গুচ্ছকবিতা // রিপন সেন গুপ্ত
সেকাল একালের “রানার”
সুখ দুঃখের খবর বহনের, কেউ রাখে না খোঁজ,
“সুকান্ত বাবু” জানবে তুমি, রানার ছুটে না রোজ।
পরাধীনতা আর ব্রিটিশ শাসনে, বিশ্রামের সময় পাই?
স্বাধীন দেশে শিথিল নিয়ম, অফিসে ঘুমিয়ে কাটায়।
কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, লন্ঠন, বল্লম, নেইকো রাতের ভয়,
এখন রানার দৌড়ে ছুটে না, গাড়ি নিয়ে বের হয়।
অভাব দারিদ্র্য দুঃখী জীবন, সঙ্গিনী না খেয়ে মরে,
আজ রানার বেতন পেয়ে, গাড়ি কিনে বাড়ি করে,
হাসি আনন্দ, জন্ম মৃত্যু, খামের চিঠি যেত দূরদেশে,
দেরিতে প্রাপ্তি এখন অতীত, ইন্টারনেট এক নিমিষে।
বিলুপ্ত ‘রানার’, ডাকপোষ্ট বক্স, নেইকো হাতের চিঠি,
ম্যাসেঞ্জার, ফেইজবুক, মেইলে জানাই আজ প্রিয়-ইতি।
রক্ষক
ঈশ্বরের পরে যার অবদান, রোগী বাচাতে ভরসা,
পরামর্শে তার রোগ সাড়ে, সেবা ধর্ম মহৎ পেশা।
গড়ে উঠতে কঠোর পরিশ্রম, পরিবারের সার্থত্যাগ,
মূলমন্ত্র বিনামূল্য সেবা, চাই না টাকা কড়ির ব্যাগ।
গ্রাম পাড়ায় রোগী খুঁজতে, রোদ বৃষ্টিতে ছুটে যায়।
ব্যস্ত শহরে সাক্ষাৎ পেতে, দীর্ঘ লাইন রোগীর হায়!
ছুটি বিনা, সারা দিনরাত, অপরের চিকিৎসাতে সুখ,
সময় অভাব নিজ পরিবারে, সেবা পাই না প্রিয়মুখ।
চিকিৎসা দিয়ে মরলে রোগী, সব দায়ভার কি তার?
উপকারে ফল মারধর হলে, পেশা টিকবে না আর।
সৎ ব্যাক্তির লোভহীন সেবা, রক্ষক ভুমিকায় লড়ে,
অসৎ ভক্ষক ব্যবসা গড়ে, রোগীকে হয়রানি করে।
তারাও মানুষ
বাচ্চাদের মত শরীর গঠন
দোষ কি মুখের আকার?
কর্ম অক্ষম, অশিক্ষিত বলে
ডাকতে হবে জোকার?
চেহারা আঁকে মনের খুশিতে
বিনোদনে হাসানো নেশা,
খেলার সাথী বাঘ, সিংহ
সার্কাস দেখানোয় পেশা।
কোথায় বাড়ি? কে পরিবার?
লুকোয় সমাজ আড়ালে,
অভাব, খিদে, জরাজীর্নতায়
দুঃখে জীবন চলে।
হাসি, ঠাট্টা, ঘৃনার পাত্র নয়
তারাও পৃথিবীর মানুষ,
লোক সমাজে বাঁচার আকুতি
বদলে যাক সমাজের হুশ।
জীবনের প্রান
এপার ওপার ভেঙ্গে গড়ে, বয়ে চলার সীমা নাই,
পৃথিবীর তিন ভাগ যার স্থান, সকল জীবন বাঁচায়।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর ব্রহ্মপুত্র বিশাল চে্না,
সনেট কবিতা কপোতাক্ষ, তিতাস উপন্যাসে জানা।
নেইকো বাড়ি, নেইকো দেশ, জোয়ার ভাটায় দুলে,
জল প্রানীর ঘর, জেলের জীবিকা, সাঁতার খেলা চলে।
প্রাচীন পারাপারে কলাগাছ ভেলা, হাত দাঁড়ের নৌকো,
আধুনিক ফেরী, যান্ত্রিক নৌযান, পিচ ঢালা ব্রীজ সাঁকো।
কক্সবাজার আর অ্য্যামাজন খ্যাত, বিশ্ব পাঁচ নামে,
পাড়ে- হাঁটাহাটি, পর্যটন কেন্দ্র, ফেরী জাহাজ থামে।
অতি বৃষ্টিতে বন্যার খেলা, গভীর ভূমিকম্পে সুনামী,
মাঝে- স্ট্যাচু, দেশের সীমান্ত, হোটেল নামি-দামী।
দৈনন্দিন কাজে, পয়নিস্কাশনে, তেষ্টা মিটতে অবদান,
মানুষের বিষাক্ত রাসায়নিকে, রুপ বদলে আজ নিষ্প্রান।
ঘুর্নিঝড় আমফান
মহাপ্রলয়ের ঝড় আম্ফান,
প্রবল বাতাসের গতি,
বাড়ি, বাঁধ ভাঙলো, গাছ পড়লো,
অসহায়দের ভাঙ্গা নিয়তি।
বিদ্যুৎ ছিন্ন, কল পরিষেবা বন্ধ,
নেই ইন্টারনেট ব্যাবস্থা,
নিয়ন্ত্রণে, ধীরগতি সেবায়,
জনজীবন বেগতিক অবস্থা।
ছিন্নমূল হারিয়েছে শেষ সম্বল,
চাইছে সাহায্যের হাত,
ক্ষুধার্ত শিশুকে মন ভুলিয়ে,
আশ্রয় কেন্দ্রে কাটছে রাত।
উপার্জন নেই, ভিটে ঘর নেই,
দরিদ্র, অভাবের জ্বালা,
উচ্চ পর্যবেক্ষণে নানান আভাস,
ত্রানে লুকোচরি খেলা।
চলছে মহামারী করোনা ভয়,
বাড়ি বাইরে চলা দায়,
দরিদ্রদের ভাগ্যে আম্ফান এলো.
মরার উপর খাড়ার ঘায়।
সুবিধা বঞ্চিত শিশু
সকাল-সন্ধ্যা, বৃষ্টি বা রৌদে
এদিক ওদিক রাস্তার ধারে,
স্নেহ মায়াহীন, অনাথ জীবন
টাকার মালিক খুঁজে ফিরে।
আঘাত, অপমান নিত্য সঙ্গী,
তীব্র যন্ত্রনায় কাঁদতে মানা,
বিবর্ণ চেহারায়, জীর্ণ শরীর
টাকা কড়িতে জুটে দানা।
রাস্তা ঠিকানা, নেইকো ঘর
জ্বলেনি শিক্ষার আলো,
পরিবার রক্ষায় ছুঁটে তারা
চোখে মুখে ছায়া কালো।
পেটের জ্বালায় দিন মজুরী
মালী, হকার, ইট ভাটায়,
বিষ কারখা্নায় ঝুঁকি কর্মী
ফুল, বেলুন বেচে রাস্তায়।
সাধ জাগে খেলতে খেতে
মেলা, পার্কে যেতে বাধা,
স্বচ্চল শিশুর খেলা, বায়না
অশ্রু চোখে চেয়ে থাকা।স
তারাও চায় অন্যদের মত
হাসি খুশির শৈশব দিন,
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে
জীবন গড়ুক আগামী দিন।
ধন্যবাদ আপনাকে