ছড়া

রায়হান ফেরদৌস এর গুচ্ছ ছড়া

নৌকা ভ্রমন

শহরে নেই গ্রামের মতন
হাটু সমান কাদা,
বর্ষা এলেই চিত্র বদলায়
মনে লাগে ধাঁধা।
এটা সড়ক নাকি? খাল- বিল,
পুকুর কিংবা নদী,
জল খেলাতে মেতে উঠি-
বর্ষায় নিরবধি।
বছর জুড়ে ড্রেনেজ খনন
থাকেও ভাই থেমে,
বর্ষা এলে ঠিকাদারগন
কাজে পড়েন নেমে।
সড়ক জুড়ে ডিঙ্গি নৌকা!
দৃশ্য কতোই ভালো,
না বুঝে ক্যান আমজনতা
কপাল করছো কালো।
বাস, রিক্সা, আর প্রাইভেটকারে
বোরিং আসতে পারে,
বর্ষায় নিন হালকা বিনোদন;
নৌকার ব্যবহারে।

গুজবের ফল

ভ্যানে করে সবজি বেচে
হ্যাংলা কালো রতন,
“ছেলেধরা” গুজব নিয়ে
শুনছে পথে কথন।
সেতু করতে লাগে বুঝি
বেশ মানুষের মাথা,
সেই গুজবে মন ভাসিয়ে
বলছে লোকে যা-তা।
লোক সমাগম ঢের দেখা যায়
একটু খানি দূরে,
“ছেলেধরা” এই কথাটি
কানে আসছে উড়ে।
দৌড়ে গেল রতন বাপু
মারছে মানুষ কি রে,
তার শরীরে লাগলো হাওয়া
আনবে জামা ছিঁড়ে।
রতন যখন প্রবল বেগে
ছিঁড়তে গেছে জামা,
চিৎকারে কয় আর মেরো না
উনি আমার মামা।
মামা আমার জন্মবোবা
কয় না কথা কভু,
“ছেলেধরা” সন্দেহে; ফ্রি-
মারটা খেলেন তবু।
না জেনে ক্যান হাত তুলে দেই
গুজবে কান দিয়ে,
আমরা আবাল দিচ্ছি প্রমান!
নিরীহ জান নিয়ে।

ক্লিনার হবার ইচ্ছে

বাবার ইচ্ছে ডাক্তার হওয়া, মায়ের আবার টিচার,
দাদুর ইচ্ছে জাজ হয়ে‘ ট্রু’ করি যেনো বিচার।
আমার ইচ্ছের কথা শুনে বলতে পারেন ছি!
ইচ্ছেটা ঠিক লাগতে পারে- ‘পান্তা ভাতে ঘি’।

বাবা, মা, আর দাদুকে ফের; বলে দিলাম এইম,
ইচ্ছে আমার ময়লা নিয়ে খেলতে সদা গেইম।
আমার অমন ইচ্ছে শুনে বাবার মাথায় হাত!
দাদু বলেন, ময়লা তুলে? ‘পাবি কি তুই ভাত’।

বলবে লোকে মেথর-টেথর, করবে তোরে ঘৃণা,
এই জগতে মুল্যহীন সব টাকা, পয়সা বিনা।
বলছি খুলে প্রাণের দাদু- ক্লিনার হবো ক্যানো!
ক্লিনারদের কেউ যাচ্ছে বনে; কোটিপতি ম্যানও।

বেতন তাদের প্রতি মাসে ‘চার লাখের অধিক টাকা,
ক্লিনারের ওই পদটা এখন; যায় না পাওন ফাঁকা।
তাই তো আমার ইচ্ছে ভিষণ, ‘হবো রেলের ক্লিনার,
চাকরি শেষে বাড়ির পাশে করব টাকার মিনার।

বোবা থাকার ফল

আমার স্বামী ঝগড়া করে প্রতিরাতেই মারে,
তাবিজ-টাবিজ দেন না বাবা; বশে আনি তারে।
বাবায় জানেন, তাবিজ দিয়ে হয়না কোনো কাজই,
চাপার ওপর ব্যবসা চালান-তিনি বিফল মাঝি।

গোপন কথা ভক্তজনকে যায় কি বলা কভু,
নাছোড়বান্দা ভক্ত থেকে রক্ষে দাও হে প্রভু।
একটু থেমে বাবায় বলেন, ওগো ভক্ত মেয়ে,
এই তাবিজটা রাখবি মুখে ঘরের ভেতর যেয়ে।

তাবিজ যেনো মুখেই থাকে স্বামী থাকলে ঘরে,
সরলে তাবিজ কাজ হবে না পস্তাবি তুই পরে।
বাবাজানের কথা মতন তাবিজ রেখে মুখে,
সাথীর জীবন কাটছে এখন শান্তি এবং সুখে।

সপ্তা দুয়েক পরে সে ফের; বাবার কাছে এসে
তাবিজ খানার বেশ গুনাগুন বলছে হেসে হেসে।
বাবায় এবার আড়াল ভেঙ্গে আসল বিষয় বলে,
ফল পেয়েছিস সবটুকু তোর; বোবা থাকার ফলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *