শিশুতোষ গল্প

শিশুতোষ গল্প- ইঁদুর- আসাদ চৌধুরী


ছোট্ট ইঁদুরটি তার মা-বাবাকে সাফ বলে দিল সে সমুদ্রের তীরে যাবে।
শুনে তারা আঁতকে উঠলেন, বললেন, ‘বল কী! কী সর্বনাশ! দুনিয়াটাই খুন-খারাবিতে ভরা? নারে বাপু। তোর আর গিয়ে কাজ নেই।’
ছোট্ট ইঁদুর জোর দিয়ে বলে, ‘না, আমি তোমাদের কথা রাখতে পারছি না। আমি জীবনে কোনো দিন সাগর দেখিনি, সমুদ্র দেখিনি, এবার সময় এসেছে, আমি যাবই। কোনো অবস্থাতেই আমি মত পাল্টাতে পারব না।’
মা-বাবা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় পড়লেও শেষ পর্যন্ত তার জেদের কাছে হার মানেন। বলেন, ‘আমাদের কথা যখন কানেই নিবিনে, তো যা। তবে সাবধানে থাকিস, বিপদ-আপদের কথা বলা তো যায় না।’
পরদিন। সূর্যের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি, সে যাত্রা শুরু করে। সকাল শেষ হওয়ার আগেই টের পেতে শুরু করে, ভয় আর আশঙ্কা কাকে বলে।
গাছের উপর থেকে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একটা হুলো বেড়াল তার ওপর লাফিয়ে পড়ে।
‘দুপুরের খাবারটা ভাবছি তোকে দিয়েই সারব রে।’
ইঁদুরটি কোনোমতে জানে বাঁচল। তবে কিনা অত বাহারি লেজের কিছুটা ততক্ষণে বেড়ালের মুখে চলে গেছে।
বিকালের দিকে নতুন ধরনের ঘাপলা শুরু হয়েছে। কুকুররা তাড়া করছে, এমনকি পাখপাখালি বাদ যাচ্ছে না। বাঁচতে গিয়ে বারবার পথ হারাল। আঘাতের চিহ্ন সারা শরীরে, কালশিটে/কালশিরে দাগ সবখানে। পালাতে গিয়ে জান দিয়ে দৌড়াতে হয়েছে। ফলে বারবার ভুল পথে ছুটতে হয়েছে তাকে।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে। সে এতক্ষণে সবশেষ টিলার উপর উঠতে পেরেছে। আহ, চোখের সামনেই সেই সাগর, যার জন্য তার এ যন্ত্রণা সহ্য করা। ঢেউগুলো একের পর এক তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। সূর্য ডুবছে। আকাশ রঙিন হয়ে উঠছে নানা রঙে।
মুগ্ধ ইঁদুর চিৎকার করে বলে অপূর্ব দৃশ্য, কী সুন্দর, কী সুন্দর!
‘এখন যদি মা-বাবা সঙ্গে থাকতেন, কত যে ভালোই না লাগত।’
সাগরের উপরে বিশাল বিপুল আকাশে একে একে তারা ফুটছে। কী নরম, কী মিষ্টি আলোর চাঁদও উঠল। সে টিলার ওপর চুপ করে আছে। চোখ ভরে দেখছে সুন্দর রঙের সাগরের অপরূপ রূপ। তার মন গভীর প্রশান্তি আর তৃপ্তিতে ভরে আছে।

নীতিবাক্য : একটি সুন্দর আনন্দময় মুহ‚র্তের জন্য যোজনব্যাপী কষ্টের পথ পাড়ি দেয়া সার্থক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *