হাফেজ আহমেদের গুচ্ছ ছড়া
বর্ষাকালের ছড়া
কদম ফুলের ফোঁটা জলে বর্ষা এলো ঝুমঝুম
সুবাসেতে ঘুমঘুম
দু’হাত ভরা অঞ্জলিতে শুভ্র কদম চুমচুম।
বৃষ্টি এলো ঘরের চালে বৃষ্টি এলো বাঁকে
গুড়ুম গুড়ুম হাঁকে
ভেজে ভেজে ছাগল ছানা ম্যা ম্যা করে ডাকে।
তরুলতায় প্রাণ ফিরেছে চিরচেনা সবুজে
বন্যা আসে কভু যে
বিলের জলে শাপলা শালুক হেসে উঠে তবু যে।
অরুণ তরুণ মেতে উঠে কাদামাটি মেখে
যায়না চেনা দেখে
বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন ওরা এখান থেকেই শেখে।
শুভ্র শরৎ
সকাল হাসে দূর্বাঘাসে
শিশির কণার ঝিলিকে
শুভ্র কেশে শরৎ এসে
রাঙিয়ে যায় লিলিকে।
মিষ্টি শরৎ সৃষ্টি করে
ঘাসের ডগায় মুক্তা’র
সাদা মেঘের ভেলায় উড়ে
মনের যত সুখ তাঁর।
জুঁই চামেলি শিউলি আর
কাশফুলেরা দোলে
সারস পাখির ডানায় চড়ে
শরৎ রানীর কোলে।
আমন ক্ষেতে কোমল হাসি
তালের গাছে তাল
ভরা নদীর শান্ত ধারায়
উড়ায় মাঝি পাল।
আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা
বইছে উঁচু নিচু
মেঘ বালিকার লুকোচুরি
রোদের পিঁছুপিঁছু।
হেমন্তের নিমন্ত্রণ
হেমন্তের এই নিমন্ত্রণে আছি বড় যন্ত্রণায়
নবান্নের এই মন্ত্রনায়
গঞ্জে হৃদয় যায় ছুটে যায় হালকা শীতের তন্ত্র নায়।
রসের মিঠায় পিঠাপুলি মন কেড়েছে ছলে
খেজুর গাছের তলে
রশি বেয়ে রসের হাড়ি নামছে দলে দলে।
হলুদ মাঠে মিষ্টি আভায় ধান পড়েছে নুয়ে
নীল কুয়াশা ছুঁয়ে
ঘাসের উপর হাসগুলো সব ঘুমায় শুয়ে শুয়ে।
নতুন নতুন সবজি ক্ষেতে ভাটিয়ালি গান
গোলাভরা ধান
হাসিখুশির নবান্নতে বইছে খুশির বান।
শীতের গোসল
পৌষ দেখালো বাহাদুরি হাল্কা হিমেল বাতাসে
শীতের নীচে জাতা সে
হাড় কাঁপানো শীতে চুপে ঠান্ডা বাতাস দাতা সে।
হাতে কাঁপন পায়ে কাঁপন আরও কাঁপন চোটে
শীত বাতাসের জোটে
লেপের ভেতর কাঁথা ভেদে ধরলো কাঁপন ঠোঁটে।
কাঁপা ঠোঁটে ভাঙা কথা ওরে ভা ভাই শীত রে
কথা যেন গীত রে
গোসল করার আগে মনে যুদ্ধে যাওয়ার ভীত রে।
গোসল করে আসলো যে আজ যুদ্ধ জয়ের নায়ক সে
আসর জেতা গায়ক সে
বয়স যতই হোকনা যে তার তবু বালক বায়ক সে।
বসন্ত কাল
কৃষ্ণচূড়ায় রঙ ধরেছে লাল গালিচার লাল
উতালপাতাল হাল
ডালে ডালে ঝুলছে যেনো নীল পরীদের গাল।
শিমুল পলাশ রক্তজবা ফুটলো শত ফুল
হলুদ বটমূল
হালকা হাওয়ায় ফুল পরিদের দুলছে কানের দুল।
শীত কমেছে গীত কমেনি গাইছে ভ্রমর গান
হৃদয়জুড়ে টান
ফুলে ফুলে বসন্তের আজ রঙিন আহবান।
গাছে গাছে গাইছে পাখি রঙিন হল বন
জাগলো শিহরণ
নদীর কূলে দুঃখ ভুলে হাসলো মাঝির মন।
বৈশাখের নানা রঙ
বাতাসের সুরে সুরে ঝড়ের ঝংকার
আকাশের কালো মেঘে কালের হুংকার
বজ্রের হাঁকে হাঁকে চোখ মেলে গাঙচিল
নতুন পানিতে ভরে পুরানো খালবিল
গাছের নাচনে নাচে শরিরের ঘোড়া লোম
চারিদিকে ঠুসঠাস প্রকৃতির পোড়া বোম
আঁধার ধুয়েমুছে আলো আসে বৈশাখে
ঠা ঠা রোদে কচিকাঁচা রং যেন পুঁইশাকে
নব নব ফুল পাখি ফল নতুনে বাঁচে
বৈশাখে বাংলা সাজে তার আপন সাজে
ইলিশের উৎসবে চলে পান্তার হালখাতা
পুরানো দ্বন্দ্ব ভুলে খুলি আজ মঙ্গল ছাতা।
অসাধান রকম ভাল লাগলো আপনার একগুচ্ছ ছড়ার ঝংকার।আপনাকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।