আজ বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর আলম জাহান-এর জন্মদিন
জন্ম-১২ এপ্রিল, ১৯৬০। পিতা-শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জমশেদ আলী, মাতা- মরহুমা লুৎফুন্নেছা বেগম।
পিতার চাকরির সুবাদে কুমিল্লার ময়মনামতিতে জন্ম। তবে পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাধীন লতিবাবাদ ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রাম। গত ৪০ বছর ধরে কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকায় বসবাস করছেন।
ছড়া রচনার মধ্য দিয়ে নিতান্ত শিশু বয়সে সাহিত্যে হাতেখড়ি নেন। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন ঢাকা বেতারের ছোটদের আসর ‘কলকাকলি’তে প্রথম তার ছড়া প্রচারিত হয়। এরপর বেতারের নবীনকণ্ঠ, কথাকলি, কথামঞ্জরি, দর্পন প্রভৃতি অনুষ্ঠানে তার ছড়া নিয়মিত প্রচার পেতে থাকে। ১৯৭৯ সালে দৈনিক সংবাদ-এর খেলাঘর বিভাগে ছড়া প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রিন্টিং মিডিয়ায় তার প্রথম অভিষেক ঘটে। গত চার দশক ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ দৈনিকে তিনি নিয়মিত লিখে আসছেন। দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কাগজেও তার লেখা প্রকাশ পেয়ে থাকে। তার লেখা শুদ্ধাচারের ছড়া দেশের সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়ে থাকে।
মূলত ছড়াকার হলেও তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন। একজন প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও গবেষক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। তিনি কিশোরগঞ্জের লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে গবেষণামূলক ব্যাপক কাজ করেছেন। এ সংক্রান্ত ৫টি গবেষণামূলক বইও তার প্রকাশ পেয়েছে। লোকায়ত কিশোরগঞ্জ, লোকছড়ার রূপ-বৈচিত্র্য, লোকভাষার সুলুকসন্ধান, সংস্কার লোকাচার লোকবিশ্বাস, কিশোরগঞ্জের লোকবিশ্বাস, স্থানিক বাকরীতি ও ভাষা-রৈচিত্র্য ইত্যাদি গ্রন্থে লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে তার আগ্রহ ও মনীষা ফুটে উঠেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও তিনি ব্যাপক কাজ করেছেন। রক্তে ভেজা কিশোরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতিময় একাত্তর: লড়াকু শৈশব ইত্যাদি তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাধর্মী বই।
তার প্রবন্ধের বই ‘আ-মরি বাংলা ভাষা’ ও ‘ছড়া কবিতার গদ্যকথন’।
জাহাঙ্গীর আলম জাহানের প্রথম বই প্রকাশ পায় ১৯৮৫ সালে। ‘রাজা মশায় চিৎপটাং’ শিরোনামের এই ছড়াগ্রন্থটির সবচেয়ে দীর্ঘ ছড়াটি পরবর্তী সময়ে কাব্যনাটক হিসেবে মঞ্চায়িত হয়।
এ পর্যন্ত সম্পাদনাসহ তার ৪৯টি বই প্রকাশ পেয়েছে। তন্মধ্যে ছড়ার বইয়ের সংখ্যাই সর্বাধিক। তার উল্লেখযোগ্য ছড়ার বই হচ্ছে- রাজাকার রাজা হয় (১৯৯৪), বাছাই করা একশো ছড়া (২০০৩), তেড়ে মেরে ডাণ্ডা (২০০৮), ট্যাক্সো ছাড়া একশো ছড়া (২০১১), টুম্পারাণী ঘুমপাড়ানি (২০১২), আমি কলা খাই না (২০১৫) চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে (২০১৭), কিশোরগইঞ্জা একশো ছড়া (২০১৭), দিঘির জলে জোনাক জ্বলে (২০১৮), দুলকি চালে ফুলকি ছড়া (২০১৯), ইলিক ঝিলিক (২০১৯), মন হয়ে যায় পাখি (২০১৯), মুজিবের নাম লিখে রাখলাম (২০২০)। তার কিশোর কবিতার বই কাননে কুসুমকলি প্রকাশ পায় (২০২০) বইমেলায়। গুণী এই লেখকের জন্মদিনে কাব্যশীলনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল।
সাহিত্যে অবদান রাখায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে তিনি ২২টি পদক, সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
তিনি দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অবসরে আসেন। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ শহরে অবসর জীবন যাপন করছেন। অবসরে বন্ধুদের নিয়ে অখণ্ড আড্ডা ও লেখালেখি করে থাকেন। তিনি কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসবের মূল রূপকার ও প্রধান উদ্যোক্তা। কিশোরগঞ্জ ছড়াকার সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত আছেন।
তার সম্পাদনায় কিশোরগঞ্জ থেকে অনেকগুলো সাহিত্যর ছোটকাগজ প্রকাশ পায়। উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজগুলো হচ্ছে- বজ্রকণ্ঠ (১৯৭৮-৮১), উত্তাপ (১৯৮০), অতিক্রম (১৯৯১), দৃশ্যপট (২০০৫-০৮), বাংলাঘর (২০০৮-১০), ছড়া বিষয়ক ছোটকাগজ ‘আড়াঙ্গি’ (২০০৯-১৬), ছড়াসংক্রান্তি (২০১২) ইত্যাদি। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ থেকে তাঁর সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘উজান’ ও ছড়া বিষয়ক ছোটকাগজ ‘আড়াঙ্গি’।