কবিতা

গুচ্ছ কবিতা -মনদীপ ঘরাই

রসায়ন

হঠাৎ মনে এলো রসায়ন।
দুই পত্রের উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন।
রস যোগ আয়ন;সন্ধি-বিচ্ছেদের রসায়ন।
বইয়ের পাতার খটমটে বিক্রিয়ার বাইরেও রসায়ন!
লাফিং গ্যাসের হাসি।
সোডিয়াম ক্লোরাইডের কান্না।
হাতের কাঁকনে সোনালী স্বপ্নের নাম অরাম।
যে হিরে বসানো আংটি তোমায় কিনে দিতে পারি নি,
তার অন্তরে আছে কুচকুচে কালো কার্বনের দুঃখ।
আসলে সবই রসায়ন।
আহা, রসায়ন!এক সময় তোমার ভয়ে কেঁপেছি অনেক।
এখন তুমি আর আমার কেউ নও।

একটু আলো দাও

একটা গভীর রাত চাই।
ঘাসের বিছানায় শুয়ে আকাশ দেখবার।
অথবা কিছুই না দেখবার।
অন্ধকারে ঘাসের সবুজই চোখে পড়ে না!
আবার আকাশ দেখা!
তবু আমি শিশুর মতো 
মাথার ওপর ছাদ খুঁজি;
কিংবা খুঁজি;
ছাদের ওপর দুর্বল আলোর একটা চাঁদ।
সামান্য একটু আলো পেলেই 
ঘাসের বিছানাটা বেচে দিতাম।
কিনতাম ছোট্ট একটা পুকুর।
যাতে ডোবা যায় না, ভাসা যায় না।
কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে 
খুব করে আলো মেখে স্নান করা যায়।
আজ খুব আলোতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।
তার আগে বেচতে হবে ঘাসের বিছানা।
একটু আলো পেলেই বেচে দেবো।
চাঁদ। মোম। কিংবা জোনাকীর আলো।
একটা বন্ধ খামে করে পাঠাতে পারো একটু আলো?

গল্পটা গাছের

একটি গাছের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম।
তার কোন নাম পাই নি।
শরীরে কোন ঘাম পাই নি।
অন্তরে জ্বলন্ত কাম পাই নি।

একটি গাছের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম।
গাছ ইচ্ছে হলেই মরতে পারে না।
চলতে কিংবা নড়তে পারে না।
হাত বাড়িয়ে আরেকটা হাত ধরতে পারে না।

তবুও গাছের গল্প লিখেছি।
গাছের গল্পে আছে জড়তার গর্ব।
আছে জড়তার লজ্জ্বা।
আর আছে জড়তার জড়তা।
এই জড়তা গাছকে গল্প লিখতে দেয় না।

মানুষ তো আর গাছ না। মানুষ নড়তে পারে।
ইচ্ছে হলেই কলম হাতে ধরতে পারে।

আমিও মানুষ; কলম নিয়েছি হাতে।
গাছের অচলায়তন আঁকবো বলে।
গাছের সাথে, শাখার মতো বাঁকবো বলে।

গল্পটা ছাপা হয়েছে আজ।
আমি খুশিতে লাফাতে গিয়ে বুঝলাম…
আমাকে বেঁধে ফেলেছে শেঁকড়।
আমার হয়েছে অজস্র ডালপালা।
গায়েতে আমার সবুজ পাতার জ্বালা।

একটা গাছের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম।
আজ আমি নিজেই নিশ্চল গাছ হয়ে গেছি।
আর গল্পের গাছটা জগৎ ঘুরছে;
আমার লেখা শব্দের ডানায়।

দু’টাকার ম্যাচবক্স

মাথা ঠুঁকে যখন জ্বলেছ,
তোমাকে পোড়াতেই হবে,দিয়াশলাই!
তোমাকে ফুরাতেই হবে, দিয়াশলাই!

ভিজবে তুমি? তাতে বারুদ জ্বলবে না।
মানুষ তোমায় দিয়াশলাই বলবে না।

শব্দ করে জ্বলে ওঠো।
নিঃশব্দে জ্বালাও।
তারপর অগোচরে নিভে যাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *