কবিতা

এনাম রাজুর আয়না সিরিজ

গাছের ডালের উষ্ণতায় সূর্য হাসে

অবলীলায় রাত জিম্মি করে দিনকে,
অক্টোপাস হয়ে গ্রাস করে আলোকজ্যোতি
অবিরাম প্রচারে প্রসার ঘটায় দাম্ভিকতার।

সুসজ্জিত চাঁদ ভুলেছে সূর্যের উদারতা…

গাছের ডালের উষ্ণতায় সূর্য হাসে
যে হাসির পরশ পেতে গালিচা হয় সমুদ্রবুক
শুশক লুকোচুরি খেলে কার সাথে কখন?
লজ্জায় নতুন বউয়ের মতো ঘোমটা পড়ে চন্দ্রের প্রতিবেশি সুখ।

মৃত্যু জেনেও কামড় দিতে হবে

হেঁটে হেঁটে যখন তোমার কাছে আসি
তুমি জলদেবী হয়ে সমুদ্রবুকে করো অন্নরান্না
তোমাকে ঘিরে বসে থাকে কতিপয় পুরুষ বেশ্যা
যারা মানচিত্রের লেবাস পড়ে মাছেদের দেবতা আজ…

দূরত্ব রেখে ঢেউয়ের নৃত্য দেখি
ইচ্ছে করে ছুঁইয়ে দেই ঈর্ষার বারুদ
কাছে গেলে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাবে ভার্জিন বিশ্বাস।

একবার মনে হয়, কাছেই যাই
বিন্দু বিন্দু করে কচ্ছপ গতিতে জমানো টান
দিয়ে দেই একজীবনের বিনিময়ে।
দুনিয়াতে হাতির পায়ের নিচের পিঁপড়াও
নিজের ওজনের দশগুন ভার বহন করে।

কতোকিছু হই- কখনো অদৃশ্য দৈত্য,
হিটলারের গোপন বাহিনীর লিডার-ফিডার
অধিকার করি কল্পনাতে সিন্দাবাদের সোলেমানি তরবারি
মুহূর্তে সব স্বপ্ন ভেঙে যায়
তোমার পাশে মুক্তিযোদ্ধা নামের গোমস্তাদের ভয়ে।

ফিরে যেতে হবে, ফিরেও যেতে চাই
হঠাৎ কি যেনো ভেবে ফিরে তাকাই আরেকবার তোমার দিকে
আগেও এমন হয়েছে তখনও পাহারায় ছিলো তোমার বাবা, ভাই
আগপাছ না ভেবেই ছুটে যাই তোমাকে ছুঁইতে
সমস্ত শরীর আঘাতে হয় ক্ষত বিক্ষত।

আহত আমি মরে যাবো খানিকবাদেই
যেভাবেই ছোটে উইপোকা মরবে যেনো আগুনে
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হচ্ছে, এই বুঝি সবই শেষ
খুব শক্তি নিয়ে তবুও একটা কামড় দিলাম তোমার কানে
সেই কান মৃত্যুর পর আমার লাশের মুখেই ছিলো।

আমি কবরবাসী হতে হতে বুঝি-
এভাবেই মৃত্যু জেনেও কামড় দিতে হবে জুলুমের বুকে।

আমার খুনের সাক্ষী দিবো আমিই

আমাকে খুন করার দৃশ্য দেখে বিচলিত হইনি…

গতোরাতে গল্প পড়ার পরেই বইটি বালিশ হয়
শহুরে জীবনে কখনো মোম কিনতে হয়নি ল্যাম্পপোষ্টের কারণে
চোখের সামনে রক্তের হলিখেলা দেখে নীরব ছিলাম
আগেও এমন হয়নি তা বলবো না।

সুসজ্জিত চাঁদ ভুলে গেছে সূর্যের উদারতা
নববধূর মতো ঘোমটা টেনে তাই পঠিত গল্পের রসদ খুঁজেছি
ভুলে গেছি পূর্বেও আমার সামনেই নেচেছিলো মস্তক
খুব সহজে অতীত হয় তাই তো গতোরাতের শহুরে মৃত্যুর বিজ্ঞাপন।

আজকে আমাকে কারা যেনো ধরেছে!
বিস্ময়! বিস্ময়! কাট কাট কাট উচ্চারণে ধ্বনিত চারদিক
ক্যামেরায় ক্যামেরায় আমাকে রাখা হলো বিজ্ঞাপনে
আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করা হচ্ছে,
বাঁধা দেওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঠোঁট বন্ধ ছিলো চিরায়ত নিয়মে
দেহ থেকে আমার মাথাটা আলাদা হলো এবং
হাত ফসকে বলের মতো গড়াতে গড়াতে মৃত্যুর গোলপোষ্ট ছোঁয়
অথচ, একটি বারও মুখ খুলে বলিনি- মহামান্য রাষ্ট্র,
আমার খুনের সাক্ষী দিবো আমিই!

বোবা বেদনা

অনিবার্য মৃত্যু হেঁটে যাচ্ছে
বৃষ্টি কেটে কেটে কুমিরের শহরে ।

যে শহরে পতাকাকে পর্দা করে
তৈরি করা হচ্ছে গোমস্তাদের অভয়াশ্রম,
গাছেদের সাথে যাদের নেই কোনো প্রণয়
নেই কোনো মানচিত্র প্রীতি…

জোয়ারের টানে পানি কেটে কেটে সমুদ্রপাড়ে পৌঁছে গেছে
বোবা বেদনাকে সঙিন করে মৃত্যু।
যেখানে গচ্ছিত আছে গুম হওয়া বিবেক
যারা একবার হলেও সফর করেছে ডাস্টবিনের নগরী
যেখানে মোমের আলোয় আলোকিত হয় না নটরাজ।

অনিবার্য মৃত্যু জেনেও
প্রতিদিন পরিচিত শহরেই আহার খুঁজছে জীবন।

দুঃখির শ্বাসে ভরা সম্পদ পাহাড়

ঝরণার মতো বমি করছে পৃথিবী যতোসব চাটুকার
রক্তসরাবে পিপাসা মেঠাতে পাগলা কুকুরের মতো দিচ্ছে কামড়
খসে পড়া নক্ষত্র দেখে এরা আঁতকে উঠে বোমারু বিমান ভেবে
আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও তা আসবাসে ব্যবহার হয়েছে কবে?

এই পৃথিবীর গর্ভে জন্মে আজও যতো বাঘা বাঘা সন্তান
ঘাতকও রয়েল বেঙ্গল টাইগার যখন দুনিয়াটাই সুন্দরবন
ঘনো ঘনো দুখির শ্বাসে ভরা তাদের সম্পদ পাহাড়
ব্যয় করে হাত ভরে তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকে অনাহার।

শেয়াল-বেজির ভয়ে লুকিয়ে রাখে যেমন গ্রাম্য বধূ হাঁস-মুরগিকে
রাজারনীতি অনুসরণকারী বন্দী পাখির মতো দেয়াল বানায় সঙ্গিকে
এরচে ভালো ছিলো পৃথিবীর, তালা দেওয়া প্রসবের দরজায়
প্রসব বেদনা উঠলেই দেখতো মা নবজাতককে নাপিতঘরের আয়নায়।

৪ thoughts on “এনাম রাজুর আয়না সিরিজ

  • কামাল আহসান

    চমৎকার

    Reply
  • নাজমুল হাসান নিরব

    শুভ কামনা সব সময়।

    Reply
  • নাজমুল হাসান নিরব

    শুভকামনা রইল

    Reply
  • Md Najmul Hasan Nirob

    Tnx

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *