পারভেজ আহসান-এর কবিতা
এক নাবিকের গল্প
স্বপ্ন বুনে ছিল এই চোখ
ভেবে ছিল গাছের পাতায়
উচ্চারিত হবে প্রেমের সিম্ফনি
জ্যোৎস্নার জলে স্নাত হবে এ সমাজ
স্বপ্নিল পাখিরা উড়বে যত্রতত্র
বাউল বাতাসে ভাসবে বকুলের গন্ধ
মুক্তির গান হবে শ্রেষ্ঠ কাব্য ।
অতঃপর একদিন
অন্ধ ক্রোধে তাঁর বুক হল বুলেট বিদ্ধ
রক্ত বৃষ্টিতে ভিজে গেল স্বপ্নের কুসুম ।
শৃঙ্খলিত প্রমিথিউসের আর্তনাদ
হাত থেকে তোমার শিকল খুলে না
ঈগলের মতো ঠুকরে ঠুকরে খেয়ো না আমায়
পোড়ে ছাঁই করো না দুঃস্বপ্নের চিতায়
তোমাকে দেখলে মনে পড়ে পনের আগস্ট
সিঁড়িতে পড়ে থাকা পিতা’র গুলিবিদ্ধ লাশ
কবর থেকে ওঠে আসা মার্কসের দীর্ঘ শ্বাস
অগ্নি দগ্ধ কিম ফুক’র গগন বিদারী চিৎকার
গুয়েভারা’র মৃত্যুর গান।
হাত থেকে তোমার শিকল খুলে নাও
এবার আমায় মুক্তি দাও
তোমার শব্দ শুনে পাখিরা ভুলে
যায় কুসুম ফোটা গান
নদীতে রাত্রির মৌন নেমে আসে
রৌদ্র ঢেকে যায় অন্ধ মেঘের ডানায়।
সন্ধ্যার গল্প-১
নক্ষত্র ফুলেরা ঝরে পড়ে কাজল দিঘির জলে
ছন্দোবদ্ধ ঢেউ নিয়ে যায় অন্তহীন আন্ধকারে ,
কেবলই তীব্র্র ঘ্রাণ থেকে যায় এ বিস্তীর্ণ আঙিনায়
লাল নীল ও হলুদ প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় মাতল হাওয়ায়
নক্ষত্রের আলো ক্ষয়ে গেলে চুম্বক হয় নভোমণ্ডলে
ভ্রুণেরা নিষিক্ত হয় জলের ভাঙনে,
ফুলেরাও বীজ রেখে যায় পরাগ সঙ্গমে ।
ধাতব মানুষ
নৈঃশব্দ ভেঙে রোবটিক ভঙিমায় হেঁটে যায়
তাদের চোখে কোন ভাষা নেই,
কোন উষ্ণ আবেগ অথবা প্রাণের স্পন্দন নেই
কেবল পাথর চোখে তাকায় চারিদিক ,
সময়ের রথে চড়ে কেবল তাদের ছুটছুটি
মাঝে মাঝে বর্ণহীন কাচের জমিনে গড়ে স্বপ্নের বসতি
ন্যানু ডিভাইসে খুঁজে আনন্দ বাড়ি
স্মৃতির কোষ থেকে মুছে গেছে মাধবী স্মৃতি ,
সুর আর প্রেমের সিম্ফনি ।
তবে মানুষ কি ভুলে যাবে তার মাধবী স্মৃতি ,
ভালবাসার জলে কি ফুঁটবে না জুঁই-চামেলী ?
সুখ -দুঃখের পদ্য
সূর্য উঠে রোদ্র হাসে
বিলের বুকে পদ্ম ফুঁটে
ঘুঙুর পায়ে ময়ুর নাচে।
নানা রঙের পাল তুলে
হরেক রকম নৌকা ভাসে
শীতের রোদে সর্ষে ক্ষেতে
কিষাণের স্বপ্ন ফুঁটে।
দিনের শেষে আঁধার নাম
পাখি সব ঘরে ফেরে
নষ্ট পোকার আক্রমণে
মুকুল গুচ্ছ ঝরে পড়ে।
আকাশের তারা গুলো
দুঃখ প্রদীপ হয়ে জ্বলে।
কষ্ট ভারে বুকের পাঁজর
মরমরিয়ে ভেঙে পড়ে।
তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে
বাঁচার ভীষণ ইচ্ছে করে।
শোধ
গাঢ় অন্ধকারে জ্বলে ওঠা আগুনের মতো চোখ ,
পাথরের মতোন শক্ত চোয়াল
পাহাড়ের মতো তোমার দৃঢ়তা দেখে শুনি ধ্বংসের পদধ্বনি।
তোমার প্রলম্বিত ধৈর্যের দেয়াল ভেঙেছে মরমর শব্দে
শোধ নিতে ক্রোধাগ্নি রূপে দাঁড়ালে খরগ আর ত্রিশূল হাতে।
তোমারই চোখ থেকে বয়ে চলা নদীর রক্ত রস খেয়েছি গিলে
তাইতো কঙ্কাল দেহ নিয়ে আজ তারা মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
এখনও ইরাবতীর কান্নার শব্দ বেজে ওঠে পশুর নদীর ঢেউয়ে
বিপন্ন মাছেরা হারায় প্রাণ রাক্ষুসে জালে ধরা পড়ে।
প্রিয়তমার গাঢ় চুলের মতোন গভীর অরণ্য নেই, হরিণের দুরন্তপনা নেই,
রৌদ্র জলে কুমিরের স্নান নেই, গোল পাতার ঝোপে ডোরাকাটা প্রণির
বিচরণ নেই, পদ্মজলে পাখির আনন্দোৎসব নেই
জলজ উদ্যানে সরীসৃপের বুকের শব্দ নেই
তোমার নিবিড় পরিচর্য়ায়, তোমার রৌদ্র, বায়ু আর জলে
তোমার বুকে জন্মানো শষ্যদানা খেয়ে আমার বেড়ে ওঠা
তবে কিভাবে রক্ত প্রদীপ নিভিয়ে মেতে উঠবে ধ্বংসের মহোৎসবে?
বলো,বলো হে প্রিয়তমা আমার ।