কবিতা।। সমর চক্রবর্তীর।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
উদ্ভিদের ভাষাবিজ্ঞান
মজে আছো হৃদয়ে আমার সহিংস উৎসবে!
আমিও লুকিয়ে ছিলাম গভীরে তোমার বৃক্ষের পোশাকে ;
অরণ্যের কুয়াশায় বোঝে নাই তুমি,ভালোবাসার শিক্ষক ফুল
বীজগুলো মাটি পেয়ে ফলবান বৃক্ষ !
কৃষক সন্তান আমি জঠরে স্বপ্নের পোড়া দাহ
বাঙালি মরমী প্রাণ, শোকে বীরত্ব গাঁথা
খরায় বন্যায় নিত্য উপোষে শুকোয় বংশ পরম্পরায়
বীর্যের অহম; জন্মভিটেয় সংগ্রামের ইতিহাস জুড়ে
সাতপুরুষের ঘামের প্রেক্ষাপট!
মূর্খ প্রেমবিদ
নিরক্ষর হৃদয় দিয়েই পড়ে ফেলি উদ্ভিদের ভাষাবিজ্ঞান।
নিঃসঙ্গ গাছের পাশে
মৃত মাংস বাকলে ডুবে আছে শোকার্ত কঙ্কাল
ফেনায়িত বীর্য বাষ্পের জিহ্বা, আর
অসংখ্য যন্ত্রণাবর্ণ বর্ণহীন পাতার মর্মর দাহ!
নিঃসঙ্গ গাছের বুকে কোনো ক্লেশ নেই।
নিঃসঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে আছে
মায়াহীন মোহহীন শূন্যতায় পরমাত্মা খুলে
নিঃসঙ্গ গাছের পাশে কেউ আছে !
পুরুষ
দীর্ঘকাল আমরা প্রকৃতির গৃহ থেকে
মুখস্ত করছি জীবন মুদ্রণকৌশল─
দীর্ঘকাল যৌথ দীর্ঘশ্বাসে ছুঁয়েছি
রঙিন গণিতের জটিল নিয়ম;
দীর্ঘকাল আমরাই সময়ের পাশে
দাঁড় করিয়েছি অব্যয় শূন্যের দখলদারিত্ব!
এবার আমরাই সাজাচ্ছি কালের পাশে অসীম!
যতবার পিতা ততোবার আমিই পৃথিবীতে
সন্তান সেতো চেতনাফুল
আমার কোনো মৃত্যু নেই
মৃত্যুর পূর্বেই তো জন্মে আছি
নিজের ঘরে সন্তান পোশাকে !
দেখি তোমরা আমাকে কীভাবে নশ্বর বলো?
নারী
তুমি আমার আমাকে ধারণ করো, আশ্রয় দাও
চিরচেনা সন্ধ্যাতারা, মায়ায় মলিন করো
সূর্যের বিপরীত সাজাও রক্তের অক্ষর-বিপণন ধ্যান
মুহুর্তের চেতনায় স্তব্ধতা আনো তুমি
কল্লোল তোলো, ঘুঙুরের সুগন্ধ বিলাও……
আয়নায় প্রলুদ্ধ করো শস্যের বাগান-শীর্যফুল
তুমি আমার আমাকে পালন করো, প্রশ্রয় দাও
রমণের জ্যোর্তিময় বিভায় প্রেমিকা, প্রাকাশ্যে জননী লুকাও
অদৃশ্য ভ্রমণ
অবসরে তুমি অদৃশ্য ভ্রমণে যাও
খুলে রাখো মুদ্রাক্রীত সৌজন্য পোশাক!
কোথায় যাও সুর্যাস্তের দ্বিতীয় জগতে
ক্যানো এ্যাতো স্বপ্নব্যঞ্জনা রাতের প্লেব্যাক?
কী নিবিড় চুম্বন তোমার গৃহপাঠে
পলল জমা অন্ধকারে কী দাও দাসসখৎ!
জানি না দ্বিতীয় কোনো পৃথিবীতে
নিঃশব্দে তুমি ফুল হয়ে ফোটো কি’না?
শোকসীমা ভেঙে জমা করো সঙ্গমকাল
নৃ-নূপুরে স্মৃতিহীন কারো যতো দৃশ্যাবলী!
নির্জন বিলাসে কী উন্মুক্ত করো হৃদয় !
শরীর বিলাও কী-সে নিঃসঙ্গ উত্তাপে?