কবিতাবিশেষ সংখ্যা

কবিতা।। শিউল মনজুর।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

শ্যামল বাংলার ছবি

উঠোনের সাথে বারান্দার একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং বারান্দার
সাথে রয়েছে গৃহ অভ্যন্তরের মধুর সম্পর্ক- ঘর থেকে বেরিয়ে
বারান্দায় দাঁড়ালে দেখে নেয়া যায় উঠোনের নান্দনিক মুগ্ধতা; ফুল
পাখিদের হইচই, শিশুদের নিত্যক্রীড়া উৎসব, মেঘ-বৃষ্টি-ঝড়ের
খেলা, অনুভব করে নেয়া যায় দূরের হিমেল হাওয়া, এমন কী
আড্ডায় আড্ডায় ভাগাভাগি করে নেয়া যায় প্রতিবেশিদের দুঃখকষ্ট
আনন্দের ঘনিষ্ট সময় এবং বারান্দায় বসে বসেই দেখে নেয়া যায়
ঘরের নানাবিধ ক্রীয়াকলাপ আবার এই বারান্দা পেরিয়ে উঠোনে
দাঁড়ালে স্বজনদের দরজা জানালা দেখা যায়, দেখা যায় প্রিয়জনদের
মুখ, দেখা যায় উদার আকাশ, উঠোনে দাঁড়িয়ে হাক দিলেই ছুটে
আসে স্বজন ও বন্ধুরা- কী যে অপূর্ব সম্পর্কের সূত্রতা, আবার হাওয়া
ও বাতাসের মহড়ায় যে আগুন জ¦লে উঠে গ্রামে ও গঞ্জে তা সদর
রাস্তায় উঠে যাবার আগেই উঠোন বৃষ্টিতেই নিভে যায় দ্রুত- সম্পর্কের
অনাবিল নির্মলতায়, মানবিকতায়, ভালোবাসায়
উঠোন-বারান্দা-গৃহ অভ্যন্তর একই সুঁতোয় বাঁধা শ্যামল বাংলার
চিরায়ত ছবি ছড়িয়ে দেয় প্রাণে প্রাণে সম্পর্ক

উচ্চতা

প্রেমিক-প্রেমিকা ও বাংলা একাডেমির চড়–ই
ধুলোবালি উড়ছে বইমেলায়। উড়ছে বাতাসে কোভিডকালের
জীবাণু। ঘুরছে প্রেমিক-প্রেমিকা, ঘুরছে বুদ্ধিজীবি-অন্নজীবি, ঘুরছে
পাঠশালার শিক্ষক, ঘুরছে অধ্যাপক, ঘুরছে মাস্তান, ঘুরছে সুদখোরঘুষখোর
আর এতোসবের ভিতরে ধুলোবালিমাখা বাতাসে শিসকেটে
উড়ছে বাংলা একাডেমির চড়–ই।
নবীণ কবিও এসেছে বইমেলায়। নিয়ে এসেছে কাব্যলক্ষী
প্রেমিকাকে। মেলায় আসা নতুন বই প্রেমিকার হাতে তুলে দেবে
বলে। আর এক সুযোগে যদি কোনো চ্যানেল টেলিভিশনে একবার
বই নিয়ে কিছু বলা যায়, নিজের মুখচ্ছবি দেখানো যায়, তাহলে তো
জমে উঠবে গল্প গুজবের নতুন মৌসুমী!
অবশ্য মেলায় পকেটমারও এসেছে। চোর মাতাল ও ধোঁকাবাজরাও
এসেছে। এসেছে সামাজিক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী। কারো
কারো বুকপকেটে আছে গোলাপ ও রুমাল। আবার কারো কারো
বুক পকেটে লুকিয়ে আছে নিষিদ্ধ প্রেমের গোপন গল্প।
ওদিকে বইমেলা পেরিয়ে একটু দূরে বসন্তের হালকা বাতাসে পালক
উড়িয়ে দিয়ে ভাসমান গৃহপালিত পাখিগুলো খুলে দিয়েছে তাদের
যৌবনালক্ষী তরঙ্গিত নদীর বাঁকানো ঢেউ। কোনো কোনো
বইপ্রেমিক অথবা তরুণ পাঠকও সেই অবারিত দৃশ্য দেখার জন্য
এদিকে আসে, আসতেই পারে।
মেলায় বইপোকা ইশকুল বালিকারাও এসেছে। তাদের হাতে হাতে
সায়েন্সফিকশন। তারাও স্বপ্নদেখে এলিয়ন রাজ্য পেরিয়ে আরও দূরে
কি আছে জেনে নিতে। ভূতসমগ্র কিংবা রূপকথার গল্প নিয়ে মেলায়
ঘুরছে শিশু কিশোর, এমন দৃশ্য দেখে বাবামার দু’চোখে আজও অশ্রু
ঝরে আনন্দের।
মেলার ধুলোবালি পেরিয়ে লেখক-লেখিকা অদূরে চায়ের স্টলে গল্পে
আড্ডায় খুঁজে নিচ্ছে লেখালেখির সঞ্জবনী শক্তি। কোনো কোনো
প্রকাশক ফাঁদ পেতে মেলাতেই তুলে নিতে চায় সর্বোচ্চ মুনাফা।
সংস্করণের ফাঁদ পেতে প্রেসেই কাটছে নির্ঘুম রাত।
ধুলোবালি উড়ছে মেলায়। উড়ছে মেলায় কাঁচাবইয়ের দারুণ সুগন্ধি।
রঙবেরঙের মলাটবন্ধী বই খোলে দিয়েছে মন মননের দরোজা।
বইমেলার স্বপ্ন ও ভালোবাসা নিয়ে আগামি দিনের জ্যোর্তিময় কবি
ঘুরছেন, তার একহাতে ঝলমলে নতুন মলাটের বই আর অন্যহাতে
ফাগুনরঙের রৌদ্রকরোজ্জ্বল প্রেমিকা।

বনবিড়াল

পাশের বাড়ির মুনিয়াপাখি যখন William Wordsworth কিংবা Lord Byron পাঠ করতো তখন আমি মুগ্ধ শ্রোতা, মনে
হতো কোথাও বুঝি টুপটাপ জল পড়ছে অথবা কখনো সখনো মনে
হতো টিনের চালে বোধকরি বৃষ্টি হচ্ছে অথবা সে যদি আবিদ
আজাদের ঘাসের ঘটনা নিয়ে নিবিড় আচ্ছন্নতায় মগ্ন হয়ে যেতো
মনে হতো গভীর কুয়াশার ভেতর দিয়ে কেউ যেনো কাঠালিচাঁপার
গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে বিলের জলে কম্পমান লাজুক রঙের লাল শাপলাটি
হাসছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে
একদিন পার্শবর্তী বন থেকে উঠে আসা একটি বনবিড়াল, তার সেই
লাবণ্যময়ী কাব্যশরীরের শিরোনাম, বিষয়বস্তু ও উপসংহার ধারালো
দাত দিয়ে ঠুকরাতে ঠুকরাতে রক্তাক্ত করে ফেললে সে আরো বেশি
লাজুক রঙে লাল হয়ে ওঠে সারা বাংলাদেশে আর আমি যখন তাকে
আবিষ্কার করলাম ততক্ষণে পুলিশ ফোর্সকে ফাঁকি দিয়ে সটকে
পড়েছে বন থেকে আসা বনবিড়াল
একদল গবেষণাকর্মী মুনিয়াপাখির রক্তাক্ত শরীরের ছবি তুলতে
আসলে আবারো আবিষ্কার করি, পার্শবর্তী বন থেকে উঠে আসা
বনবিড়াল নয়, আমাদের পাশেই বনবিড়ালের মতো সর্ন্তপণে কেউ
যেনো ঘুরছে, অদূরে, চোখের অদৃশ্য আড়ালে…

তিনি যা বললেন

শিরি-ফরহাদ ক্লাসের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক বললেন,
সাহসে লক্ষী বলে একটা কথা আছে,
আবার ট্রাই করো, হয়ে যাবো…
বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী না হয়ে শক্তদড়ি নিয়ে নেমে পড়ো –
গাছতলায়ও কুড়েঘর আছে, আবারো চেষ্টা করো –
বুকের আশায় বেঁধে রাখো গন্তব্যের ছবি – হয়ে যাবে,
গাড়ি কিংবা সাম্পান নয়, পায়ে হাঁটা পথেও পৌঁছানো যায়

  • ধীরে ধীরে লক্ষ্যের ঠিকানায়।
    আমি হারানো গল্পের গান গেয়ে গেয়ে বলি,
    লাইলী কিংবা শিরি সে তো আজ গোয়ালিনী –
    দই ও মিষ্টি বিক্রেতার সাথে বেশ আছে নতুন দ্বীপে –
    চারিপাশে তার খেলা করে মৌমাছি ও লাল পিঁপড়ে।
    বাঁশির সুরে ঘুম ভাঙে না
    দুধের নহরে সাঁতার কেটে নিদ্রা যায় –
    ডুবে যাওয়া নৌকার মাঝিকে কে না ভয় পায়…
    বিশেষজ্ঞ শিক্ষক মহোদয় বললেন,
    সম্পর্কের ভাঁজে ভাঁজে নতুন সম্পর্কের ইতিহাস থাকে,
    সময়টা হাইব্রীড, করোনা, দূর্ণীতি এবং নিঁখোজেরএখনো কতো শিরি ও লাইলীরা ভুল ট্রেনে উঠে
    ভুল স্টেশনে নেমে পড়ে – অথচ তারা কখনো ফিরতি ট্রেনে
    ফিরেও আসে না পুরনো পথের রেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে…
    গ্লোবালাইজেশনের যুগে –
    এখানেই মজনু ও ফরহাদরা পিছিয়ে আছে…

শাড়ি ও ঘাসফড়িঙের জীবন

একদিন তুমি শাড়ি পরতে –
সেই শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে খেলতো নানারঙের তরঙ্গমেলা,
কখনো বা নদীর প্রবহমান মিষ্টি খেলা
কী যে ভাল্ লাগতো, কী যে ভাল্ লাগতো আমার
একদিন তুমি সালোয়ার কামিজ পরতে –
ছোট্ট বুকে জড়িয়ে নিতে ওড়না, কতোরঙের যে ওড়না,
সেইসব ওড়নার ভাজে ভাজে উড়তো নানারঙের প্রজাপতি,
উড়তো টিয়া চড়–ই টুনটুনি –
জমিনের খড়কুটো নিয়ে তারা করতো টানাটানি
কী যে ভাল্ লাগতো, কী যে ভাল্ লাগতো আমার
একদিন তোমার চুলের ঝুটিতে নানারঙের ফিতে ভাসতো
শেফালি শিউলিদের ভোর হাসতো
চোখের ভেতরে স্বপ্নের মুগ্ধতা কেউ যেনো ছড়িয়ে দিতো
একদিন তোমার করবী খোঁপায় বেলিফু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *