কবিতা।। মামুন রশীদ।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
প্রেমের কবিতা
১.
শান্তাহার স্টেশনে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। এক কম্পার্টমেন্ট
থেকে অন্য কম্পার্টমেন্টের ভ‚গোলে ঘুরতে ঘুরতে থেমে যায়
বুনো টাট্টু। আমিও হারিয়ে যাই।
কতো দূরে, কোথায় এসেছি চলে, উথাল ভাবনার মাঝে খুঁজে
দেখি নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের প্লাটফর্মে।
একে একে নর্থ ও সাউথের চৌহদ্দির মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে বিদ্বৎসমাজ।
আমাকে কে নেবে? সহ¯্র মাইলের ব্যবধান ভেঙ্গে অদ্ভুতভাবে
লেপ্টে যেতে থাকে বুনো বকুলের গন্ধ। পড়ার টেবিল, পোষা বাগান,
কুড়ানো বিড়ালছানা, গানের স্কুল, অভিজ্ঞানের শনপাপড়ি পথ দেখায়।
ধাপে ধাপে ইমামবাড়ার সুদীর্ঘ সিঁড়ি পেরিয়ে জড়িয়ে বসি সূর্যঘড়ির কাছে।
আমি তো পথ হারাইনি।
২.
এলোমেলো হতে হতে দিনফুরানো পাতার মতো
গলা টিপে ধরা নদীর মতো
রোদ ঝলসে যাওয়া মুখের মতো
এত
বৃষ্টি
হলো
ভারী অন্ধকার পেপার ওয়েটের মতো
আমাকে ভাঙতে ভাঙতে ওর সব ডালপালা
আনন্দে ঠাসা পাখির বাসার ভেতর
পুঞ্জীভ‚ত হলো।
তুমি দ্যাখো, তোমার জন্যই হাহাকার।
৩.
তুমি আমার, এর বেশি লিখতে থেমে যায় কলম
পাতার ফাঁক গলে, পথ করে দিচ্ছে সবুজ আলো।
আমি লিখতে পারছি না, আমি ঘুমাতে পারছি না।
মুখে লেগে থাকা উচ্ছিষ্ট, এঁটো-
জড়িয়ে যাচ্ছে চিন্তা, গলা শুকিয়ে-
ছাতিম ফুল, ছাতিম ফুল, সারা রাত তোমার ছায়া,
এলোমেলো গন্ধ, গলা শুকিয়ে আসছে, আমাকেও
স্পর্শ করছে পিপাসা।
৪.
ঝিরিঝিরি বাতাস আমার ভালোলাগে। ঝমঝম বৃষ্টি আমার ভালোলাগে।
রোদেলা আকাশ আমার ভালোলাগে। পূর্ণিমারাত আমার ভালোলাগে।
সবুজ পাতাদের আমার ভালোলাগে। শান্ত নদী আমার ভালোলাগে।
শিউলি ফুলে ছেয়ে থাকা উঠোন আমার ভালোলাগে। বকুল, তোমাকে ভালোলাগে।
এইসব ভালোলাগাকে ভালোবাসতে বাসতে দেখি নোংরা ফুটপাতে,
ডাস্টবিনের পাশে সূর্যমুখীর মতো এক শিশু ভাতের থালা হাতে বসে
আছে সকল ভালোলাগা উপেক্ষা করে।