একুশজন তরুণীর কবিতা নিয়ে কাব্যশীলনের বিশেষ আয়োজন তারুণ্য আঠারো
আধুনিক কালের অসহায়ত্ব
আইরীন কাকলী
স্টিফেন ক্রেইন..
যার কবিতায় জীবনের অবক্ষয়ের
পদচারন শুনতে পাই,
খুঁজে পাই আধুনিক কালের অসহায়ত্ব।
স্বপ্নসাধনায় ব্যকুল কোন উচ্ছাস
ঝর্না শুকিয়ে যায়,
গোলাপ ঝড়ে যায়,
পাখিরা কেঁদে ওঠে নিঃসঙ্গতায়।
বেদনার দহনে,
সময়ের অবসানে,
অবসাদে-
অনবরত মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করি;
অথবা একাকী অনুভব করি।
স্টিফেন ক্রেইন
যার কবিতায় জীবনের অবক্ষয়ের পদচারনা
রীতিমতো আমাকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে যায়..
কাগজের ফুল
আইরিন সুলতানা লিমা
আমি অনিশ্চিতকে ভালোবেসে
নিশ্চিতকে অনায়াসে দেই ছেড়ে
আমি ভেসে আসা নৌকাতে না উঠে
একটা কাঠের টুকরায় যাই ভেসে।
যে ভাসায় আমারে সেও দিব্যি যাচ্ছে ভেসে
দুজনেই ভেসে চলি,
বাহুডোরে না বাঁধি
ভাসতে ভাসতে দুজন চলে যাই দুকূলে।
কোনদিন হয়তো কেউ এসে
দুজনারে নেবে দুদিকে কেড়ে।
আমি ভেসে আসা সেই ছোট্ট কাগজের ফুলকলি।
হাত
ইলা লিপি
মৃত্যুর গভীর থেকে তুলে আনা শস্যদানা
শ্রমের ক্ষমতা নিয়ে দুঃখ দিয়েছে ভীষণ
কতটা দুঃখ পেলে হলুদ হয়ে আসে আয়ু
ঝাক বেধে উড়ে যায় মহোৎসব
শীতের দিনে স্মৃতিরাও ঘুমের কাতরায়
করোটি খুলে বিলিয়ে দেয় বুকের ওম
মধ্যরাতে নক্ষত্র ঢেকে ফেলা মেঘ
সকালের ঘাসে শিশিরের মুখোস ছিড়ে খায়
শানিত আলো –
শুরু থেকে শেষ অবদি মুগ্ধ চাঁদের মতো
খুঁজে ফেরে একখানা হাত
যেখানে মুঠোবন্দী হয়ে আছে শিউলি শরৎ
ও ফসলি জমি
আবাদি প্রান্তরে দক্ষ কৃষক বরাবর মুখ গুজে
ফেলে দিছে চারা সমেত ভূঁই
জন্মের কথা মনে হলে ফিরে আসে আষাঢ়ে সন্ধ্যা
নিশুতি রাতের বুকচিরে বেরিয়ে যায় স্বপ্নের বাঁশি
ত্বকের আবরণে একখানা হাতেে
মুঠো খুললে বেরিয়ে আসবে জন্মান্তর কুশল
মাংসের বুকে ছড়িয়ে দেবে পরশপাথর।
এইতো জীবন
জাহানারা রেখা
এইতো জীবন চাওয়া আর পাওয়া
কখনো চোখের জলে ভাসা
কখনো বা সুখমগ্নে আত্মহারা।
এইতো জীবন বিশ্বাসে আর অবিশ্বাসে
কখনো হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসে
কখনো বা মায়ামন্ত্রের ধুম্রজালে।
এইতো জীবন ব্যর্থতা বা সফলতায়
কখনো ধুকে ধুকে নিঃশেষ হওয়া
কখনো বা মিছে আশায় বুক বাঁধা।
এইতো জীবন নিরবতা বা সরবতায়
হৃদয়ের দহন জ্বালা কেউ দেখে না
তবুও মিছে ভালো আছি বলা।
এইতো জীবন আনন্দ বা বিষাদে
স্বপ্ন সুখের নিত্য আশ্বাসে
নিয়তির বিরামহীন নিষ্ঠুর অবগাহনে।
এইতো জীবন একা থাকার যন্ত্রণায়
ধুকে মরে নিঃসঙ্গতায়
নিরবে নিভৃতে অনাদরে অবহেলায়।
এইতো জীবন বাঁচে মানুষ আশায়
যদি মেলে সহসা
আজন্ম লালিত্য সেই অধরা প্রত্যাশা।
আসবো আমি
জান্নাতুল রিকসনা
কোনো এক শেষ বিকেলে
কিংবা অলস দুপুরে,
তুমি যখন থাকবে আনমনে!
দূরের পথে, কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ আওয়াজে
যখন বিষাদ ছড়াবে।
সেদিন হঠাৎ করে কড়া নাড়বো তোমার দুয়ারে।
বর্ষার রিমঝিম ছন্দে, গুনগুনিয়ে গাইবে যখন
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
কিংবা মধ্যরাতে ঘুম ভাঙলে
তোমায় ঘিরে রাখবে যখন অতীতেরা!
ঠিক তখনই, আসবো আমি!
বসন্তের উদাসী হাওয়ায়, মনটা যখন হবে উতলা!
শিমুলফুলের মালা পরে, রাঙা পলাশ হাতে
দাঁড়াবো তোমার দুয়ারে।
সেদিনও কি এমনি করেই,
চাইবে আমারে?
হোক জয়
জান্নাতুন নিসা
নির্ধারিত সময়ের-
অল্প আছে বাকী।
ভুল যদি কিছু হয়,
বেশকিছু ফাঁকি।
ভুলের ডানায় চড়ে-
সুখ আনি ডাকি।
অসুখের বেড়াজালে
মুখ বুজে থাকি।
সময়ের রঙিন শাখায় দেখো-
গুঞ্জরিত পাখি।
ফাঁকির পেয়ালা জুড়ে
চোখ মেলে রাখি।
নগদ ভাবনা শত-
পরে আছে বাকী।
ভাবনার সিঁড়ি বেয়ে,
কত ছবি আঁকি।
কিছু হবে, কিছু নয়-
এই নিয়ে সংশয়!
তবে কেনো এতো ভয়?
জয় হবে, হোক জয়।
রাত জাগা পাখি
ঝুমা আক্তার
গোধূলি ফুরিয়ে যখন—পৃথিবীর বুকে
নেমে আসে ঘুটঘুটে কালো আঁধার।
সবাই যখন প্রিয়জনের হাত ধরে—
ভ্রমণ করে ঘুমের রাজ্য।
আমি তখনো একটি রাত-জাগা পাখি!
আকাশ পানে চেয়ে থাকা—যেন প্রতিটা
তারায় লুকিয়ে আছে হাজারো স্মৃতি।
আচ্ছা স্মৃতি কি শুধুই জ্বালাময়!
আনন্দের হয় না? ওই যে একটা তারা
বেশি জ্বলছে—হয়তো ওই তারাটার
দুঃখ বেশি। আচ্ছা তারা’দের কি দুঃখ আছে?
কি জানি থাকতেও পারে।
তবে হ্যাঁ, আমার কোন দুঃখ নেই—
তবুও আমি নক্ষত্রের মতোই একা রাত-জাগা পাখি
বিষণ্ণতায় কষ্টের রাত
তানজিনা আক্তার শারমিন
বিষণ্ণতা-
তুমি কচুপাতায় জমে থাকা এক ফোঁটা শিশির,
চড়ুই এর শীতকাপুনির কিচিরমিচির।
হৃদয়ের গহীনের নীরব ব্যথা,
কন্ঠস্বরের নিচে আটকে থাকা কথা।
কষ্ট –
তুমি রাতজাগা ঝিঁঝি পোকাদের আর্তচিৎকার,
গলির মোড়ের রিক্সাওয়ালার অপর্যাপ্ত অর্থের হাহাকার
ঝড়ের ঠিক আগ মুহূর্তের থমথমে নিরবতা,
মায়ের স্নিগ্ধ হাসির আড়ালে লুকানো শতশত ব্যর্থতা।
রাত-
তুমি নিস্তব্ধতায় অনুভব করা হৃদয়ের স্পন্দন,
আঁধারে লুকানো দু’টো আঁখির ক্রন্দন।
বাবার ক্লান্তিমাখা দেহের সাময়িক অবসান,
রাতজাগা প্রহরীর নির্ঘুম বাঁশির গান।
অপেক্ষা
নীলুফা সুলতানা
শাড়ি উড়া আকাশ কবে দেখেছিলাম ঠিক মনে নেই!
তুমিহীন শূন্যতায় আকাশ দেখা হয় শখ করে;
কোন ভাঁজে রাখা আছে কোন মণিমুক্তা কে জানে
শাড়ি উড়া, শালুক পাখির উড়া গত রাত্রির সুঘ্রাণ
তোমার কণ্ঠস্বর ভেসে আসা দেখি।
আচ্ছা তুমি কি ছিলে আমার পূর্বজন্মের কেউ!
বেদনাভরা আহত মন জানতে চায় বারবার।
সময়ের নীল ঢেউয়ে সব ভুলিয়ে দিতে চায়
সুরের ও রেখাচিত্র তখন আমিই ছিলাম।
দূরের রাত্রিতে কারা যেন আগুন পোহাচ্ছে
পাহাড়িয়া এবড়াতেবড়া সড়ক
আলোছায়ার সমাগমে অনাহুত
এই আমি তখন অতিথি পাখি।
ভোর নেমে আসে একাকী কোথাও কেউ নেই
আমারও নেমে পড়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।
একদিন বিস্মৃত হবো
নুসরাত রীপা
যেভাবে হারিয়ে যায় দিনের আলোয় জোছনার জলছাপ
জাফরিকাটা জানালার পাশে আমলকীর গাছের পাতায়…
মেখে যাওয়া ভোরের শিশির
রাত গভীরে দূর থেকে ভেসে আসা অচেনা পাখির ডাক
যেভাবে হারিয়ে যায়
নদীর টুকরো টুকরো স্রোত, পাড় ভাঙা ঢেউয়ের মতন
বুক ভেঙে চলে যায় সমুদ্রের গহিনে
আমরাও তেমনি হারিয়ে যাবো পরস্পরের স্মৃতি থেকে একদিন।
বুকসেলফের কোণে পড়ে থাকা পুরাতন বইয়ের মতন
অনাদরে পড়ে র’ব পরস্পরের হৃদয়ের ভাঁড়ারে
আমরা বিস্মৃত হয়ে যাবো উড়ে যাওয়া ধূলোর মতন
মরে যাওয়া পাতার মর্মরের মতন
আমাদের কন্ঠস্বর মিলিয়ে যাবে গভীর অন্ধকার কোনো প্রাচীন গুহায়।
আমরা ভুলে যাবো সোনালি ফুলের ফাগুন
আমরা ভুলে যাবো শীতের রাত গুলো
আমরা ভুলে যাবো আমাদের বলাকা বিকেল
ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া বেলাভূমি-সূর্যাস্তের অনুরাগ
আমাদের এইসব দিনগুলো একদিন বিস্মৃত হবে।
আমরা দুজন তখনও নদীর পাড়ে, কাশবনে হাওয়া বয়ে যাবো…
কিশোরীর চুলে দোল, কিশোরের মুগ্ধ চোখ-
দূর কোথা শোনা যাবে পাখির কূজন!
ভেনাসের তৈলচিত্র
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
এই যে শোনো,
হ্যাঁ তুমি,
তোমাকেই বলছি,
কিছু বলবার থাকলে এক্ষুনি বলে ফেল। আর বোধহয় সময় নেয়াটা ঠিক হবে না।
প্রকৃতির অজস্রতার মাঝেও ম্লান হয়ে এসেছে অপরাহ্নের আলো, কিছু অস্পষ্টতাও আজ বড় বেশি স্পষ্ট।
বলবার যদি কিছু থাকে আজই বল।
দেখো, নদীর বয়ে চলা কেমন অগাধ গভীর, তবু ঘাসের ঘ্রাণে সম্মোহিত হয়ে তীরে ভিড়ে!
আমি বলি কী, আর সময় নিও না, বলে ফেল বলবার কথা ক’টি।
বাইরে চৈত্রের দমধরা আকাশ, নক্ষত্রেরাও কিছু মৃত্যু পুরে দেয় রক্তের ভেতর।
কারো কথা ভাববে, স্বপ্নে দেখবে, সেকথা তার হৃদয়ে পৌঁছুবে না,
এমনটা অসম্ভবের চেয়েও অসম্ভব! প্রকৃতির বরখেলাপ।
পাশ-দেয়ালের আয়নাতে এঁকে রাখা ভেনাসের তৈলচিত্রটি এখন চোখের তারায়,
তাই বলছি, যদি কিছু বলবার থেকে থাকে আজই, এক্ষুনি, এই মুহূর্তেই বলে ফেল।
শোনার সময় আর হবে কি’না জানি না!
পৃথিবীর অসুখ
বীথি রহমান
বসন্ত এইখানে থমকে গেছে
পৃথিবীর অসুখে কাঁদছে পৃথিবী
একদিন রাতকে মনে হতো জোছনার নদী
আজ মৃত্যুর অশরীরী ছায়া আসন্ন ভোরকে করেছে
চিরবিদায়ের পরম্পরা।
অথচ এখনই সময় ভালোবাসবার
কতোদিন অরণ্য-বালুচরে, সমুদ্র কিনারে
বসা হয়নি স্থির মননে
কতোদিন উপোস আছে বুকের সরঞ্জাম
ভালো করে তাকাইনি কতোদিন তোমার নির্জন চোখের জলে
আজ অমিত সময়-
তোমাকে নতুন করে দেখবার পেয়েছি অবসর।
কিন্তু প্রকৃতির এ কী নির্মম অনশন
শতকের পাপাচার ঢাকছে মৃত্যুর মিছিলে
মধুমাসে শরীরের সাথে শরীরের বিরোধ
দারুণ ভালোবাসবার ক্ষণে-
আমাদের করেছে সঙ্গনিরোধ!
তবু দিশাহীন হৃদয় সুবাতাস খোঁজে
আবার আসবে আলো অন্ধকারের পরে
ধূসর পাতায় আবার জাগবে প্রাণ
ঘাসের শয্যায় শুয়ে নেব নতুন মুকুলের ঘ্রাণ
ভুলচুক ধুয়েমুছে বুক মেলাবো বুকে
আমাদের মিলিত ঠোঁটে হাসবে পৃথিবী, হাসবে নক্ষত্র সুখে।
হাজরে আসওয়াদ
মাহফুজা অনন্যা
কিমানশাহ থেকে আনা সুগন্ধি জিরায় বদহজম কমাবো না, কিংবা ওমান সাগরের বিশুদ্ধ পানি খেয়ে রোগমুক্তিও চাই না, কারণ বিশুদ্ধ পানির নিচেই থাকে স্থির আবর্জনা…
মাইল মাইল দৌড়ে তস্কর মরু পাড়ি দিয়ে উটের দুধে শীতল করবো না গলা,
দুরত্ব মেনে শুধু বাঁচতে চাই, বেঁচে থাকতে চাই।
মহামারি কেটে গেলে একটি আলোর উৎসব হবে বেঁচে থাকা তারাদের নিয়ে, আলোর টুপি মাথায় পরে সে উৎসবে তুমি যোগ দিও…
উৎসবের আলোয় যদি আমাকে খুঁজে না পাও, প্রধান ফটকে গিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখো, ওখানে নিশ্চিত আমিই হাসবো বাঁকা চাঁদ…
তৃষ্ণার্ত হাজরে আসওয়াদ কাঙ্ক্ষিত ঠোঁটের চুমুতে যেভাবে হেসে ওঠে…
ধ্রুবর প্রতি অভিযোগ
মাহবুবা করিম
কথা না রাখর মতো করে মাইলকে মাইল দূরত্ব বুকে নিয়ে আমাদের কষ্ট উড়ানো বিস্মিতরা পালিয়ে যাচ্ছে ধ্রুব—
হাসি পাচ্ছে
সাথে সাথে চিবুক ছুঁয়ে নদীও বইছে
আর চলমান মেঘাচ্ছন্ন শহরে ঢুকে পড়ছে মোলায়েম রোদ
রোদের ঠোঁটে হাসি নেই
রোদের ঠোঁটে যন্ত্রণা
রোদের ঠোঁটে অভিমান
রোদের ঠোঁটে সান্তনা…
ধীরে ধীরে
তুমি যেন হৃদয় থেকে খসে যাচ্ছো ধ্রুব
তুমি যেন বারান্দায় উঁকি দেওনা আর
দক্ষিণা হাওয়ায় কান পাতলে ভালোবাসি শুনতে পাই না আজ সাতাশ দিন
কাকে ভালোবাসোছো তবে?
আমাকেতো নয়, নয়ই।
অমৃতসুধা
রওশন জান্নাত রুশনী
শেষ চুম্বনে চুষে নিয়েছি অমৃতসুধা
পরিত্যক্ত স্টেশন, যানবাহন, গতি..
লকডাউনে জীবনের কতশত অনুষঙ্গ
হাহাকারের হুইসেল শুনেও
বুনোপ্রাণীদের চোখে ভয় নেই
ইতরের ইতরামির ইতিহাসে বিষ্ঠার স্তূপ।
পৃথিবীর শেষ আদম-ঈভের অভিসারে
কোভিড ১৯ এর সাথে পাল্লা দিয়ে
ধমনীতে কার্যকর হয় অমৃতসুধা
প্রকৃতির শুদ্ধ সংগীতে পরিপক্ব হয় ভ্রুণ
চুম্বক অগ্নিগোলকে নিক্ষিপ্ত হবার আগে
বপিত হলো যে অমিত সম্ভাবনা
সেকি পরাস্ত হবে ক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে?
কথার কথা ছিলো
রওনক জাহান তানি
গল্পটা শেষ হওয়ার কথা ছিলো,
চলনে বলনে ভাবার কথা ছিলো।
বৃষ্টি নামলে মেঘ হওয়ার কথা ছিলো,
কুয়াশায় ধোঁয়াশা রোদ উঠার কথা ছিলো।
গোধূলিবেলায় আলো তির্যক হওয়ার কথা ছিলো,
সন্ধ্যা নামতেই সুখতারা জ্বল-জ্বল হওয়ার কথা ছিলো।
চাঁদের আলোয় মুগ্ধ হওয়ার কথা ছিলো,
ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হওয়ার কথা ছিলো।
গহীন অরন্যে হিংস্র প্রাণির বিচরণের কথা ছিলো,
গ্রাম্য পথের ধারে ক্লান্ত পথিক দেখার কথা ছিলো,
স্বর্ণলতার সোনালী আভায় পথ আলোকিত হওয়ার কথা ছিলো।
নদীর বুকে মাঝিদের দরদি কণ্ঠে গান ধরার কথা ছিলো,
সুন্দর স্বপ্নের আলোয় মুখ দেখার কথা ছিলো।
এই ভালোবাসাহীন সমাজে সবকিছু কথার কথা হয়েই পথ হারাবে,
কথা ছিলো বলেই কপাল ঠুকবে তবুও ভালোবেসে যত্ন নিবে না।
নিদ্রাহীন গতরের কাছে – দশ
লুফাইয়্যা শাম্মী
তার শরীরে কোনো বেদনা নেই
নেই অতীতের হৈ হুল্লোড়
নেই যাবতীয় ভাতের নেশা
তবু একটু সরিয়ে নিলে
ক্যামন যেন কুঁকড়ে উঠে!
তার ভেতরে অসংখ্য খেলার মাঠ, অসংখ্য ছেঁড়াফাটা। নিশ্বাস তার উল্টোস্রোতের দিকে মুখ করে আছে।
তাকে, আরো একটু তুলে নিয়ে
আদরে আহ্লাদে
রগরগা রাগে
নেমে আসে একদল কংক্রিটের প্রজাতি।
তারা তার শিশুমন নিয়ে খেলতে থাকে
তারা তার শরীর ছোঁয়ার অভিনয় করে
অথচ সে শিশু নয়
তার শরীর থেকে পোড়ামনের গন্ধ কেউ টেরই পায় না!
রোদন ভরা এ বসন্তে
শুক্লা পঞ্চমী
এইতো ধরো আর কদিন পরেই শীতের পাখিরা ফিরে যাবে
শূন্যতায় ফেলে দিয়ে উড়ে যাবে দেশে
বৈশ্বিক প্রণয়ে তাদের সাথে আমার বিচ্ছেদ
ঋতুর আবর্তনে কেবা মনে রাখবে
সমস্ত ভূগোল জুড়েই আমার ব্যারিকেড
পাখিমন কী করে তা বুঝবে?
প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকি পশ্চিমের সূর্য ডোবায়
দেখি কেমন করে নামে পরন্ত বিকেল
অন্তহীন বিষণ্ণতা মিলে যায় সমুদ্রে
আমার স্বপ্ন, কেবল ভিড় জমায় রাত্রির অন্ধকারে
শুনশান নীরবতা জ্যোৎস্না টুপটুপ
জানিনা এটা কিসের লক্ষণ, প্রেম না আগুন।
জীবনের পদাবলী
শাহিন আখতার
মানব জমিনে হয় কিসের আবাদ!
কিসের হাহাকার বাজে বুকের পাঁজরে?
ফসলের হাসি হারায়, অকাল প্লাবনে।
রাতের গভীরে শোন,
প্রভাতের ব্যাকুল কান্না।
অপেক্ষা করো, দেখো কোটি কন্ঠে
গীত হবে, জীবনের পদাবলী।
পান পর্ব
শ্রাবণী প্রামানিক
যতই ভিজিয়ে দাও আকন্ঠ
তৃষ্ণা ছাড়া পান অসম্ভব
যে তৃষ্ণার ফোঁটায় ফোঁটায় চিনেছি
গুপ্ত রণ ময়দান
সে তৃষ্ণা আমার শ্মশান মুখি হলো
পোড়াও ভাসাও বা মাটি চাপা দিয়ে দাও
সকল লেনাদেনার বন্ধ পথে বাতাসও বাড়তি
তোমার এই দিবসের শেষ গর্জন
আমার সমাপ্ত রজনীর বিষাদ রসদ।
বহুদিনের ক্লান্ত চোখ
হালিমা আক্তার রিপা
চোখের রঙ টা কেমন লাল হয়ে,
বিষাক্ত আকারের রুপ ধারন করে আসছে।
চোখের নীচের কালো দাগটাও কেমন
লেপটে জায়গা দখল করে বসে যে আছে।
প্রণয়লীলা খুব দূর থেকে আজ
হাতছানি দিচ্ছে।
কি যেন নাই-নাই, তবুও
পাবার ইচ্ছাটা প্রবল ভাবে আঁকড়ে ধরছে।
হৃৎস্পদন টা হঠাৎ-হঠাৎ খুব দ্রুত গতিতে
উঠা-নামা করছে
ভাবনা গুলি সব, বিষণ্ণতারা
ঘেরাও করে ঠায় দাঁড়িয়ে হাসছে।
বেঁচে আছি, এই ভেবে
কেউ ফিরেও তাকায় না
ভাবছে যে, হ্যাঁ…
ভালোই তো সে আছে।