কবিতা।। মামুন মুস্তাফার।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
এই বৃষ্টি কালবোশেখি নয়
এই বৃষ্টি কালবোশেখি নয়,
তবু ভিজিয়ে দিচ্ছে মায়ের কবর
গোরখোদকের গান শুনি তার শিথানে,
বসন্তের কোকিল উড়ে যায় ডালে ডালে।
নিদ্রিত চোখের চাহনি দিয়ে ঝরে পড়ে
অনুস্মৃতি, কবেকার ধুলোর সংসার-
আর কিছু প্রজাপতি মন; তবু থেকে
যায় মাটিতে পায়ের ছাপ, বাতাসে
শরীরী-ছায়া। এভাবেই টিকে থাকে
পৃথিবীতে মানুষের প্রেম।
আজ চালুনিতে ছেকে নিয়ে পড়ছি অতীত,
এই ভালো। সময়কে পিঁড়ি দেই।
‘এরপর সাদা গল্প। জীবিকানিষ্ঠ বাণিজ্যপাড়া’
কবরের বাঁশ কাটা সারা হলে
শুয়ে নেব বাতিনেভা রাজপ্রাসাদে
মায়ের জঠর তখন চিনে যাব ঠিকই
প্রত্ন-ঘুঙুরের রহস্যাবৃত নাচে-
তখনও কি বৃষ্টি হবে শহরে?
এই বৃষ্টি কালবোশেখি নয়
ইতিহাসের পথ বেয়ে নেমে যাওয়া
মায়ের কাফনের সোঁদাগন্ধ।
নিখোঁজ পিতার কবর
এভাবেই কেটে গেছে,
হলুদ চাদরের নিচে অনুভূত হলো
চলৎশক্তিহীন এক নিষ্প্রাণ মনোভূমি।
কে সে? সে কে!
পদ্মার পাড়ে বেজেছে শুধু বিজন বেহালা
অগুনতি মানুষের ভিড়ে
তিনি জাগেননি আর কোনো ছলনায়!
একে একে বিচ্ছিন্ন সব বোধির জগত
দারুণ সব কথার রাজনীতি-
সম্পর্কহীন চুমু গড়িয়ে পড়ে
নিখোঁজ পিতার কবরের কাছে!
ব্যাকরণসিদ্ধ অনুভূতি ঘিরে থাকে এই শরীর
কে তুমি? তুমি কে!
ভাবলেশহীন মাটির গহ্বরে
নেমে গেছেন এক জীবনের বাতিঘর।
নিগূঢ় মন্ত্রের শেষ শ্লোক।
ধুলো
তোমার মৃত্যুর পর
বাড়িটা দেখ শূন্যতায় ভাসছে।
তুমি নেমে গেছ
কবরের সবুজ মায়াবি দূর্বা ঘেঁষে।
আমরা যারা তোমার উত্তরাধিকার
তারা স্মৃতির গোলচাঁদে পরলোক দেখি;
দেখি, তোমার ভাঙা সংসার-
তালাবদ্ধ কুঠুরিতে তোমার দাম্পত্য বন্দি!
ক্লান্ত বাড়িটা শুধু এক হারানো সহিসের গল্প
ওখানে খণ্ডিত কতগুলো বিশেষণ
কতগুলো আবেগের ঝাড়বাতি,
চারপাশে ঝুলে আছে কিছু ঘন অন্ধকার।
তবু সদর দরোজা ঠেলে ঢুকে যায়
প্রতিদিন নিঃসঙ্গ অষ্টপ্রহর।
এ বাড়ির কথনে জেগে থাকে
অপেক্ষা আর উপেক্ষার ধুলো।
আমি তো বাড়ি ফিরছি
আমি তো বাড়ি ফিরছি
গাঙ্গেয় বদ্বীপ পেরিয়ে
তোমার সাঁকো ধরেছি
ওই বুকে মুখ লুকোতেই
মস্ত বড় জাহাজের ভেঁপু।
আমি তো বাড়ি ফিরছি
মহাসড়কে টোল দিয়ে
গড়াই সেতুর উত্তরে
একাকী এক কফিনযাত্রা
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার অভিসার।
আমি তো বাড়ি ফিরছি
উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রিজনভ্যান
স্নিগ্ধ হাওয়ার পালকে গাঁথে
আলোআঁধারের এই পথ
গুটিয়ে নেয় ত্রস্ত কোলাহল।
প্রত্যক্ষ করে করুণ চোখে
এক নির্জন কুকুর- এই বাড়ি ফেরা!
পায়ের জড়তা ভাঙে মথুঘাস
মৃত জোনাকিরা আলো জ্বালে
অন্ধ বাড়ির কার্নিশে কার্নিশে;
আমি তো বাড়ি ফিরছি
দূরে জাগে শুধু হিম কবরের মায়া।