কবিতাবিশেষ সংখ্যা

কবিতা।। শিহাব শাহরিয়ারের।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

বাবা

বাবা

তোমাকে আশ্রমের গাছের দিকে

তাকাতে দেইনি—চেয়েছি বুকের পাশেই থাকো

তুমি নিজেই বেছে নিয়েছো—দেয়ালঘেরা কুঁজো ঘর?

বলেছো, এই বন্ধনযুক্ত কক্ষেই কাটুক বেলা—শেষের দিনগুলো

বাবা

তুমি ভাল করেই জানো

ক্যালেন্ডার দেখে দেখে জীবন চলে না

কিন্তু—স্বপ্নগুলো লুকিয়ে থাকে

তুষকের নিচে, বালিশের সাদা কভার

মশারির ঘোরলাগা, সুতার ঘূর্ণিপাক

লেখার ছোট্ট টেবিল, ডায়রির পাতায়

আর বলপেনের কালিযুক্ত নিপে—

এরপর ভয়েড, গ্যারেজ—তারপর কালো রাস্তা

তুমি সেই চার নং রোড ধরে—কখন যে

ঘুরতে ঘুরতে চলে গেছো, কখন?

কেউ তা টের পায়নি…

এই যাওয়ায় তোমার নস্টালজিক কাগজ উড়েছে!

বাবা

তুমি এরইমধ্যে—হেঁটে ফেলেছো তরমুজক্ষেত

তারপর দাঁড়িয়েছো লাউয়ের জাংলার পাশে

তোমার চোখ ভরে গেছে মাঘের মিষ্টি আলোয়

আমি তোমার কাঁধে উঠার জন্য ছটফট করছি

তুমি বললে, উঠ—

তোকে মাছেরঘের দেখাইয়া আনি… এ যেন

সুনীলের তিন প্রহরের বিল দেখানোর মতই

তারপর—ঘুঘুর কালো চোখ, আমের হলুদ বৌল

মাগুর মাছের ছটফটানি, সন্ধ্যার কেরোসিন বাতি

এসব দেখিয়ে বললে—এবার নেমে যা বাবা

ঐ ধূলিপথ ধরে দৌড় দে—

সামনে পাবি—ঘন বালু, ব্রহ্মপুত্র, গঞ্জের গন্ধ

পাবি—ট্রেন রেললাইন…

বাবা

নগরের নাভি খুব চওড়া

এর উত্তাপ তুমিও নিচ্ছ—নাকে সরিষার তেল নেয়ার মতো

আমাদের দীর্ঘ শুয়ে থাকা—ক্রমশ ঘারের ব্যথা বাড়ছে

বলেছিলে বই, ফল আর নদী তোকে তাজা রাখবে

আমি প্রতিদিন তোমার দেহের আঙুলে

হাতপাখার হাওয়া দিতে চাই—বাবা

বাবা

তুমি কী আমার মন খারাপ করে দিবে?

বলবে না আর—এই মিঠা নদীর পানি…

আফ্রিকার গোলাপের নাম ‘লাল’

আমি জর্জ ফ্লয়েড

আমিই মার্টিন লুথার কিং

আমার কী অপরাধ?

আমার জানা ছিল না

জানা ছিল না, কলম্বাসের দেশে

রক্তের দুই রং সাদা ও লাল

সাদা রক্ত সাম্রাজ্যবাদের আর লাল নিপীড়িতের

আমার গলা টিপে যারা হত্যা করল তাদের রক্ত কী সাদা?

২.

ফ্লয়েড: মনে রেখো তোমার রক্ত লাল

ফ্লয়েড: মনে রেখো আফ্রিকার গোলাপও তাই

ফ্লয়েড: তোমার প্রশ্বাসে কাঁপছে এশিয়া-লাতিন

ফ্লয়েড: ‘আমেরিকা যার বন্ধু, তার শত্রুর প্রয়োজন নেই’

৩.

জাগরেণের জোয়ারে একদিন নিভবেই—‘বর্ণবাদ’

সভ্যতাকে কী সহজেই উপরে ফেলা যায়—প্রিয় জর্জ?

ব্যাসার্ধ

রাতের একটি গোলার্ধ থাকে—আমি সেখানে হাত রেখে

খোঁজে ছিলাম অন্ধকার—এতে আমার কোনো দোষ নেই

তোমরা কুয়াশা পার হতে হতে খুঁজেছিলে—বাঁশঝাড়।

তোমরা শত্রু শত্রু খেলতে খেলতে ডেকেছিলে—দরজাকে।

আমি আবারও অবিনাশী শরীর খুঁজি—এতে চোখ পোড়ে

আমি সামনে একটি প্রতিবন্ধী পথ দেখি—নদীমেঘের মতো

আমাদের সকলের চামড়ার নিচে যে বেদনার রক্ত থাকে

সেই রক্ত দিয়ে কেউ কেউ বানায়—রসিকতার আয়না

আমি আজ একা একাই ইঁদুর ও তাদের গভীর গর্ত দেখেছি

তোমরাও নেমে যাও—ঝাউবনে, মেপে আসো স্তনের ব্যাসার্ধ

খুন্তি

বিনা পয়সায় একটি খুন্তি পেয়েছি

এই খুন্তি দিয়ে, আমি গভীর রাতে

তোমার মাটিঘরে সিদ কেটে ঢুকে যাবো

চুরি করবো তোমার অলংকার ও অহংকার

যদি ধরা পড়ি

তাহলে চোরের খ্যাতি পাবো

যদি না পড়ি

তবে জ্যোৎস্না মাখানো অন্ধকার চিনে নেবো

ঠাঠাপড়া তোমার স্বভাবের ভেতর

আমি একবার সহজেই লুকাতে পেরেছিলাম

দুর্গন্ধ যা, তা ডাস্টবিনের

চোরের গায়ে বাঁকলের গন্ধ-রস থাকে

খুন্তির কোনো দোষ নেই

যত দোষ চোর ও চাঁদের

নিদ্রা

তোমার হাত?

হারিয়ে গেছে মেহেদি রাত?

যাও যদি যাও; দাঁড়িয়ে আছে জিপ!

কোথায় যাবে? আন্দামান? সে তো এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *