কবিতা

গুচ্ছ কবিতা নুসরাত সুলতানা

বরং তুমি অন্য কিছু হও

বরং তুমি কালোবাজারি হও
পতিত পুরুষের নিষিদ্ধ রতির
যোগানদার হও,
ঘুষখোর দারোগা হও
ছাপোষা কেরানি হও,
চাটনদার হও
তবু তুমি কবি হইও না।
চমৎকার নর্দমা
অসভ্য বর্বর, কুসংস্কারের অন্ধকার
ভরা সমাজ কবি চায় না।
কবি বড় অভিশপ্ত এক নাম,
বেদনার আধাঁরের জীবন
কবি দেখতে মানুষের মতো।
ভাত খায়, মল ত্যাগ করে,
কাম বোধ জাগে,
কখনো কখনো নারী বেশ্যার
শরীর ছেনে দেখার সাধ জাগে।
অন্য সব ভদ্র, অভদ্র মানুষের মতো
তবুও কবি মানুষ নয়।
মানুষের কাছে ;
জীবন এক মুল্যবান লোভী অলংকার
যা একান্ত যত্নে পরিচর্যা করে।
কবির কাছে;
জীবন এক নোংরা পোশাক
যা অপরকে দিয়ে দিতে পারে অনায়াসে।

একাউন্টিং শেখেনি

এক জীবনে তোমাকে পাবো না
জেনেই ভালোবেসেছি।
তোমার জন্য ভাত রাঁধা হবে না।
কালাভুনা, টমেটো চাটনি রেঁধে
নিজ হাতে বেড়ে খাওয়ানো হবে না।
ছুঁয়ে দেয়া হবে না বাউণ্ডুলে চুল।
জোছনায় প্লাবিত হয়ে;
গল্পে গল্পে বিদীর্ণ করা হবে না
রাতের শরীর!
সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে
ছুঁয়ে দেখা হবে না সুন্দরতম অনুভূতি
যৌথ আবৃতি করা হবে না
সব হ্যাঁ কে কাছে পাওয়ার
তুমুল ইচ্ছে নিয়ে।
সমস্ত না কে সঙ্গী করে
দখলে নিয়েছো একটা আত্মা!
কারণ ভালোবাসা আর কবিতা
খুবই বেহিসেবী বোকা
ওরা একাউন্টিং শেখেনি।

যদি

যদি মহা প্রলয় শেষেও টের পাই
হৃদপিণ্ডে শ্বাস ওঠা নামা করছে,
যদি আশ্বস্ত হই বেঁচে আছি।
কথা দিচ্ছি, ভালোবাসবো প্রাণ উজার করে নিঃসংকোচে, দ্বিধাহীন আত্মবিশ্বাসে।
বায়না ধরবো;
পাবলো নেরুদা পড়ে শোনাও একান্তে,
কচি মেহেগনি পাতা রঙের জামদানী কিনে দাও।
বায়না ধরবো;
গোধূলির হলুদ আলো
গায়ে মেখে দেখবো
পাখি দম্পতিদের পাশাপাশি উড়ে নীড়ে ফেরা,
আকাশপানে তাকানো আমি
হাত পাতবো ভরে দেবে খোসা ছড়ানো বাদাম।
আমরা বাঁচবো বিশ্বাসে প্রেমে আর
স্বাস্থ্যকর ভালোবাসায়।
যদি ডাক আসে ওপারের।
কথা দিচ্ছি অশরীরী আমি
নিজেকে বাঁধ না নতুন কোন প্রেমে,
কেবল মনে বিশ্বাস আর স্মৃতিতে
এতটুকু ঠাঁই দিও।
তোমাকে ভালোবেসেছি,
প্রেমের নেশায়, কাছে পাবার ব্যাকুলতায়,
আত্মাকে ছুঁয়ে দেখার
অমিয় আকাঙ্ক্ষায়!

ভাইরাস

সব বাঁধা ডিঙিয়ে তোমার কাছে যাবো
ছুঁয়ে দেব বাউন্ডুলে চুল,
নিঃশ্বাসে ছুঁয়ে দেব চোখ
কোন লকডাউন মানবো না।
তোমার স্পর্শহীনতায়
আমি পলে পলে মরছি!
আমি রুপান্তর হচ্ছি এক পাথরে!
করোনা ভাইরাসে হয়তো আমি
বেঁচে যেতেও পারি।
কিন্তু তুমি ভাইরাসে আক্রান্ত
আমার শরীর, মন, আত্মা।
তোমার অধিক শক্তিশালী
কোন ভাইরাস নেই
যা আমাকে ধুকে ধুকে
শেষ করে দিতে পারে।
তুমি আমার মৃত্যু হয়ে
এসেছ জীবন রূপে!

নিয়তি

তির তির করে রপালি ফিতার মতো যে নদীটি
কুলকুল করে মৃদুমন্দ স্রোতে সবাইকে
মোহিত করে ছুটে চলছে
তারও দু’দন্ড জিরোতে মন চায়
তাকেও ক্লান্তি ঘিরে ধরে।
কিন্তু জিরোবার ফুরসত কই?
ছুটে চলাই তার নিয়তি!
সেই নিয়তি তোমাদের
মুগ্ধ চোখের নিয়ামক
দোয়েল, বসন্তবৌরি, কিংবা কোকিল
সুখে-দুঃখে কেবলই গান গেয়ে যায়।
তারও ইচ্ছে হয়,
চুপ থেকে কারও গান শুনতে,
কে তাকে গান শোনাবে!
সুখে, দুঃখে, রাগে, ক্ষোভে
গান গাওয়াই তার নিয়তি
সেই নিয়তি তোমাদের কানের নিয়ামক।
কবি তার ব্যথা-বেদনা আর জরাকে;
বেঁধে দিয়েছে ছন্দ উপমা আর শব্দে!
কবির ও ভীষণ আকুলতা জাগে
কেউ সবকিছুকেই কবিতা না বুঝুক!.
কেউ অন্তত তার আত্মার আহাজারি বুঝে নিক।
কেউ বুঝুক আর না বুঝুক
লিখে যাওয়াই কবির নিয়তি!
কবির নিয়তি তোমাদের হৃদয়ের নিয়ামক
এই তো ভবের খেলা;
কারো নিয়তি, কারো নিয়ামক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *