শিশুতোষগল্প।। টুইট টুইট।। সুলতানা লাবু

তাসিন বারান্দায় বসে খেলছে। বারান্দায় খেলা ছাড়া উপায় নেই। লকডাউনের জন্য বন্ধুদের সাথে নিচে খেলা বন্ধ। তাই খেলনাগুলোই এখন ওর বন্ধু। তবে এখন খেলায় তেমন মনযোগ নেই। আনমনে হয়ে বসে থাকে খেলনাগুলো নিয়ে।

হঠাৎ!

টুইট টুইট। কলিংবেল বাজল। বারান্দা থেকে ছুটে মায়ের কাছে এল তাসিন।

‘মা কলিং বেল বাজে।’

‘তুমি ভুল শুনেছ তাসিন। বেল বাজেনি। এখন কেউ কারো বাসায় যায় না। করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন। তাই সবাই এখন বাসায় থাকে। তুমিতো এটা জানই।’

‘না মা আমি ঠিক শুনেছি। একবার এসে দেখ না। বাবাও তো হতে পারে।’

‘আমি জানি তোমার বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে। তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে। ঠিক আছে, চলো, তোমাকে দেখাই।’

তাসিনকে কোলে তুলে লুকিং গ্লাস দেখলেন মা।

তারপর কোল থেকে নামিয়ে মা বললেন, ‘কেউ আছে?’

মলিন মুখে তাসিন বলল, ‘কেউ নেই।’

‘আসলে কলি বেল বাজেইনি। আর তোমার বাবাও আসেনি।’

তাসিন বলল, ‘লকডাউনে সবাই বাসায়। শুধু আমার বাবা বাসায় নেই। সবার অফিস বন্ধ। আর আমার বাবা অফিসে। কেন?’

‘তোমার বাবা তো সবার চেয়ে আলাদা। কত মানুষ বিপদে আছে। ওদের কত রকম সাহায্য দরকার। তাদের সাহায্য করতে হবে না? তোমার বাবা মানুষের সেবা করেন। দেশের সেবা করেন। এটা তোমার ভালো লাগে না?’

‘লাগে তো। খুব ভালো লাগে। আমি সবাই কে বলি, আমার বাবা পুলিশ। বাবা সব ভালো মানুষকে সাহায্য করে। খারাপ মানুষকে বকা দেয়। ভালোরা বাবাকে খুব ভালবাসে। আর খারাপরা ভয় পায়। আমি সব বুঝি। তবুও…’

‘তবুও কী?’

‘বাবাকে যে দেখতে ইচ্ছে করে। বাবার কোলে উঠতে ইচ্ছে করে।’ বলেই চলে গেল বারান্দায়। তারপর আবার খেলনাগুলো নিয়ে আবার নাড়াচাড়া শুরু করল।

কিছুক্ষণ পর আবার…

টুইট টুইট। বেল বাজছে। দুহাতে কান দুটো চেপে ধরল তাসিন। আর মনে মনে বলল, বেল বাজেনি। বাবা আসেনি। তাসিন ভুল শুনছে। ভুল। ভুল।

আবার টুইট টুইট। কলিংবেল বেজেই চলেছে।

তাহলে সত্যিই বেল বাজছে। ওই তো মা। দরজার দিকে ছুটছে।

মায়ের পেছন পেছন ছুটে এল তাসিনও।

মা দরজাটা খুলতেই….।

খুশিতে লাফিয়ে উঠল তাসিন। চিৎকার করে বলল, ‘বাবা!’

মা বললেন, ‘তাসিন বাবার কাছে যেও না।’

বাবা বললেন, ‘তাসিন সব জানে। করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে। কেউ বাইরে থেকে এলে তার কাছে যেতে নেই। যে কারো মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই আগে দরকার পরিষ্কার হওয়া। তাই না তাসিন?’

‘ঠিক বলেছ বাবা। আমি এসব জানি। তুমি আগে সাবান দিয়ে গোসল করে আস। তারপর তোমার কোলে উঠব।’

দরজার বাইরে দাড়িয়েই কথাগুলো বলছিলেন বাবা। হাতে একটা প্যাকেট। মায়ের দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন। আর বললেন, ‘ওষুধগুলো রাখ। আমি ভেতরে যাব না। এখনই অফিসে যেতে হবে।’

ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকাল তাসিন। আর বলল, ‘কবে আসবে আমার কাছে। কবে আমাকে আদর করবে। কবে কাঁধে চড়াবে।’

বাবা বললেন, ‘আর কয়েকটা দিন সাবধানে থাকলেই হবে। সব জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন আমরা আবার…’

বলেই চলে গেলেন বাবা।

তাসিন ছুটল বারান্দার দিকে। বাবাকে আরো একটু দেখা যাবে। বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে থাকল। যতক্ষণ পর্যন্ত বাবাকে দেখা গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *