কবিতা

আজ কবি মাহাবুব মিত্র’র জন্মদিন।। কাব্যশীলনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।।

প্রেমের চিরন্তন নিরন্তর পাঠ

নদীতে জল নেই—বালির দীর্ঘ হাসি
তথাপি স্যাঁতস্যাঁতে কিছু আগাছা ভিড় করে
কিন্তু স্রোত নেই তলদেশে, শুধু বৃদ্ধাশ্রম;
আমি স্রোতে ভাসাবো নদীর দু’পাড়
ভিজা ইঁদুরের মতো ঢুকে যাবে গর্তে
বিষম জ্বালায় প্রাচীন পাদ্রীর পাকা কলা;
শুনেছি কুঁজো হয়ে গেছে লোহার সেতু,
পঁচে গেছে মিঠাপুকুর—পাতিহাঁস ঘুমাচ্ছে
সারি-সারি উড়ে যাচ্ছে বকপক্ষি শ্রেণীকক্ষে;
নির্ণয় করতে চাই জলের গভীরতা
সমুদ্রের বুকের উত্তাপ—প্রাচীরের ঢেউ
কূলে-কূলে মিশে হবে অবাক পৃথিবী;
পাড় ভেঙে দিবো যদিও হয় চীনের প্রাচীরের মতো
কূলহারা স্রোতে বাঁধবো কূলের বসতি, তোমাকেই
ধ্যান করেছি স্বপ্ন—আমার আজন্ম সীতা-সাবিত্রী;
নোঙর ফেলবো তোমার শেষ ঘাটে চন্দ্রাবতীর রোদে
শেষ বিন্দুতে সৃষ্টি করবো বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর,
পাড়ে বাঁধবো পারিজাত প্রেমের উদাসিন নৌকো—;
আমার বৈঠা ঠেলে যাবে আঙিনার বিরুদ্ধ স্রোত
আর তোমার গহীন গাঙের নির্জন সদর কপাট
আমরা দু’জন অমর প্রেমের চিরন্তন নিরন্তর পাঠ।

কিম্ভূত সেন্স প্রজাতন্ত্রের ইনডেক্স

ঘাড়ে জ্যোৎস্না~জ্যোৎস্না কি ভূত! কিম্ভূত সেন্স! কিম্ভূতকিমাকার। গলা পানিতে বিষম ঢেউ, গলার গভীরে হারায় কেউ-কেউ, গলা জ্যোৎস্নায় কেউকেটা ভোর। সময়ঘড়িতে কমে প্রেম~বাড়ে আগুন-আগুন দুঃখ। চর্বি কেটে গেলেই~টানটান ধনুকনদী। কথাগুলো শ্লথ হলে~মেঘেরা হয়ে যায় কুয়াশার জাল; শক্ত করে দাঁড়ালেই পুত্র-কন্যার শাদা-কালো ক্যাঁওম্যাঁও। এক্সপেরিমেন্ট অস্পর্শ্য ভূত~শাদা পোশাকের দারোয়ান।
ক্লাস থ্রি নাকি থার্টি! যদি আসো~লাল হবে নদীর পাড়; তোমার ভিতরে বেড়ে উঠবে রামধনুয়াকাশ। ঘরের দুয়ারে বসে থাকলেও~তুমি নাবালিকা আবালিকা আঝালি। এখনো বিদ্যালয় কাদামাখা জল; তুমি পুতুল-পুতুল হাসি। কিছুদিন কাছে এলেই~তুমি হবে ইবসেন-নোরা আর আমি মাইকেল জ্যাকসন।
প্রাইমারির বইগুলো চেয়ে আছে শিশুবিতান মহালয়ে। প্রিয়া বালা থেকে প্রিয়া সাহা; তারপর শিশুবালার হোয়াইট হাউস সমাচার। একদিন ভার্জিন থেকে ধীরে-ধীরে গড়ে তুলবে মহাপৃথিবীর বৃক্ষ-বৃক্ষ সবুজ বাতাস। তোমার জরায়ুতে খেলা করবে নববিশ্বের কবিতাসন্তান।
বিলিয়ার্ড-বিলিয়ার্ড উন্মাদনা, নিঃশব্দ দ্যুতির সেইলর; জুয়ার আসরে আঁতেল গন্ধ। লুকানো কামনা~ঝুলন্ত আপেল। চুল থেকে উড়ে যাচ্ছে সমুদ্রসাইরেন। আবালক সময়~প্রজাতন্ত্রের এলোমেলো ইনডেক্স। প্রিন্সেস ডায়না ডাইনোসরের বিলুপ্ত প্রজাতি। হাওয়াই-মিঠাই ফুলশয্যায় দাঁড় করিয়ে রাখে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স।
তুমিও একদিন চাতকী~যেদিন মেঘেরা উড়ে যাবে কামকাননের কার্নিশ ছুঁয়ে-ছুঁয়ে। ক্লোরনঘুমে ঘোড়ার খুরের শব্দে~মিহিমিহি দুধগলা রোদের সারস ফিরে-ফিরে আসবে। গলা-গলা জ্যোৎস্নায় চড়ুইভাতি উল্লাস। শিশুর চোখ~নির্মলভূমি। এখানেই খুঁজে পেয়েছো নতুন টানেল। পাল ছেড়ে দিলেই ডুবে যাবে জন্মতিথি। প্যারাসুটে নামতে-নামতেই একদিন পাবে কবিতার বিনয়ভূমি।

পানকৌড়ির দল

(আমার পাড়ার সকল মাছধরা জালকর্মীদের করকমলে)
শাদা-শাদা কাপড়গুলো পড়ে আছে ভাগাড়ে…
নদীর জল ছুঁয়েছে তৃষ্ণার্ত মাটির ছায়া
শিকড়ে-শিকড়ে গড়েছে ভিমরুলের আস্তানা,
কালো-কালো মানুষেরা উড়িয়ে দিয়েছে শান্তির পায়রা;
চারদিকে তাকিয়ে দেখছি বানরের নাচ
শিয়াল কুকুরগুলো আজ একই ঘাটে করছে
ঘোলা জল পান, ঘোড়াগুলো ভীষণ বিষণ্ন
ক্লান্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এলোমেলো বাতাসের ছড়ায়;
আলোহীন মাঠে খালি গায়ের মানুষগুলো ছড়িয়েছে
আলোর ফোয়ারা, পাখিগুলো গাইছে সাম্যের গান;
জেলেদের মুখগুলো ফোটে আছে শাপলাফুলের মতো
জালের হাওয়ায়, নৌকার গলুইয়ে জোড়া চোখের হাসি;
অভিবাদন তোমাদের হে পানকৌড়ির দল
চকচকে রোদের ভিতর তোমরা বপন করেছো
বৃষ্টিবীজ, আমরা বসে আছি অধীর প্রতীক্ষায়–
তুমুল বৃষ্টিধারায় স্নাত হবে অশূচি আত্মার কোলাহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *