘ্রাণে মাতাল হতাম
আসত না যে ঘুম।
শরৎ এলে শিউলি,জবা
লাগতো যে রঙিন।
তিরিং বিরিং ফড়িং ধরে
কাটতো সুখের দিন।
অচেনা শরৎ
বিভাস দাস
সকালবেলাতে দেখি জলে ভেজা ঘাস,
জল মোটে নয় সে যে শিশিরের কণা,
আকাশে বাতাসে ভেসে আসে পূজা বাস
সব বাঙালির মন হয় আনমনা।
শিউলি ফুলের গাছে ফোটে কত ফুল
ফুলের বিছানা পাতা গাছের তলায়।
এখনো যে কেন জলে ভরা নদীকূল
কেন উছলতা তার পথের চলায়?
শরতের শেষ ভাগে বরিষণধারা
এ তো নয় সাধারণ স্বাভাবিক মোটে।
নদীজলে স্রোত চলে পাগলের পারা
গরিব লোকের দুই চোখে ঘুম ছোটে।
নদীতীরে কাশফুল জলে ডোবা আজ
জেগে ওঠেনিতো দেখি নদীবুকে চর।
শরতের প্রকৃতির এ কেমন সাজ?
জলে ডোবা বানভাসি মানুষের ঘর।
অচেনা সে আগমনী বারতার সুর
তবুও উঠেছে আজ চারিদিকে বেজে।
সব বাধা কেটে চলে যাবে বহু দূর
দেখা দেবে এ প্রকৃতি নবরূপে সেজে।
শরৎ কালের গান
ননী গোপাল চন্দ্র দাশ
ফুটলো সাদা কাশ,
দীঘির জলে ভেসে বেড়ায়
আমেনাদের হাঁস।
তিন্নি, তমা খেলা করে
ছাতিম গাছের তলে,
রাতুল, পিয়াল কোথায় গেলো?
নেই তো ওদের দলে।
শরীর খারাপ! মন ভালো নেই?
করলো নাকি মান!
সৃজন হঠাৎ গাইছে শোনো
শরৎ কালের গান।
শরৎ ভোরে
শ্যামল বণিক অঞ্জন
শিউলী ফোটা শরৎ ভোরে
ভাঙলো খুকির ঘুম,
শুভ্র সাজে কাশফুলেরা
খুকিরে দেয় চুম।
ঝির বাতাসে ভেসে চল
সাদা মেঘের ভেলা,
খুকিমণি মেঘকে বলে
এসো করি খেলা!
ফুলপরি আর প্রজাপতি
আমার প্রাণের সই,
শরৎ ভোরে আমরা চলো
খেলায় মেতে রই।
শরৎ আসে নীলাকাশে
বিজন বেপারী
শ্রাবণ শেষে ভাদ্র আসে
সূর্য ওঠে হেসে
কিশোরী যায় নদীর কূলে
সবুজ ভালোবেসে।
কাশের বনে দোলা লাগে
ফোটে সাদা ফুল
দূর থেকে ভাই দেখতে লাগে
যেনো দাদুর চুল।
বাড়ির পাশে তাল গাছটিতে
ছড়ায় সুবাস গন্ধ
তালের খোঁজে ওঁত পেতে রয়
পাশের বাড়ির নন্দ।
শরৎ আসে নীলাকাশে
শুভ্র মেঘের ভেলা
রংধনু অই ঈশান কোণে
লুকোচুরির খেলা।
শরতে
রেজা কারিম
এই শরতে চল ছুটে যাই সাদা মেঘের ভেলায়
কাটাবো না মোটেও সময় আরতো অবহেলায়
সাদা মেঘের পিঠে চড়ে ঘুরবো আকাশবাড়ি
মাটির সাথে রাগ করেছি তাইতো দেবো আড়ি।
দেখবো সাদা মেঘের ওড়া মেঘের উপর বসে
ঘুরবো সারা পৃথিবীটা ইচ্ছেমতন চষে
উপর থেকে দেখবো নদী দেখবো শালুক বিল
আমার পাশে উড়বে ঈগল উড়বে বিশাল চিল।
এই শরতের ভাঁজে ভাঁজে দেখার মতো সবই
তাইতো শরত নিয়ে দেখি কাব্য লেখে কবি
সারাটাদিন ঘোরার পরে ফিরবো যখন ঘরে
মনে হবে ফের ছুটে যাই রাতটা দেখার তরে।
শরৎ এলে শিউলি ফোটে
রানা জামান
শরৎ এলে শিউলি ফোটে
কাশের বনে দোল,
বাউল বাজায় ঢোল,
মেঘের ভেলা শম্বুক ছোটে
ঋতু পাল্টায় ভোল।
নদী থাকে ভরা জলে
ভরা থাকে খাল,
কেহ ফেলে জাল,
বিন্দাস মৎস শিকার চলে
চালে রাঁধে ডাল।
পাট পঁচাতে ব্যস্ত চাষী
পাবে গোল্ডেন আঁশ,
সুখের বারো মাস,
মুখে ফুটে নির্মল হাসি
বৃষ্টি ভেজা ঘাস।
শরৎ শশীর আলোর রাতে
জারি গানের ঢেউ,
রয় না বসে কেউ,
ছাতিম ফুলের সুবাস সাথে
তফাৎ থাকে ফেউ।
শরতের চিঠি
কিশোর-হারুন
শরৎ এলো ছেয়ে গেলো আকাশের নীল
সাদা মেঘে ভেসে বেড়ায় কত গাংচিল।
ফসলের মাঠ হাসে রোদে ঝিকিমিকি
প্রকৃতির কাছে আমি নানা জ্ঞান শিখি।
শিউলি ফোটা সকাল বেলা সাদা কাশবন
পাখির কণ্ঠে শুনতে পাই মুধুর আলাপন।
নদী পাড়ে কাশফুল ফুটে ফুটে আছে
পূবালী বাতাসে হেলে দুলে নাচে।
শত নদী বয়ে চলা আমাদের দেশ
রূপে গুনে সেরা ভূমি রূপের নেই শেষ।
পারের নায় হাল ধরে বসে আছে মাঝি
জ্বলে পুড়ে পারাপারে নেই কারসাজি।
হাটি হাটি পায়ে নেমে আসে সন্ধে
বাড়ি বাড়ি মেতে ওঠে রান্নার গন্ধে।
রাত ভর জোনাকিরা জ্বলে মিটিমিটি
ফুলে ফুলে দেখো আজ শরতের চিঠি।
শরত ছোঁয়া
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
মুখ খুলেছে যূঁই চামেলি
শরত ছোঁয়া পেয়ে।
কুহেলিকা আসছে ধেয়ে
হিমানীর গান গেয়ে।
বকের মতো কাশফুল দোলে
নদীর কূলে কূলে।
আকাশের গায় রূপালী মেঘ
তুলোর মতো ঝুলে।
শাপলা ফোটে বিলে ঝিলে
ডিঙি বেয়ে তোলে।
শরতের রঙ নিত্য জ্বলে
বন্য ফুলে ফুলে।
পশ্চিমাকাশে মেঘের ভেলা
বসায় ছবির মেলা।
দেখতে দেখতে এমন খেলা
হারিয়ে যায় বেলা।
বঁধু যাচ্ছে বাপের বাড়ি
পালের নৌকা চড়ি
পরনে তার কাতান শাড়ি
হাতে সোনার ঘড়ি।
শরতের ছড়া
সজীব আহমেদ
ভাদ্র-আশ্বিন মাসে
শুভ্র শরৎ আসে
ভোর সকালে শিউলি ঝরে
স্নিগ্ধ সবুজ ঘাসে।
রোদ্র-ছায়ার খেলা
পানকৌড়ির মেলা
নীল আকাশে ভেসে বেড়ায়
শাদা মেঘের ভেলা।
মেঠো পথের গান
পাকা তালের ঘ্রাণ
বর্ষা শেষে শরৎ এসে
আকুল করে প্রাণ।
চলছে কানাকানি
শরৎ রূপের রাণী
শরৎ-রূপের মধুর আলোয়
জোছনার হাতছানি।
তালের পিঠা
ফেরদৌস জামান খোকন
তালের পিঠা লাগে মিঠা
ভাদ্র মাসে যখন,
ধপাস করে তাল যে পড়ে
খুশি লাগে তখন।
মা’য়ের হাতে খাবার পাতে
নানা পদের পিঠা,
ভালো লাগে ইচ্ছে জাগে
স্বাদে মজার মিঠা।
ইশকুল ছুটি বেঁধে জুটি
নানার বাড়ি গিয়ে,
ভাদ্র মাসে তালের বাসে
যায় রে ভরে হিয়ে।
নানা বলে কত ছলে
কই রে আমার নাতি,
নাকে গন্ধ নয়তো মন্দ
আসন তবে পাতি।
খেতে বসে পিঠার রসে
উদর পুর্তি করে,
আঁধার আসে সবাই পাশে
গল্প জমে ঘরে।
শরৎ
ইলিয়াছ হোসেন
শরতের নীল আকাশ জুড়ে
মেঘের ভেলা ভাসে,
খালে বিলে নানান রঙের
পদ্ম শাপলা হাসে।
ঘাসের শিশির ঝকমক করে
রবির আলো পড়ে,
রঙিন ফড়িং প্রজাপতি
ডানা মেলে ওড়ে।
নদীর বাঁকে শুভ্র কাশে
শোভা ছড়ায় খুব,
পানকৌড়ি হাঁস মনের সুখে
পানিতে দেয় ডুব।
শিউলি বেলি জুঁই শেফালি
দেখতে লাগে বেশ,
পাখপাখালির মধুর গানে
কাটে না মনের রেশ।
ঝিরঝিরে সমীরণ বহে
খেতের সবুজ ধানে,
শরৎ রানির রূপের ছটা
সদা কাছে টানে।
কাশের বনে
শাহ আলম বিল্লাল
রোজ বিকেলে নদীর পাড়ে
একা একা হাঁটি
কাশের বনে মন চলে যায়
ছন্দ ছড়া কাটি।
কাশের বনে সাদা সাদা
ঢেউ তুলে দেয় মনে
আমি তখন কথা বলি
ছন্দ ছড়ার সনে।
অলস বেলা নদীর ধারে
অনেক ভালো লাগে
নীলের ছোঁয়া সারা আকাশ
সুখ যে আমার ভাগে।
যত দূরে দৃষ্টি চলে
শুধু কাশের ছবি
আঁচল তুলে ডাকে আমায়
অচেনা এক কবি।
শরতের আমে
নজমুল ইসলাম খসরু
রোদের উপর মেঘের ছায়া
কাছে কোথাও বৃষ্টি,
শরৎ কালে প্রকৃতির এক
অবাক করা সৃষ্টি।
দিনের বেলা গরম হাওয়া
হিমেল আবেশ রাতে,
জ্বলমলে ঐ নীল আকাশ
জাগে তারার সাথে।
ঢেউ খেলে যায় কাশবনে
সাদা ফুলের হাসি,
শিউলি ছড়ায় স্নিগ্ধ আভা
সুবাস রাশি রাশি।
দিন যাপনে ভিন্ন আমেজ
খুশিতে মন ভাসে,
শরৎ কালের হাতটি ধরে
নবান্ন ঐ আসে।
শরতের ফুল
রেজাউল করিম রোমেল
শরতের প্রকৃতি সেজেছে
আজ রকমারি ফুলে,
শান্ত কোমল স্নিগ্ধ উদার
অপূর্ব সুন্দর রূপে।
কাশফুল শাপলা শালুক
পদ্ম জুঁই কেয়া,
শিউলি জবা কামিনী
মালতী মল্লিকা নয়নতারা।
মাধবী ছাতিম দোলনচাঁপা
বেলি ধুতরা জারুল,
ঝিঙে শ্বেতকাঞ্চন রাধুচূড়া
বোগেনভেলি ফুল।
শরতের রকমারি ফুলে
মন হেসে ওঠে,
হৃদয় সজিব হয়
প্রকৃতির আনন্দে ভাসে।
শরৎ এলো দেশে
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
অপরূপ এক শোভা নিয়ে
শরৎ এলো দেশে,
শুভ্র সাজে মেঘ উড়ে তাই
হাওয়ার ভেলায় ভেসে।
শরৎ শোভায় মেঘ বালিকার
কান্না গেছে থেমে,
রোদ্দুরে তাই হলদে সাজে
ধরায় আসে নেমে।
রজনী ভর চাঁদ-তারাদের
বসে রঙের মেলা,
প্রভাত বেলা তৃণের বুকে
শিশির করে খেলা।
শিউলি-বকুল ঘ্রাণ ছড়িয়ে
লাগায় প্রাণে দোলা,
সরোবর আর কাশের হাসি
করে আত্ম-ভোলা!
ঋতুর ভাঁজে শরৎ আসছে
সুখের বার্তা নিয়ে,
হিমেল বায়ের স্নিগ্ধ পরশ
যায় নাচিয়ে হিয়ে!
শরৎ ঋত
মোছাম্মৎ সীমা ইসলাম
গগন মাঝে ঐ দেখা যায়
শুভ্র বারিদ হাসে,
খালে বিলে ঝিলের মাঝে
শাপলা পদ্ম ভাসে।
বর্ষা মৌসুম বিদায় নিয়ে
শরৎ এলো চলে,
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দেয়
শিউলি গাছের তলে।
নতুন রূপে ধরা সাজে
দেখে নজর কাড়ে
মিষ্টি রোদের লুকোচুরি
শরৎ এলো দ্বারে।
আমন ধানের চারা রোপন
সবুজ মাঠে ঘেরা,
শরৎ রানীর রূপের ঝলক
দেখতে লাগে সেরা।
স্নিগ্ধ বায়ু বইছে ধরায়
দোলা দেয় যে প্রাণে
মন ভরে যায় ভাদ্র মাসে
পাকা তালের ঘ্রাণে।
শরৎ কালের আগমনে
বকের সারি আসে,
নদীর ধারে কাশের বনে
ফুল কলিরা হাসে।
শরৎ ঋতুর কাজ
রিবন রায়হান
আকাশজুড়ে আজকে দ্যাখো
মেঘের কারুকাজ
মেঘের চারুকাজ!
মেঘ হয়ে যায় পাখি আবার–
মেঘ হয়ে যায় মাছ!
মেঘ হয়ে যায় ঢেঁকি আবার
মেঘ হয়ে যায় একি আবার
মেঘ হয়ে যায় গাছ!
মেঘ হয়ে যায় ছাতা আবার
মেঘ হয়ে যায় পাতা আবার
মেঘ হয়ে যায় ভাঁজ!
মেঘ হয়ে যায় তুলো আবার
মেঘ হয়ে যায় কুলো আবার
মেঘের নতুন সাজ!
শরৎ ঋতুর আকাশ এটা–
শরৎ ঋতুর কাজ!
শরৎ হাসি
আলমগীর হোসাইন
ছুটে গেলাম কাশফুলের মায়ায়
দেখতে নদীর পাড়ে
ছলাত ছলাত ঢেউয়ের তালে
মন যে আরও কাড়ে।
শুভ্র মেঘের ভেলা দেখি
আকাশ বুকে ভাসে
গাছে গাছে দিনের বেলায়
ছাতিম কদম হাসে।
বর্ষা শেষে শরৎ হাসে
হাসে শিশু কিশোর
পাখির কলকাকলিতে মুখরিত
আসে যখন ভোর।
হিম আদরের জ্যোৎস্নাধারা
সাজ্জাদুল ইসলাম শাওন
মন ভোলানো প্রকৃতি আর
বিলাসবতী হাওয়া
কাশের বনে সাদা সাদা
মেঘের আসা-যাওয়া।
পদ্মপাতায় উদাস দুপুর
দেখায় হাঁসের দল
গুমোট শাড়ির আঁচল বেয়ে
ঝরতে থাকে জল।
শিউলিফুলের মিষ্টি সুবাস
শান্ত নিবিড় বন
হিম আদরের জ্যোৎস্নাধারা
জাগায় শিহরণ।
মেঘগুলো উড়ে যায়
ইমরান খান রাজ
মেঘগুলো উড়ে যায়
আপন মনে অজানায়
কেউ হাসে কেউ কাঁদে
বিরহ বেদনায়।
বৃষ্টির ফোঁটা লাগে গায়
শীতল করে প্রাণ
ধুয়ে মুছে শেষ করে
সকল অপমান।
পাখিরা ফিরে আসে
নিজ নিজ নীড়ে
আপন মানুষ খুঁজে নেয়
শত চোখের ভিড়ে।
শরৎ মেয়ে
জিৎ মন্ডল
শরৎ মেয়ে আয়রে ছুটে
আয়রে হাওয়ার বেগে,
তোরে নিয়ে ঘুরতে যাবো
পেজা তুলার মেঘে।
শিউলি ফুলের মালা দেবো
খোঁপায় কাশ ফুল,
নীল পাড়ের শাড়ি দেব
সাদা কানের দূল।
সিছকাঁদুনি বৃষ্টির মাঝে
ভিজবো দুজন মিলে,
মঠভরা ঐ সবুজ ক্ষেতে
চলবো হেলে দুলে।
শরৎ এলো হেসে
নাঈমুল হাসান তানযীম
আকাশজুড়ে শুভ্র সাদা
মেঘের ভেলা ভাসে,
শাপলা ফোটে বিলের জলে
কাশফুলেরা হাসে।
শিউলি টগর আরও নানান
বিচিত্র ফুল ফোটে,
প্রকৃতিও ভীষণরকম
সাজে সেজে ওঠে।
নদী নালা ডোবা পুকুর
ভরে স্বচ্ছ জলে,
লাফালাফি করে তাতে
পাবদা পুঁটির দলে।
কৃষক তখন ধানের ক্ষেতে
আমন ধানের চাষে,
ঘরে ঘরে তালের পিঠা
মন ভরে সুবাসে।
কেমন যেন সবকিছু আজ
সাজে নতুন সাজে,
আকাশ জমিন সবই সাজে
রূপের কারুকাজে।
এমনি করেই ঋতুর রানী
শরৎ আসে হেসে,
শরৎ আসে শরৎ আসে
আমার বাংলাদেশে।
শরৎ মানে
মোহাম্মদ মিজান মাঝি
শরৎ মানে নীল আকাশে
সাদা মেঘের ভেলা,
সূর্যি মামার সঙ্গে মেঘের
লুকোচুরি খেলা।
শরৎ মানে খালে বিলে
পদ্ম শাপলার মেলা,
শিশু কিশোর ডুব সাঁতারে
কুড়ায় সারাবেলা।
শরৎ মানে পাকা তালের
টাপুর টুপুর শব্দ,
তাল কুড়াতে ব্যস্ত খোকা
রয়’না ঘরে বদ্ধ।
শরৎ মানে সারি সারি
ঠেলা জালি পেতে,
মাছ ধরিতে জাকৈর দেয়া
শ্যাওলা বাইচার খেতে।
ব্যস্ত শরৎ
রিদয় ইসলাম
মেঘ ভাই মেঘ ভাই,
কোথা যাও শুনি।
হয়ে কেন এত উন্মাদ,
কোথা ছোটো তুমি।
আসিয়াছে শরৎকাল উড়ি তাই,
আপন ইচ্ছায় ঘুরি।
কে যেন দিল বাঁধন খুলে,
ইচ্ছা মত উরি।
ওহে বাতাস দাড়াও একটু,
কোথা যাও শুনি।
এখন না বলিব কথা,
শরৎ এ আগে ঘুরি।
কাশফুল কাশফুল দোলো কেন আাজ,
আজ কি কোনো বিশেষ দিন।
না ভাই না ভাই,
দুলি আজ আসিয়াছে শরৎদিন।
সবাই ব্যাস্ত সবার কাজে,
তুমিও যাও তাই।
শরৎতের এই মিষ্টি বাতাস,
তুমিও নাও ভাই।
আসসালামু আলাইকুম সম্পাদক মহোদয় এবং সকল কলাকৌশলীবৃন্দ, আমি আনন্দিত আপ্লূত ও অনুপ্রাণিত হলাম এই জন্য যে, শরৎ সংখ্যা আমার লেখা ছড়া প্রকাশ হয়েছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সবাইকে এবং কাব্যশীলন ওয়েব ম্যাগাজিন ছড়িয়ে পড়ুক সর্বস্তরের পাঠক /পাঠিকা গণের ধারপান্তে এগিয়ে যাক দূর বহুদূর আজকের আনন্দ আমাকে করেছে আরো ভালো কিছু লেখালেখি করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ বোধ করে আগামী পথচলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করি। আবারো দেখা হবে অন্য কোন সংখ্যা পাঠক পাঠিকা গণের সাথে নতুন লেখা প্রকাশের মাধ্যমে।