রাখাল সুজনের ছড়া
কই হারালে বাবা
কই হারালে বাবা আমার কই হারালে কই ?
আসবে বলে আজও আমি অপেক্ষাতে রই,
হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে দূর আকাশের চাঁদ
ভাল্লাগেনা তোমায় দেখার মনে জাগে স্বাদ।
কই হারালে বাবা আমার কই হারালে কই ?
তোমায় খুঁজে আজও আমি দিশেহারা হই,
ওই আকাশে জ্বলে যখন তাঁরা ঝলমল
তোমায় খুঁজি তাঁরার ভিড়ে চোখে আসে জল।
কই হারালে বাবা আমার কই হারালে কই ?
ওই দু-হাতের ছোঁয়া খুঁজে আমার পাঠ্যবই,
ভাল্লাগেনা পড়তে বসে ভাল্লাগেনা বন
এনে দেবে তোমায় বাবা কেউ করে না পণ।
কই হারালে বাবা আমার কই হারালে কই ?
গুনে গুনে দিন চলে যায় আসবে তুমি ওই,
আজ এলে না কিন্তু বাবা আসতে পারো কাল
অপেক্ষাতে কেঁদে আমার চোখদুটো হয় লাল।
মায়ের চোখে জল
যুদ্ধে গেলেন বাবা আমার দেশ ও মাটির টানে
যাবার সময় বলছিল মা বাবার কানে কানে,
যাচ্ছো তুমি যুদ্ধে ওগো আসবে কবে ফিরে
অপেক্ষাতে থাকবো চেয়ে আমি নদীর তীরে।
মায়ের কথা শুনে তখন অশ্রু ঝরে বাবার
ইশারাতে বুঝাই মাকে সময় হলো যাবার,
বাবা আমার চুপটি থাকে চোখের ভাষা আগুন
বাবার চোখে ভাসে তখন অগ্নি ঝরা ফাগুন।
যাচ্ছে বাবা জয়ের আশায় হাটবে না সে পিছু
বুঝতে পেরে মায়ে তখন বলেনি আর কিছু,
মায়ের যতো স্বপ্ন ছিল পিসছে বাবা দু-পায়
সেদিন হতে আমার মায়ে ফুল পড়েনি খোপায়।
যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হয়ে আসবে বাবা যেদিন
ভালোবেসে নিজের হাতে ফুল পড়াবে সেদিন,
স্বাধীন হলো দেশটা মায়ের হয়নি পূরণ আশা
দেশের টানে হারায় বাবা মায়ের ভালোবাসা।
বলছে মায়ে কত করে বাপ শোনেনি মানা
বাবার মনের কথা গুলো হয়নি মায়ের জানা,
এমন হাজার ভাবনা মায়ে রাখছে আড়াল করে
বাবার কথা ভেবে আজও অশ্রু মায়ের ঝরে।
ইচ্ছে যতো
ইচ্ছে করে দোরটি খুলে
মনের সুখে ঘুরতে,
পাখির মতো মুক্ত হয়ে
আকাশ পানে উড়তে।
ইচ্ছে করে কোকিল সুরে
গলা ছেড়ে গাইতে,
ইচ্ছে করে মাঝির সাথে
বৈঠাও-যে বাইতে।
ইচ্ছে করে সাগর পানে
সাঁতার কেটে নাইতে,
ইচ্ছে করে সকল ঋতুর
সুবাস মনে পাইতে।
ইচ্ছে করে সবার আগে
রোজ সকালে উঠতে,
ইচ্ছে করে সকাল সন্ধ্যা
ফুলও হয়ে ফুটতে।
ইচ্ছে করে ভ্রমর হয়ে
মধু গুলো লুটতে,
প্রজাপতির সঙ্গী হয়ে
গহীন বনে ছুটতে।
ফুলের মতো দিদি
ফুলের মতো দেখতে লাগে
আমার শিউলি দিদি,
দিদি আমার মিষ্টি খুবই
আবার ভীষণ জিদি।
জিদি আমার মিষ্টি দিদি
ফুলকে বাসে ভালো,
ঠিক যেন সে ফুল জড়িয়ে
থাকবে চিরকাল-ও।
সকালবেলা ঝুড়ি হাতে
শিউলি তলায় আসে
শিশির ভেজা ফুল কুড়িয়ে
ফুলের সাথে হাসে।
দিদির পোষা শালিক ছানা
ডাকে ছাউনি চালে,
দিদি তখন দোলনা দুলে
বসে শিউলি ডালে।
ফুলের সাথেই কথা দিদির
ফুলের সাথেই খেলা,
ফুলের সাথেই হেসে কাটে
দিদির সারাবেলা।
মায়ের শীতল কাঁথা
ভোরের আলো লাগে ভালো
তাইতো ছুটে আসি,
সকাল হলে শিশির জলে
হাঁটতে ভালোবাসি।
মাঠের পাশে দূর্বাঘাসে
শিশির জমা পাতাই,
সকালবেলা করে খেলা
মনটাকে রোজ মাতাই।
কলি ফোঁটে পাখির ঠোঁটে
কিচিরমিচির ডাকে,
দুটি পাখা শিশির মাখা
উড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে।
নকশি আঁকা শিশির ঢাকা
সবুজ ঘাসের পাতা,
হাঁটছি বনে লাগছে মনে
মায়ের শীতল কাঁথা।