অণুগল্প।। থাপ্পড়।। আশরাফুজ্জামান বাবু
মহল্লায় নাটক হবে। এলাকার ক্লাবের ছেলে চঞ্চল লিখেছে। নাম ‘মিথ্যেবাদী রাখালের গল্প’। হাসান দিবে ডিরেকশন। নায়িকার রোল করতে চায় পরী। নায়ক হবে মতিন। কিন্তু এলাকার মতবরের মেয়ে জরী বাঁধায় গ্যাঞ্জাম। সেও নায়িকার রোল করতে চায়। কিন্তু হাসান ও চঞ্চল দু জনের কেউ চায় না জরী বা পরী নায়িকার রোল করুক। কারন তারা দুজনে দুজনের সাথে প্রেম করতে চেয়েছিলো, কিন্তু জরী বা পরী তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে শহরের ছেলের সাথে প্রেম করে। তাই মতিনও মহা খুশি। কারন, মতিনও চায় না এরা নায়িকার রোল করুক। মতিন এলাকায় প্রচার করে এবার শহর থেকে নায়িকার রোল করার জন্য মেয়ে নিয়ে আসা হবে। শুনে জরী ও পরী দুজনেই নিজেদের শত্রæতা ভুলে নাটক বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা যখন নাটকে অভিনয় করতে পারছে না, তাহলে নাটকই হবে না। কিন্তু কোনো ভাবেই তারা নাটক বন্ধ করতে পারছে না। একটার পর একটা ফন্দি আটে। কোনোটাই কাজে লাগে না। মহড়া চলতেই থাকে পুরোদমে। যেদিন নাটক মঞ্চস্থ হবে সেদিন এলাকার তিনবারের চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনাও দেয়া হবে। জরী ও পরী বাদে সবাই মহা ধুমধামে প্রস্তুতি নিতে থাকে। তাদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে একটি খুশির সংবাদ। সেটা হলো, চেয়ারম্যানের বন্ধু ঢাকার অনেক বড় এক সেলিব্রেটি নাট্যনির্মাতা তাদের এলাকায় শ্যুটিং করতে আসছে। দিন তারিখ মিলে যাওয়ায় তিনি তার বন্ধু চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন। সবাই আরো উদ্দ্যম নিয়ে নাটকের মহড়া চালিয়ে যেতে থাকে। এ খবর শুনে জরী ও পরী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু তবু করার কিছু নেই তাদের। মহড়া চলতেই থাকে। অনুষ্ঠানের আগের দিন ক্লাবের শেষ মহড়া দেখতে আসেন ওই সেলিব্রেটি নাট্যনির্মাতা।
তিনি একটু মহড়া দেখেই খুব খুশি। তারপর কী যেন ভেবে বলেন, তোমরা সম্ভব হলে এই ‘মিথ্যেবাদী রাখালের গল্প’ নাটকটি বাদ দিয়ে অন্য নাটক করলে মনে হয় ভালো হবে। শুনে তো সবার মাথা নষ্ট। আগামীকাল অনুষ্ঠান। এখন নতুন নাটক ধরা কি সম্ভব? সব কিছু থমকে যায়। জরী ও পরী মহাখুশি। শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছা পুরণ হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে মতিনের মাথায় রক্ত উঠে যায়। তার কি নায়কের রোল করা হবে না তাহলে? সে ওই নাট্যনির্মাতার মুখের ওপরেই একটু বাঁকা কথা বলে বসে। জানতে চায়, এই নাটকের সমস্যা কী? মিথ্যেবাদী রাখালের গল্পে ত্রæটিটা কোথায়? মতিনের প্রশ্ন শুনে মতিনের গালে জোরে এক থাপ্পড় মারে নির্মাতা। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই অবাক। সকলের জিজ্ঞাসা, প্রশ্ন করা কি অপরাধ? জরী ও পরী আরো খুশি। নায়ক খেয়েছে থাপ্পড়।
সে রাত নির্ঘুম কাটে তাদের। সকাল হতেই আবার ওরা পরিচালক সাহেবের কাছে যায় তারা। তখন তিনি বলেন, ঠিক আছে, তোমরা ‘মিথ্যেবাদী রাখালের গল্প’ নাটকটিই করো। তখন ওরা খুশি হলেও আবার দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। আসলে ঘটনা কী? রাতে বললো, অন্যটা করো, এখন আবার এটাই করতে বলছে। ওরা আবার কারন জানতে চায়। এবার তিনি আস্তে করে পাশের চেয়ারে বসেন। বলেন, তোমরা বসো। তোমরা আমাকে ভুল বুঝেছ। এবং মিথ্যেবাদী রাখালের গল্পের এটাই একমাত্র ত্রæটি। গল্পটাতে কোনো থাপ্পড় নেই। থাপ্পড় বলতে আমি শুধু থাপ্পড়কেই বুঝাচ্ছি না। মিথ্যেবাদী রাখালের গল্পে যখন মিথ্যেবাদী রাখাল প্রথমবার মিথ্যে বলেছিলো, মিথ্যে বলার অপরাধে তখন কেউ তার গালে এ রকম একটা থাপ্পড় দেয় নি, অর্থাৎ তাকে কোনো শাস্তি দেয়া হয় নি। সেদিন যদি তার শাস্তি হতো, তাহলে পৃথিবীতে মিথ্যেবাদী এই রাখালের গল্পটার জন্মই হতো না। একদিন সত্যি সত্যি বাঘও আসতো না। রাখালের মৃত্যুও হতো না।
চেয়ার থেকে উঠে আস্তে আস্তে নাট্যনির্মাতা রুমের ভেতরে যেতে থাকেন।