শিশুতোষ গল্প

শিশুতোষগল্প।। মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু- শাম্মী তুলতুল

নিশি মনির স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুর“ হয়েছে। স্কুলে যেমন খুশী তেমন সাজ অনুষ্ঠানে বড় ক্লাসের ভাইয়াদের দেখেছে যুদ্ধের পোশাকে সাঁজতে। হাতে বড় বড় বন্দুক নিয়ে বলতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা , আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছি।জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

তখন থেকে তার মনে একটা প্রশ্ন জাগে মুক্তিযুদ্ধ কী ? বঙ্গবন্ধু কে? বাসায় বাবা, মা, ভাই বোন সবার কাছে জানতে চাইলে বলে, পরে বলব। পরে শুনিও। এ ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে দুই, তিন দিন কেটে গেল নিশির। নিশির দাদু গ্রাম থেকে প্রায় বেড়াতে আসেন নিশিদের বাসায়। দাদু এলেই নিশি গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে।

ঘুমানোর সময়টাও পায়না দাদু। এবারও গ্রীষ্মের সময় দাদু এলেন। দাদু আসার সময় গ্রাম থেকে যত দেশীয় ফলমূল আছে তাও সাথে করে নিয়ে আসলেন ।একদিন রাতে দাদুর সাথে গল্প করতে করতে নিশির মনে পরে গেল মুক্তিযুদ্ধের কথা।বঙ্গবন্ধুর কথা।

 নিশি হঠাৎ বলে ওঠে দাদু, দাদু মুক্তিযুদ্ধ কী? বঙ্গবন্ধু কে?

দাদু কথাটা শুনে চমকে গেলেন।চশমাটা নড়াচড়া করে বিব্রত হয়ে বললেন, কেন তুমি জাননা?

জানিনা তো ।

এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি তোমাকে?

না দাদু, কতবার মামনিকে জিজ্ঞেশ করলাম ।বলে পরে বলব। উল্টো বিরক্ত হয়ে যায়। দাদু খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। মনে মনে দুঃখ পেলেন। ঘরে একজন মুক্তিযোদ্ধা থাকতে ঘরের শিশুটা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানেনা। যার জন্য দেশ পেয়েছি সেই জাতির পিতা সম্পর্কে ইতিহাস জানেনা। ব্যাপারটা খুবই কষ্টের।

দাদু নিশিকে কোলে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমি বলি তুমি মন দিয়ে শোন।

তুমি জানো ?

হ্যাঁ আমি জানি। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। তার নাম মুক্তিযুদ্ধ। আর যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদেরকে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা।

কার সাথে যুদ্ধ হয়েছিল দাদু ?

পাকিস্তান নামক একটা দেশের সঙ্গে । বাংলাদেশ নামক নামটা হওয়ার আগে এই দেশ পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তান নামেই ছিল। পাকিস্তানীরা বাঙ্গালিদের নিজের ইচ্ছেমত চালাতে চেয়েছিল। নিজেদের মত করে ব্যাবহার করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল আমাদের দেশের মানুষ যেন তাদের কথামতো চলে। তাদের কথামত ওঠা-বসা করে। কিন্তু আমাদের নেতা এবং পুরো বাঙালি জাতি এসব মানতে পারেননি। আমাদের নেতা আমাদের স্বাধীন করতে চেয়েছেন।

বাংলাদেশ নামক একটা আলাদা স্বাধীন দেশ দিতে চেয়েছেন। পদে পদে তিনি আমাদের সাহস যুগিয়েছেন।

তিনি কে দাদু ?

তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই যে তুমি স্কুলে যার নাম বলতে শুনেছিলে জয় বঙ্গবন্ধু। উনার পুরো নাম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে জাতির পিতাও বলা হয়। তিনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। উনার কারণেই আমরা সাহসী হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম । তিনি একদিন ভাষণে বলেছিলেন।

“এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”।

তিনি আমাদের এই ভাষণের মধ্যে দিয়ে সংগ্রামী অর্থাৎ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার সাহস যুগিয়েছেন । আমরা যে আজ এইখানে বসে স্বাধীনভাবে কথা কলছি, এই স্বাধীনতা আমরা একদিনে পাইনি। এই স্বাধীনতা পেতে আমাদের নয় মাস যুদ্ধ করতে হয়েছিল। ছাব্বিশে শে মার্চ থেকে পনেরই ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। ষোলই ডিসেম্বর বিজয় হয়।

অর্থাৎ ছাব্বিশে মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুর“ হয়। ষোলই ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্যে পরিসমাপ্তি ঘটে এই যুদ্ধের। তখন আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমে,৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে, লাক্ষ লাক্ষ মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ আমরা শত্রুদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যার জন্য আমরা দেশ পেয়েছি। যিনি আমাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশের বেঁচে যাওয়া হায়েনারা অর্থাৎ শত্রুরা তাকে বেশীদিন দেশের মাটিতে বাঁচতে দেয়নি। সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নরপিশাচরা অত্যন্ত নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের পনের আগস্ট।সাথে তাঁর স্ত্রী ,পুত্র, এমনকি পরিবারের কাউকে জীবিত রাখেনি।শুধু ভাগ্যক্রমে তাঁর দুই কন্যা বেঁচে গিয়েছিলেন।

তাদের মধ্যে একজন কে জানো?

কে দাদু?

আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

সাথে সাথে নিশি চেঁচিয়ে বলে,আমি জানি, আমি জানি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরে সাবাস! আর অন্য মেয়ের নাম শেখ রেহেনা। তাইতো আমরা প্রতিবছর পনের আগস্ট শোক দিবস পালন করি। বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।

নিশি সব শুনে বলল, তুমি এত সব কি করে জানো?

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা দাদুভাই তাই সব” জানি।

বাড়িতে এত জানতে চাইলাম, কারো কোন সময় হলো না।আজ তোমার কাছ থেকেই সব জানতে পারলাম। এদিকে নিশির মা নিশিকে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিতে এলে দূর থেকে সব শুনে লজ্জা পেলেন। নিশির মা শ্বশুরকে বললেন, বাবা ক্ষমা করে দিয়েন ।আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের দায়িত্ব ছিল বলা। আমাদের দায়িত্ব ছিল আমাদের জাতির পিতার কথা বলা।

হ্যাঁ বৌমা, নইলে কি করে জানবে শিশুরা “মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *