লুৎফুল আহসান।। গুচ্ছ কবিতা
লেমিনেটেড মানুষ
আমাদের কিছু লেমিনেটেড চোখ
লজ্জা-ঘৃণা, জলের ছিটার ধার ধারে না
হঠাৎ ভীষণ অবাক হলেও ক্ষাণিক পরেই খুব স্বাভাবিক
আমরা ক’জন শান্ত মানুষ মুচকি হেসে ছুটছি চতুর্দিক
ক’দিন ধরে ব্যস্ত ভীষণ; ক্লান্তিতে চোখ নিভে গেলে যাক
বড়জোর দুটো কবিতা লেখা যায়; তাও থাক
পরে আবার কি না কী ঝামেলা হয়
দু একজনের আন্দোলনে কী আর হবে বিশ্বজয়!
কিছুটা বরং ঘুমিয়ে নেয়াই শ্রেয়
বস বলেছেন, “ক্লায়েন্ট মিটিং; সকাল সকাল অফিস যেও “
ছুটির দিনে হাতে ভালোই সময় থাকে
চাইলেই তাই ঘুম ভাঙে না, এমন সু্যোগ
সপ্তাহে আর কবার আসে?
তার উপরে জুমার নামাজ, মাঝে-সাঝেই বিয়ের দাওয়াত
আমাকে চাই, চাই ই আমার বউয়ের পাশে।
আমাদের এই এমনতরো জীবন-যাপন
এর বেশি নেই সহজ-সরল ভাগ্যরেখায়
একটা খবর দিনে বড়জোর দুবার দেখায়।
এই আমাদের লেমিনেটেড চোখের আলো
আমাদের তাই লেমিনেটেড মানুষ বলাই ভালো।
ভালো থেকো
আরো কিছু নিশুতি রাত পাশাপাশি দাঁড়ালে
আঁধারেই ডুবে যাবে তোমার শহর
তুমি হয়তো ভাবছো প্রিয় আলোর দল
তোমায় নিয়েই বাঁধবে নতুন ঘর।
জোছনায় ঝলমল উঠোনের চারিদিক…
হৃদয়ে আগুন নেভার পরেও হঠাৎ জ্বলে কোন ছলনায়! ক্ষণে ক্ষণে…
তোমার চতুর ভালোবাসার দায় এড়ানোই ঠিক,
ভালো থেকো।
তোমার পাশেই ঘুরছে হাজার মানুষখেকো।
নীল তারাদের সঙ্গী যখন আধখানা চাঁদ হাওয়ায় ভাসে
তুমিতো নও একলা একা, তোমার তাতে কি যায় আাসে!
তুমি বরং শিউলি ফুলের মালা গাঁথো নিঝুম রাতে
ভালো থাকার মন্ত্র আমি দিলাম তুলে তোমার হাতে।
আমার যত সস্তা চিঠি খুব গোপনে পুড়িয়ে ফেলো
না হয় কিছু নষ্ট স্মৃতি প্রহর শেষে হারিয়ে গেলো
তোমার গোপন প্রেমিক যেনো দেখতে না পায়; দৃষ্টি রেখো।
ভালো থেকো।
পৃথিবী ধ্বংসের উপাখ্যান
তোমাকে মনে করতেই
কয়েকটি ঘুঘু আচমকা মরে গেলো,
আমি ভাবলাম, তোমাকে আর মনে করবোনা।
চোখের কালো পাপড়িগুলো কতটা ফাঁকা!
ঠোঁটের পাশে কতটা তিল সত্যি আর কতটা হাতে আঁকা…
থাক! তোমাকে মনে না পড়লেই হলো,
আমার একলা রাতের সঙ্গী
তোমার একলা দিনের দুঃখগুলো।
তোমার দুঃখগুলো মনে করতেই
আরো একটা শালিক মরলো…
তার চেয়ে ভালো আমাদের কিছু সুখের কথা ভাবি
তোমার হালকা বেগুনি শাড়ি, আমার হলুদ পাঞ্জাবি;
তেমন একটা মানায়নি যদিও!
সময়টা বেশ মধুর ছিলো;
আরো দুটো ‘বউ কথা কও’ পাখি
ডাক থামিয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে গেলো; হতাশাতেই,
হৃদয়ে বুলেট- রক্ত মিছিল, ভাঙচুর এলোমেলো।
তোমাকে মনে করতেই…
ঠিক করলাম, যতই তোমার স্মৃতিরা গোপনে ডাকুক
ভালোবাসা কিছু হৃদয়ে থাকে তো থাকুক!
চোখদুটো বন্ধ করেই হাঁটবো স্মৃতির রাজপ্রাসাদে।
তোমার হঠাৎ বদলে যাওয়ার আশির্বাদে।
চোখ খুললেই হয়তো দেখবো,
তোমাকে মনে করতে করতে…
উথাল-পাতাল হাওয়ার তালে পৃথিবীটাই উল্টে আছে,
ধ্বংসস্তূপে কেবল আমি; বন্দী তোমার অসহ্যকর স্মৃতির কাছে।
আকুতি
তুমি বরং আমায় ফিরিয়ে দাও
সরিয়ে নাও চোখ, আমার দু চোখ থেকে
যে কটা আলো এখনো জেগে আছে শহরের বুকে;
নিভিয়ে দাও,
আজ রাতে এ শহর আধারেই ডুবে থাক।
যে কটা তারা গেঁথে আছে রাতের খোঁপায়
আমায় তুমি ফিরিয়ে দিলে,
বড়জোর ঝড়ে যাবে উদাসী বকুলের মতো…
তোমার আমার বেড়ে যাওয়া প্রেমের অসুখে
আকাশটাকে অঝোরে কাঁদতে দাও
ব্যস্ত মানুষগুলো একটু ঘুমিয়ে নিক
আমায় ফিরিয়ে দাও! কিছুতো দেয়া হবে।
কিছু প্রেম তারা হয়, কিছু হয় পাখি
কিছু ফুল নদী ছোঁয় বিসর্জনের পর,
কিছু ঝড়ে নদীতেই।
আমাদের প্রেম হবে পাখি; ঘর পালানো রোদ।
আমায় অন্তত ফিরিয়ে দাও!
বেঁচে থাকুক প্রেম,
তোমার আমার পাখিহীন এ শহরের বুকে।
ব্যক্তিগত
‘আমাদের’ বলতে কিছু আর নেই,
পাহাড়, নদী, তোমার শাড়ির মত নীল আকাশ
সবকিছুই তোমাদের দখলে; এমনকি এ শহরটিও
খোলা উঠোনের ছলে বন্দী করেছে আমাায়
সবচেয়ে উঁচু ছাঁদের কার্নিশে।
আমাদের বলতে কিছু নেই ,সবটুকুই তোমার
তোমাদের পৃথিবীর কাঙ্খিত অভিমানে-রাগে
আমি ই কেবল রয়ে গেছি আমার ভাগে।
পালিয়ে বাঁচার সম্ভাবনা এখানে নেই
তবুও একটি অসমাপ্ত কবিতা লেখার পর,
কোন এক লজ্জাঢাকা রাতে টুপ করে ঝড়ে পড়া যায়
কার্নিশে জমে থাকা ব্যার্থ শিশিরের অনুকরনে ।
জীবন বলতে এখানে কিছুই নেই,
আকাশের উড়ে চলা রাশি রাশি তারাদের
আর যাই হোক;কিছুতেই পথিক বলা যায় না ।
যেমন বলেনি কেউ,
‘আমাদের’ বলতে অনেক কিছুই আছে
অন্তত এ আকাশটা আমাদের; ছুয়ে নাও!
অথচ বলা হলো “বাঁচতে চাইলে মেনে নাও; ‘আমাদের’ বলতে আর কিছু নেই
পালিয়ে গেলে বড়জোর মরতে পারো”।
তোমাদের নামে লেখা পৃথিবীতে
‘আমাদের’ আকাশ বলতে কোথাও কিছুই নেই।