অণুগল্প

অণুগল্প- দুঃস্বপ্ন -আবিদ আল আহসান

হঠাৎ বিকট শব্দে কারো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। লক্ষ্য করি খাট কাঁপছে! ডিমলাইটের মৃদু আলোতে সামনের দিকে দেখার চেষ্টা করি। হ্যাঁ এইতো আমি হোস্টেল রুমেই আছি। আরেকবার চিৎকারের শব্দ হয়। একদম আমার পাশ থেকেই চিৎকার! তড়িৎ গতিতে পাশে ফিরে দেখি রুমমেট সালাহউদ্দিন ঘুমের ভেতর চিৎকার করছে আর কাঁপছে। চিৎকার থেমে গেলে কেমন যেন গোঙানির মতো শব্দ হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ওর গায়ে দু’তিনবার ধাক্কা দেই। লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে। আমিও উঠে বসি।
: কি হয়েছে রে? দুঃস্বপ্ন দেখেছিস নাকি?
সালাহউদ্দিন কথার জবাব না দিয়েই ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে। আমি তাড়াতাড়ি টেবিলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেই। শূন্য একটা পানির বোতল হাতে আসে। হোস্টেল রুম মানেই যেন ব্যাপক পানি সংকট। তাই ওকে পানি খাওয়াতেও ব্যর্থ হই।
নীরবে বসে থাকি। দু’চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করি। কাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগে একটা পানির বোতল ভরে রাখতে হবে। রাত বিরাতে পানির প্রয়োজন হয়, মাঝে মাঝেই পানি খেতে ইচ্ছে করে।
সালাউদ্দিন স্বাভাবিক হলে আমি মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করি- ‘কিরে স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছিস নাকি?’
: হু
: কি দেখে এতো ভয় পেলি? জ্বিন-ভূত?
: নাহ,
: তাহলে?
: মানুষ দেখেই ভয় পেয়েছি।
: এ্যা! মানুষ কি করলো তোকে? স্বপ্নটা বল, শুনি।
: হুম, দেখি কিছু ছেলেরা আমাকে ধরে আমার মুখ-হাত বেঁধে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে সেটা একটা নদী, নদীর ঘাটে ভাঙাচোরা একটা নৌকা নোঙর করা, সেই নৌকায় আমাকে চ্যাংদোলা করে উঠানো হয়, তারপর সেখানকার কয়েকজন বৈঠা হাতে আমাকে ঘিরে ধরে, একজন চিৎকার করে বলে ‘জানোয়ারের বাচ্চা তুই বড় দেশপ্রেমিক হইছিস তাই না? এইবার তোর দেশপ্রেম বাইর করতেছি দ্যাখ’
তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি তাদের হাভ-ভাব দেখে প্রাণপণে হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করি, জোরে চিৎকার করতে চেয়েও ব্যর্থ হই, হঠাৎ তোর ধাক্কায় ঘুম ভেঙে যায়, একটুপর বুঝতে পারি যে এটা দুঃস্বপ্ন ছিলো’
এটুকু বলে ও হেসে ওঠে। আমি গম্ভীর স্বরে বলি ‘তুই চিৎকার দিতে ব্যর্থ হসনি, খুব জোরেই চিৎকার দিয়েছিস, তোর চিৎকার শুনে আমার ঘুমটাও ভেঙেছে’
সালাউদ্দিন অবাক ভঙ্গিতে কিছু একটা বলে। ওর কথা আর শুনতে ইচ্ছে করে না।
অন্যান্য রুমমেটরা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ওদের ঘুম অনেক গাঢ়। এমন দু’একটা চিৎকারে ওদের ঘুমের কোনো ব্যাঘাত হয় না। ওদের মতো আমার ঘুমটাও গাঢ় হলে ভালোই হতো!

হঠাৎ পানি খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এক অজানা ভয়ে পানি আনতে যেতেও পারছি না। ইদানিং ঘুম ভাঙলেই ভয় লাগে। কিসের ভয় তা বোঝার চেষ্টা করেও বুঝতে পারিনি। সালাহউদ্দিন হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে পানির বোতল নেয়, তারপর ধীর পায়ে দরজার দিকে যেতে থাকে। ওরও কি পানি খেতে ইচ্ছে করছে? নাকি আমার মনের কথা বুঝতে পেরে পানি আনতে যাচ্ছে? হতে পারে ওর গলা শুকিয়ে গেছে। ঘুমের ভেতর চিৎকার দিলে হয়তো গলা শুকিয়ে যায়।
আচ্ছা, বাস্তবে এভাবে চিৎকার দিলেও কি গলা শুকিয়ে যায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *