অণুগল্প।। প্রিয়তমা সমীপেষু (প্রবাসী প্রেমিকার জন্য ভালবাসা) জাকওয়ান হুসাইন
প্রিয় ক্যারল
মেরিনো টরে, ১৫৭ ত্রপানি, সিসিলি, ইতালি।
বসন্তের উজ্জল দিনের আলোর শুভেচ্ছা নিও।যদিও এবারের বসন্ত আমাদের গ্রহের জন্য শুভ হয়ে আসেনি।অনেকদিন তোমার সাথে কথা হয়নি।তোমার দেশ ইতালির জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।ভালবাসার থেকে কর্তব্য অনেক বড়;আমাদের দুই সপ্তাহের বিরহ সেটারই প্রমাণ বহন করে। নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বেরিয়ে পড়েছিলে। অসহায় রোগাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তুমি নিজেই আজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছ। ক্যারল,আমাদের কি আর দেখা হবে না কখনো?তোমার আধো বাংলা উচ্চারনে আর তোমার কথা শুনতে পাবো না আমি? একটা সামান্য ভাইরাস তোমার আমার মাঝখানে জন্ম-মৃত্যুর দেয়াল তুলে দিলো?
পরিচয়ের পর থেকে কোন দিন দেখা হয়নি তোমার আমার।তাই বলে তো কখনো আলাদা ছিলাম না আমরা।প্রত্যেক সেকেন্ড আমি তোমাকে অনুভব করি ক্যারল।তুমি যখন ইতালির পোর্টোফিনোর গল্প করতে। তার চিত্রানুগ বন্দর এবং সুমদ্র সৈকতের গল্প করতে বিশেষ করে সন্ধ্যা বেলায় সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ের ভূদৃশ্যের অকল্পনীয় সুন্দরের গল্প শোনাতে তখন আমার মনে হতো আমি তোমার পাশে বসে পোর্টোফিনোর সমুদ্র সৈকতে তোমার পাশে বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিতে দিতে সূর্যাস্ত দেখছি।কিংবা তুমি যখন গ্র্যান্ড ক্যানেল, ক্যান্যালাসোর গল্প শোনাতে তখন আমি সত্যিই অনুভব করতাম, একটা চওড়া নৌকায় শুয়ে একবার আকাশের সুবিশাল চাঁদটাকে দেখছি আরেকবার তোমার মুখের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি কে বেশি সুন্দর? ইতালির আকাশের সুন্দরী চাঁদ নাকি আমার ভালবাসার ক্যারল!!
যখন আমালফি উপকূলের কথা বলতে আমি তখন এই উপকূলের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখতে পেতাম,উপকুল ভরা লেবু গাছের মুগ্ধ করা সুবাস পেতাম।
ইউফিজি গ্যালারী,দ্যা কলোসিয়াম,রোম কিংবা পিসার হেলানো টাওয়ার সবকিছুই আমি আমার চোখের সামনে দেখতে পেতাম তোমার বর্ণনায়। প্রিয় ক্যারল আমার, তুমি তো হেরে যাওয়ার মতো মানুষ নও? তুমি তো কথা দিয়েছিলে আমার সাথে আমার দেশের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে। পূর্ণিমার কাকফাঁটা আলোয় হাঁটবে আমার হাত ধরে।হলুদ শাড়ি পড়ে এক ভরা সন্ধ্যায় শহরের নীয়ন আলোয় হাঁটবে আমার আঙ্গুল ধরে। তোমার খোঁপায় থাকবে তখন বেলী ফুলের মালা।আমাকে ভালবেসে তুমি বাংলা শিখেছিলে।রবি ঠাকুরের গান,জীবনানন্দের কবিতার প্রেমে পড়েছিলে। হতে চেয়েছিলে নাটোরের বনলতা সেন।ক্যারল আমার নাটোরের বনলতা সেন,মৃত্যু শয্যায় মানায় না তোমাকে।ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তোমার আমার কদম্ববনে যাওয়ার কথা ছিল যে!হাস্নাহেনার সুবাসে মোহিত হবার কথা ছিল আমাদের।
তাইলে কি আর কোন দিন আমাদের দেখা হবে না ক্যারল? প্রণয় মৈথুনের প্রথম চুমুটা কি তাহলে অসমাপ্তই থেকে গেল আমাদের?যদি যাবারই হয় তাহলে আবার ফিরে এসো ক্যারল!ফিরে এসো এই বুকে কোন এক বসন্তে!যখন পৃথিবী সুশোভিত থাকবে নাম না জানা সব ফুলের সৌরভে।আরেক জন্মে আবার যখন আসবে ফিরে তুমি বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ফিরো,আমি কদম ফুল হয়ে অপেক্ষা করবো তোমার স্পর্শের জন্য। ভালবাসা তোমার জন্য ক্যারল।
ইতি
তোমার আমি
ঢাকা, বাংলাদেশ।