সাঈফ ফাতেউর রহমান এর গুচ্ছ কবিতা
মাটিলগ্ন ধানস্নেহে হেমন্তের শিশিরস্মিত মাঠে
হেমন্তের চাঁদ শুয়ে আছে ধানের ক্ষেতে
আমি শুয়ে আছি উর্ধমুখ আকাশের দিকে উন্মুখ
শিশিরকণা আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে শরীর আমার হিমস্পর্শতায় আমি স্থানু শূন্যানুভবে আকাশে তাকিয়ে নিজেকে অনুসন্ধানে
আগমন উৎসাধার অথবা প্রস্থান পরবর্তী আবাস অথবা অন্যতর!
স্থিরীকৃত চিন্তা কিছু নেই তবু নিবিড় মগ্নতায় আঁতিপাতি দৃষ্টি বিচরণ।
এখন এই হিম প্রগাঢ় হৈমন্তি সন্ধ্যায়
চন্দ্রময় ধানের মাঠে নিঃসঙ্গ নই আমি
মৌ মৌ পাকা ধান সুগন্ধে জীবন আবাহন
টুপটাপ শিশির পতন ধ্বনিময় অমিত সুস্বর
পূর্ণ জীবনপ্লুত অলকার মনোহরতার বিপুল উদ্ভাস
এই মগ্নমাঠে হৈমন্তি আঘ্রাণের অসামান্যতায় পূর্ণপ্রভ বোধ!
নিঃশব্দ গীতলতায় সারেঙ্গী এস্রাজ
বায়ু মৃদু আন্দোলনে ধানের নাচন
উর্ধমুখ দৃষ্টিমগ্ন আমার শব্দহীন ঐক্যতান
মহাজীবনের বিপুল বিস্তারের সাথে বোধের মোহন সন্মীলন
এক অনন্তপ্লাবী নেপথ্য সুরধ্বনীময়তার নিস্তরঙ্গ সুনীল বিভাস
ভাসমানতার সাথে সম্মত সখ্যের লহরীতে কী-বিপুল হার্দ্য উদ্ভাস!
মাটিলগ্ন ধানস্নেহে
হেমন্তের শিশিরস্মিত মাঠ
আমি লগ্নমৃত্তিকায় মগ্নশুয়ে মাঠে
আকাশ আমার সাথে অবিচ্ছেদ্যতায়
মাটি প্রকৃতি নীরবতা ফসলের জীবন আঘ্রাণ
মহাজীবনের সবকিছু আছে আমার আয়ত্তে এই হৈমন্তি সন্ধ্যায়।
ফিরবোনা স্নেহার্দ আলোর আভায়
তোমার জন্য করতে পারিনে এমন কিছুই নেই
কেবল ভালো হতে বলোনা আমাকে, আলোয় ফিরতে বলোনা
বিবরের সুগন্ধের প্রীতিতে মগ্ন হয়ে আছি
আঁধারের অলৌকিক আকর্ষর্ণের তীব্রতায় বুঁদ
অশীলের প্রণয়মগ্নতায় বিপুল প্রবল সুখানুভব
এমন সন্তোষ গৃহস্থালি ছেড়ে আলোয় আসতে বলোনা
আঁধারেই আছি, তোমাকে নিয়েই স্থায়ী আঁধারবাসী হই!
আঁধারে অবস্থানের তির্যক আনন্দ ত্রিভূবনে কোথাও পাবেনা।।
তোমাকে ছাড়তে পারবোনা
আঁধার জীবনও অবশ্যই নয়
আঁধার এবং তোমার সহাবস্থান চাই
আমার দ্যূতিয়ালিতে তুমিও আঁধার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাও
দেখো, বিকৃত হলেও, বিপুলানন্দ সম্ভার ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার পদতল
আর সেই পদসেবা দৌভাগ্যধন্য কী-বিপুল আনন্দাভাসে ভেসে হচ্ছি সম্পন্ন পরিমল!
তুমি শুধু সঙ্গ দাও, পরিত্যাগ করোনা আমাকে,
আলোকে ফিরবোনা, তবু তোমাকেও ছাড়বোনা, জেনো নিশ্চিত।
স্থির লক্ষ্যে অগ্রবর্তী
তোমাকে চাই, তোমাকেই চাই
আঁধার জীবনও নিশ্চিতই চাই
সমন্বয় দুরুহ জানি, তীব্র সুকঠিন
তবু তা অর্জনে আমি নিবেদিত নির্ঘুম
শত প্রতিবন্ধক গ্রহণীয়, তবু নিশ্চিত তোমাকে চাই
ক্রম গতিপ্রাপ্ততায় যদি গভীরতম আঁধারেও নামতেও হয়
নেমে যাবো, তবু কখনোই ফিরবোনা স্নেহার্দ আলোর আভায়।
সমর্পিত নতজানুতায় প্রণতি
কিছুই বলার থাকেনা যখন
বোবা ভাষা গ্রাস করতে নিতে থাকে
সমর্পিত নতজানুতায় প্রণতি জানাতে থাকি
অক্ষমতার বন্দনায় মুখর হয়ে উঠতে থাকি মূকাভিনয়ে
আর কী-আশ্চর্য এক কোমল অনুভূতি অমল অধিগ্রহণ করতে থাকে আমাকে।
আমি বিদূষকের মত হয়ে যাই
নিজস্ব কোন অনুভব নেই, ভাষা নেই, করণীয় নেই
কেবল নির্দেশিত আগমন, দৃশ্যায়ন, করণীয় সম্পাদন
তারপর ললিত অললিত প্রস্থান, নির্দেশিত যখন যেমন
ইশারা ভাষা অথবা অঙ্গা-মুদ্রা আয়ত্বে এসেছে, সমস্যা কিছুই আর নেই।
ঠুলি আঁটা গবাদির মত চক্রাবর্তন
ফসলে মুখ দেওয়ার সক্ষমতা নেই, ইচ্ছে হলেও
কেবল চক্রাবর্তনে অবিরাম ঘুরে ঘুরে একই স্থানে অবস্থান
মূলত আমার অবস্থানের সাথে গবাদির মৌল প্রভেদ কোন নেই
ইদানীং অনায়াসে জাবর কাটার অভ্যাস তাই পারঙ্গম আয়ত্ত করেছি।
চক্রঘূর্ণনে অভ্যস্ত এখন
নিজস্বতা বোধ অনুভব অপসৃত
ঠুলি-মুখ চক্র ঘূর্ণনের বিষাদে আনন্দ খুঁজি
অন্যের অন্ন প্রক্রিয়ায় আমার নিয়ত কায়িক অবদান
মানুষেরা করেনা এমন, আমি মানবেতর, মানবকুলের পুষ্টি-তুষ্টি আমারই তো দায়!
জাল-সখ্য এমন গভীর যদি
এমন চাল দেবো, অপ্রত্যাশিত তোমার কাছে
এক চালে অনিবার্যভাবেই কিস্তিমাত হয়ে যাবে
আর তুমি বিস্ময়ে বিস্ফারিত মুখে ছিঁড়বে মাথার চুল
প্ররোচিত করবো তোমাকে প্রস্থানের, তুমি পা ফেলবে পিছনে
আশায় থাকবে, অবিলম্বে সহযাত্রী হবো আমিও, আশা অপূরণ, একাকী চলতে হবে।
ব্যথাতুর কষ্টমুখ কিঞ্চিৎ বিভ্রমিত তুমি
যাবে, না ফিরবে আবারও দ্বিধাময়তায়
স্বভাব নিয়মে আমি নিজের মতোই ব্যতিব্যস্ততায়
তোমার অপ্রসন্ন হতচকিত অবয়ব দেখার সময় কোথায়!
এক পা পিছনে আবার এক পা সামনে তুমি
কিংকর্তব্যবিমুঢ়তায়।
চাল দেওয়ার পারঙ্গমতা আমার অপার
সর্বজনবিদিত না হোক অনেকেরই জানা
পারতপক্ষে তাই আমার পরিসরে আগমন ঘটেনা কারও
হতভাগ্য অথবা অতি নির্বোধ ছাড়া কেউ করেনা পদার্পণ
কোন বিভ্রমের বশবর্তী তুমি যে এমনতর এসে পড়লে আমারই আওতায়!
করুণার জল ঝরাতে পারি ফোঁটাফোঁটা
আন্তরিক হবেনা সেটা, অস্বীকার করিনা আমি
জালবন্দী হওয়ার জন্য উদগ্রীব, সদা ছটফট যারা
তাদেরকে উদ্ধার করে অনুদ্ধারতায় নিক্ষেপই তো আমার প্রিয়তর
জাল-সখ্য এমন গভীর যদি, এসো, সম্পন্নতায় তোমার বিভ্রমাগমণ উদযাপন করি।
নব সম্ভাবনা নেবো খুঁজে
সুরক্ষা বাঁধ দিয়ে বাঁধবো নিজেকে
নিজের দু’কুল রক্ষার দায় নিজেকেই নিতে হবে
ক্রমে অপসৃত জীবন সময় অপ্রত্যাবর্তন সম্ভার নিয়ে
রিক্ততার শূন্য থলিতে কেবল পোড়া যন্ত্রণার হাহাকার!
যা গিয়েছে চলে, অতীত এখন, অশ্রু ঝরিয়ে ফলোদয় নেই
বরং এখন সুমিত আলোয় খুঁজে নেই নবপথ
যা হলোনা আজ, কাল তা হবে, এই প্রত্যয়ে বুক বাঁধি!
না পারা বা না পাওয়া কোন চূড়ান্ত তত্ব নয়
অনর্জনের বিপরীতে থাকে অর্জন সম্ভাবনা
এই বিশ্বাসে প্রভাময় বলীয়ান থাকি!
নবালোক দেবে ডাক
নব সম্ভাবনা নেবো খুঁজে
নব নবীনের সখ্যে সুপ্রীত হবো
নব প্রবেশনের হবে দ্বারোদ্ঘাটন
কোন প্রতিবন্ধক অচলায়তন হতে পারবেনা
কোন আল্পস হিমালয় চির দুর্গম হতে পারবেনা
কোন মহাজীবের আগ্রাসী হা অতল গহ্বর হতে পারবেনা
নিজের দু’পায়ে অজেয় গতির অমিত প্রস্রবন স্রোতাবেগ যদি
কে আছে তোমাকে প্রতিহত করে নব অভিযানের সুনিশ্চিত অগ্রাভিযানে!
সাফল্য তোমাকে বরণ করতে ফুলমালা নিয়ে অপেক্ষমান আগত শোভন নব বৎসরে।