শিশুসাহিত্যশিশুতোষ গল্প

শিশুতোষ গোয়েন্দা গল্প।। গরমের ছুটিতে গোয়েন্দাগিরি।। আহমেদ রিয়াজ

উপরে তাকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেলেন মাসুক ভাই। চোখ দুটো কপালে তুলে ফেললেন। মাসুক ভাইয়ের দিকে তাকাল সুমন। জানতে চাইল, ‘কী দেখছেন মাসুক ভাই?’
মাসুক ভাই মুখে কিছু বললেন না। ডান হাতের তর্জনি দিয়ে নারকেল গাছের দিকে দেখালেন।
গরমের ছুটি পড়েছে স্কুলে। বেশ গরম পড়েছে কদিন ধরে। গা জ্বালা করা গরম। তখনই ওদের বাসায় এলেন মাসুক ভাই। বললেন, ‘বেড়াতে যাবে?’
সুমন জানতে চাইল, ‘কোথায়?’
মাসুক ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘তোমার মামাবাড়ি।’
‘এই গরমে?’
‘গরমেই তো মামাবাড়ি বেড়াতে মজা। আম-কাঁঠাল খাবে আর গাছের ছায়ায় দোল খাবে। গরমও কম লাগবে।’
গরম কম লাগবে শুনেই রাজি হয়ে গেল সুমন। কিন্তু বাবাকে রাজি করাবে কে?
মাসুক ভাই বললেন, ‘ফুফাজিকে আমিই রাজি করাবো।’
সত্যি সত্যি বাবাকে রাজি করিয়ে ফেললেন মাসুক ভাই। ব্যস। আজ ভোরেই মাসুক ভাইয়ের সঙ্গে রওনা দিয়েছিল। আর দুপুরের আগেই মামাবাড়ি এসে হাজির।
মামাবাড়িতে অনেক গাছপালা।
সুমন বলল, ‘কিন্তু গ্রামেও তো অনেক গরম।’
মাসুক ভাই বললেন, ‘চলো। তোমাকে ডাব খাওয়াবো। ডাব খেলে গরম কম লাগবে। পানির তৃষ্ণাও মিটবে।’
মামাদের নারকেল বাগানটা খুব সুন্দর। বাগানের মাঝে সুন্দর একটা পুকুর। টলটলে পানি। পুকুরের চারপাশে অনেকগুলো নারকেল গাছ। একটা নারকেল গাছের নিচে এলো ওরা। মাসুক ভাই বললেন, ‘এ গাছের ডাবের পানি সবচেয়ে মজা। খেলেই বুঝবে।’
তারপর নারকেল গাছের দিকে তাকালেন। তাতেই তাঁর চোখ দুটো উঠে গেল কপালে। নেই! গাছে একটা ডাবও নেই।
একে একে বাকি গাছগুলোর দিকে তাকালেন মাসুক ভাই। নেই। কোনো গাছে ডাব নেই।
এক ছুটে বাড়িতে এলেন মাসুক ভাই। পিছন পিছন ছুটল সুমনও। মামির কাছে জানতে চাইলেন মাসুক ভাই, ‘মা। কোনো গাছে ডাব নেই। কেন?’
মামিও অবাক হয়ে বললেন, ‘বলিস কি! গতকাল বিকেলেও তো ছিল। চল তো দেখি।’ ২.
গ্রামের প্রায় সব নারকেল গাছ খালি। খালি গাছগুলোয় তো দূরের কথা, একটা ডাবও নেই।
মাসুক ভাইয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ, ‘কোথায় গেল সব ডাব?’
সুমন বলল, ‘নিশ্চয়ই চুরি হয়েছে।’
‘তাই বলে একরাতেই! একরাতের মধ্যে গ্রামের সব ডাব নারকেল কে চুরি করবে? এটা হতেই পারে না। এখানে কোনো কেরামতি আছে।’
‘কেরামতি!’ বলেই খিক খিক করে হেসে ফেলল সুমন।
মাসুক ভাই বললেন, ‘হাসছ? আমার কথাই ঠিক। গ্রামের অনেকেও তাই মনে করছে। কেরামতি ছাড়া আর কিছু নয়।
‘কিন্তু কেরামতিটা কার? কেনই বা সে ডাব নারকেলের কেরামতি করতে যাবে?’
এবার চিন্তিত দেখাল মাসুক ভাইকে। বললেন, ‘কথাটা অবশ্য মন্দ বলোনি।’
সুমন বলল, ‘এটা অবশ্যই চোরের কাজ। চলেন দুজন মিলে চোরটাকে পাকড়াও করি।’
আরো অবাক হলেন মাসুক ভাই। বললেন, ‘চোর ধরব? কিভাবে?’
সুমন বলল, ‘গোয়েন্দাগিরি করে।’
এবার মাথা ঝাঁকালেন মাসুক ভাই, ‘যদি কোনো বিপদ হয়?’
‘কিসের বিপদ?’
‘যদি কোনো কেরামতি হয়, তখন তো বিপদে পড়ে যাবো।’
হাসতে হাসতে সুমন বলল, ‘গোয়েন্দাদের মনে ভয় থাকতে নেই। ভিতুরা কখনো গোয়েন্দা হতে পারে না।’
মাসুক ভাই বললেন, ‘চলো আম খাই। দুপুরের এই গরমে আম খেতে মজা। দোল খেতে খেতে আম খাবে।’
মাসুক বলল, ‘পাকা আম?’
‘নাহ। এসময় পাকা আম কোথায় পাবে? কাঁচা আম।’
সুমন অবাক হয়ে বলল, ‘কাঁচা আম কিভাবে খাবো?’
‘কেন ভর্তা বানিয়ে?’
‘আমার কাছে পাকা আম খেতে বেশি ভালো লাগে। স্কুলে গরমের ছুটিটা যে এ সময় কেন দেয়? না পাকে আম, না পাকে কাঁঠাল। জামও পাকে না। অথচ এটাকে নাকি বলে আম কাঁঠালের ছুটি।’
মাসুক ভাই বললেন, ‘ঠিকই তো আছে। ওটা কাঁচা আমের ভর্তা খাওয়ার ছুটি।’
‘তাহলে কাঁঠাল? কাঁচা কাঠালও বুঝি খাওয়া যায়?’
‘যায় না আবার! কাঁচা কাঠালের তরকারি খেলে বুঝবে। দারুণ মজা। মা আজ রান্না করেছে।’
সুমনকে এবার আম বাগানে নিয়ে গেলেন মাসুক ভাই। গাছভরা আম। বেশ বড় বড়। এখনও কাঁচা। মাসুক ভাই জানালেন, এখনও আমের আঁটিই শক্ত হয়নি।
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল সুমন, ‘আরে! ওটা কি! দোলনা! ওয়াও।’
মাসুক ভাই বললেন, ‘এটা দোলনা নয়, দোলনা বিছানা।
সত্যিই তাই। দুটো আমগাছের মাঝে কী সুন্দর একটা দোলনা বিছানা পেতে রাখা আছে। মাসুক ভাই বললেন, ‘এখন এই দোলনা বিছানায় দোল খেতে খেতে আমভর্তা খাও। একটু পর দুপুরের খাবার খেয়ে দোলনা বিছানায় শুয়ে থাকবে। দারুণ লাগবে!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *