আজিজ কাজল- এর কবিতা

পর গন্ধ ঝোপ ১

সূর্যবন্দি হতে চেয়ে পেলাম প্রেত-পাখির ঘ্রাণ
কতো পলি এলো-গেলো সন্ধ্যার নরম আলকাতরায়
প্রতিদিন নিজেকে বাধো গেঁয়ো ফকির বন্ধনে;
এখনতো নিজ বাড়ি-পরিচয়েও থাকে দ্বিধার নিম
অজপাড়া-গাঁ’র ছেলে বলে!

সেই বর্গীকালসহ আরো ক্রুর চোখ পেরিয়ে
মনো-ভূমে এখনো ভজে আছি পর-গন্ধ ঝোঁপ;
শতো নুন-কানুন, শুকনো জ্ঞান, প্রজ্ঞা-ধীমানে

আমাদের পাঠসূচিতে প্রতিদিন নামছে সকাল—
অথচ এখনো মধ্যাহ্নও আসেনি।

পর গন্ধ ঝোপ ২

ভালবাসি সোনালু আঁশ, কাঁচা পাটের সুতাগন্ধ;
তোমার অহিংস কথার অমেয় পানে, মরিচ লতার
ঘাম থেকেও নামে শুচী-সূত্র। দেখো, ত্রিফলার বহ্নি
খেতে খেতেও একদিন শরীর হয়ে যায় বুনট বাঁধা লাল বাদলের ষাঁড়

এই স্বাস্থ্যবান ভাটি-তুলার মাথায় নাচে শিমুল পাখির গন্ধ, দীর্ঘ পরমায়ু চোখ—

নিজেকে ঘোলা-ওঠা খরস্রোতা নদী ভাবতেই
বেশি ভাল লাগে; জারজ গন্ধ ছেড়ে, সোনা সোনা লোভ ছেড়ে তাকাই অমৃত বিহানে।

পর গন্ধ ঝোপ ৩

অথচ তোমার ভোরের চাঁপা মুর্হুমুহু অমেয় সন্ধি
এখনো মান্য করি; শিশির সাঁকো পেরিয়ে
শতো সহস্র পা-ধ্বনি রেখে ,ঠিক-সমীরণের
স্বাস্থ্যকর পথ ছেড়ে সাজাই ধোঁয়াশা দিনের শ্বাপদ

যতোই কিনে যাই নতুন ধুলার পাঠ-কড়ি
সাথে থাকে শুধুই সহিংস জেল্লা,
বিশাল উরাধুরাময় অস্বাস্থ্য পরম্পরা

এই হরিণছুট দিনে, আরো মিছে ইতিহাস পেরিয়ে
সোনা সোনা মাটির ঝলকে জমা রাখি প্রত্নপুর।

পর গন্ধ ঝোপ ৪

তোমার খনিজ পাতার আম-গন্ধে পাগল হয়ে ওঠি সুঁই-হরিণী চোখ থেকে ঝরে পড়ে রাগ,
নৌকা দিনের বাদল-ছুট কী-ফর্সা! স্বর্ণময় হয়ে
আছে; ঝিলের পাখনায় নাচে মন-বাও মৎস্য ঘাট

কড়ি-বাকলের দিনগুলোতে, শাকপাতা দিয়ে পাকাতাম দেহ ঘড়ি; জোছনা জোছনা পাখা মেলে, মন আনন্দে খেতাম কৈ-করলার স্বাস্থ্যকর স্যুপ

এখন জল-ঝুপ থেকে উঠে যাওয়া সমস্ত বকগুলা যন্ত্রমূক—কথা বলে স্যাটেলাইট ভাষা-চরিত্রে; আমার মন-চুনিয়া আরো বেশি বেশি আন্ধা হয়ে যায়; শক্তিশালী স্মৃতিগুলা উঝাট খায়, ফেটে ফেটে যায় এক নিমেষে।

পর গন্ধ ঝোপ ৫

তোমার তামাটে ছৈ-চিত্রে হাজারো শিল্পকলা
শতো শতো বর্ণনার ঘুরণগুলা এখনো ওৎ পেতে আছে; সৃজনের সুরেলা-মাগি তে মায়া মায়া
বাহু ডোরে বাঁধো তারে—

তৎসম শব্দ-ঝুলের শরীর, ছায়া ছায়া আরো
সান্ধ্য-লাইন ছেড়ে, স্বদেশি শব্দকুলেই নামাবো জোছনা পাখি; নিজেদের স্বরে-ব্যঞ্জনে বানাবো
সিদ্ধ ব্যাকরণ—

শ্যেন-সেন কুলিন, রক্তবর্ণ চোখের পাষাণে
এঁকে দিয়ে পদচিহ্ন; ধরাবো অনার্য পালের গোদা।