শুক্লা পঞ্চমী’র কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু অযুত প্রাণের নাম’ বইমেলায় ২০২০-এ পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরের লালিত যন্ত্রণা ” বঙ্গবন্ধু অযুত প্রাণের নাম ” বইটির মাধ্যমে কিছুটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ১৯৭৫ সাল, আমার কাছে আরেক যুদ্ধ । মা বলতেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নাকি মিলিটারি দেখার জন্য কান্নাকাটি করতাম। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমার কাছে তখন বোধগম্য ছিল না। বাঁচার টানে পরিবারের সাথে চলে গিয়েছিলাম ওপাড়ে । বোঝাপড়ার কিছুটা যখন আয়ত্তে আসলো ঠিক তখনি আবার ভিটের টানে ফিরে আসলাম। অনুপ্রেরণা ” বঙ্গবন্ধু “।বাংলাদেশ গড়ার নতুন স্বপ্নের ডাক দিয়েছেন তিনি । বাবা ওখানে থেকে যাবার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে, পূর্বপুরুষের হাওড় বাড়ির পরিত্যক্ত উঠোনে ফিরে এলেন। ভাবতেও পারিনি এমন ভাঙা জীবনও মানুষের হয়। সাপখোপ আর ঝাড় জঙ্গল দুহাতে সরিয়ে আমার পরিবার পুনর্গঠিত হবার নতুন স্বপ্ন দেখল।
সৌখিন বাবা প্রতিদিন রেডিওতে খবর শুনে শুনে আন্দোলিত হতেন । নিশ্চিত ভবিষ্যৎকে হাতছাড়া করে মা কিছুটা অনুতপ্ত। বাবার প্রতি আমার বেশ রাগ হতো। এমন বিজলীবাতি থেকে সরিয়ে এনে একটা ভৌতিক পরিবেশে উঠিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে দেশের টান বলতে কিছু বুঝিনি তখনো।
শ্রাবণ মাস ঘন মেঘের খেলা। হাওড় এলাকায় টানা সাতদিন আটদিন ধরে বৃষ্টি ঝরতে থাকে। ঘর থেকে বের হওয়ার জো নেই। এমন পরিস্থিতিতে শুধু কান্না পেতো। মনে পড়তো আসামের ছোট বড় টিলাগুলোর কথা আর আমার প্রিয়বন্ধু কল্লোলের কথা। প্রতিদিন দুইজনে মিলে ঘর থেকে কলা চুরি করে নিয়ে বানরকে খাওয়াতাম। কী কারণে সেদিন বাবা অনেক চেষ্টা করেও তার একমাত্র সঙ্গী রেডিওটা চালু করতে পারছিলেন না। অনুসন্ধান করে ব্যর্থ হলেন। ১৫ আগস্ট শুক্রবার। টানা দশদিন পর স্কুলে গেলাম। দ্বীপের মত বাড়ি গুলি। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে নৌকার পথ। হরিকাকা ( আমাদের বাড়িতে কাজ করত) আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে একটু পরেই আবার নৌকা নিয়ে ফিরে এলো। মনে পড়ে সেদিনের তার তারস্বরে চিৎকারের কথা। ধারনা হয়েছিল কেউ মারা গেছে। কিন্তু না। বাড়িতে গিয়ে দেখি অদ্ভুত পরিস্থিতি। ঘরের দরজা প্রায় বন্ধ, অল্প ফাঁকা রেখে সবাই ঘরে ফিসফিস করে কথা বলছে। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতেই মা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন “বঙ্গবন্ধু আর নাই”।
সুপ্রিয় পাঠক, পরের কাহিনী ভয়াবহ। সেদিন রাতে ডাকাত নামে হামলে পড়লো দুর্বৃত্তের দল। টার্গেট আমার বাবার মাথা আর পৈতৃক ভিটে। তখন বুঝতে পারলাম আমাদের মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গেছে। নাহলে এমন দুঃসময় আসবে কেন? তারপর আর তারপর। বাকীটা বলব অন্য গল্পে। আমার ভিতরের দ্রোহ শব্দে রূপ নিবে ভাবিনি কখনো। অকৃত্রিম ভালবাসা আর শ্রদ্ধা আমাকে প্রতি মুহূর্তে প্রাণিত করেছে। আমি ভেবেছি ভালবাসার ঋণ কী করে শুধাবো? বিদ্যাদেবীকে ডাকলাম জানিনা তিনি কী দিয়েছেন। প্রিয় পাঠক আপনারাই তা বিচার করবেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শত কবিতা লিখেছি তারই কীর্তির উপর ভিত্তি করে। তার লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী ” ” কারাগারের রোজনামচা ” এবং সহায়ক আরো বেশ কিছু বই আমার তত্ত্ব উপাত্তের সহায়ক। লিখতে লিখতে মনে হয়েছে, তাঁকে নিয়ে একশত কেন,হাজার কবিতা লিখলেও ফুরবে না।
বইটি দ্বিভাষায় হোক এই ইচ্ছা আমার শুরু থেকেই ছিল। কাকে দিয়ে ইংরেজি করাব ভেবেছি। কৌশিক দাদা থাকেন কলকাতা। দাদার অনুবাদ প্রায়শই এফ বি তে দেখতে পাই। এমন সুন্দর অনুবাদ আমাকে খুব লোভী করে তুলল। সাহস করে একদিন বলেই ফেললাম ইচ্ছার কথা। দাদা এমন অনায়াসে আমার স্পর্ধাকে সাড়া দেবেন ভাবিনি। প্রথমে কথা হয়েছিল পুরো কবিতাগুলিই অনুবাদ করবেন। কিন্তু দাদার ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার জন্য পুরোটা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। এখন বাকীগুলো? আবারো নতুন করে চিন্তা। কৌশিক দাদার মত এমনই একজন অশোক দাদা। থাকেন আমেরিকা। অনুবাদ করে প্রায়শই পোস্ট দেন এফ বিতে। অল্পদিন দাদার সাথে পরিচয়। তবুও সাহস নিয়ে বললাম আমার মনের কথা। দাদাও আমাকে এতো সহজে সহায়তা দেবেন ভাবিনি। সত্যিকার অর্থে আমি বলে কোন বিষয় নয়। নামটা কার জড়িত, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা কার নেই? পূর্ণ হলো আমার মনোবাসনা। ধন্যবাদ দুই দাদাকে। এখন বাকী থাকলো প্রকাশনা। প্রথমেই মনে আসলো ” আগামীর” কথা। আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম। গণি ভাই – ই উত্তম উপস্থাপক হবেন। সাহস করে ফোন দিলাম। প্রথমেই এতো আন্তরিকতা আর সহযোগিতা পাবো ভাবিনি। অত্যন্ত কৃতজ্ঞ গণিভাইয়ের প্রতি। প্রচ্ছদের ব্যাপারে না বললেই নয়। অত্যন্ত পরিপাটি প্রচ্ছদটি করেছে নির্ঝর নৈঃশব্দ। সর্বোপরি আপনারা সকলে আমার সাথে রয়েছেন। কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে বইটি আগামী প্রকাশনী থেকে পুরো তাদের তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের বইমেলাতে আসবে। বইটির সার্বিক দায়িত্ব পাঠক আপনাদের উপর ছেড়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভ কামনা।
পাওয়া যাবে :-
আগামী প্রকাশনী
প্যাভিলিয়ন -১
বইটির মূল্য – ৫৫০ টাকা
মেলার ছাড়ে -৪০০ টাকা