খান মুহাম্মদ রুমেল-এর কবিতা
ফেরারি আলো
জোনাকির নিকট প্রতিবেশি ছিলাম একদিন
বিছিয়ে থাকতো চাঁদের আলো উঠোনময়
গলানো জোছনার আল্পনায় বিভোর রাত কাটতো ঘোরে!
সকাল হতো ঝিমধরা বিলের জলে।
দুধভাতে মিশে থাকতো আমাদের মা।
ফাইজু মাস্টার শেখাতেন পরম মায়ায়-
এক – এ- চন্দ্র
দুই – এ – পক্ষ
সুরেলা আওয়াজ কি মধুময়!
দুপুর গড়াতো ক্লান্ত পায়ে নীরব
বিকেলগুলো ছুঁতো সোনালি আলো!
নগরবন্দি সময়ে খুঁজি ফেরারি আলো!
ফাঁদ
কতো নিদাঘ দুপুর কেটেছে আলস্যে
কতো আয়েশি বিকেল উড়েছে ধোঁয়ায়
কতো ধূসর গোধূলি পুড়েছে মর্মর মায়ায়।
কতো রহস্য সন্ধ্যা কেটেছে তারার আলোয়!
কতো জোছনা রাত ভেসে গেছে কুয়াশায়।
সুদূর অতীত এখনো ডেকে চলে অবিরাম
কোথাও কিছু টান জমা আছে বলেই!
ফেরা হয় না বুনো ফুল গাছেদের কাছে
গাওয়া হয় না ভাটিয়ালি সুর মনখুলে!
সময়গুলো সব আটকে গেছে নগর অনলে।
শুকিয়ে গেছে খরোস্রোতা জলের আধার
এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে হয়নি এগুনো কোথাও
শুধু বন্ধ হয়ে গেছে পেছন ফেরার কপাট!
নির্মল আলোর খোঁজে আটকে যাওয়া অন্ধকারের ফাঁদে!
পরিহাস
তীব্রস্রোতের ন্যায় প্রতিবাদী ছিলাম
শিকল পড়া শরীর শুধু আপোসকামী
এখন পুরনো ঘামের স্মৃতি!
ফেলে আসা দিনের জাবর কাটি
আর ভাবি আসছে দিনেই সরব হবো।
সূর্য উঁকি দিলেই মিইয়ে যায় সব
মলাটবন্দি প্রতিবাদ শপথ শিকেয় তুলে
বাঁচি অমেরুদণ্ডি যাপনের নিয়মে-
প্রতিবাদের স্বর আর মেরুদণ্ডের হাড়
জমা দিয়েছি নির্বিবাদ আয়েশের কোলে!
তবু ছাড়িনি স্বপ্নের বিলাসি সুবিধাবাদ
বিপ্লব আসবেই, বেঁচে থাকি, মিথ্যা আশ্বাসে?
নিজের সঙ্গে কি সকরুণ পরিহাস!
বিজয় মুকুট
একটা ফড়িং খুঁজতে গিয়ে বিফল যে শিশু
ভ্রমরের পরাগ মাখতে পারেনি যে কিশোর
প্রজাপতির খোঁজে নিরাশ যে কিশোরী
প্রিয় হাতটি পায় নি হাতে যে মানুষ!
আমি তাদের দলে, তাদের জন্য মায়া ধরি!
লড়াইয়ের মাঠে হেরেছে যে বীর
তাকে আমি পূঁজা করি অহর্নিশ।
বাইতে গিয়ে তরি স্রোতের প্রতিকূল
হাল ছাড়েনি যে এক কনাও
তাকেই আমি মাথায় রাখি জয়ীর রূপে!
কেউ না হারুক একটুখানি, লড়ুক শুধু শেষবিন্দু!
তার গলায়ই দেবো মালা, বিজয় মুকুট!
তার জন্যই আকাশ ভরা পুষ্প ফুটুক।
বরাবরই আমি পিছিয়ে পড়ার দলে।