ছোটগল্প।। প্রতিপক্ষ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী
আবিদ সাহেবকে রাত করে বাসায় ফিরতে কখনও দেখেনি নাসিফ। গত মাস থেকেই অনেক রাতে বাসায় ফিরেন। তবে বাবা কখন আসেন না যান তা নিয়ে নাসিফের মাথা ব্যথা নেই।
আবিদ সাহেবের স্ত্রী আফসানা এক রাতে জিজ্ঞেস করেন, তোমার কি রাতেও অফিস করতে হয়?
আবিদ সাহেব হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছেলেটার খরচ বেড়ে গেছে তাই ওভারটাইম করতে হয়।
প্রতিদিনই তোমার ওভারটাইম থাকে? এটা কি ধরনের অফিস? মনে মনে আফসানা বলেন, এতো বছর কোনো দিন শুনি নি ওভার টাইমের কথা। এখন শেষ বয়সে এসে ওভার টাইম। আফসানার মনে পড়ে একদিন, অনেক দিন আগে, আবিদ সাহেব বলেছিলেন, অসিফারদের কোনো ওভার টাইম নেই। তাহলে কোথাও ঝামেলা আছে কিনা?
সহজ সরল আফসানার চিন্তা এখানেই থেমে যায়, বেশি দূর গড়াতে পারে নি।
অন্য একদিন আবিদ সাহেব বেশ রাত করে বাসায় ফিরেছেন। আফসানার মনে আজও সন্দেহটা কাটছে না। টেবিলে খাবার দিতে দিতে আফসানা জিজ্ঞেস করেন, আগে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে, এখন এতো রাত করো কেন? প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফেরার রহস্যটা কি সত্যি করে বলো তো।
আবিদ সাহেব হাসতে হাসতেই বলেন, আমি কি হাঁসমুরগি নাকি গরুছাগল যে সন্ধ্যার পরেই বাসায় ফিরতে হবে। একটু রাত তো হতেই পারে। কোনো দিন ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ি। আবার কোনোদিন কাজ থাকে।
আফসানার রাগ করার কথা ছিল কিন্তু রাগ করেনি। আবিদ সাহেবের সঙ্গে বাসার কেউ রাগ করে না। কীভাবে রাগ করবে? সবার জন্য তাঁর বুকভরা ভালোবাসা। নিজের জন্য তো কিছুই করেননি। সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন দুটি শার্ট আর দুটি প্যান্ট পরে। এক জোড়া জুতো তালি মারতে মারতেও জীবন শেষ হয় না। পাঁচছয় বছর চালিয়ে নিতে পারেন। আফসানা মাঝে মাঝে তালিমারা জুতোজোড়া ফেলে দিতে চান, কিন্তু আবিদ সাহেবের করুণ চোখের দিকে তাকিয়ে তা ফেলতে পারেন না। কী করবেন মানুষটা? একজন সৎ মানুষ, চাকরির মাসোহারার বাইরে কোনো রোজগার নেই। মাসের বেতন হাতে পাওয়ার পর গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার জন্য দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতে হয়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ; ঢাকা শহরের অযাচিত খরচ সামলাতেই হিমসিম খেয়ে তিনি বেসামাল।
এবার নাসিফ গোল্ডেন (যদিও অফিসিয়ালি স্বীকৃত নয়) জিপিএ পাওয়াতে উচ্চ মাধ্যমিকে ওর খরচটা বেড়ে গেছে। নাসিফের বোন আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তারও খরচ বেড়ে গেছে। দুটি ছেলেমেয়েকে কোচিং করাতে হয়। এদিকে বাড়িঅলাও বাড়ি ভাড়া বাড়িয়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। বেতন বাড়েনি; বরং বেতনে বসেছে কর। সব মিলিয়ে বছরের শুরুতেই খরচটা হঠাৎ করেই ফুলেফেঁপে ঢোল। হয়তো এজন্যই ওভার টাইম কাজ করেন আবিদ সাহেব—এরকমই ভাবেন আফসানা।
আবিদ সাহেবের রোজগারের টাকায় মাসের বিশ তারিখ পর্যন্ত টেনেটুনে চলে। তারপরই দিশেহারা। ধারকর্জ করে চলতে হয়। এভাবে আর চলবে না ভেবে আবিদ সাহেব বাড়তি রোজগারের পথ খুঁজতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিভাগের এক স্টাফ, আইনুলের কাছে দ্বিধা-সংকোচ না রেখেই বললেন, একটা টিউশনি হলে বাঁচা যেত। যোগাড় করে দিতে পারেন আইনুল সাহেব।
আইনুল জানে আবিদ সাহেব তুখোড় ছাত্র ছিলেন। সৎ অফিসার হিসেবে তাঁর অনেক সুনামও আছে। তবে বেতনের টাকায় তাঁর দিন চলে বড় ক্লেশে। দুপুরের খাবারের সময় বড় অসহায় লাগে তাঁকে। প্রতিদিন দুটি রুটি আর আলো ভাজি, এর ব্যতিক্রম কারো চোখে পড়েনি। এ নিয়ে অনেকে হাসি-তামশাও করে। তবে আবিদ সাহেব তাতে গা করেন না। আবিদ সাহেব টিউশনি করবেন শুনে আইনুল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং দিন পাঁচেক পরে তার পূর্বের এক বসের মেয়েকে পড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়।
বিকেলে অফিস শেষ করে আবিদ সাহেব মূলত আসলাম সাহেবের মেয়ে নাদিয়াকে পড়ানোর জন্য চলে যান। ঘণ্টা দুয়েক পড়িয়ে বাসায় ফিরেন।
আসলাম সাহেব অফিস শেষ করে ক্লাবে ঢুকেন সন্ধ্যার আড্ডায়। তিনি দুহাতে টাকা রোজগার করেন; বাড়তি টাকার কামড় আছে, খরচ করারও ব্যাপার আছে। আসলাম সাহেব ক্লাবে জুয়া খেলেন আর মদ্যপান চলে অনেক রাত অব্দি। কোনো দিন আবিদ সাহেবের সঙ্গে বাসায় দেখা হয়নি।
নাদিয়াকে কয়েক দিন পড়ানোর পরেই আবিদ সাহেব বুঝতে পেরেছেন সাত পুরুষের কোনো পাপ না থাকলে এই মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব পাওয়া সম্ভব নয়। এবার হয়তো শাপমোচন হতে যাচ্ছে। লেখাপড়ায় একদম মন নেই। মোবাইল ফোনটা সব সময়ই হাতে। বাটন টেপার সময় মাঝে মাঝে মনে হয় জপমালা জপছে। তাকে কিছু বলাও কঠিন।
দুমাস পড়ানোর পর নাদিয়ার পড়ালেখার তেমন কোনো অগ্রগতি না দেখাতে পারায় নাদিয়ার মা বেশ নাখোশ। প্রথম প্রথম যে-রকম আগ্রহ নিয়ে আবিদ সাহেবের খোঁজ-খবর নিতেন, সমীহ করে কথা বলতেন দুমাস যাওয়ার পর তাতে চূড়ান্ত ভাঁটা।
রমজান মাস শুরু হতে আরও দশ-পনেরো দিন বাকি। আসলাম সাহেবের স্ত্রী এক সন্ধ্যায় কয়েকটি নতুন কাপড়ের ব্যাগ বগলদাবা করে বাসায় ফিরে হাঁপাতে হাঁপাতে নাদিয়ার পড়ার রুমে ঢুকলেন। আবিদ সাহেব নাদিয়াকে পড়াচ্ছেন। তিনি নাদিয়াকে বললেন, এই নাও তোমার ঈদের জামা। তুমি ওই রুমে গিয়ে দেখো। আর আমি মাস্টার সাহেবের সঙ্গে একটু কথা বলি।
নাদিয়া ঈদের জামা দেখে বলল, ঈদ তো অনেক দেরি। এখনই জামা? তবে অখুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। সে জানে আরও কয়েক দফা জামাকাপড় কেনা হবে। নাদিয়া জামার ব্যাগ নিয়ে লাফাতে লাফাতে নিজের রুমে চলে গেলে আসলাম সাহেবের স্ত্রী আবিদ সাহেবের সামনে বসে বললেন, মাস্টার সাহেব, আপনার অবস্থার কথা বিবেচনা করে কিছুটা করুণা করেই মেয়েটাকে পড়াতে দিয়েছিলেন আমার সাহেব। কিন্তু মেয়েটা ক্লাস পরীক্ষায় খারাপ করেছে। তার কোনো উন্নতি দেখতে পারছি না। আপনাকে করুণা দেখাতে গিয়ে তো আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাই না।
আবিদ সাহেব ভেতরে ভেতরে ক্রোধ ও উত্তেজনায় ফেটে পড়লেও নিজের সন্তানদের কথা ভেবে অপমানটা হজম করে শান্তভাবেই বললেন, আমাকে করুণা করে টিউশনি দিয়েছেন?
অনেকটা তাই। তবে আপনাকে রাখতে পারব না।
হ্যাঁ। করুণা দেখিয়ে যদি আমাকে টিউশনি করতে হয়, সেটা আমিও করতে পারব না। যদিও টিউশনিটা আমার খুব প্রয়োজন।
আসলে আপনাদের আমলের লেখাপড়া আর বর্তমান সময়ের লেখাপড়া এক নয়। আপনি তুখোড় ছাত্র ছিলেন তা আমার সাহেব বলেছে। কিন্তু সেই সিলেবাস তো এখন আর নেই। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়।
জি। হ্যাঁ।
আবিদ সাহেবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এতো অপমান! কথা আর বাড়ান নি তিনি। টানাপোড়েনের সংসারে সামান্য একটু আশার বাতি জ্বললেও হঠাৎ করে এভাবে নিভে যাবে তা আবিদ সাহেব ভাবতেও পারেন নি। হঠাৎ করেই তাঁর মনে হলো একটা অপঘাতে তিনি আহত হয়েছেন। তিনি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখন আসি তবে।
চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে আবিদ সাহেবের মনে হচ্ছে পা দুটি পাথরের মতো ভারি। শরীরটা অসাড় হয়ে আসছে। একটু পথও যেন এগুতে পারছেন না যেন। তিনি নাদিয়ার পড়ার রুম থেকে বের হয়ে অসাড় হাতে যখন দরজা খুলছিলেন তখন আসলাম সাহেবের স্ত্রী বললেন, আগামী রবিবারে এসে আপনার পাওনাটা নিয়ে যাবেন।
আবিদ সাহেব বাসায় ফিরেন হেঁটে। আজকে হাঁটার সময় তার মনে হয়েছে সমস্ত পথ অন্ধকারে ঢাকা। আরও কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারেন আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি অন্ধকার গলিপথে ঢুকে পড়েছেন। একবার দাঁড়িয়ে জায়গাটি কোথায় তিনি বোঝার চেষ্টা করেন। নাদিয়ার মায়ের কথাগুলো এখনও মাথার ভিতরে জট পাকিয়ে আছে। তাই পথ ও দিক কোনোটাই তিনি ঠিক চিনতে না পেরে রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরেন।
বাসায় ফেরার পর আবিদ সাহেবের মন বিষণ্ন থাকলেও পরিবারের কারো কাছেই তা প্রকাশ করেন নি। বরং প্রতিদিনের মতোই হাসিখুশি। খুশ মেজাজে কথা বলেন সবার সঙ্গে। বুকের ভেতরে এতো তোলপাড় থাকলেও তা ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করেন নি। রাতে খাবারের সময় আফসানা বললেন, বাজারের টাকা শেষ। এখনও গ্যাস আর বিদ্যুৎ বিল বাকি। আলু ভর্তা আর ডাল ছাড়া আগামী দশ দিন বাজার করা সম্ভব হবে না।
আবিদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, আলু ভর্তা আর ডাল… হা হা হা, বাঙালির প্রধান খাবার। চালিয়ে যাও হা হা হা।
আফসানা বললেন, আহা রে হাসিতে জোছনা ঝরে। আর হাসতে হবে না। তিনি আরও গম্ভীর হয়ে বললেন, নাসিফ খাবে না, সে শুয়ে পড়েছে। সে বলেছে এসব খাবার খেতে পারবে না।
আহ্! কী মুশকিলের কথা, বাজার নেই তাতে কী হয়েছে? বিরিয়ানি রান্না করো। আমার ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটা না খেয়ে থাকবে? এটা কেমন কথা? হা হা হা।
নাসিফের ছোট বোন অর্চিও বাবার কথায় হাসে। সে খুব মজা পেয়েছে। বাবার সঙ্গে সে মজাও কম করে না। আজও মজা করেই বলল, এই যে, মিস্টার আব্বু, তোমার অকারণ হাসির কারণটা কি জানতে পারি? নিশ্চয়ই গোপন রহস্য আছে।
অর্চির কথায় আবিদ সাহেব খুবই মজা পান। তিনি আবার প্রাণ খুলে হাসলেন। তারপর বলরেন, না রে মা, গোপন কোনো রহস্য নেই। নে, খেয়ে নে। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
আফসানা বললেন, নাসিফের কোচিংয়ের টাকার তাগিদও এসেছে। তার টাকাও দিতে হবে।
অবশ্যই দেব। আমি কি টাকা মেরে খাব। অবশ্যই দেব। যদিও হাসতে হাসতে কথাটা বলছেন, কিন্তু তাঁর বুকের ভিতরটা যন্ত্রণায় যেন হাহাকার করছে। ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে যা কাউকে বোঝানো যাবে না। মনে মনে বললেন, দুটি মাস তো ভালই কাটিয়েছিলাম। এখন কী হবে?
আসলাম সাহেব অনেক রাতে বাসায় ফিরলেন। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর স্ত্রী পাশে বসে বললেন, এসব ব্যাকডেটেড মানুষ দিয়ে নাদিয়ার লেখাপড়া করালে চলবে না। মেয়েটা সিটিতে খুব খারাপ করেছে।
খারাপ তো আগেও করত।
তবু। বুড়ো মানুষ দিয়ে পড়ালে চলবে না। খুব ভালো কোনো ছাত্র পেলে টিউটর রাখব। ব্যাকডেটেড মানুষ এখনকার সিলেবাসই বুঝে না।
আবিদ সাহেবকে বাদ দিতে চাও? বেচারার বেশ অভাব।
হ্যাঁ। বাদ দিয়ে দেব। আমি একটা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র পেলে টিউটর রাখব।
আচ্ছা। ওনাকে না করে দিয়েছো তাহলে?
হ্যাঁ। ওনাকে আজকেই না করে দিয়েছি।
হুম।
কথাটা শুনে হয়তো আসলাম সাহেবের খারাপ লাগছে। অথবা নাও লাগতে পারে। অসৎ উপায়ে যারা উপার্জন করে তাদের মনের কথা বোঝা কঠিন। তবে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি কথা বাড়ান নি।
এক সন্ধ্যায় নাসিফ বসে আছে ছাদের কার্নিশে। নিচের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে ভাবছে নানা বিষয়। কোচিংয়ের টাকাটা দেয়া হয়নি বলে আজ কোচিংয়ে যাওয়া হয়নি। স্যার দুদিন তাগিদ দিয়েছেন। স্যার টাকা চাওয়ার সময় সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। সন্ধ্যার অন্ধকার আস্তে আস্তে নাসিফকে ঢেকে দেয়। পথবাতির সামান্য আলোয় তার ছায়াটা দেখা যায়। দুদিন যাবৎ নাসিফের মন খারাপ। খেতে বসেও খেতে পারে না। আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে কি ভাত খাওয়া যায়? বন্ধুরা কেএফসিতে প্রতিদিন খায়। নাসিফ যেতে পারে না। তার কি মনে চায় না? এমন নানা রকম চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে বিষণœ মনে সে বসে আছে।
নসিফকে খুঁজতে খুঁজতে মা ছাদে এসে তাকে দেখে হকচকিয়ে যান। কাছে গিয়ে আরষ্ঠ গলায় বললেন, তুই এভাবে পা ঝুলিয়ে বসে আছিস? যদি পড়ে যাস?
নাসিফ কথা বলে নি। মায়ের সঙ্গেও কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সে আস্তে আস্তে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। মা কিছুক্ষণ হতবিহŸল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে অনুসরণ করেন। নাসিফের মন খারাপের জন্য মাও দুর্ভাবনায় পড়েন। মনে মনে বলেন, আমার হাসিখুশি ছেলেটা হঠাৎ করেই কেন এমন ঝিমিয়ে পড়েছে? মায়ের মনও বিষণ্ন হয়ে ওঠে। আকাশের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনিও আস্তে আস্তে বাসায় ফিরে আসেন।
নাদিয়ার মা বললেন, আজ তোমাকে পড়াতে আসবে নটরডেম কলেজের এক ছাত্র। দুর্দান্ত ছাত্র। এসএসসিতে খুব ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট। অঙ্ক আর ইংরেজিতে পণ্ডিত।
মায়ের কথা শুনে নাদিয়ার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা দেয়নি। নির্বিকারভাবেই মায়ের কথা শোনে।
মা আবার বললেন, সন্ধ্যার পরেই তোমার স্যার আসবে।
নাদিয়া বলল, বুড়ো স্যারটাকে বাদ দিয়েছো?
হ্যাঁ। বাদ দিয়েছি। তোমার নতুন স্যারকে বলেছি, বুড়ো মানুষ কোনো কিছুই পারে না। একটা অঙ্ক দশবারেও মিলাতে পারে না। আর ইংরেজি তো কিছুই জানে না।
নতুন স্যার কি বলল?
নতুন স্যার বলল, আগেকার মানুষেরা এখনকার বিষয় কমই বুঝেন।
যাক, মা বাঁচালে। আমার একদম পছন্দ হতো না। তুমি খুব লক্ষী মা।
সন্ধ্যার পর আবিদ সাহেব পাওনা টাকাটা নেয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। এই সময় কলবেল বাজে। নাদিয়া দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিতে দিতে বলে, নতুন স্যার এসেছে।
ড্রয়িং রুমে বাবাকে দেখে নাসিফ হতবিহŸল। সে অনুচ্চ উচ্চারণে বলল, বাবা তুমি।
আবিদ সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে নাসিফের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন।
নাসিফ জানে বাবা কখনও মিথ্যে কথা বলেন না। তবে ওভারটাইমের কথা বলে কি তাহলে বাবা এখানে পড়াতে আসতেন?