বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আহমেদ রিয়াজের অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লাহোর টু গোপালগঞ্জ আসছে
আহমেদ রিয়াজের অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ‘লাহোর টু গোপালগঞ্জ’।
শেখ মুজিব তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। শরীরে ভীষণ ব্যথা। পুলিশি হামলায় আহত। পায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছেন। হঠাৎ খটাখট, খটাখট। বুটের শব্দ। পুলিশ আসছে গ্রেফতার করতে। করুক। গ্রেফতারে ভয় পান না মুজিব। কোনোদিন পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনও করেননি। তবু জীবনে প্রথমবার পালানোর উদ্যোগ নিলেন মুজিব। কেন? দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানী তাঁকে গ্রেফতার না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পালালেন মুজিব। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পলায়ন। দেখা করলেন ভাসানীর সঙ্গে। ভাসানী তাঁকে দিলেন আরো বিশাল এক দায়িত্ব। লাহোর যেতে হবে।
এটা কী মুখের কথা! পাসপোর্ট নেই, গরম কাপড় নেই, টাকা-পয়সা নেই। ওদিকে আঠার মতো পিছনে লেগে আছে পুলিশ আর গোয়েন্দা। মাথার উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা। সবকিছু জয় করে দুর্ধর্ষ এক অ্যাডভেঞ্চারে নামলেন মুজিব। এমনই এক অ্যাডভেঞ্চার, যা কল্পনাকেও হার মানায়।
কেন এই অ্যাডভেঞ্চার
বঙ্গবন্ধু। উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক মহানায়কের ছবি। বাঙালির স্বাধীকার আদায়ে যিনি ছিলেন সংগ্রামী, ত্যাগী সাধক। এ জন্য তাঁকে সইতে হয়েছে জেল, জুলুম, নির্যাতন। হাসি মুখেই তিনি সব মেনে নিতেন। কারণ তিনি জানতেন, অর্জন এমনি এমনি আসে না। কষ্টের বিনিময়েই আদায় করে নিতে হয়।
গ্রেফতারে কখনও ভয় পেতেন না মুজিব। ১৯৪৯ সালের ১২ অক্টোবর জীবনে প্রথমবার তিনি পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে পলায়ন করলেন। তবে সেটা নিজের ইচ্ছায় নয়-দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানীর নির্দেশে। এই পলায়ন করতে গিয়ে যে ঝুঁকি তিনি নিয়েছিলেন, অকল্পনীয়। এটাকে সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার না বলে উপায় আছে?
এখানেই শেষ নয়। আসল অ্যাডভেঞ্চারের কেবল শুরু।
গ্রেফতার এড়িয়ে শেখ মুজিব দেখা করলেন মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে। এবার মাওলানা ভাসানী নির্দেশ দিলেন তাঁকে লাহোর যেতে হবে। দেখা করতে হবে লাহোরে অবস্থানরত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে।
বিষয়টা যে কত কঠিন, সে সম্পর্কে সম্ভবত মাওলানা ভাসানীও ওয়াকিবহাল ছিলেন না। ভাসানী এমনভাবে নির্দেশ দিলেন যেন, হয়ে যাও ছিম ছিম- আর হয়ে গেল। নির্দেশ শুনে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারলেন মুজিব। ঢাকা থেকে লাহোর! এ কী মুখের কথা! তাঁর পাসপোর্ট নেই, গরম কাপড় নেই, অর্থসংকট। তার ওপর মাথার উপর ঝুলছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। পিছনে লেগে আছে গোয়েন্দা। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে লাহোর যাবেন কী করে? আবার ফিরেই বা আসবেন কী করে? এ যেন বাঘের খাঁচায় ঢুকে আবার ফিরে আসা।
তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বাঙালির স্বাধীনতা এসেছে তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে। কিন্তু ১৯৪৯ সালে শেখ মুজিব তখন তরুণ নেতা। বয়স মাত্র ঊনত্রিশ। এই বয়সেই তিনি অসম্ভব কঠিন কাজে নেমে পড়লেন। লাহোর রওনা দিলেন। তারপর? বাকিটা ইতিহাস। বৈচিত্রময় এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঘুরে এলেন লাহোর থেকে। বলতে যতটা সহজ, কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ তো ছিলই না। অ-সম্ভব কঠিন এক কাজ ছিল। সবসময় সাবধানে থেকেছেন, গরম কাপড়ের অভাবে প্রচ- ঠা-ায় কষ্ট করেছেন, গোয়েন্দাদের এড়াতে নানান ছদ্মবেশ নিয়েছেন। গোয়েন্দারা তাঁর পিছু নিয়েছিল ঢাকা থেকেই। একেবারে লাহোর অব্দি। লাহোরে তাঁর প্রতিটা পদক্ষেপ ছিল গোয়েন্দাদের নজরে। এমনকি লাহোরের রাস্তায় দিনদুপুরে তাঁর ওপর গু-াও লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খালি হাতেই সে গু-াদেরও সামলেছেন মুজিব।
উপন্যাসের মূল চরিত্র শেখ মুজিব হলেও, এখানে মাওলানা ভাসানীর নির্দেশনাই মূল বিষয়। লাহোর থেকে মাওলানা ভাসানীর জন্য নির্দেশনা তো নিয়ে এসেছেন মুজিব। সেটা মাওলানার কাছে পৌঁছাতেও হবে। কিন্তু কোথায় মাওলানা? মজার বিষয় হচ্ছে, মাওলানা ভাসানী তখন জেলে। কাজেই মাওলানার কাছে নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুজিবকে জেলে যেতে হলো। অবশ্য জেলে যাওয়ার জন্য তাঁকে একটুও কষ্ট করতে হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারিই ছিল।
জাতির প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই যে তাঁর এই তৎপরতা, এসব কি অ্যাডভেঞ্চার নয়? অবশ্যই অ্যাডভেঞ্চার। সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার। আর এ কারণেই ‘লাহোর টু গোপালগঞ্জ’ অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস।
এ উপন্যাসের মূল তথ্য নেওয়া হয়েছে দুটো সূত্র থেকে।
১. বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
২. ‘সেক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (ভল্যুয়াম-১, ১৯৪৮-১৯৫০)’।
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন আসিফুর রহমান। প্রকাশ করছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
১১২ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি দাম ২০০ টাকা।