শিশুতোষগল্প //রুনুর চিঠি লেখার দিন//হামীম রায়হান
রুনুর বয়স আট বছর। সে এবার ক্লাস টু’তে উঠেছে। কিন্তু তার মন ভীষণ খারাপ! কারণ আজ অনেকদিন যাবৎ স্কুল বন্ধ। স্কুলে যেতে তার খুব ভালো লাগে! বন্ধুদের সাথে কতদিন দেখা হয় না। স্কুলের পাশেই তার নানু বাড়ি। রুনু প্রায় নানুমনির সাথে দেখা করতে স্কুল শেষে নানুবাড়ি চলে যায়। পাশের বাজারে রুনুর বাবার ঔষুধের দোকান। বাবা দোকান থেকে গিয়ে রুনুকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন।
নানু বাড়িও যাওয়া হচ্ছে না। এখন বৈশাখ মাস, নানুদের উঠানে আম ও কাঁঠাল গাছ। সেই গাছগুলোতে অনেক বম, কাঁঠাল ধরেছে। এখন সেগুলো পাকার সময়। কিন্তু সে তো যেতে পারছে না। কিভাবে সেসব খাবে! এসব নিয়ে সে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়! নানু বাড়ি পাকা আম, কাঁঠাল যে কী মজার! চিন্তার কথা রুনু তার মাকে জানায়। মাকে বলে সে যেন নানুকে ফোন করে। মা রুনুকে বলে, ‘এখন ফোন না করে তুমি একটা চিঠি লেখো নানুকে। তোমার তো এবার স্কুলের পরীক্ষায় চিঠি লিখতে হবে!’ মা’র কথা তো খুব ভালো। নানুকে চিঠি লিখতে গেলে পরীক্ষার পড়াও হয়ে যাবে। সাথে সাথেই রুনু খাতা, কলম নিয়ে বসে যায় চিঠি লিখতে।
প্রথমে নানু মনিকে সালাম ও কুশলাদি জানতে চেয়ে চিঠি শুরু করে। তারপর মা বলতে থাকে আর রুনু লিখতে থাকে। চিঠিতে সে বলে যেন এবার গাছের আম, কাঁঠাল তার জন্য যেন রাখা হয়। যদি সে যেতে না পারে তবে তার বাড়ি যেন অবশ্যই পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুভেচ্ছা ও চিঠির উত্তর দেয়ার কথা বলে, নিচে নিজের নাম লিখে চিঠি শেষ করে রুনু। তারপর একটা খামে ভরে বাবার হাতে সেই চিঠি নানু বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে। বাবার যেহেতু ঔষুধের দোকান, তাই বাবাকে দোকান খোলা রাখতে হয়।
পরদিন বাবা সেই চিঠি দোকানে যাওয়ার সময় নানুবাড়ি পৌঁছে দেয়। মা ফোন করে নানুর কাছে জানতে চাই সেই চিঠি পেয়েছে কিনা। নানুমনি সে চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি! তিনি তখনি চিঠির উত্তর লিখতে বসেছেন। বিকালে বাবা ফেরার সময় নিয়ে আসবেন।
রুনুর সময় যেন কাটছে না! কখন বিকাল হবে, কখন বাবা চিঠি নিয়ে বাজার থেকে ফিরবেন! অবশেষে বাবা বাড়ি তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন। এসেই রুনুর হাতে দিলেন নীল খামে একটা চিঠি। চিঠির লেখাগুলো কী যে সুন্দর! সবার সামনে রুনু সেই চিঠি পড়ে শুনাল। নানুমনি লিখেছ তিনি অবশ্যই রুনুর জন্যে আম, কাঁঠাল রাখবেন। যদি রুনু যেতে নাও পারে তবে বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। চিঠির শেষে নানুমনি আবারো চিঠি লিখতে বললেন। যাক রুনুর একটা চিন্তা দূর হলো!
এখন রুনু নিজে নিজে নানুমনির কাছে চিঠি লিখতে পারে, মা’র সাহায্য লাগে না। আর সেই চিঠি পৌঁছে দেয়া ও নিয়ে আসার কাজ বাবার উপর। বাবা নাকি ডাকপিয়ন!
এভাবে ভালোই কাটে রুনুর দিন!