শিল্প-সংস্কৃতি

আজ শিশুসাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ- এর জন্মদিন কাব্যশীলনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা

তিনি গল্প বুনিয়ে। কথার পিঠে কথা দিয়ে গল্প বোনেন। কত্ত রকম গল্প! ফুলের গল্প, পাখির গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, একুশের গল্প, বাংলাদেশের গল্প। যে কোনো কিছু দিয়ে গল্প বুনতে পারেন।
মূল নাম বি এম রিয়াজ আহমেদ। জন্ম ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় নানাবাড়িতে। লিখছেন প্রায় তিরিশ বছর ধরে। যদিও শুরুটা করেছিলেন ছড়া দিয়ে, কিন্তু গল্পলেখক হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। ছড়া ও গল্প ছাড়াও লিখছেন প্রবন্ধ, উপন্যাস, ফিচার, বই আলোচনা, অনুবাদ। কেবল পড়তে শিখেছে, এমন শিশুদের জন্য লিখছেন যুক্তবর্ণবিহীন গল্প। দেশে প্রথম যুক্তবর্ণবিহীন গল্প তিনিই লিখতে শুরু করেন।
প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। বইয়ের নাম গল্পকুমার। প্রকাশক বর্ণবিচিত্রা। পরের বই প্রকাশিত হয় দুই বছর বাদে ২০০৩ সালে। এরপর দীর্ঘ বিরতি। পরের বই প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। তারপর থেকে প্রতিবছর একাধিক বই প্রকাশ হতে থাকে। বর্তমানে তাঁর বইয়ের সংখ্যা দেড়শরও বেশি। লেখালেখির জন্য প্রথম স্বীকৃতিটাই মিলেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে। ২০০৯ সালে (বঙ্গাব্দ ১৪১৫) ‘আঙ্কেল গ্রেনেড ও তার দল’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন ‘অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। গল্পের জন্য চারবার সৃজনশীল শাখায় ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন-২০১১, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে ‘হাঁসজারুদের গল্প’ বইয়ের জন্য সাধারণ গদ্যে ও ২০১৬ সালে ‘একাত্তরের বীরবিচ্ছু’ বইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে পেয়েছেন ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। ২০১০ সালে ‘দুই গোয়েন্দা এক রহস্য’ বইয়ের জন্য সেরা রহস্য ও ২০১৪ সালে ‘হাঁসজারুদের গল্প’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক সেরা লেখক হিসেবে ‘ছোটদের মেলা পুরস্কার’। এছাড়া সার্বিক লেখালেখির জন্য পেয়েছেন ‘শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী’ পদক।
লেখালেখির শুরু কলেজ জীবন থেকে বন্ধু প্রশান্ত রায়ের উৎসাহে। প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছিল শিশুসাহিত্যিক মোস্তফা হোসেইনের হাত ধরে ২০০১ সালে। আর্ন্তজাতিক প্রকাশনা সংস্থা ‘রুম টু রিড’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ছয়টি বই। সিসিমপুর থেকে চারটি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং রুম টু রিডের উদ্যোগে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য লিখেছেন ডেকোডেবল বই। প্রথম শ্রেণির ডেকোডেবল বইয়ের লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সেভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে ২০১৭ সালের জন্য প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্যোগ নিরাপত্তা বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে দুটি করে চারটি গল্প লিখেছেন তিনি।
হিলাল ফয়েজী সম্পাদিত দেশের প্রথম পাক্ষিক কিশোর পত্রিকা ‘কিশোর ভুবন’র নির্বাহী সম্পাদক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার শিশুকিশোর প্রকাশনা ‘টুনটুন টিনটিন’ ও স্কুল ভিত্তিক প্রকাশনা ‘ক্যাম্পাস’র বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কাজ করা শুরু করেছেন শিশুসাহিত্য নিয়ে। কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর সাপ্তাহিক, বর্তমানে মাসিক ‘কিশোর বাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক। তবে তাঁর লেখালেখিই তাঁর মূল কাজ।
২০২০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে ১৬টি বই। ‘লাহোর টু গোপালগঞ্জ’, ‘একাত্তরের তোতাকাহিনি’, ‘আষাঢ়ে ভূতের খপ্পরে’, ‘সই লো সই’, ‘বনমুরগির ছানাটি’, ‘ গোয়েন্দা টিকটিকি ও হারানো ডিম’, ‘ ছোটবিড়াল বড়বিড়াল’, ‘আকবর ও তার নয় রতœ’, ‘সত্যবীজ’, ‘১০০ ঈশপ’, ‘১০০ গোপাল’, ‘১০০ হোজ্জা’, ‘১০০ বীরবল’, ‘২৫ মনিষীর ১০০ গল্প’, ‘সিংহ এলো সেলুনে’, ‘খারাপ স্পর্শ না-আ-আ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *