বিশেষ সংখ্যা

কাব্যশীলন বর্ষাসংখ্যা- বর্ষাগম-কবিতা

অপেক্ষায় থাকা ভালো
নাসির আহমেদ

নদী থেকে দূরে আজ সরে যাচ্ছে নদী
মাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে মাঠ!
জটিল সময় বড়ো, করাতকলের শব্দে চিরে
মিলিত ঐকের সব সম্ভাবনা পড়ে ঝরে ঝরে।

এমন সময়ে কেন বসন্তে চঞ্চল হলে মন!
কেন উচাটন তার সঙ্গে মিলিবার জন্য তুমি?
এখন বাতাসে নেই সামান্য ফুলের ঘ্রাণও আর
যদিও বসন্ত, তবু রুক্ষ নৃশংসতা-দগ্ধ হাওয়া!

আয়নায় তাকাও মুখ মুখোশেই মোড়া!
অদৃশ্য ফাটলে সব আয়না ভাঙাচোরা।
মুখের আদলে ঠিক পাবে না প্রকৃত মুখ আর
উল্টো স্রোতে ভেসে যাচ্ছে মাঙ্গলিক যাবতীয় বোধ।

যুবক-মুখেও দেখো বার্ধক্যের ছাপ অসময়ে!
ভালোবাসা সে-ও ফণা তোলে আজ প্রচণ্ড ঘৃণায়!
এখনই ঢালবে বিষ শিরায় শোণিতে
ফুরালো প্রেমের দিন ঘৃণার তাণ্ডবে।

নিঃশব্দে অপেক্ষা করো, কোনোকিছু চিরস্থায়ী নয়
বন্যায় ধ্বংসের পরও আসে ফসলের দিন পলি-সুসময়।

মাতাল ঋত্বিক
বিমল গুহ

বোধের উৎসমূলে নাকাড়া বাজায় মহাশক্তিধর ক্রোধ
নাকাড়া বাজায় ঝরাপাতা;
দেখি— চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে ভুতুরে আলোয় দিনদিন
চোখের তারায় নাচে ছায়াপিণ্ড
অশ্লীল ভঙ্গি দেখায়—
কখনো কখনো এই পৃথিবীকে অচেনা রহস্যময়
বলে মনে হয়; কিসের ঘণ্টাধ্বনি অন্ধ খোপে
কেনো মেঘে মেঘে আচানক বিদ্যুৎ-চমক?

মগজের কোষে কোষে স্মৃতি হাঁটে
সেলুলয়েড ফিতার মতন হাঁটে, চক্রাকারে ঘোরে
ঝরাপাতা নাকাড়া বাজায়
ফুঁসে ওঠে কালসাপ
রহস্যের আবর্তনে বন্দি কি একুশ শতক?
নতজানু মূল্যবোধ—
ঝরাপাতা নাকাড়া বাজায় সবখানে
অস্ত্র নিয়ে খেলা করে মাতাল ঋত্বিক
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন কি— মহা ধ্বংসলীলা?

বৃষ্টিজন্ম
রেজাউদ্দিন স্টালিন

বৃষ্টি দাও বৃষ্টি দাও বৃষ্টি থাকে মেঘে,
গাছ কেটেছে বলে এখন সূর্য আছে রেগে।
নদীর চোখ নিপর্তগ শেকলভরা জল,
নৌকাগুলো ছিন্নমূল হতবিহ্বল।
পাখির ডানা শুষ্ক মাঠ আগুন জ্বলে বনে,
বৃষ্টি দাও নীল ময়ূরী নাচছে তপোবনে।
শহরতলি শিক কাবাব টুকরো করা রুটি,
পাঠশালায় ঘন্টা বাজে সারা জীবন ছুটি।
তবুও কারো মন ভালো না বৃষ্টি ছাড়া বই,
পাঠক নেই তাকিয়ে আছে বর্ণ রোদে খই।
মর্মাহত জ্ঞানী খিজির মাছের ক্ষুধা বোঝে,
মুসা হাঁটেন হাজার পথ ভরানদীর খোঁজে।
কোথায় নদী মেঘের ঠোঁটে বৃষ্টি থোকা থোকা,
লক্ষ গাছ খুন হয়েছে নেইতো লেখাজোঁকা।
বৃষ্টি দাও বৃষ্টি দাও বৃষ্টি কোথা পাবো,
আশীষ দাও বৃষ্টি হয়ে এদেশে জন্মাবো।

মধুবনে বৃষ্টি
গোলাম কিবরিয়া পিনু

মধুবনে বৃষ্টি!
শূঁয়োপোকা ভিজে যায়
রাজহাঁসও ভিজে যায়!
আমিও ভিজতে ভিজতে
অশ্বশক্তি নিয়ে
আস্তাবলে মৃতপ্রায় হয়ে
পড়ে থাকতে পারি না!
প্লাবনের ডাক শুনি
সেবন্তীও ডাকে!
বৃষ্টির কানাঘুষো নেই–কানাগলি নেই
উদার আকাশ থেকে ঝরে,
পুনর্জন্মের গজল শোনায়
আমি তা শুনবো না!
ক্রোশ ক্রোশ জমি হয় জলমগ্ন-
নগ্ন হয়ে ওঠে জলের প্রান্তর,
খিড়কিপুকুরের খিড়কি খুলে যায়!
আমি আমার দরোজা খুলবো না?

বর্ষণ ও মিলন
নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর

আমি জানি এক বর্ষণদিনের কথা তোমার মনে পড়ে
এমন বাদলদিনে আমার মন কেমন করে থাকে ঘরে!
সেদিন আকাশ নেমে এসেছিল মাটির কাছে মেঘের পরে ভর করে
ছিল উতলা হাওয়ার নিষেধ ছিল হুঙ্কার আর গর্জন
পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে হবে তবুও ছিল মানব-তর্জন
বাড়াবাড়ি করছিল ঝড়ো কালো মেঘ
আর আমার হৃদয়ে ছিল কৃষ্ণআবেগ
ছিল অঝোর ধারার বর্ষণ
সেদিন কদম ফুটেছিল আর চাপা মহুয়ার গন্ধে মেতেছিল বন
কে রুখতে পারে এমন দিনে আমায় যখন তোমাকে চেয়েছে মন?

বরষা মেয়ের নাম
মজিদ মাহমুদ

বৃষ্টিতে ফোটে যে ফুল-সবগুলো নাম
কদম জারুল জুঁই শেফালি বকুল
মালতিকা ফুটেছিল তোমার বেণীতে
বর্ষা এসেছিল কাল- সেই ফুল নিতে।

বর্ষা এসেছিল কাল- রাতের আঁধার
ঘুম তার ভেঙে গেল নদীর আহ্বান
দুকুল ভাসিয়ে নিল জলের ভেতর
কহ না মাধব তুহ- আমি কি যে তোর!

গান গায়, তরী বায়- কেন আসে কূলে
আমি তো ছিলাম সখী বনমালি ভুলে
সইসব, নয় শব মেঘ ডাকে আয়
জলের গহীনে তারা খেলিছে ঝাঁপাই।

কোথায় গিয়েছে চলে আমাদের বর্ষা
বৃষ্টিপ্রসবে মেঘ-মা হয়েছে বিগতা
এ বাড়ি ও বাড়ি করে আমার বকুল
যেখানে পাই না কেন, ধরে তার চুল।

নিয়ে যাব দেখি কোন বাপের ছাওয়াল
ঠেকায় ঠেকাক দেখি বৃষ্টির কামুক
সাগর শাশুড়ি মাতা- আমি কি ডরাই
বরষা মেয়ের নাম রেখেছি থোড়াই!

শ্রাবণে এসেছে মেয়ে নাম যে শ্রাবণী
নিরস দুপুর ধরে তার গান শুনি
অঝোর ঝরেছে মেয়ে নয়নের বারি
পুরুষ মানুষ; নাহি উপেক্ষিতে পারি।

বাদলে গিয়েছে ডুবি একখানি ঘর
অবিরাম বারিপাত নীল নীলাম্বর
বাদলের কন্যা ঠিক বড় অসহায়
বুকের গহীনে দিই বরষাকে ঠাঁই।

বাষ্পপাখিরা আকাশে উড়ে
খলিল আহমদ

তোমায় যেদিন প্রথম দেখি নাম রাখি পদ্মা
পরিচয় শেষে তখন মনে হলো নাম রাখি মেঘনা
পরিচয় আরো একটু গাঢ় হলে নাম দেই যমুনা
মনে হতো পদ্মা মেঘনা যমুনাই সুখের ঠিকানা

যখন ভাবি নাম ব্রহ্মপুত্র ইছামতি আড়িয়াল খাঁ
তখন আমার হৃদয় গভীর আশঙ্কায় কেঁপে উঠে
বারবার মনে হয় তোমাকে যেন হারিয়ে ফেলেছি
তুমি কি বড় কোনো নদীর শুকিয়ে যাওয়া বাষ্প

হরিপুর তিতাস নদীতে তোমায় খুব খুঁজেছি পাইনি
হৃদয় নদী শুকিয়ে বাষ্পপাখি আকাশে উড়ে শূন্য
এই পৃথিবীতে কোনো অনুশোচনা নেই কারো প্রতি
কোনো অভিযোগ নেই যা কিছু কপালের লিখন।

বৃষ্টির রকমফের
ইলিয়াস ফারুকী 

হিক্কা উঠা বৃষ্টির মাঝে 
চিতায় পোড়া আগুন জ্বলে, তবু
বৃষ্টির কালে বৃষ্টির ভারে
চারিদিকে বাসা বাঁধে স্যাঁত স্যাঁতে ক্ষরা
মানুষগুলো পিছলে পদচ্যুত হয়ে
নির্লজ্জের মতো চরিত্র বদলায়।
বৃষ্টি যেমন স্থান ভেদে বদলে যায় রকমফেরে,
তেমনি করে দর্শনগুলো বদলে যাচ্ছে হৃদয় কেড়ে।
বৃষ্টি আর মেঘের সখ্য 
ক্ষণে গর্জে, ক্ষণে বর্ষে,
রোদ, বৃষ্টি আর খেঁকশিয়ালে
কল্পনাতে তাধেই নাচে
সোঁদা গন্ধে বৃষ্টির সুভাষ ভাসে
প্রতিবাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠে রক্তের আঁচে।
দৃঢ় কল্পে ঘন বর্ষায়ও পাখিরা আকাশে উড়ে,
নীতিহীন মানুষ চাপা আগুন আর হিংসায় পুড়ে।  

বর্ষাবালিকা
স.ম. শামসুল আলম

চোখ ছুঁয়ে, নাক ছুঁয়ে, চিবুক ও বুক ছুঁয়ে
নেমে আসে বর্ষাবালিকা- মাটিতে, শ্রাবণধুলো ভেজাতে।
সেই তুলতুলে মোমস্পর্শে গলে যায় আত্মার্থ হৃদয়।
কান্নাপ্লাবিত চোখের দুঃখজলধারা মিশে যায়
তার উজ্জ্বল শরীরে, অদম্য ওষ্ঠযুগল আর প্রেমান্ধ নাভিতে।
সোনালি ফসল হেসে ওঠে, যেন নবজন্মের বিমুগ্ধ স্বপ্নে বিভোর।
কৃতজ্ঞতা ভঙ্গিমায় নেচে ওঠে সুবাসিত ফুল আর পরিতৃপ্ত পাতা।
বৃক্ষের আনন্দে নদীও জোয়ার তোলে সমুদ্রসঙ্গমে যেতে।
বর্ষাবালিকা, তোমার অবগাহনে জড়িয়ে থাকে
বিশ্বাসী প্রাণের চঞ্চলতা।

পৃথিবীকে বুঝতে পারার সুত্র
ফারুক আহমেদ

ময়লা কাগজের মতো পড়ে আছে তোমার কথা,
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরস্পর যেগুলো করেছিলে বিনিময়।
হাত ধরার পর যে স্ফূলিঙ্গ জ্বলে উঠতো
তা এখন একটি বেদনাহত মাছি, ভন ভন করে
স্মৃতির পুঁজে বসে উড়ে যাচ্ছে।
চুম্বন আর হেঁটে আসছে না ঠোঁটের দিকে,
কোথাও রচিত হচ্ছে না গোপন ঘরবাড়ি।
একটি শরৎসন্ধ্যা দেয়ালে সেটে দিয়েছে
অতীতের অতিলৌকিক এক অচেনা আয়না।

প্রেম এক আয়না, বম্বিতি-প্রতবিম্বিতি
রেখে দিলেই তাতে রচতি হয় অন্য মুখ।
ফলে তোমার পুষ্পকরথ হয়ে যাবে শরবিদ্ধ দীর্ঘশ্বাস
তুমি সর্বস্ব খুইয়ে হবে একটি কপর্দকশূন্য প্রেমপাত্র;
একাকিত্বের চাদর জড়িয়ে হুহু করে কাঁপতে থাকবে চৌরাস্তায়।

আমাদের দেখা হওয়ার কথা পাহাড়ের ভাঁজে
যেখানে মুখ কথা বলবে না,
কথা বলবে, চোখ, গ্রীবা, আঙুল এবং নিঃশ্বাস;
কুয়াশার ভেতর আমাদের দেখা হওয়ার কথা
তাই না প্রেম?

প্রেম এক অ্যাডভেঞ্চার;
প্রেম জীবনের দিকে যাওয়ার একটি সাঁকো
প্রেম আসলে পৃথিবীকে বুঝতে পারার একটি সুত্র।

নীলাদ্র প্রহর
সৈয়দ রনো

সোনালী রোদ্দুরে ভিজে গেছে
ময়ুর পেখম ডানা
চুপসে গেছে মলাট বন্ধ হৃদয়ের ভাবাবেগ
মুঠো মুঠো আলো অন্ধকারে বিলিয়ে
অসহায় পাগলপারা মন
চৈত্র খরতাপে জ্বলে পুড়ে
ফ্যাকাশে মলিন জীবনের গল্প
মস্তিষ্কের গ্রন্থিতে পোষা
পোষ না মানা জৈবিক উন্মাদনাও হয়েছে নিঃশ্বেস
পাহাড়পৃষ্ঠে চাপা পড়া দেহ
চিঁড়ে চেপটা হতে হতে কচুর পাতার
টলমলে জলের মতো
চোখের নিমিষেই ঝড়ে পড়ার শংকায়
জেগে থাকে ভোগবিলাসী রাত
চাঁদের হাসি ঠোঁটে মেখে পদ্মচোখের পাপড়ি নেড়ে
কে যেনো ডাকে
কে যেনো সুললিত কন্ঠে আক্ষেপের গাল ফুলিয়ে বলে
ওভাবে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে আছ কেন
এখনতো নিঃসঙ্গতার নীলাদ্র প্রহর
শুনতে পাচ্ছ না যাপিত জীবনের কলরব
শুনেও শুনি না কিছু
বুঝেও বুঝি না ওসব
ঝাপসা চোখে দেখি
অকাল বর্ষনে
গাছের ডগায় আঁটকে পড়া
ছিটেফোঁটা বৃষ্টির ক্ষয়িষ্ণু বিকেল
পাহাড় কষ্ট বুকে চেপে
ঘোলাচোখে তাকিয়ে দেখি
অন্ধকার আবৃত জীবনের পাঠশালায়
আঁধার ভেদ করে দাঁড়িয়ে আছে দূরন্ত শৈশব
স্মৃতির তেপান্তরে গোল্লাছুট খেলে চেতনার পৌরুষ
পাশেই নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে হন্তারক সময়
পাথরের পৃষ্ঠা উলোটপালোট করে পড়ি
কষ্টের কালি দিয়ে কাস্তে বাঁকা বিবর্ন হরফে লেখা
সুখ দুঃখমাখা জীবনের ইতিকথা ।

বনদুপুরে জ্যোৎস্না বৃষ্টি
ইমরুল ইউসুফ

বাদুড়ের চোখের মতো নিস্তব্ধ বনে
হঠাৎ বৃষ্টি নামে
বনদুপুরের ভাঙে নীরবতা
জেগে ওঠে ফুল-পাখি
লতা-পাতা আর
শৈলমালার মতো রহস্যময় বনমাটি।
দিকচক্রবালের দীর্ঘ কালোরেখা
বলে দেয় বৃষ্টির রুপালি স্রোত
ভেঙে দেবে বনের নীরব রহস্য
বনের স্বপ্ন আর
পাতায় পাতায় জমে থাকা
দুপুরের রোদগল্প।
গল্পর কাহিনি বনপরির ডানা ছুঁয়ে
উড়ে যায় শূন্যে
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির রুপালি রং
ঢেউ তোলে বনাকাশের সবুজ রূপলোকে
দেখে মনে হয়
বনদুপুরের ঝরছে পূরণচাঁদের জ্যোৎস্না বৃষ্টি।

গায়েবী আওয়াজ
নুসরাত সুলতানা

পৃথিবীতে আর কখনো বৃষ্টি হবে না!
প্রচন্ড রোদে চৌচির হয়ে যাচ্ছে শস্যক্ষেত।
নদীগুলো শুকিয়ে গেছে।
পাখিগুলো মরে যাচ্ছে।
ফুলগুলো পুড়ে গেছে।
আর কী কখনো সন্ধ্যা নামবে না
এই পৃথিবীতে!
সূর্য শুধু মধ্য আকাশে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
সমস্ত প্রাণীর চোখ থেকে জলের বদলে
রক্ত ঝরছে অবিরাম।
জিহবা শুকিয়ে এঁটেল মাটি।
সমস্ত প্রাণ ঊর্ধাকাশে হাত তুলে
গো গো করে শব্দ করছে..
সাত দিন সাত রাত পরিমাণ প্রহর শেষে
গায়েবী আওয়াজ এলো…
ভালোবাসতে শিখতে হবে তোমাদের।
তবেই আবার পাবে বৃষ্টি,
পরাগায়ণ ও সঙ্গীতমুখর
রাত- দিনের পৃথিবী।

নিস্তরঙ্গ
সৈয়দ ইফতেখার

টিফিন কৌটোয় ক্রমাগত রাজমা চাউল
দু’ঠোঁট আর লাগে না একই গন্তব্যে…
ভেজা চুল টপ টপ পানিতে হয় না স্নান
দূর থেকে ঘ্রাণ এসে বলে না ভালোবাসার তারকিব
প্রতিশ্রুতি হারিয়ে গেলে- না বলা কথা বলে থাকে না কিছুই।

বৃষ্টির ফোঁটা
মোঃ সিরাজুল হক ভূঞা


প্রতিদিন ভোরে উঠে মনে মনে ভাবি,
আজ বুঝি খুলে যাবে আকাশের চাবি।
ডাক দিয়ে নেমে গেলো আষাঢ়ের ঢল,
অম্ল মধুর তাই ছুটে আসা জল।

সুধাময় মন জুড়ে ছিলো হাহুতাশ,
ঢল নেমে পুরো হলো সেই অভিলাষ।
বৃষ্টির ছোঁয়া নিয়ে তাই হাঁটাহাঁটি,
দৃষ্টিটা জলে নয় মনে রঙ বাটি।

বারেবারে চোখ যায় আকাশের গায়,
জল পড়া এই বুঝি শেষ হয়ে যায়।
রঙ মাখা মন বলে অন্ধকার আছে,
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মন জুড়ে নাচে।

আসমানে এখনো যে আছে ঘুরঘুর,
আচমকা ডাক দিয়ে মেঘ নেয় মোড়।
রিমঝিম ভাব নয় ফোঁটাগুলো ভারী,
সেইসাথে আজ নেই বাতাসের ঝাড়ি।

আকাশের ঘুরঘুর খুলে গেলো দ্বার,
মেঘে মেঘে আজ নেই দেনদরবার।
মাথার উপর ছাতা পদতলে জল,
বারিধারা চারিদিকে পড়ে অবিরল।

অশান্ত মন আজ হাহুতাশ ছাড়,
গরমের জ্বালা নেই ভয় নেই আর।
চারিদিকে চেয়ে দেখ কত জল চাই,
হাহুতাশি ভাবনার অবকাশ নাই।

ঘন নীল আসমান ছিলো যতদূর,
বৃষ্টির জল পড়ে কেটে গেলো ঘোর।
মাঠঘাট জল জমে থৈ থৈ উঠা,
আবেগটা কেড়ে নেয় বৃষ্টির ফোঁটা।

মৌনতা
হোসনে আরা জেমী

এই যে মৌন থাকা এটাই এখন নিয়ম
মৌনাতার পিছনেও কিছু শব্দ থাকে
যা নিয়মের বিরুদ্ধ।

চারদিকে মেঘের গর্জন শেষে মুষলধারে বৃষ্টি
ভিজে গেছে বিস্তৃীর্ণ জনভূমি।
অভাবের নামে জেনেছি কেবল খিদে
প্রিয় অসুখেরা পালিয়ে যায় দূর
খিদেটা পালায় না;
সন্ধ্যের অস্তরাগের আগেই
ঘরে ফেরার তাগিদ মাথা নীচু করে
কারণ
গলির মোড়ে পথ আটকিয়ে বসে থাকে কিছু মানুষের অবয়ব

যুগের পর যুগ তারা বসে থাকে
দেখে অনেক কিছু
বদল হয় কত অবয়বের
কিন্তু আমার দেখা হয় না।
কত চিঠি আসে হাওয়ায়
স্মৃতিরা জেগে থাকে বছরের পর বছর…

আবার বর্ষায়
খান মুহাম্মদ রুমেল

আবার এমন বর্ষা হলে
ভাসলে সব অথৈ জলে
ভেঙে ফেলে দ্বিধা বাঁধা
আসবে তুমি, আসবে রাধা?

আকাশ ভেঙে নামলে জল
দিঘির মাঝে ফুটলে পদ্মদল
তোমায় নিয়ে সব হারানোর বাজি
তুমুল চাওয়ায় নিঃস্ব হতে রাজি!

বাদলের অপেক্ষা
হোসাইন আক্তার

চারিদিকে আন্দোলনরত বৃক্ষরাজি মুক্তি চাই
কড়া রোদ্দুরের উত্তপ্ততা থেকে
শাখা প্রশাখা মূল
শুখিয়ে হারিয়েছে সব কূল
ঘাসফুল তৃণলতা বহু আগেই নিস্তেজ হয়ে প্রহর
গুনছে মৃত্যুর
তবুও আমৃত্যু অপেক্ষা বাদলের হিমেল হাওয়া
সমস্ত দু:খ গ্লানি ঘোচাবে, ভিজাবে,
নতুন উদ্যেমে আবার বাচার শক্তি জুগাবে।

বাদল সেই ত তুমি এলে অবশেষে
তবে কেন কেন কালবৈশাখীর বেশে?
সমস্ত স্বপ্ন লণ্ডভণ্ড করে
উড়িয়ে নিলে আমারে
উড়িয়ে নিলে আমারে।

কবিতাই একমাত্র প্রেম
সুমন রায়হান

সত্যকে সুন্দর ভেবে আকাশের
গায়ে হেলান দিলে—
তুমি হয়ে ওঠো ব্রক্ষ্মচারী স্বপ্নের গান…
ভালোবাসি বললে নিদারুণ ভাবের উদয় হয়,
বেশ অহংকারী হয়ে ওঠো…
কিছুটা ক্ষয়, কিছুটা করি জয়!
নীলের আহবানে লীলাবতী সুর…
তুমি বললে কাল আমায় স্বপ্নে দেখেছো!

পাতিহাঁসের পিঠে চড়ে
প্রেম উলুবনে মুক্তো ছড়ায়…

একমাত্র তোমাকেই মন একান্তে চায় !
তুমি জলের নীলে বাসর গড়ো
জলেই সিংহাসন।
এখন, কবিতাই একমাত্র প্রেম!
স্বপ্নভঙের নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে-
আচমকা ঘুম ভেঙে গেলে বলে উঠি…

হে প্রিয় স্বদেশ, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া
আমার আর কোনো যোগ্যতা নেই!

মেঘের সংসার
মাহফুজুর রহমান সৌরভ

দিনের আলোয় আঁকা হলো মর্মমূলের সমস্ত রোদ,
আহা! স্বপ্নমাতালের দিন
বিমুগ্ধ নয়নে জ্বালি জীবনের ভস্মসমীকরণ,
বৃষ্টি কিংবা নদী – এই মন্ত্রপাঠ শেষে
চোখ খুঁজে মেঘের সংসার ;
নিগুঢ় ঝর্ণার মিছিল আর বিবাগী হাওয়ায় উড়ে
কিশোরীর আঁচলে লেখা পৌরাণিক উপকথা
উনুনের শাড়ী ঘিরে থাকে ভীনদেশী বুনো অর্কিড,
ফ্রয়েডীয় হাওয়ায় উড়ে উত্তরাধুনিক রাষ্ট্র নিশান
ঠোঁটের আশীষ উষ্ণতায় কবে ভেসে উঠবে
বেনোজলের মতো তোমার হাসির ঢেউ
কালের স্রোতে উজানের টানে খড়কুটো জীবনের ঠাঁই খুজলাম
আমি আর জীবনানন্দ হাটি অচেনা ছায়াপথে
যে আঙিনায় উড়ে গেছে পথভোলা মেঘের সংসার।

সুদর্শন আষাঢ়
রোখসানা ইয়াসমিন মণি

আমি আষাঢ়ের যুবরাজ,এসেছি তোমার বাউরি মনে
অন্তঃপুরের দাউদাউ আগুন নেভাতে নানা রঙে,
বুকে তোমার অনন্ত তৃষ্ণা আমার রয়েছে জল
ঝরঝর ঝরে ভেজাবো তোমার একভাগ স্থল।
ঝিরিঝিরি ঝরে সিক্ত হবে নাকো ওই দাউদাউ বুক
প্লাবনে মহাপ্লাবনে তোমাকেই দিতে চাই সবসুখ,
আকাঙ্খার জলে চষে বেড়াবো যে পৃথিবীর প্রান্ত
ফোঁটা ফোঁটা জলে দরিয়া বানাবো তোমার সীমান্ত,
তোমাকে খুঁজেছি কত জনপদে মৃত্তিকার বুক চিড়ে,
কত বসন্ত, জ্যোৎস্নার আকুল করা অভিসারে,
বহুদিন বুকে জমিয়েছি জল কালো মেঘ হয়ে উড়ে
আজ ঝিরিঝিরি ঝরাবো সব খাঁ-খাঁ অন্তঃপুরে।
তোমার সকল তৃষ্ণা যে আমার, আমি নেশাখোর তৃষ্ণার,
সবুজ বনে ঝরাবো জল, আমি সুদর্শন আষাঢ়।

শ্রাবণের বৃষ্টি
মো. ওয়ালিউল ইসলাম সাকিব

টাপুর টুপুর শব্দ করে,
আজ ভরদুপুরে বৃষ্টি পরে।
বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সব,
আজ কোথায় গেল কলরব?
থেমে গেল কেন হৈ চৈ,
আজ সূর্যি মামা গেল কই?
স্নিগ্ধতা ভরা এই দুপুরে,
কার পা বাঁধা রূপালী নূপুরে?
কার পায়ে বাজে মধুর ধ্বনি,
কার গান আমি কানেতে শুনি?
আমার দিকেই আছে যে চেয়ে,
এ কোন ছলনাময়ী মেয়ে?
চোখে মায়া ভরা তার দৃষ্টি,
মেয়ে তো নয়, শ্রাবণের বৃষ্টি।

বর্ষাযাপন
আদ্যনাথ ঘোষ

স্বাধীন সবুজ বৃক্ষ পড়ে থাকুক একাকী একাই
কচুরী পানার ভেতর থেকে জেগে উঠুক ডাহুক পাখি
ঘাড় উঁচিয়ে উঠে আসুক ভরা বর্ষার জল
বৃষ্টির ফোঁটার মতো মেতে উঠুক হলুদ ব্যাঙ
বেলি ফুলের পালক খসে পড়ুক জমিনের উপর
কাঁদা মাটির ভ্যাপসা গন্ধ ভেসে আসুক গাঙুরের জলে
তাজা শ্যাওলারা গান গেয়ে মেতেউঠুক ঘন সবুজ ছুঁয়ে
ভৈরবীর গান শুনে জেগে উঠুক করুণ ভেজা মাঠ
ভাঁজে ভাঁজে সুগন্ধ বাতাস উঠে আসুক আঁচলের ওমে
জীবন বৃক্ষের সকাল মেখে নেমে পড়ুক মায়াবী রোদ্দুর
আর বর্ষার জল বেয়ে নেমে আসুক কবিতা আমার।

কল্যাণী মা আমার
আহমাদ কাউসার

কল্যাণী আমার মা।
বর্ষার জলে ভিজবে বলে শুঁকিয়ে থাকে কল্যাণী
যৌবনের জৌলুশ নিয়ে বর্ষা আসে
কল্যাণী ভিজে সিক্ত হয়
ভিজতে ভিজতে ডুবে যায় বর্ষার জলে।
জলের নীচে কল্যাণী হাসে,বুকে ভাসে শাপলা পদ্ম।
বর্ষা চলে গেলে কল্যাণীর বুকে শোভা পায়
আমাদের প্রয়োজনীয় শস্য।
প্রণাম কল্যাণী মা!

ঝুম বৃষ্টিতে কাক
সৈয়দ নূরুল আলম

ঝুম বৃষ্টিতে কাকের সাথে দেখা,
ন্যাংটো হয়ে ভিজছে-উড়ছে গাছে গাছে,
কখন যেন একটা পাখনা গেছে খসে।
বন্ধু যদি আসে, ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবে সেই উষ্ণতা খোঁজে।
বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে দুঃখ-কষ্ট যত,
ভাবছে বসে সবাই কেন তাকে দেখে হাসে, আর খাবে না
অলিগলির নোংড়া-পচা খাশি।
ভাবনাগুলো জলের ধারায় যায় ভেসে,
কেউ বসে না পাশে, একা একা ঝিমোয় বসে,
কখন বৃষ্টি যাবে থেমে, সেই আশাতে থাকে।

গন্ধচিঠি ঘুমায়
– রব দেওয়ান-সৈয়দ

হাহাকারে দাহ হয় বেমানান প্রেমের আয়না।
অগ্নিদগ্ধ রঙিন চশমা নিজের ছায়ায় মাখে
হিমশীতল আত্মার একাকিত্বের শ্রাবন জোছনা।

শোক বা বিজয়গাথা যে ঠোঁটদ্বয় বেয়ে নামে,
তারা শেষত্বক আদ্রতা খুঁজে তাচ্ছিল্যের বালিতে।
অক্ষর ফুরানো গন্ধচিঠি ঘুমায় অবহেলার খামে।

যে রাতটা কাটাচ্ছি
সাব্বির হোসাইন শোভন

সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলো; সন্ধ্যার আগে আগে।
একটু দ্রুত যেয়ে ঢাকলাম কাঠ। ভিজে গেলে নষ্ট হতো।
তখনই খেতে বসলাম, তখনও বৃষ্টি হলো।
তারপরও দেখি বৃষ্টি।
দেখলাম অনেকক্ষণ।
এরপর এসে বসলাম বিছানায়।
এরপর ছাদে।
মোনামি জানালো এসাইনমেন্ট করে দিবে।
বলে না কখনো। বৃষ্টিই বলালো।
তারপর হুহু বাতাস। জানালাম একে-ওকে।
কেউ গেলো ছাদে, কেউ এলো জানালায়।
তখনো নানজিবা ফোনে।
তারপর কেটে গেলো।
তারপর কেটে গেলো।
তারপর কেটে গেলো।
তারাসব ছুটে গেলো।
জানালায় নেই কেউ।
ছাদও খোলা।
একাই।
কেউ নেই,
তখনো কেউ নেই।
এরপর ভাবলাম একে ডেকে নেই।
সে জানালো কে যেনো ডেকে গেছে সন্ধ্যায়।
ওকে ডাকতে গিয়ে দেখি, তার সন্ধ্যা নিয়ে চলে গেছে কে জানি!

অপাঙক্তেয় 
তপন মাইতি

কিশোর বয়সে স্কুলে
আর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এখনও আমার মনে 
দেখেছি তোমাকে সুমনের হাত ধরে
একদিন পাড়ার তপুদা কোনভাবেই এই কষ্টের কথা জানতে পারেন।
বর্ষার ভেজা মাঠে ফুটবল ভালো খেলে হেরে যাওয়া শেষে বলল
এই নে দু’টান মার দেখবি সব দুঃখ কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে 
সেদিন তপুদার কথা অমান্য করতে পারিনি 
সেই প্রথম সুখটান মেরেছিলাম 
আমি কেন সবাই জানে ধূমপান শরীরের পক্ষ ক্ষতিকারক 
অথচ সেই কষ্টটা বুকের ডানদিকে চিনচিন করে এখনও!
ঋতু চাকরীজীবি বরের সাথে বেশ সুখে সংসার করছে 
নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকে, কাজের মাসি থাকে,শপিং করে 
ভার্চুয়ালে রিলস বানায়, বহু লাইক কমেন্ট সেয়ার পায় 
কাজের অবসরে এখনও কি ছাদের ওপর তীব্র বর্ষায় ভিজতে থাকো?
পাড়ার কদম ফুলের স্বপ্ন দেখো? ঠিকমতো চাকরি জোটাতে পারিনি এখনও
এরপর হয়তো না পারব চাকরি করতে না পারব মাঠে চাষাবাদও করতে! 
আমি যখন খুব একা হয়ে পড়ি মনে মনজানলায় উঁকি মারো তুমি 
সে অভিজ্ঞতা কি ভয়াবহ! প্রিয় বস্তু হারিয়ে হন্নে হয়ে খুঁজে যাওয়ার মত একা 
স্কুলের ফার্স্ট বয় 
যা কল্পনার অতীত!
কিশোর বয়সে সেই স্কুলে 
কলেজে ডায়েরির পাতায় 
আর তুমি আমার মনে এখনও…
অথচ একই পুক্তিতে না বসতে পারি অপাঙক্তেয় আমি।

ঠিকানা
পলাশ পাল 

মেঘের কৌটোয় তুলে রাখা
রোদ্দুরের ঠিকানা 
তোমায় ফিরিয়ে দিলাম 
তুমি কবিতার মতো হাসতে হাসতে
ঠিকানার নির্জন পথে
নীলের দিকে হাত বাড়িয়ে দাও
যেভাবে ক্লান্তিহীনতার মেঠোপথে
বিবর্তিত অনুরাগ 
বদলে যাওয়া মুখোশ ছুঁতে চায়
মেঘের অভিমান হলে আজ
প্রতিফলিত ভালোবাসার প্রত্যাবর্তন… 

অনন্ত বর্ষা
আব্দুর রহমান রুদ্র 

ঋতুবতী হাওয়ার ভর করে উড়ে মেঘ
বৃষ্টি নামায় কিশোরীর কোমল অঙ্গে।
প্রেমাদ্র আকাশে ভারী বর্ষনের আভাস, 
দুঃখের কোলাজ ওঠে কবিতার মিনারে। 
ঝুমঝুম নৃত্য করে ঘুঙুর পায়ে হতাশা।
প্রেয়সীর রঙিন অন্তর্বাস পুড়ে ছাই।
বর্ষার দিগন্তে ঝুলে আছে অকথ্য প্রলাপ;
সময়ের ব্যবধানে খই ফোটার মতো
টুপটাপ ঝরবে অন্তরের নিকষ অন্ধকারে।

মেঘের পাপড়ি 
ইফতেখার হালিম 

আকাশে মেঘের পাপড়ি বাড়ায়
রংধনু আবেগ
বাতাসে সুরের মূর্ছনা লোভ জাগায়
কদম ফুলের সরলতা মগ্নতা ভাঙে 
বরষার শিল্পীত ছন্দের অপরূপ কারুকাজ
ভালোবাসার নিটোল আয়োজন তৃষ্ণা মিটায়
কল কল আবেগের মিছিল পথে পথে
নদী বুকে যোগ হয় ভরপর আহ্লাদ 
সুখ-দুখে রাঙায় প্রকৃতি
জীবন-যৌবন 
জল চুম্বনে পূর্ণতা পায় ভেজা আঁচলের
অলংকার-অহংকার
সঙ্গমের আকাঙ্ক্ষা। 

বৃষ্টির মায়ায়
প্রিয়াংকা নিয়োগী

আত্ম সন্তুষ্টি ঘিরে প্লাবনের দরদ উৎলিয়ে উঠে,
জোয়ারের পূর্বাভাসে নতুন দৃষ্টিকণা,
মনে জল বিন্দুর জমায়েতে,
হৃদয়ের রুক্ষভূমি ভেজা ভূমির পরিণতি,
নব আবেগের জন্ম দেয়,
বৃষ্টির প্রতি মায়া সেখানেই জন্মায়।

মেঘ ও প্রজাপতির ডানা
কমল কুজুর

জলজোছনায় ক্রমশঃ ডুবে যায় স্বপ্নদল
তবু তোমার চোখ জড়ানো থাকে কদমের শুভ্রতায়
বর্ষার কাদাজল ভিজিয়ে রাখে মধু মুখ
কালো মেঘের সুরে গান শুনিয়ে যায়
বুনো শামুক
সমুদ্রের নোনা স্রোতে ভেসে আসে
বিরহী ডাহুকের পাল
একটা আজন্ম ব্যথা হৃদয়কে নাড়া দিয়ে
বেদনার মহাকাব্য রচনা করে শুধু
বন্ধ দরজা আকাশের আশায় তক্ষকের ডাক শোনে
কোন এক মেঘলা ক্ষণে
সাঁঝের মায়ায় ভরে ওঠে হৃদয় মন্দির

সেতুকে বর্ষার ফুল
মান্নান নূর

বিবর্ণ আকাশ, নানা হাহাকার চুষে নিয়ে
বিবর্ণ নানা রঙের কষ্ট নিয়ে রংধনু সাত রঙ
মন আর আকাশ দুটোই বিশাল, সীমাহীন;
রঙ বদলায়, আকাশে বর্ষাফুল, বৃষ্টি মায়া ঝরায়
বুকে বুকে মায়া গড়ায়, সেতুকে কিছু মায়া-ভালোবাসা,
বর্ষাতে কদমফুল গুঁজে দিই খোঁপায়,
সেতু, এসো হাঁটি, বৃষ্টিতে ভিজি
এ বর্ষার ফুল কেবলই তোমার-

বৃষ্টি নামে
গোলাম রববানী

গত আষাঢ়ে বৃষ্টির জলে পুড়ে গিয়ে ছাই হয়ে গেছি
হালকা হাওয়ায় গেছে উড়ে পরানের পাখি
এডাল ওডাল বনপাখি ডাকে;
কোথাও কোনও বৃক্ষ দেখছি নাতো এইখানে
শীর্ষচূড়ায় কে গো তুমি?
শুনলাম সে-ও ফন্দী আঁটে এক ফ্যান্টাসি
ঈশ্বর আল্লাহ জপে
জিন্দাবাজার ফুটপাতের এক ভিখারির মতো
চাইতে চাইতে বড় শ্রান্ত হাত নেই বলে
চলতে চলতে ফুটপাত আমার বলে
কোন মাটিতে জন্ম তোমার হলো,
মাটির আগুনে গেলে
বললাম আমি ভস্ম হলে- কার কী এমন বলো ক্ষতি।
ইতিহাসের নতুন পাতা সাক্ষী হবে খেরোখাতা
চব্বিশের এই বৃষ্টি নামে চোখে
মেঘ নেমেছে রক্তঝরা শোকে
কে ভাই আজ বুদ্ধিজীবীর ঠোঁটেঠোঁটে খতমকুলুপ আঁটে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *