ফারুক সুমন এর গুচ্ছ কবিতা
কবরের প্রতিবেশী
মসজিদের কাছেই আমার আবাস
মাঝে মাঝে মাঝরাতে অথবা ভোরে
অথবা করুণ সুরে ভরদুপুরে
একটি বিষাদবাক্য উড়ন্ত ছুরি হয়ে
হানা দেয় অন্তঃপুরে।
এসেছে মৃত্যুদূত নিয়ে গেছে কারে!
মুয়াজ্জিন মিহি সুরে ডাক দিয়ে যায়
হাওয়ায় ভেসে ভেসে ইথারে ইথারে
আসে সংবাদ, কখনো সদ্যোজাত শিশু-
কখনোবা অশীতিপর বৃদ্ধের নামে
বাক্যটি এসে বিঁধে যায় মর্মমূলে-
‘একটি শোক সংবাদ…
ইন্তেকাল করিয়াছেন।’
চিরবিদায়ের এই ডাক শুনে শুনে
ক্রমশ আমিও ঘুমিয়ে যাই
কবরের প্রতিবেশী হয়ে।
মানুষের মুখে মুখোশের হাসি
মাঝে মাঝে নীরবে সরে যাই, যেতে হয়
এটাই নিয়তি মেনে মানচিত্রে মাথা রাখি
দীর্ঘশ্বাসের হাওয়া এসে লাগে-
পাথর গড়ায়; ভিজে ওঠে পাথরের আঁখি।
যাপিত যৌনজীবন কেবল মানুষের নয়;
তবু কেন ফেটে যায় মানচিত্রের মাটি
ধর্ষণহিংস্রতায় নদীর তলদেশ জলশূন্য
হৃদয়হীন মানুষের মুখে মুখোশের হাসি।
প্রাণের উচ্ছ্বাসে, পাখিও ভালোবাসে
পরস্পর কাছে আসে প্রণয়প্রবাহে ভাসে
অথচ মানুষের মুখে মানুষের হাসি কই?
এসো মানুষ, তবে প্রণয়প্রকাশে পাখি হই।
চিত্রখচিত শবাধার
মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলে দিতেই
ঝনঝনিয়ে মুদ্রা পড়ে
সে কী দৃশ্য!
অবাক হয়ে দেখি দ্বিচক্রযানের ঘুর্ণন
দেখতে দেখতে চোখ ঝাপসা হয়ে-
ফিরে যাই ঋণদাতার দহলিজে।
আমার মৃত্যুদিন নথিভুক্ত থাকে ঋণের চাপে
ঋণ যতো বাড়ে-
সমকালে মৃত্যু ততো নিকটবর্তী হয়
ঘরময় ঠাণ্ডা অনুভূতি নিয়ে-
বিরাজ করে সুগন্ধযুক্ত আগরবাতি
আতর আর আগরবাতির গন্ধে-
নিজেকে আবিষ্কার করি চিত্রখচিত শবাধারে।