ইজাজ আহমেদ মিলন এর ‘এক টুকরো কাপড় ও ফুলজানের তেতাল্লিশ বছর’
কাঠের বাক্স থেকে ধবধবে সাদা থান কাপড়ের টুকরোটা বের করলেন ইয়াসিন আলী। পুরনো পত্রিকায় মোড়ানো কাপড়ের ভাঁজ খুলে রাখলেন বালিশের ওপর।
ঘুম আসছেই না। বেড়েই চলছে রাতের বয়স। বাম স্তনের ঠিক দু’আঙুল নিচে হঠাৎ করেই শুরু হয় ব্যথা। মাঝে মধ্যেই এই ব্যথার অত্যাচার সহ্য করতে হয় ইয়াসিন আলীকে। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছেন। স্ত্রী ফুলজান এক ঘোরের মধ্যে আটকে আছেন। টিনের চালে গাছের পাতা পড়ার শব্দ শুনে গভীর রাতেও দরজা খুলে দেন ফুলজান। ঘর থেকে বের হয়ে ‘ মুস্তাকিম মুস্তাকি ’ বলে উচ্চ স্বরে ডাকাডাকি করেন। রাতের নির্জনতা ভেদ করে তার কণ্ঠস্বর পৌঁছে যায় বহুদূর। কিন্তু ফুলজানের ডাকে সাড়া দেয় না কেউ। প্রতিবেশিরা অনেকটা অভ্যস্তই হয়ে গেছে।
মাঝরাতের পর ফুলজান কালঘুমের মতো এসেছেন। এই সুযোগে কেরোসিনের প্রদীপটা জ্বালিয়ে ইয়াসিন আলী কাঠের বাক্স থেকে ধবধবে সাদা ওই থান কাপড়ের টুকরোটা বের করে আনেন। ধান রাখার খালি ডোলে তিন চারটি ইঁদুর লাফালাফি করতে শুরু করে। ইঁদুরগুলো যেন উল্লাসে মেতে উঠলো। ফুলজানও চোখ মেলে তাকালেন। সাদা কাপড়ের টুকরোটা লুকানোর চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পারলেন না ইয়াসিন আলী। বিছানা থেকে উঠেই কাপড়ের টুকরো হাতে নিয়ে বিলাপ শুরু করলেন ফুলজান। বাবার জন্য ছেলের পাঠানো সাদা ওই কাপড়ের টুকরো দেখলেই ফুলজান আর স্থির থাকতে পারেন না। এ কারণে মাঝে মধ্যে কাপড়ের টুকরোটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন ইয়াসিন আলী।
আম কাঠ দিয়ে বানানো ঘরের চকিটাও নড়বড়ে। বেশ পুরনো। ভাঙ্গা চকিতে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতেন স্বাম-স্ত্রী। ছেলে ফিরে আসার পর সংসারটা নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন। কিন্তু সে স্বপ্নও আজ আর দেখতে পারেন না। স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছেন। শেষ রাতের দিকে আবার একটু ঘুমের মতো এসেছেন দু’জনই।একটা তেলাপোকা ঘুমন্ত ইয়াসিনের মুখের ওপর এসে পড়ে। ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাশেই শুয়ে থাকা ফুলজারে ঘুম ভাঙ্গল না।
এক বিঘা বর্গা আর নিজের আধা বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন ইয়াসিন আলী। ধান কাটা,মাড়াই আর খড় শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছিল দুই দিন ধরে। বাড়ির উঠান জুড়ে খড়, বারান্দায় ধান। শরীরটাও বেশ ক্লান্ত! রাতে তো ঘুম হয়ইনি। যুদ্ধের ময়দান থেকে আশেপাশের লোকজন ফিরে আসছে কিন্তু ছেলে মুস্তাকিম বিল্লাহ আসছে না,কোনো খবর নেই! সব মিলিয়ে চরম অস্থির সময় তাদের। এরই মধ্যে ছেলের একটা উড়ো খবরও পেয়েছেন তারা। কী করবেন ? কোথায় যাবে-কার কাছে ? কোনো কূল কিনারা পাচ্ছিলেন না।
ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরের আলো দেখা যায়। সূর্য উঠতে কয়েক মিনিট বাকি । নীল রঙের একটি চাদর গায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন ইয়াসিন। অগ্রহায়ণ মাস। শীতকাল। কুয়াশার দাপট একটু বেশিই। বাড়ি জুড়ে পাকা ধানের গন্ধ। পায়চারি করছেন ইয়াসিন। সূর্য উঠার পর শুকনো খড়গুলো দিয়ে একটা গম্বুজ তৈরি করে ছেলের সন্ধানে বের হবেন। বাড়ির পাশের ঠাকুরতলা মোড়ে প্রতি বুধবার হাট বসে। তুমুল যুদ্ধ চলছে সারা দেশে। নির্দিষ্ট রণাঙ্গন বলতে কিছু নেই। পুরো দেশটাই যুদ্ধের একটা ময়দান। ঠাকুরতলা হাটে গিয়ে লোকজনের কাছে ছেলের খোঁজ নেবেন ইয়াসিন আলী। বয়স হওয়ার অন্তত ছয় বছর পর বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রীর বয়স ইয়াসিন আলীর অর্ধেক। বিয়েরও চার বছর পর সন্তান জন্ম নেয়। মুস্তাকিম বিল্লাহর পর এক কন্যা সন্তান হয়েছিল। জন্মের মাসখানেক পর মারা গেছে। শত কষ্টে নিজে চলেছেন,সংসার চালিয়েছেন কিন্তু ছেলেকে কষ্ট দেননি কখনো। অভাবের সংসার থাকলেও মুস্তাকিমকে সেটা বোঝতে দেননি। অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন মুস্তাকিম বিল্লাহকে।
পড়াশোনা শেষে মুস্তাকিমের চাকরি হয় জাতীয় টেলিগ্রাম অফিসে । ১৯৬৫ সালের ঘটনা। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে সব টাকাই বাবাকে পাঠিয়েছিলেন মুস্তাকিম। চাকরির কারণে বাড়িতে আর থাকা হয় না। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন ঢাকার শহীদবাগ এলাকায়। ১৯৬৯ সালে বিয়েটাও সেরে ফেলেন তেজী তরুণ মুস্তাকিম। বাবা মায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। এরই মধ্যে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
‘ বাবা, আমি যুদ্ধে যাইতাছি। আমার জন্য দোয়া কইরো। মাকে বইলো টেনশন না করতে। কাজলকে দেখে রেখো। তোমার বউমাকে ঢাকার বাসায় রেখে গেলাম। ও একা থাকবে না। ওর ছোট বোন থাকবে সঙ্গে। গ্রামের চেয়ে শহরই তার জন্য নিরাপদ। দেশ শত্রুমুক্ত হলে তোমাদের বউমাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি আসবো। বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরি নারিকেলকুলি খামো। খুব ইচ্ছে করছে- মাকে বইলো। ইতি – তোমার ছেলে । ’মুস্তাকিম বিল্লাহর পাঠানো এই টেলিগ্রামটি ইয়াসিন আলীর হাতে পৌঁছে পনেরো মার্চ সন্ধ্যায়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে মুস্তাকিমের রক্ত গর্জে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরপরই বাবার কাছে ওই টেলিগ্রাম পাঠান মুস্তাকিম। ছেলের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বহু চেষ্টাই করেছেন ইয়াসিন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এপ্রিলের শেষের দিকে মুস্তাকিম তার বন্ধু আক্কাস তরফদারের কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠান। সেই সাথে বাবার জন্য ধবধবে সাদা এক টুকরো থান কাপড়। কিন্তু সে চিঠি আর পাঞ্জাবির কাপড় বাবার হাতে এসে পৌঁছে বহুদিন পর । চিঠিতে লিখেছিলেন ‘ বাবা, সালাম নিও, চিন্তা কইরো না। আমি ভারত প্রশিক্ষণ নিতে আসছি। ৩৬ দিন চলবে এ প্রশিক্ষণ । তারপর ১২-১৪দিন পরে আমি দেশে ফিরা আসবো। বাড়ি যাবো। মাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। মাকে বলো আমি ভালো আছি। ইতি- তোমার মুস্তাকিম ।’
চিঠি পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ইয়াসিন আলী। ছেলের পাঠানো কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি না বানিয়ে বাক্সের ভেতর রেখে দিলেন। ছেলের আসার প্রতীক্ষায় চেয়ে থেকে দিন যায়, মাস যায়। ছেলে তো আর আসে না। নাওয়া খাওয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের। পুরো দেশ শত্রুমুক্ত হলো। লাল সবুজের পতাকা উড়ছে সর্বত্র। বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে আসছেন, কিন্তু মুস্তাকিম তো আর ফিরে আসেন না।
ছেলে ফিরে আসবেন এই বিশ্বাস বুকে বাবা মায়ের চলছে নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর । কিন্তু এ প্রতীক্ষার কি শেষ আছে ? টিনের চালে গাছের পাতা কিংবা বাইরে কোনো শব্দ হলেই ঘর থেকে বের হয়ে যান ফুলজান। খোঁজতে থাকেন ছেলেকে-ডাকাডাকি শুরু করেন। রাতে ঘরের দরজা খুলেই শুয়ে থাকেন ফুলজান। ছেলে এসে যদি দেখে দরজা বন্ধ-অভিমান করে যদি ফিরে যান- এই ভয়ে দরজা কখনো বন্ধ করেন না। এভাবেই কাটছে সময়। ইয়াসিন আলী সারাদিন ঘুরে বেড়ান- ফিরে আসা বীর যোদ্ধাদের কাছে যান। কিন্তু কেউ তার ছেলে খবর দিতে পারেন না।
মধ্যদুপুর। চারদিক নীরব। ছেলের খবর নেওয়ার জন্য পাশের এক গ্রামে গিয়েছিলেন ইয়াসিন আলী। ফিরে এসে ক্লান্ত হয়ে গা এলিয়ে চকির ওপর উদোম শরীরের শুয়ে আছেন। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে এলেন আফাজ উদ্দিন ঢালী। তিনিও রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তার গ্রামে ফেরা।
বাড়ির বাইরে ফুটবল খেলছিল একদল তরুণ। আফাজ উদ্দিন ঢালী ওই তরুণদের সহযোগিতা নিয়ে ইয়াসিন আলীর বাড়িতে আসেন। উঠানে পা রেখেই জোরে জোরে ‘ বাবা বাবা-মা মা ’ বলে ডাকাডাকি করতে থাকেন। ফুলজান ও ইয়াসিন আলী দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন । আফাজ ঢালী জড়িয়ে ধরেন ইয়াসিন আলীকে। ফুলজানের পায়ে সালামের পর তাকেও বুকে টেনে নেন। বলেন ‘ আমিই মুস্তাকিম, আমি তোমাদের ছেলে- ফিরে এসেছি। ’ ফুলজান-ইয়াসিন কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। তুমি তো মুস্তাকিম না- কে তুমি বাবা ? আমার মুস্তাকিম কই ? আফাজ ঢালী শান্ত হতে বললেন। কিন্তু তারা শান্ত হতে পারলেন না। এরই মধ্যে বাড়িতে জড়ো হলেন প্রতিবেশিরা।
আফাজ ঢালীর চোখেও জল। অস্থির। কথা বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন। কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে। এক গ্লাস পানি চাইলেন। বাড়ির উঠান ভর্তি মানুষ। আফাজকে ঘিরে আছে সবাই। মুস্তাকিম বিল্লার খবর বলার সাহস পেলেন না আফাজ। সকলের চোখে মুখে কৌতূহলের ছাপ। এবার সাহস করে বলেই ফেললেন-‘ যুদ্ধ করার সময় মুস্তাকিম মারা গেছে । তার লাশ পাওয়া যায়নি। কসবা এলাকায় নদী পার হওয়ার সময় নৌকায় বৃষ্টির মতো গুলি ছোঁড়ে পাকিস্তানীরা। এক পর্যায়ে নদীতে নৌকাটি ডুবিয়ে ফেলা হয়। ’ আফাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ফুলজান। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এবার কথা থামালেন আফাজ। আহা ! সে কী দৃশ্য। ফুলজানের মাথায় পানি ঢালছেন প্রতিবেশিরা। এরই ফাঁকে আফাজ ঢালী আবার কথা শুরু করলেন। বললেন- ‘ নদী সাঁতরে কয়েকজন তীরে উঠতে পেরেছিলেন। তাদের মধ্যে আমিও একজন। ’
জ্ঞান ফিরলো ফুলজানের। কিন্তু কথাবার্তা এলোমেলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। আফাজ ঢালী চলে গেছেন। কৌশল করে নিজেকে ইয়াসিন-ফুলজানের ছেলে পরিচয়ে আসলেও সেটা কাজে লাগেনি। বাক্স থেকে আবার সেই থান কাপড়ের টুকরো বের করলেন ইয়াসিন আলী। গায়ে জড়িয়ে নামাজে দাঁড়ালেন। ফুলজানের আচরণ অস্বাভাবিক। খেজুরপাতার পাটি বিছিয়ে দরজার সামনে শুয়ে পড়লেন। সেই যে ঘর থেকে বেরিয়েছেন তিনি। আর ঘরে যাননি। পৌষ কিংবা মাঘ মাসের শীতেও না। এক কাপড়ে সারা রাত বাইরে কাটান নির্ঘুম। দমে দমে ছেলের নাম জপেন। তার বিশ্বাস ছেলে মরেনি। তিনি আবার ফিরে আসবেন। যদি বাড়িতে এসে উঠেন তখন তাকে জড়িয়ে ধরে বলবেন ‘ তুই আমারে রাইখ্যা এতোকাল কই ছিল বাবা? ‘ আয় আমার মানিক আমার বুকে আয়। আমি আর পারতাছি না। তোরে দেইখ্যা আমি মরুম। তরে দেহনের লাইগাই বাইচ্যা রইছি। তুই না কইছিলি ফিরা আইবি। বাবা কতা রাখলি না তো।’ এভাবে সারা রাত বিলাপ করতেন তিনি। বাড়িতে কোন ফকির মিছকিন আসলে তাকে জড়ায়ে ধরে বলতেন এই যে আমার মুস্তাকিম আইছে। কাউকে দেখলে বলতেন ‘ তোমরা আমার কলিজার টুকরাডারে দেখছো নাহি গো ? ও কই আছে এহন। আমার বাবারে একবার দেহাও। আমি ওরে পরাণ ভইরা দেহুম।’
এক সময় চোখের জল শুকিয়ে যায় ! অন্ধ হয়ে যান ফুলজান।
ইয়াসিন আলীও ক্রমশ দুর্বল হতে থাকলেন। কারো সঙ্গেই কথা বলেন না। ছেলে খোঁজার জন্য কসবাও গিয়েছেন একবার। কিন্তু কোথায় পাবেন তাকে ? একদিন দুপুর বেলা পিয়ন এলেন বাড়িতে। ইয়াসিন আলীর হাতে দিলেন চিঠি । ভেবে ছিলেন – ছেলের পাঠানো চিঠি। ইয়াসিন আলীর বিশ্বাস ছিল মুস্তাকিম মরেননি। চিঠির ডানদিকে লেখা ইয়াসিন আলীর নাম। বাম দিকে লেখা শেখ মুজিব। চিঠি খুললেন। ছোট্ট একটি চিঠি। সেখানে লেখা –
‘ প্রিয় ভাই
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য পুত্র আত্মোৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দু:খের সাথে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রণঢালা সহানুভূতি।
এমন নি:স্বার্থ মহান দেশ-প্রেমিকের পিতা হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন।
‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট ২০০০/০০ টাকার চেক প্রেরিত হ’ল। চেক নম্বর সিএ ০২১৩৫১।
আমার প্রাণভরা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা নিন।
শেখ মুজিব
১১/১/৭২ ’
বঙ্গবন্ধুর পাঠানো এই চিঠি পড়ে বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলো একেবারেই। ছেলের প্রতীক্ষার অবসান হলো। কিন্তু ফুলজান এটাও বিশ্বাস করলেন না। তার ধারণা-ছেলে মরেনি। পুত্রশোকে ক্লান্ত ইয়াসিন আলী বছরখানেক পরই মারা যান। মৃত্যু আগেই বলেছিলেন-সাদা সেই থান কাপড়ের টুকরোটা যেন তার কবরে দিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামবাসী তাই করেছিলেন। কিন্তু ফুলজান ! অন্ধ হয়ে যাওয়া শহীদ জননী ফুলজান জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে ছিলেন তেতাল্লিশ বছর। ঘরের বাইরেই কাটিয়েছেন এতোকাল।