কবি রহিমা আখতার কল্পনা’র জন্মদিনে কাব্যশীলনের শুভেচ্ছা
কবি রহিমা আখতার কল্পনা ৭ আগস্ট ১৯৬২, কিশোরগঞ্জ জেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের নান্দলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে বিবেচনা করা হয় যথাযথ প্রকরণসিদ্ধ বাংলা হাইকু রচনার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে। কবি পরিচয়ের বাইরেও তিনি একাধারে লেখক গবেষক, সম্পাদক, আবৃত্তিকার, উপস্থাপক এবং বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের এক সময়ের বাংলা সংবাদ পাঠক। তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
পিতা : মোঃ আবদুল মোতালিব ভূঁইয়া (মরহুম)। মাতা : আনোয়ারা বেগম। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে রহিমা আখতার কল্পনা তৃতীয়। স্বামী : জগদীশ চন্দ্র পান্থ। বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ। একমাত্র পুত্র অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী দেবাশিস কায়সার।
রহিমা আখতার কল্পনা এস.ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ থেকে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। ইডেন গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। তিনি ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লোকসাহিত্য বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত ICCR (Indian Council for Cultural Relation) বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি (PhD) গবেষক তিনি।
রহিমা আখতার কল্পনা ‘ইছামতি কলেজ’ গালিমপুর, নবাবগঞ্জ-এ বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে ১৯৮৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেন । কিছুদিন পরে ‘দোহার নবাবগঞ্জ’ ডিগ্রী কলেজে অল্পসময় শিক্ষকতা করে ১৯৮৯ সাল বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
বর্তমানে বাংলা একাডেমীর ‘ফোকলোর, মিউজিয়াম ও আর্কাইভস’ বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত।
এর আগে তিনি একাডেমি কতৃক প্রকাশিত শিশুকিশোর পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’-এর নির্বাহী সম্পাদক এবং সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেন।
আশির দশক থেকে নিয়মিত লেখালেখি করছেন। তবে প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৭৫ সালে এস.ভি. সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একুশের বিশেষ ম্যাগাজিনে (কবিতা)। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২৮টি। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ১২টি।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ :
- বেনোজলে বেহুলার ভেলা (কাব্য ১৯৯৩, ঢাকা প্রকাশন);
- পাথর সরিয়ে দাও (কাব্য ১৯৯৪, সেভেন স্টার);
- পাখিদের পার্লামেন্ট (ছোটগল্প ১৯৯৬, শব্দাবলী প্রকাশনী);
- কেউ জানে না (কাব্য ১৯৯৯, ব্যতিক্রম প্রকাশনী );
- বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যকোষ (সাহিত্য সমালোচনা-সংকলন,
২০০১, বাংলা একাডেমি); - দাহপর্ব (কাব্য ২০০২, চিত্রা প্রকাশনী);
- এম.ওসমান গণি রচনাবলী (সম্পাদনা ২০০৫, বাংলা একাডেমি);
- গোলকায়ন রুখবে নারী (সম্পাদনা ২০০৬, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা);
- কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পালাগান ও বর্তমান প্রেক্ষাপট (প্রবন্ধ ২০০৮,
গণিত ফাউন্ডেশন); - বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান, ২য় সংস্করণ (সম্পাদনা ২০০৮, বাংলা
একাডেমি); - নির্বাচিত শতকবিতা (কাব্য ২০০৯, জিনিয়াস পাবলিকেশনস);
- টুকরো ছবির কবিতা (কবিতা সংগ্রহ ২০১০, আলপনা প্রকাশনী);
- কালো দিন সাদা রাত (কাব্য ২০১১, আলপনা প্রকাশনী);
- বাংলা কবিতার পঞ্চাশ বছর (সম্পাদনা, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ২০১১,
অরণি); - তিনশত বাংলা হাইকু (হাইকু-কবিতা ২০১১, ম্যাগনাম ওপাস);
- এম ওসমান গণি-শামসুন্নাহার গণি স্মারকগ্রন্থ (সম্পাদনা ২০১২,
ড. এম ও গণি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন); - মানবকাহন (কাব্য ২০১৫, ভাষামুখ);
- আট প্রহরের গল্প (ছোটগল্প ২০১৫, জিনিয়াস পাবলিকেশনস);
- কবিতাসমগ্র (দশটি কাব্যের সংকলন,২০১৮, অনন্যা);
- আঙরা (কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কবিতা, ২০১৮, কালো);
- সপ্তডিঙ্গা মধুকর ( ছোটগল্প, ২০২১, অনন্যা);
- মগ্ন জলের মন্দিরা (কাব্য, ২০২১ ) ইত্যাদি।
- পাঁচশত বাংলা হাইকু (হাইকু-কবিতা, ২০২১, জিনিয়াস পাবলিকেশনস) ইত্যাদি।
প্রকাশিত ক্যাসেট/সিডি :
- ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ শব্দরূপ ১৯৯২, (এই সিরিজ অব ক্যাসেটস ১৯৯৫
সালে ভারতের ‘আনন্দ পুরস্কার’ অর্জন করে), - ‘বিস্ফোরণের বৃন্দগান’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দল;
- ‘জাগো গো ভগিনীগণ’ (বেগম রোকেয়ার রচনা থেকে আবৃত্তি ও পাঠ)।
- ছিন্ন পাতায় সাজাই তরণী — রহিমা আখতার কল্পনা-র কবিতা, আবৃত্তি –
মাহিদুল ইসলাম।
পুরস্কার ও সম্মাননা :
- সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র সংসদ, গুণীজন সংবর্ধনা, (২০০৭);
- সত্যজিৎ রায় সংস্কৃতি ফোরাম গুণীজন সংবর্ধনা, শ্রেষ্ঠ কবি (২০০৮);
- সুকুমার রায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, সাহিত্য পদক (২০০৮);
- ‘বিশ্ব মা দিবস পদক’ ও সম্মাননা (২০১১), বিএসবি ফাউন্ডেশন,
ক্যামব্রিয়ান কলেজ; - মেঠোপথ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক (২০১৩), তাড়াইল সাহিত্য সংসদ,
কিশোরগঞ্জ; - বিশ্ব শিশু দিবস শিশুসাহিত্য সম্মাননা (২০১৭), চিলড্রেন ক্যান চেঞ্জ
(সি-থ্রি) - সাহিত্য দিগন্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার (২০১৯) ইত্যাদি।