গুচ্ছ কবিতা কাজী আনিসুল হক হীরা
সান্ত্বনা
নিত্য ভোরে একটি পাখি কিচিরমিচির ডাকত,
রাত-দুপুরে সেই পাখি কিছুর আশায় থাকতো।
তিড়িংবিড়িং ফড়িঙ হয়ে ফুলের মত হাসতো,
আপন গুনে সবার মনে স্বপ্ন ছবি আঁকত…
হঠাৎ করে সোনা পাখি বলছে না আর কথা,
অভিমান হয়েছে ভীষণ, তাই কি নীরবতা?
হারিয়ে গেলো জাদু পাখি, উড়াল দিলো দুরে
মনের খাঁচা রইলো পরে, খুঁজছি কেবল তারে।
মসজিদে আযান শুনি ডাকে মোয়াজ্জেম
রাত যায়-দিন যায়, আসে না ফিরে ক্যান?
ডাকার মত ডাকলে না কি সারা দেয় রব।
পাখি ও ডাকত ভীষণ; তবুও করলো শব!
মোহাম্মদ নামে পাখি মুক্তি পেলো যন্ত্রণা_
স্মৃতি খাতায় ব্যর্থ প্রীতি মিথ্যা কিছু সান্ত্বনা।
কষ্ট ভোলার মন্ত্র
এই মেয়ে তুমি বাসবে ভালো?
হঠাৎ করে পোড়া বুকে ছুঁয়েছে আলো।
আঁধারঘন জীবনপটে জোনাক হাসে
নতুন চাঁদ করে খেলা বাঁকা ঠোঁটে।
ভাবনা ভুলে স্বপ্ন আঁকি নীলাকাশে
বোঁচা নাকে বিন্দু বিন্দু শিশির জটে।
তিলক ফোঁটা রয়েছে আঁকা বাম কপালে
ইচ্ছে জাগে আপন হতে গোপন রাতে।
চিবুক তুলে লজ্জা ভেঙে চুমু খেতে
ষোড়শী দেহ মোহনি বাঁকে চাই হারাতে।
এই মেয়ে তুমি হবে আগুন ?
অসময়ে বৃষ্টিজল কদম ফাগুন।
জানো তুমি আড় চাহনি করে মাতাল
হাসির রেশে তারা ঝরে বাতাস উতাল
কষ্ট ভোলার মন্ত্র মেয়ে ভালোবাসা।
সাদা-কালো
সময় ভালোবাসা বিমুখ;
প্রকাশ্যে খুন হয় প্রেমিক
ভয়ে মুখ ফিরিয়েছে ললনা
ব্যথায় গুমরে ওঠে বাম বুুক।
আহত হৃদয় খুঁজে ফেরে আশ্রয়
ক্রমাগত ভারি হয় স্ব-জন হারানো মিছিল।
আদি থেকে অন্তঃ জমে থাকে শূন্যতা
কথা রাখে না প্রকৃতি, অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়তি
বৃষ্টিহীন শ্রাবণ আকাশ, নিষ্প্রাণ বাতাস,
প্রেমহীন মেঘরঙ কেবল-ই সাদা-কালো।
সঞ্চিত শূন্যতা
শূন্য থেকে শুরু অঙ্ক
গর্ভ থেকে জীবন।
সময় সাক্ষী বেড়েওঠা
বৃত্তে বন্দি মরণ।
দিন আলো সূর্য একা
নিশি আঁধার চাঁদ।
সবকিছু মন্দ-ভালো
মাঁয়া মানে-ই ফাঁদ।
স্বপ্ন দেখা শিশুসম
মিথ্যা বাঁধন আঁকা।
প্রেম খুঁজে ক্লান্ত দেহ
পূজা’র ঢালা ফাঁকা।
জয় বাংলা
আকাশ থেকে এনেছি নীল
গোধূলি থেকে লাল
প্রকৃতি থেকে নিয়ে সবুজ
বুনছি স্বপ্ন জাল…
সূর্য থেকে নিয়েছি তেজ
জোছনা থেকে আলো
পূর্ণিমা থেকে এনেছি প্রেম
আঁধার বাসি ভালো
মায়ের মুখে শুনেছি বাংলা
ভাইয়ের রক্ত ভাষা
বাবার চোখে দেখেছি মুক্তি
বোনের মেটে নি আশা
ঢেউ’র কাছে চেয়েছি সুর
পাখি দিলো গান
মাটি শেখায় মানুষ হতে
বাঁচার আহবান
শিশুর কাছে পেয়েছি চেতনা
প্রিয়া দিয়েছে দ্রোহ।
কবিতার নাম ‘জয় বাংলা’
বাংলাদেশের মোহ।