বিশেষ সংখ্যাকবিতা

কবিতা।। ফকির ইলিয়াস।। কাব্যশীলন কবিতা উৎসব সংখ্যা

আহরিত আকাশগুচ্ছ

আগুনকে একলা দেখলেই আমার চড়ুইপাখিদের কথা

মনে পড়ে।যারা শ্রমসিদ্ধ জীবনকে আরাধ্য মনে করে—

যারা বাতাবি-লেবুর ঘ্রাণ নিতে নিতে যাপণ করে বর্ষার

বিধুর গল্পরাত; ইচ্ছে করে তাদের সাথে আমিও পুরো

মধ্যরাত জুড়ে গল্প করি। অথবা প্রাণখুলে গেয়ে শুনাই

প্রাচীন পু্ঁথির পয়ার,বাজাই মন্দিরা নৃত্যের তালে তালে।

যারা খড়কুটো কুড়িয়ে নিজের ডেরা বানায়; তাদের

কথাই আমি লিখে রেখেছি বিবাগী নদীর ঢেউয়ে।

এই ঢেউ যখন জোয়ার হয়ে দুকূল ভাসায়—

তখন যৌবনা পৃথিবীর প্রসবদৃশ্যই আমাকে ঘোরবিদ্ধ

করে রাখে। প্রশ্ন করতে চাই, কে কার নিয়ামক ছিল

আদিকালে! কে আগে আহরণ করেছিল মুঠো মুঠো

মাটি! আকাশ- নাকি ঝড়; আগুন নাকি সমুদ্রের বেদনা!

অচেনা অন্বয়

তুমি এটা ভাবতেই পারো, তুমি সবকিছু জানো

অথবা ভাবতেই পারো; আসলে কিছুই জানো না!

কারা বেঁচেছিল গুহায়,কারা বেঁচে ছিল প্রান্তরে

কারা মানুষের পক্ষ নিয়ে গ্রহে— করেছিল লেনাদেনা!

আর যারা বেহিসেবি;মূলত যারা কিছুই তোয়াক্কা করে’নি

অংকের যোগ বিয়োগ।পূরণ ভাগের এত কাটাকুটি

কিংবা স্বপ্নের গরাদে লুটিয়ে পড়তে পড়তে খুব একাকি

এই পথে হেঁটে যেতে যেতে, ভেঙেছিল জুটি।

ভাঙনের ইতিহাসে যে পাতা আজও আছে খালি

সেই পৃষ্ঠার রেখাগুলো খালি চোখে যে পড়তে পারে

আমি জানি; তার কাছে এই বিশ্ব তুচ্ছ খুব

যে পথিক ছায়া খুঁজে অন্বয়ের— বিজলীপুর ঘিরে।

গুহাপাঠের সপ্তমপর্ব

চূড়ার দিকে তাকাবার সাহস সকলের থাকে না।

অথবা গুহার দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করতে পারে না

নিজের নাম,সাকিন,জন্মসাল।বলতে পারে না এই গুহায়

এর আগে আলো ছিল! এখন অন্ধকার দেখে যারা

অভ্যস্ত— তারা জানে না তারা’র প্রকৃত জন্মবিধান।

আমি পাঠের ভেতরেই নিজেকে আবিষ্কার করেছি

গুহাজীবনের পূর্বজীবনে। আর সন্ধি করেছি উড়ে যাওয়া

নবীন মেঘের সাথে। কুমারী কুসুমের চেয়ে আর কে

বেশি চেনে এই বরণের কাহিনি,এই উড়ন্ত মেঘের ঘূর্ণন!

দাঁড়াও, রোদেশ্বর

অধ্যাদেশ বার বার’ই জারি হয় প্রাণের কল্যাণে

যারা সংবিধান রচয়িতা; তারা বরাবরই এমন কিছু

অধ্যায় লুকিয়ে রেখেই নির্মাণ করেন একবিংশ পরিচ্ছেদ;

যাতে মানুষ মানুষের প্রতিপক্ষ হয়! অন্যায়গুলো যাতে

জমে থাকতে পারে বড় বড় দালানের ছাদে।আর ভূমিহীন

কৃষকের সন্তান আঁধারকেই মনে করতে পারে তার ভবিষ্যত!

আমি এর আগেও এই পৃথিবীর বহু মানুষকে থামতে বলেছি।

এই প্রজন্মকে শিখিয়েছি— থামিয়ে দেয়ার কৌশল।

শরত যেমন বর্ষাকে থামতে বলে,

বসন্ত যেমন বন্ধ করে দেয় শীতের দরজা—

ঠিক সেভাবেই, সকল বৈরি-বিষাদকে খণ্ডন করে খুব

জোর গলায় বলেছি— দাঁড়াও রোদেশ্বর

যারা খুব ক্লান্তি বুকে নিয়ে বসে পড়েছে,

তাদেরও হাত ধরে তুলো ।

৬ thoughts on “কবিতা।। ফকির ইলিয়াস।। কাব্যশীলন কবিতা উৎসব সংখ্যা

  • Shoumik shuddah

    দাঁড়াও রোদেশ্বর, কবিতাটি বেশি ভালো
    লেগেছে।

    Reply
    • Faqir Elias

      অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা 🌷🥀🌺

      Reply
  • Ripon Drubo

    নতুন ভাবনায় লেখা কবিতাগুলো মন ছুঁয়ে গেল!

    Reply
    • Faqir Elias

      অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা
      🌹🍂🌷

      Reply
  • Ornob Oyanta

    কবি ফকির ইলিয়াসের কবিতায় নিজস্বতা একান্তই তাঁর।
    এই সময়ের কবিদের মাঝে থেকে,তাঁকে আলাদা করা
    যায় খুবই সহজে।
    :::::::::
    ”আমি পাঠের ভেতরেই নিজেকে আবিষ্কার করেছি
    গুহাজীবনের পূর্বজীবনে।”
    :::::::::::::
    ”আর যারা বেহিসেবি;মূলত যারা কিছুই তোয়াক্কা করে’নি
    অংকের যোগ বিয়োগ।পূরণ ভাগের এত কাটাকুটি
    কিংবা স্বপ্নের গরাদে লুটিয়ে পড়তে পড়তে খুব একাকি
    এই পথে হেঁটে যেতে যেতে, ভেঙেছিল জুটি।”
    :::::::::::::::::
    ”জোর গলায় বলেছি— দাঁড়াও রোদেশ্বর
    যারা খুব ক্লান্তি বুকে নিয়ে বসে পড়েছে,
    তাদেরও হাত ধরে তুলো ।”
    “””””””””””””””””””
    পড়লেই বুঝা যায়- কত শক্তি নিয়ে কবিতা লিখেন এই কবি।
    অভিনন্দন

    Reply
    • Faqir Elias

      বিনীত কৃতজ্ঞতা, প্রিয় অর্নব 🥀
      অজস্র প্রীতি নিন 🕊️🌹

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *