কবিতানির্বাচিত

মাসুদ পথিক এর চাষার কাম সিরিজ

কবিতা ১

তোর দেহ কাঁদাকাদা,
আর আমি জেনেছি একদা
ত্রিভূজের গহীনে জল থইথই;
জলে জাগে বক আর ঘর পালানো কই।

আর এই জ্যামিতিক বিলে
আমাকে আরো খায় দলছুট চিলে;
দোলে উঠি, কেঁপে উঠি দেহ পথচারীর ঢিলে!
আমি খাই তোকে, আমাকে তুইও খাস গিলে।

বক ঘেঁটে ঘেঁটে এই জলাশয়
রেখে গেলো। কামনার অব্যয়
যদি হতে পারতাম- কামনামাখা বিল
মোহনার পর নিতাম বাঁক, অঙ্গে বিভঙ্গে দিতাম মিল।

জ্যামিতি ক্লাসপালানো আমার বড়ই সখ।
যদি হতে পারতাম শিকারি এক বক…

কবিতা ২

চিরুনির ভেতর ঢুকে গেছে আমার ভীতু মাথা,
মাথার ভেতর এলোমেলো জলের গহীন কথা।
জলের ভেতর চক্রাকারে ঘুরে বিলুপ্ত সব মাছ;
জলের বুকে আগুণপাখি- ফুলের যতো গাছ।

এবং আমার ইচ্ছে খুব ,
ইচ্ছে করে হতে নিরল বক
তোমার দেহে ধরবো শিকার,
সখ, আমার বড়ই সখ।

অথবা আর মুখের উপর নাচে জলের ভাঙা আয়না…
তোমার মনের মাঝে বিল; মাছের ঝিলমিল, বায়না
নীরবতায় বুনেছি। কোলাহলের হায়না
আসে, ভালোবাসায় কারোকিছুই যায় না।

তবুও চোখের ভেতর চুপ, নিরন্তর এক ডুব-
আজীবন; ব্যথার ভেতর সাঁতার আমার খুব।

কবিতা ৩

আর আকাশে উড্ডীন নদী থেকে
একবার ডুব দিয়ে
দুবার ডুব মেরে ধরেছি এই মাছ।
আগুনকে করিনি বিয়ে;
তোকেও, তোকে করিনি বিয়ে ও’জল মহাল।
কেবলি ছড়িয়ে গেছি সন্তানের মতো জাল।
যতো যতো গ্রহ বা নক্ষত্র বাক্য দিয়ে ঘেরা,
নদীর বুক চিরে কেটেছি খাল পৃথিবীর দিকে। তেড়া-
এইসব উঁচনিচু কথার ভেতর
থাকে অক্ষরের সুচতুর বাঁক
আর থাকে জীবনের সুনীল ধ্বনি।
অদ্ভূত শালিকের হাঁকডাক
নদীতে বিদ্যুৎ চমকায়, চমকায়…
আমি ঘুরি; অবিরত ধমকায়
রাধিকা গো! তোর গহীন অয়ি যমুনায়;
আমি ডুবুরি, আমি নিরূপায়!

বিবাহ করিনি আমি আজও, হায়!
তোর দেহ মহাকাশ। দেহভরা মাছ ইল্যুশান,
মেঘ ও রোদ্দুরের স্নিগ্নিস্ফিয়ার;
ভাঁজে অভাঁজে তার সুবর্ণ সিম্ফনি-গান!

কবিতা ৪

জেনেছি এইভাবে ধান-মাঠের আলে আলে
আগাছার লাজুক রিচুয়্যল
রক্তমিশ্রিত প্রকারে কাঁটাগাছ
বুনেছিলো তাহারা স্বজাতে স্বগোত্রে, আর?

আকারে বিকারে জল ও পানির নামে
একই ঘাটে অমৃত রক্তপ্রবাহ আজ!
কেন একই আঙিনায় বুনেছিলো তাহারা?
বুনেছিলো সুস্বাদু নুনের আনাজ!

এইমতো আরো আরো কতো না পাখির গান!
একই প্রকারে পেলো বিভেদের স্বর;
রিলিজনের সচতুর আদর!

তথাপি আকাশ বরাবর পাতা হলো কাঁটাতার;
ভূমিতে ছোট ছোট পারসেপ্ট এবং
ট্যাবুদের সুপ্রচল ঘর সংসার;
পলিটিক্যাল হেজিমনি গহীনে বাহিত তার!

আমি তবে কার সস্তান?
ইচ্ছেদের পাড়া জুড়ে ভাতশালিকের গান,
কেবলি ফলিত ভূমির ‘পরে এই উঁচুনিচু সুরেলা টান!

বেদনার গাঁয়ে যতো যতো গিমিক,
তার দুই দিক।

আমি কি নেই এই দেহে- কাঁটাতারের দুইদিক!
বুকে উড়ে
মেঘ খেয়ে বেড়া উঠা দিবসের শেষ শালিক!

কবিতা ৫

ঠিক ধানের মৌসুমের পূর্বেই আটকে গেলাম-
শব্দ ও ধ্বনির কারাগারে;
নিজের অতিকথনের গম্বুজ সরাতে গিয়ে ভাবি,
কীভাবে তৈরি হলো এই বাক্যের চাতুরি!

বীজ বোনা এবং চাষের প্রস্তুরির পূর্বে আগাছা মুক্ত
হওয়া জরুরি,
আর পামরি পোকার জন্যও চাই প্রটেকশন।

তথাপি সঙ্গমের আগে চাই মাটির জোঁ,
ভালোবাসার মতো জৈব সার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *