কবিতাবিশেষ সংখ্যা

কবিতা।। মাসুদ পথিক।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

      

আমার শ্রমের কোনো মূল্য নেই

অবশেষে আজ আমি, এটা বুঝে ফেলেছি যে তোমার

এইসব বিনয় কিংবা চাপা হাসির নিচে কতোটা কপটতা

আমার জন্য রচিত ছিলো;

যে কিনা একটা জন্মান্ধ রাতের মতোই সঠিক এই জীবনে,

রূপালি দাঁতের আড়ালে কিছু তো পচনশীল খাদ্য কণিকা থাকেই,

আর আমারই সোনালি শ্রমে তৈরি সুগন্ধি ভোজন তরিকা তোমার…

হায়! পিছু ডাকা ভোরের জন্য আমি কেনো আজ কাঁদবো

কেনো যৌবনে রচিত প্রিয় পদছাপগুলোর আজ বেহাল দশা?

কেনো এতোগুলো বছর মেধায় চড়িয়েছি সকৃতজ্ঞ কৃতদাসের

প্রহেলিকায়?

তবে কী আমি একটা আজন্ম কলুর বলদ, কেবল কলুর বলদ?

আদুরে কথায়, কেবল আদুরে ভাষায় টানিয়ে নিচ্ছ খুব ঘানি

এটা তো সেই ইতিহাস সমাধি নয় সগৌরবে যার হবে পরাপাঠ;

কেবল সে তো যাবে সময়ের নিচে চাপা, আ হ!

কেউ কি কখনো বলবে এটাই সেই সত্য যা মেধার গহীন রক্তে আঁকা

এটা তো নয় তাজমহল বা আর যা যা নির্মাণের তরে হাজারো শ্রমিকের

নিঃশ্ব হয়ে যাওয়ার ইতিকথা

আমি কী, আমি কি নই সেই চাষা সোনামুখি ধানের জন্মদাতা;

কিংবা আমি উপোসী পেটে কিছু নির্বাচিত আঁধারের রচিয়িতাও

যা তোমার শিল্পপ্রবন চোখের সামনে দেয় সমূহ বিনোদনের তাড়া

আমি তো আজীবন পণ্য আহা, এই জীবন পণ্য আ হা! কতো না

আনন্দ আহ।

সত্যি যদি সত্যি হয়, আজ বলবোই তবে জীবন? জীবন মানে

একটা আস্ত ধোঁকা…!

ফলে আজ, আমার নিজের সঙ্গে ছাড়া, কোথাও যাবার নেই তাড়া…

এবং তুই

দুই’য়ের ভিতর চার দিয়েছো

একের ভিতর দুই

দেহের ভিতর মন রেখেছো

একটু খানি তুই

আমি তোর ভিতরে শুই

আমি তোর ভিতরে তুই

একটা শালিক একটা আকাশ

দুইটা তার ডানা

বুকের ভিতর সকল বাতাস

এক অনুভবে টানা

এই ভালোবাসার দুই

আমার মনের কোমল ভুই

এবং ডুব

চিরুনির ভেতর ঢুকে গেছে আমার ভীতু মাথা

মাথার ভেতর এলোমেলো জলের গহীন কথা

জলের ভেতর চক্রাকারে ঘুরে বিলুপ্ত সব মাছ

জলের বুকে আগুণপাখি; ফুলের যতো গাছ

এবং আমার ইচ্ছে খুব,

ইচ্ছে করে হতে নিরল বক

তোমার দেহে ধরবো শিকার,

সখ, আমার বড়ই সখ

অথবা আর মুখের উপর নাচে জলের ভাঙা আয়না

তোমার মনের মাঝে বিল ;মাছের ঝিলমিল, বায়না

নীরবতায় বুনেছি কোলাহলের হায়না

আসে, ভালোবাসায় কারোকিছুই যায় না

তবুও চোখের ভিতর চুপ, নিরন্তর এক ডুব

আজীবন, ব্যথার ভেতর সাতার আমার, খুব।

সংসারের রিমিক্স

সংসারে, কাঠাল পাতার তৃতীয় চোখ দিয়ে ঠিক, আর
দেখেছি ঠিক, ট্যাবুর হৃদপিণ্ড বেয়ে ঝরে ভাতের মাড়।
ঘরের পিছনে পেচতা তোলার ফাঁকে কন্যা বললো,
ভাতের মাড়ডা রাইখো মা, খামু। মা রিচ্যুয়ালের দু’বুক
বটিতে কাটতে কাটতে বললো, জাগলি চাইলের মাড় হইলে
ভালো অইতো…। মেয়ে, আহা হেইডা কি আর হইবার?
ছেলে মাঠ থেকে ফেরে মাথায় নিয়ে ত্রিকালবর্ষী দুপুর।
গাঁ জবজবে তার দু’ধার। ট্রাক্টরের শব্দে উড়ে পাখিগুলি,
আর ডিপটিউবয়েলের জল, স্নানরত আলেয়ার ভেজা
বুকের আগুণ…ছড়িয়ে দেয় উঠানে। তথাপি মা পোড়াচ্ছে
চুলোয় সম্পর্কের রঙিন বেজুন, ভূ কালচারের এইমতো
লাকড়ি জ্বেলে জ্বেলে…। বাবা কাঠাল পাতার ভেতর ঘুমিয়ে দেখেন,
ছায়ায় চাপা পড়েছে জীবনের তিন হাত…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *